তত্ত্বাবধায়ক রায় জালিয়াতি: ৭ দিনের রিমান্ডে খায়রুল

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৫, ১০: ৩২
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৫, ১২: ১৮
ফাইল ছবি

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে বেআইনি রায় প্রদান ও জাল রায় তৈরির অভিযোগে শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্ল্যাহর আদালত রিমান্ডে নেয়ার এ আদেশ দেন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. খালেক মিয়া তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে রিমান্ড নেয়ার এ আদেশ দেন বিচারক। তবে এদিন আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

এর আগে মঙ্গলবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক খালেক মিয়া তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক তদন্তে খায়রুল হকের এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় খায়রুল হককে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো আবশ্যক। আগামী ৪ আগস্ট আদালতে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর তারিখ নির্ধারিত থাকলেও মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ওই তারিখ পরিবর্তন করে ৩০ জুলাই গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানির আদেশ প্রার্থনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর আদালত খায়রুল হকের উপস্থিতিতে শুনানির জন্য ৩০ জুলাই দিন ধার্য করেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, রাজধানীর শাহবাগ থানার মামলায় সাবেক বিচারপতি খায়রুল হকে দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে হাজির করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে আরো বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে বিচারপতি খায়রুল স্বৈরশাসক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কথায় প্রভাবিত হয়ে অবসর পরবর্তী ভালো পদায়নের লোভে দুর্নীতিমূলকভাবে ২০১১ সালের ১০ মে সংক্ষিপ্ত আদেশটি পরিবর্তন করে বেআইনিভাবে ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। তিনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে আবারো ক্ষমতায় আনার জন্য বেআইনিভাবে রায় প্রদান করেছেন। প্রাথমিকভাবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এ বিষয়ে তার সম্পৃক্তা পেয়েছেন। সে জন্য এ অপরাধের নেপথ্যে কারা কারা রয়েছেন তা জানতে ও মামলার রহস্য উদঘাটনে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। পরে শুনানি শেষে তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেন বিচারক।

এর আগে ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল মান্নান খান রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

এতে অভিযোগ করা হয়, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দুর্নীতিমূলক রায় প্রদান করেন। একই সাথে বিচারিক নথি জালিয়াতি করে দশম ও এগারোতম জাতীয় সংসদের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের ওই রায় প্রদান করেছিলেন তিনি।

২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন এবিএম খায়রুল হক। ২০১১ সালের ১৭ মে ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসরে যান। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে তিনি আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশনের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এর পর থেকে আর তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।

তিনি প্রধান বিচারপতি থাকাকালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে সাংবিধানিক শূন্যতার সূচনা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে করা পঞ্চম সংশোধনী বাতিল, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের করা সপ্তম সংশোধনী বাতিল, বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষক স্বীকৃতি, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অপসারণের সরকারি আদেশকে বৈধতা দেওয়া, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি নিয়ে দায়ের করা লিভ টু আপিল না শুনেই উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেওয়ার আদেশ দেন। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে ‘দৈনিক আমার দেশ’ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে সাজা দেওয়ার আদেশ দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, গত ২৪ জুলাই সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওই দিনই তাকে আদালতে তোলা হলে জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়। ২৯ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে বেআইনি রায় দেওয়া ও জাল রায় তৈরির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় করা মামলায় তাকে ভার্চুয়ালি গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত