আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম বলেছেন, মানবাধিকার কর্মীর পরিচয়ে যারা অতীতের গুম-খুন ও দমননীতিকে বৈধতা দিয়েছেন তারা ‘জাতির শত্রু’। তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশে গুম, খুন ও নির্যাতনের কোনও স্থান থাকবে না।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার অডিটোরিয়ামে ডাকসুর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম- খুন, রাষ্ট্রীয় জবাবদিহিতা, ইতিবাচক ছাত্ররাজনীতি, সুশাসন ও নতুন বাংলাদেশের মানবাধিকার কাঠামোসহ সাতটি বিষয়ে বক্তারা আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম।
সভাপতির বক্তব্যে সাদিক কায়েম আজাদী আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করে বলেন, গত ১৬ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ছাত্ররাজনীতির নামে ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে’ পরিণত করা হয়েছিল। ইসলাম চর্চা বা নামাজ আদায়ের কারণে বহু শিক্ষার্থীকে শিবির সন্দেহে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মানবাধিকার রক্ষার নামে দমন নীতিকে বৈধতা দেওয়া ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন- নতুন বাংলাদেশ হবে ইনসাফ, অধিকার ও মানবিকতার দেশ।
জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মিশনপ্রধান হুমা খান বলেন, মানবাধিকার কোনো বিদেশি ধারণা নয়। বরং বাংলাদেশের ধর্মীয় গ্রন্থ ও সংস্কৃতিতে সমতা, ন্যায়বিচার, সহানুভূতি ও সম্মানের যে মূল্যবোধ রয়েছে, সেটিই মানবাধিকারের ভিত্তি।
তিনি বলেন, পুলিশ ও প্রশাসন জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত হওয়ায় তারা জনগণের ‘সেবক’, ‘নিয়ন্ত্রক’ নয়। তরুণ প্রজন্ম এই ইতিবাচক পরিবর্তনে নেতৃত্ব দেবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
জাতীয় গুম কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন বলেন, প্রথমবার ডাকসুর মাধ্যমে মানবাধিকার দিবস উদযাপন ইতিবাচক উদ্যোগ। অতীতে ছাত্র সংগঠনের নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, গুমের নথি ও স্মৃতি ভুলে গেলে চলবে না। প্রতিটি ঘটনার সত্য উদঘাটনে কমিশন কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
বেগম রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত মানবাধিকারকর্মী এবং গুম কমিশনের সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রীস বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের ওপর ভয়াবহ মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে, অনেককে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়েছে- যার ফলে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি টর্চার ও গেস্টরুম সংস্কৃতি নথিবদ্ধ করার তাগিদ দিয়ে বলেন, মানবাধিকার আন্দোলনে নারীদের আরও সক্রিয় হতে হবে।
গুমের শিকার ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাশেম আরমান বলেন, শত শত পরিবার জানে না তাদের প্রিয়জন জীবিত না মৃত- রাষ্ট্র তাদের জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর পুনর্বাসনকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব উল্লেখ করেন এবং অভিযুক্ত সাবেক সামরিক কর্মকর্তাদের দেশত্যাগের ঘটনার তদন্ত দাবি করেন।
ডাকসু জিএস এস এম ফরহাদ বলেন, মানবাধিকার দিবস শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়; ব্যক্তিগত পর্যায়ে অধিকার রক্ষার অঙ্গীকার গ্রহণ করা জরুরি। একজন মানুষকে হত্যা করা মানে সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করার সমান- এই নীতি মানবাধিকার সুরক্ষাকে অর্থবহ করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

