জাকসু নির্বাচন

দুই গ্রুপের কোন্দলে প্যানেল করতে পারেনি ছাত্রদল

  • ২৫ পদের বিপরীতে ছাত্রদলের প্রায় ৫০ জন মনোনয়ন কিনেছেন
  • আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেশি থাকার কারণে প্যানেল ঘোষণা করতে দেরি হচ্ছে—জহিরউদ্দীন মোহাম্মদ বাবর, আহ্বায়ক, শাখা ছাত্রদল
প্রতিনিধি, জাবি
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০৬: ৩৬

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর। ইতোমধ্যে গত ২১ আগস্ট মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে প্যানেল ঘোষণা করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। তবে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের কারণে এখনো প্যানেল দিতে পারেনি শাখা ছাত্রদল।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জাকসুকে সামনে রেখেই গত ৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দিয়ে বর্ধিত ও হল কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রদল। এর পরপরই কমিটিতে পদপ্রাপ্ত অনেককে নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে হল কমিটিতে রাখা হয় সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী, মাদক ও ছিনতাইয়ে বহিষ্কৃত, ভ্রুণ হত্যার অভিযোগে অভিযুক্তসহ বিতর্কিতদের। কমিটি ঘোষণার পরই প্রতিবাদ মিছিল বের করেন শাখা ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। সেই থেকে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ পাঁচ নেতাকে প্রায় নয় দিন ক্যাম্পাসে ঢুকতে বাধা দেয়।

গত ১৭ আগস্ট ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে ক্যাম্পাসে ঢোকেন শাখা ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের সঙ্গে শাখা ছাত্রদলের সুপার ফাইভের সেদিন নানা চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। এরপর থেকে সুপার ফাইভ এবং বিক্ষুব্ধরা দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যায়।

ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা যায়, ২১ আগস্ট বিকাল থেকে জাকসুর প্যানেল নির্ধারণ করতে মিটিং শুরু করে ছাত্রদল। সেই মিটিং পরদিন সকাল সাতটার পরও চলতে থাকে। এ সময় মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়াসহ শাখা ছাত্রদলের নেতারা। মিটিংয়ে আরো ছিলেন—গণিত বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দীন, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু ও সিনেট সদস্য সাবিনা ইয়াসমিন।

মিটিং সূত্রে জানা যায়, মিটিংয়ে শীর্ষ পাঁচ নেতা ও বিদ্রোহী নেতাকর্মীদের মধ্যে পদ নিয়ে দর কষাকষি হয়। এ সময় বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা সহ-সভাপতি পদ অথবা সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ পদ দাবি করেন। বিদ্রোহীদের এই দাবি মেনে নেয়নি শাখা ছাত্রদলের শীর্ষ পাঁচ নেতা। এরপর বিদ্রোহী নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন উপস্থিত বিএনপিপন্থি কয়েকজন শিক্ষক। তবে সেই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। তাই গত বৃহস্পতিবার প্যানেল ঘোষণার কথা থাকলেও তা করতে পারেনি ছাত্রদল।

জানা গেছে, প্রধান তিনটি পদ নিয়ে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের মধ্যেই বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে। নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে প্রধান তিন পদে বসাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে সুপারিশ করার অভিযোগও রয়েছে।

এদিকে ছাত্রদলের মিটিংয়ে উপস্থিতির বিষয় স্বীকার করেছেন বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা। তবে প্যানেলে প্রভাব বিস্তারের কথা অস্বীকার করেন তারা। উপস্থিত তিনজন শিক্ষক একই ধরনের বক্তব্য দেন। তারা জানান, তারা শুধু ছাত্রদলের বিভাজনের রাজনীতিতে বিব্রত এই তথ্যগুলো জানাতে গিয়েছিলেন। প্যানেল ঘোষণা বা ছাত্রদলের নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়ে তারা কিছু জানেন না।

ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্যানেল ঘোষণার পর নেতাকর্মীদের একটি অংশ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারেন— এই ভয়ে প্যানেল ঘোষণা করা হচ্ছে না। ২৫ পদের বিপরীতে প্রায় ৫০ জন মনোনয়ন কিনেছেন। এর মধ্যে সহ-সভাপতি পদে ৪ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ৫ জন ও সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে ৬ জন মনোনয়ন কিনেছেন।

শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দীন মোহাম্মদ বাবর বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো গ্রুপিং নেই। আমাদের সবার এক গ্রুপ। বড় সংগঠন হওয়ার কারণে আমাদের একাধিক লোক একই পদে মনোনয়ন কিনেছেন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে। আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এলে আমরা বাকিদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বলব। আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেশি থাকার কারণে প্যানেল ঘোষণা করতে একটু দেরি হচ্ছে। কিন্তু ২/১ দিনের মধ্যেই আমরা প্যানেল ঘোষণা করব।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত