নিতাই হত্যা: রায় শুনে আসামিদের কান্নাকাটি, চিৎকার-চেঁচামেচি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ০২
ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই

চিকিৎসক নেতা নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই হত্যা মামলায় ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৪ জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রোববার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক রেজাউল করিম এ রায় দেন।

বিজ্ঞাপন

রায় শুনে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা আসামিরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে চিৎকার, চেঁচামেচি করেন।

এদিন বেলা ১২টা ২৫ মিনিটের দিকে আসামিদের ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানা থেকে আদালতে নেওয়া হয়। সাড়ে ১২টার দিকে বিচারক রায় পড়া শুরু করেন।

রায়ে নিতাইয়ের গাড়িচালক কামরুল হাসান অরুন, মাসুম মিন্টু, সাইদ ব্যাপারী, বকুল মিয়া এবং সাইদ মিজি মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া আবুল কালাম, সাইদুল, ফয়সাল এবং পেদা মাসুমকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও রফিকুল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারক।

রায় শেষে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন আসামি বিচারকের সঙ্গে কথা বলতে চান। তখন বিচারক বলেন, ‘এ সময় কোনো কথা থাকতে পারে না।’

তখন এক আসামি বলেন, কেন কথা থাকবে না। তখন তারা বলতে থাকেন, আমরা এ অপরাধ করিনি, কিছু জানি না। আমরা অপরাধী না।

তখন বিচারক বলেন, যে রায় দিয়েছি পরীক্ষা হবে। তখন তারা বলেন, আমরা অপরাধ করিনি। কেউ দেখে নাই, আল্লাহ দেখছে। কি সাজা দিলেন।

আদালত থেকে কাঠগড়ায় নিয়ে যাওয়ার সময় মাসুম মিন্টু বলেন, ‘বিনা কারণে আমাদের ফাঁসির রায় দিছে। আমরা এ মামলা সম্পর্কে কিছু জানি না। শেখ হাসিনা সরকার আমাদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে। সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের মামলায়ও জড়িয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার বাসা লালবাগের কামরাঙ্গীরচরে। আর খুনের ঘটনা মহাখালীতে। ওই এলাকায় আমি জীবনে যাইনি। আমরা নির্দোষ, গরিব ফ্যামিলির মানুষ। মামলা সম্পর্কে কিচ্ছু জানি না।’

এ সময় আসামিদের সঙ্গে তার স্বজনেরা আদালতে কান্নাকাটি, চিৎকার, চেঁচামেচি করেন। পরে পুলিশ সদস্যরা তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন। পরে আসামিদের আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আশা করছি উচ্চ আদালতে এ রায় বহাল থাকবে। জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসককে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা সবচেয়ে ঘৃণ্য অপরাধ বলে বিচারক পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছেন বলে জানান এ আইনজীবী।

এদিকে রায়ে অসন্তোষ জানিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্বাছ উদ্দিন মাতুব্বর বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।

২০১২ সালের ২৩ আগাস্ট মহাখালী বক্ষব্যাধি হাসপাতালে নিজের বাড়িতে খুন হন ডা. নিতাই। এ ঘটনায় ডা. নিতাইয়ের বাবা তড়িৎ কান্তি দত্ত ওই দিনই বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী পর্ষদের সদস্য আওয়ামী লীগ সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতাও ছিলেন তিনি।

২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ১০ আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক গাজী আতাউর রহমান। অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, চুরি করতে গিয়ে তারা ডা. নিতাই চন্দ্রকে হত্যা করেন।

মিন্টু, রফিকুল, পিচ্চি কালাম, সাইদুল, প্যাদা মাসুদ, ফয়সাল এই মামলায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

ওই বছরের ২২ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলার বিচার চলাকালে আদালত ২৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানি, পাঁচজন আসামি নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আজ (রোববার) রায় দিলেন আদালত।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত