সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেন ফিরে এসেছেন ‘ফকির লালন শাহ’

প্রতিনিধি, ঢাবি
প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ২০: ৫৪

বাংলার মরমী সাধক ফকির লালন শাহের দর্শন, প্রেম ও মানবতার সুর ভেসে উঠেছে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় শনিবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় ‘লালন উৎসব ২০২৫’।

মহান এই সাধকের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে এ প্রথমবারের মতো উৎসবটি আয়োজিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিকেল ৪টায় লালন মেলার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনব্যাপী এই মহোৎসব। এদিন উদ্যানে উত্তর পাশে সাজানো হয় ১৬টি স্টল, যেখানে প্রদর্শিত হয় ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, লোকবাদ্য, গ্রামীণ পোশাক ও স্থানীয় খাবার।

মঞ্চের চারপাশে দেখা যায় ভক্ত, বাউল ও দর্শনার্থীদের পদচারণা। কেউ গাইছিলেন লালনের দেহতত্ত্বের গান, কেউবা ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন তাঁর প্রেম, মানবতা ও একত্ববাদের বার্তা।

সন্ধ্যা ৬টায় সদ্য প্রয়াত বিশিষ্ট লালন শিল্পী ফরিদা পারভীনের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে প্রদর্শিত হয় তাঁর জীবন ও সংগীতভিত্তিক একটি প্রামাণ্যচিত্র।

রাত ঘনিয়ে এলে শুরু হয় মূল সাংগীতিক পর্ব। অনুষ্ঠানে প্রথমে পরিবেশন করেন এনি বায়রাগী, ফাহমিদা আহমেদ শিফা ও শুচনা শেলি। এরপর বাউলা ব্যান্ড, পথিক নবি ও টিম ক্রিয়েটিভ, এবং আরুপ রাহির পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করে। শেষ রাতে মঞ্চে আসেন সামগীত, নিরব অ্যান্ড বাউলস, দিনা মন্ডল, মুজিব পারদেশি, কানিজ খান্দকার মিতু ও সাগর বাউল।

রাত ১১টায় জনপ্রিয় ‘লালন ব্যান্ড’-এর পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় দিনব্যাপী উৎসব।

উৎসবে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন সাধু-বাউল ও ভক্তরা। কুষ্টিয়া থেকে আগত সাধু জালাল বলেন, “সরকারের এই উদ্যোগ অনেক আগেই নেওয়া উচিত ছিল। তবু আনন্দের বিষয়, লালনের বার্তা অবশেষে জাতীয়ভাবে উচ্চারিত হলো।” আরেক সাধু বুলবুল বলেন, “বিলম্বিত হলেও লালনের দর্শন এখন জাতীয় মর্যাদায় এসেছে, এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি।”

বাউলরা বলেন, লালনের মতে সত্যিকারের প্রেম হলো গুরুশিষ্যের আত্মিক সম্পর্ক, যা দেহাতীত ও চিরন্তন। তাঁরা নিজেদের পরিচয় দেন “শান্তির সুখী পাখি” হিসেবে- যারা প্রতি বছর মানবতা ও প্রকৃতির সঙ্গে আত্মিক বন্ধনে ফিরে আসে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জনসংযোগ কর্মকর্তা (অব.) মো. মাহমুদুল হক জিহাদ বলেন, “নতুন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অভিযাত্রায় এটি এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এই উৎসবের মাধ্যমে লালনের দর্শন ও সংগীতকে জাতীয় সংস্কৃতির মূলধারায় যুক্ত করা হয়েছে।”

বাংলার আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের অন্যতম প্রতীক ফকির লালন শাহ ছিলেন মানবতাবাদী দার্শনিক, সমাজ সংস্কারক ও গানের সাধক। তাঁর গান- “মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি” কিংবা “অচিন পাখি”- আজও মানুষকে আত্মজাগরণের পথে আহ্বান জানায়। প্রায় দুই শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও লালনের সহজ-গভীর মানবতাবাদী দর্শন আজও বাংলার মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগায়- ভালোবাসা, সমতা ও আত্মচেতনার চিরন্তন আবেদনে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত