কয়েলের বিকল্প ‘বাজ শিল্ড’ বানালেন খুবি শিক্ষার্থীরা

খুবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০৫: ০১

মশার কয়েলের ক্ষতিকর ধোঁয়া থেকে মুক্তি দিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) একদল শিক্ষার্থী তৈরি করেছে পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত ডিভাইস ‘বাজ শিল্ড’। এটি প্রচলিত ব্যবস্থার তুলনায় অধিক কার্যকর এবং মানব শরীরের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ বলে দাবি করেছেন উদ্ভাবকরা।

সম্প্রতি এফবিসিসিআই ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার (এফবিসিসিআই-আইআরসি) আয়োজিত প্রতিযোগিতায় দেশের চার শতাধিক উদ্ভাবনের মধ্যে ‘বাজ শিল্ড’ স্থান করে নেয় সেরাদশে। এছাড়া প্রকল্পটি পেয়েছে ইউনিভার্সিটি ইনোভেশন হাব প্রোগ্রামের ফান্ড ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) স্বীকৃতি।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রতি বছর দেশে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন হাজারো মানুষ। অথচ বাজারের প্রচলিত কয়েল কার্যকর না হওয়ার পাশাপাশি এর ধোঁয়া মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিভিন্ন ইলেকট্রিক যন্ত্রও কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ কারণেই বিকল্প সমাধানের চিন্তা থেকে ‘বাজ শিল্ড’ তৈরি করেন তারা।

উদ্ভাবক টিমের সদস্যরা হলেন—সয়েল ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিনের নিশাত জাহান নাদীরা (সিইও), ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের মুকাররম হোসেন (মার্কেটিং ও ডকুমেনটেশন), পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের সৌরভ হোসেন (অ্যানালিটিকস অ্যান্ড ফিল্ড ম্যানেজার) এবং গণিত ডিসিপ্লিনের মিফদুজ্জামান রাতুল (ফাইন্যান্স ও আইটি ম্যানেজার)।

টিমের সদস্যরা জানান, ছয় মাসের গবেষণায় তারা এমন একটি ব্যাগ তৈরি করেন, যেখানে বিশেষ তিন ধরনের প্রাকৃতিক ওষুধ পানির সঙ্গে মিশিয়ে রাখা হয়। ব্যাগ থেকে নির্গত যৌগ মশাকে আকৃষ্ট করে, কিন্তু মানুষের শরীর থেকে দূরে থাকে। এতে মশার পাকস্থলিতে প্রোটিন ক্রিস্টাল তৈরি হয়ে তাদের প্রজনন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। ফলে মশা ও লার্ভা উভয়ের বিস্তার রোধ করা সম্ভব হয়।

টিম লিডার নাদীরা বলেন, ‘প্রতি বছর একটি পরিবার মশা তাড়াতে প্রায় এক হাজার টাকা খরচ করে। পাশাপাশি কয়েলের ধোঁয়া শরীরে নানা রোগের জন্ম দিচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবেই আমরা বিকল্প সমাধান খুঁজেছি। প্রাথমিক পরীক্ষায় বাজ শিল্ড কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।’

টিমের সদস্য মুকাররম বলেন, ‘আমরা সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে যন্ত্রটি তৈরি করেছি। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে বড় আকারে বাজারজাত করতে পর্যাপ্ত ফান্ড প্রয়োজন।’ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. নাজমুস সাদাত বলেন, খুবি শিক্ষার্থীরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণা ও উদ্ভাবনী শক্তিতেও নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ দিচ্ছে। বাজ শিল্ড প্রকল্পটি ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত