মাইলস্টোন ট্রাজেডি নিয়ে সাদিয়া আয়মানের পোস্ট

‘রাজনীতি কিংবা রাজনীতিবিদ’ সবই এখন হাস্যকর হয়ে গেছে

বিনোদন রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৫, ১৬: ৪৪
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৫, ১৭: ১২

গত সোমবার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দেশ জুড়ে চলছে শোকের মাতম। যার রেশ ছুঁয়ে গেছে তারকাদের মাঝেও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কেউ কেউ শোক প্রকাশ করছেন, কেউ প্রার্থনা করছেন আবার কেউ লাশের সঠিক সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।

অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান উদ্বেগ প্রকাশ করে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন। তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হল--

বিজ্ঞাপন

'অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছা করছিল, লিখতে পারিনি । বাচ্চাগুলোর জন্য বুক ফেটে যাচ্ছিল । একেকটা বাচ্চার মিসিং পোস্ট দেখেছি আর দোয়া করেছি যেন ওরা বেঁচে ফিরে ।

একসময় আমি নিজেও শিক্ষিকা ছিলাম, টিউশন করতাম, কোচিংয়ে পড়াতাম, ছোট ছোট অনেক বাচ্চাদের পড়িয়েছি । এত নিষ্পাপ, ফুলের মতো পবিত্র, পাখির মতো চঞ্চল ওরা! ইচ্ছা করে সারাদিন বুকের মধ্যে জড়িয়ে বসে থাকি । ওদের সাথে সময় কাটালে মনে হয় পৃথিবীটা এখনও কত সুন্দর! কত সহজ সরল! মনে মনে ভাবতাম, আচ্ছা ওরা বড় হলেও কি এরকম সরলই থাকবে? কতশত অবুঝ প্রশ্ন করবে? ভাবতাম, ওরা বড় না হলেই ভালো, এরকম নিষ্পাপ থাকুক আজীবন।

গতকালকের ঘটনার পর যারা আল্লাহর কাছে পাখি হয়ে উড়ে গিয়েছে, মনে হচ্ছে আল্লাহর ওদেরকে ভালোবেসে নিয়ে গেছে, থাকুক ওরা আল্লাহর কাছে ভালো। আদরে থাকবে, যত্নে থাকবে, জান্নাতের পাখি হয়ে থাকবে সোনা বাচ্চা গুলো ।

বেঁচে থেকে এমনই একদিন না একদিন কোনো না কোনো দুর্ঘটনায় ঠিকই মারা যেত, এই দেশের সিস্টেম কখনো ঠিক ছিল না, ঠিক হবেও না, রাজনীতির জন্য যে কেউ যা ইচ্ছা করতে পারে ।

এ দেশে সাধারণ মানুষের জীবনের দাম নেই, এ দেশে সাধারণ মানুষের কান্নার দাম নেই। কি লাভ বেঁচে থেকে? কি পাবে বেঁচে থেকে? কয়েক দিন পর পর এই ঝামেলা, ওই ঝামেলা, মারামারি, কাটাকাটি হতেই থাকে । এগুলো কখনো থামেনি, থামবেওনা । যত বড় আর ভালো মানুষই বসুক না কেন চেয়ারে, সবাই ই বদলে যায় ।

গতকাল হাসপাতালে যেখানে একটার পর একটা রোগী আসছে পোড়া শরীর নিয়ে, যেখানে রোগীদের পরিবারদের ঠিক মতো ঠাঁই হচ্ছেনা, সবাই তাদের আদরের সন্তান কিংবা ভাইবোন কে খুঁজতে অস্থির সেখানে কোনো কোনো ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা যাচ্ছে তাদের দলবল নিয়ে!! একজনের সাথে তারা আরও ১০-২০ জন নিয়ে যাচ্ছে! কেন? সামনে ভোট তাই এখনই “শো ডাউন (অফ)” করতে হবে!

রিকশাওয়ালা, সিএনজি ওয়ালারা ১০০ টাকার ভাড়া ১০০০ টাকা চাইলো, দোকানদাররা পানির দাম ৫০ টাকার জায়গায় ২০০ টাকা চাইলো!

এরকম একটা মুমূর্ষু দিনেও তারা মন টা নরম করতে পারলো না!!

এদিকে কি লাশের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করছে? গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত ২২ জনের নিহতের খবর দেয়া হয়েছে ।

এটা কি কোনো ভাবেই সত্য মনে হচ্ছে? এখনো অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের খুঁজে পাচ্ছেনা । সেই হিসাব কে দিবে? কার কাছে বিচার চাইবে? কার কাছে গেলে তাদের সন্তানদের খুঁজে পাওয়া যাবে? সেই উত্তর কেউই জানেনা…

কিছুক্ষণ আগে দেখি আমাদের ইন্টেরিম গভর্নমেন্টের অফিসিয়াল ভেরিফাইড পেজ থেকে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য অর্থ সহায়তা চেয়ে একটি পোস্ট দিল । (এখন পোস্টটি ডিলিট করে দেয়া হয়েছে)

পরিবারগুলো তাদের নিখোঁজ সন্তানদের সন্ধান চায়, অর্থ চায়না । অর্থ দিয়ে যদি তাদের সন্তানদের খুঁজে এনে দিতে পারেন তবে আমরা আপনাদের “ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে” অর্থ দিতে রাজি । বাচ্চাগুলোর পরিবার তাদের সব দিয়ে দিবে, এমনকি যারা তাদের বাচ্চা হারিয়েছে তারাও সাহায্য করবে। তবে কি ফিরিয়ে এনে দিতে পারবেন বাচ্চাগুলোকে? পারবেন না। সেই ক্ষমতা কারোর নেই। কখনো ছিলও না।

ছোট মুখে একটা বড় কথা বলি - বাংলাদেশের “রাজনীতি কিংবা রাজনীতিবিদ” সবই এখন হাস্যকর হয়ে গেছে।'

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত