তীর ছোড়ে আর্চার ফিশ

মুহিব্বুল্লাহ কাফি
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৪১
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ১৩

আগের দিনের রাজা-বাদশাহদের যুদ্ধের প্রধান হাতিয়ার ছিল তরবারি ও তির-ধনুক। তরবারি ও তির-ধনুক দিয়েই তারা রাজ্যের পর রাজ্য জয় করে রাজত্ব করেছেন। আমরা মানুষেরাই শুধু অস্ত্রের ব্যবহার জানি, তা কিন্তু নয়। এমনও কিছু প্রাণী আছে যারা অস্ত্রের ব্যবহার জানে। এসব প্রাণী এগুলো দিয়ে আত্মরক্ষা ও খাবার শিকার করে, যাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।

পৃথিবীতে এমন অনেক বিস্ময়কর তথ্য আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করছেন প্রতিনিয়ত। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, রহস্যময় সমুদ্রের বিশাল জলরাশির মধ্যে মাত্র পাঁচ শতাংশ আমরা জানতে পেরেছি। বাকি ৯৫ শতাংশই আমাদের এখনো অজানা।

বিজ্ঞাপন

রহস্যপুরী সমুদ্রের এই পাঁচ শতাংশের মধ্যেই প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার প্রজাতির মাছের সন্ধান পাওয়া গেছে। আল্লাহ তায়ালা অদ্ভুত ও রহস্যময় কিছু গুণ দিয়ে রেখেছেন এই জলপ্রাণীদের মধ্যে। ‘আর্চারফিশ’-এর মধ্যেও রয়েছে অদ্ভুত এক গুণ, যা সে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।

নাম ও তির ছোড়ার কৌশল : আর্চারফিশের বাংলা নাম তিরন্দাজ মাছ। কারণ এই মাছ বিস্ময়করভাবে তির ছুড়তে পারে। শিকার করতে আর্চারফিশ পানির উপরিভাগে উঠে আসে। জলজ উদ্ভিদ এবং নদ-নালার পাড়ে বেড়ে ওঠা গাছের হেলে থাকা শাখাগুলোয় চড়ে বেড়ানো কীট-পতঙ্গ শিকার করতে তির ছোড়ে। এদের তির প্রায় দেড় মিটার বা পাঁচ ফুট দূরত্বে থাকা শিকারকে ঘায়েল করতে পারে। এদের নিশানা সাধারণত লক্ষ্যচ্যুত হয় না। আর্চারফিশের তির হলো পানি; আর ধনুক হলো এদের মুখ। পানির একাধিক ফোঁটা মুখে পুরে তিরের গতিতে ছোড়ে শিকারের লক্ষ্যে। তাতেই ছোট পোকা থেকে বড় প্রজাপতিও ধরাশায়ী হয়ে পানিতে ছিটকে পড়ে, অমনি তিরন্দাজ মাছ গপ করে মুখে পুরে নেয়। কোনো কোনো আর্চারফিশ তো এক ফোঁটা পানিতেই শিকার করে নেয়।

আকার-আকৃতি : ২০১৮ সালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুসারে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নদীতে দেখা যাওয়া ছোট আকারের আর্চারফিশ তিনটি ভিন্ন প্রজাতির বলে প্রমাণিত হয়েছে, যা এখনো ফিশবেশে প্রতিফলিত হয়নি। আর্চারফিশ শিকারি মাছ। বেশ সুন্দরও বটে। হলদে রঙের শরীরে কালো ডোরাকাটা দাগ রয়েছে। রুপালি রঙেরও কিছু মাছ রয়েছে। ছোট আকারের তিরন্দাজ মাছের নাক সুচালো এবং চোখ বড় বড়। পিঠের অংশ চ্যাপ্টা এবং পেট কিছুটা বাঁকা। এদের রয়েছে একটি পৃষ্ঠীয় পাখনা, যার চার থেকে পাঁচটি পৃষ্ঠীয় কাঁটা রয়েছে। চমৎকার এই মাছ আকারে তেমন বড় নয়। প্রজাতিভেদে মাছগুলো পাঁচ থেকে ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। সবচেয়ে বড়টি ৪০ সেন্টিমিটারের মতো হয়। কিন্তু স্বাধীন অবস্থায় আর্চারফিশের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১৫ সেন্টিমিটার (৫ দশমিক ৯ ইঞ্চি) হয়ে থাকে। তবে অ্যাকুইরিয়ামে থাকা অবস্থায় এই মাছ ১২ সেন্টিমিটারের (৪ দশমিক ৭ ইঞ্চি) বেশি হয় না।

বাসস্থান : পৃথিবীর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার অগভীর লোনা পানিতে আর্চারফিশ বাস করে। ছোট আকারের আর্চারফিশ এশিয়া, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরের বৃহৎ নদী এবং মোহনায় বাস করে থাকে। এগুলো মেকং এবং চাও ফ্রায়া নদীর অববাহিকাজুড়ে এবং মালয় উপদ্বীপ, সুমাত্রা ও বোর্নিওর জলাশয়েও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।

খাদ্য ও প্রজনন : ছোট আকারের তিরন্দাজ মাছ স্থলজ পোকামাকড় খায়, যা তারা তির মেরে শিকার করে এবং জুপ্ল্যাঙ্কটন, ক্রাস্টেশিয়ানসহ পোকামাকড়ের লার্ভা খেয়ে জীবনধারণ করে। আর্চারফিশ সাধারণত দলবদ্ধভাবে প্রজনন করে। প্রজননের জন্য স্ত্রী আর্চারফিশ ডিম পাড়ে এবং পুরুষ মাছ তাদের নিষিক্ত করে। নিষিক্ত ডিমগুলো সাধারণত পানির উপরে ভেসে বেড়ায় এবং উপযুক্ত পরিবেশে লার্ভা থেকে পোনা বের হয়ে আসে। এরা এদের ডিমের জন্য কোনো নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থা নেয় না। ডিমগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রাকৃতিক উপায়ে বিকশিত হয়। ডিম থেকে লার্ভা বের হওয়ার পর, তারা ছোট পোকামাকড় এবং অন্যান্য জলজ জীব খেয়ে জীবনধারণ করে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত