ফাহমিদুর রহমান ফাহিম, রাবি
বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উচ্চারিত হয় গৌরব, ইতিহাস আর আন্দোলনের প্রতীকে। ৩৫ বছর পর আবারও ক্যাম্পাসে ফিরছে —রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)। এক সময় যে সংগঠনটি ছিল শিক্ষার্থীদের অধিকার, নেতৃত্ব ও পরিবর্তনের মূল মঞ্চ, সেটিই এখন পুনর্জাগরণের অপেক্ষায়। আসন্ন রাকসু নির্বাচনকে ঘিরে উচ্ছ্বাস, প্রত্যাশা আর প্রশ্নে মুখর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কেউ দেখছেন এটি নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির সম্ভাবনা হিসেবে, কেউ বা আশঙ্কা করছেন রাজনীতির পুরোনো ছায়া ফিরে আসবে। শিক্ষার্থীরা কেমন রাকসু দেখতে চান।
রাকসুর ইতিহাস
বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এক অনন্য নাম। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি ৭২ বছর ধরে জ্ঞানচর্চা, গবেষণা এবং সাংস্কৃতিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সবুজ আর শান্তির প্রতীক এই বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে উচ্চশিক্ষার আলোকবর্তিকা হিসেবে পরিচিত। এর সুবিশাল ক্যাম্পাস, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং অসংখ্য কৃতী শিক্ষার্থী এটিকে সমৃদ্ধ করেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, যা সংক্ষেপে রাকসু নামে পরিচিত। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬২ সালে। এর মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সৎ, মেধাবী এবং দেশপ্রেমিক ছাত্রনেতৃত্ব তৈরি করা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাকসু দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং পরে সব স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাকসু ছিল শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর। বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলনের সোনালি অর্জনগুলোর পেছনে ছাত্র সংসদগুলোর অবদান অনস্বীকার্য।
রাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ২১ জন প্রতিনিধিকে শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়। পদাধিকারবলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাকসুর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষার্থীরা সরাসরি ভোট দিয়ে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং অন্যান্য পদ নির্বাচন করেন। ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৪ বার রাকসু নির্বাচন হয়েছে। ১৯৫৬-৫৭ সালে প্রথম রাকসু নির্বাচন ‘রাসু’ নামে হলেও ১৯৬২ সাল থেকে এটি ‘রাকসু’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
বিভিন্ন সময় দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামরিক শাসনের কারণে রাকসু নির্বাচন স্থগিত ছিল। ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের কারণে এবং পরে সামরিক শাসনের কারণে ১৯৭৫-৮০ এবং ১৯৮১-৮৮ সাল পর্যন্ত নির্বাচন হয়নি। সর্বশেষ ১৯৮৯-৯০ মেয়াদের জন্য রাকসু নির্বাচন হয়েছিল। এরপর থেকে ৩৫ বছর ধরে রাকসু অচল হয়ে পড়েছিল, যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে শিক্ষার্থীদের কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন না। এতে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া উপেক্ষিত হচ্ছিল এবং নতুন নেতৃত্ব তৈরিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। তবে বহু বাধা-বিপত্তির পর এবছর ১৬ অক্টোবর হতে যাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত রাকসু নির্বাচন।
ফাহিমা করিম বন্যা
শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
‘রাকসু নির্বাচন নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বড়। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি, তারা কয়েক বছর ধরে দেখেছি শিক্ষার্থীদের সমস্যার জায়গায় কেউ সরাসরি কথা বলেন না। রাকসু যদি সত্যিকার অর্থে সক্রিয় হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা, পরিবহন সংকট, পরীক্ষার অনিয়ম বা লাইব্রেরির সেবার মতো বিষয়গুলোয় নীতিনির্ধারণের অংশগ্রহণ বাড়বে। আমরা চাই, নির্বাচিতরা যেন কোনো দলীয় স্বার্থ নয়, শিক্ষার্থীদের বাস্তব চাহিদাকে গুরুত্ব দেন। প্রশাসনের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের মতামত প্রতিফলিত হলে তবেই এটি হবে একটি গণতান্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয়। রাকসু নির্বাচন সেই পরিবর্তনের দরজা খুলে দিতে পারে।’
ত্বাসীন সিদ্দিকা রুপা
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
‘রাকসু নির্বাচন আবার চালু হওয়া মানে আমাদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। এত বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে হয়েছে, তাতে শিক্ষার্থীরা শুধু দর্শক ছিলেন। এখন আমরা আমাদের প্রতিনিধি বেছে নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারব, সমস্যার সমাধান চাইতে পারব। এই নির্বাচন আমাদের শেখাবে কীভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কাজ করে, কীভাবে ভোটের মাধ্যমে মতামত প্রকাশ করতে হয়। তবে আমার একটাই প্রত্যাশা, এই নির্বাচন যেন সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়। কোনো প্রভাবশালী গোষ্ঠীর হাতে রাকসু যেন বন্দি না হয়। তাহলেই শিক্ষার্থীরা সত্যিকার অর্থে এর সুফল পাবেন।’
আসমা সুলতানা জেরিন
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
‘রাকসু নির্বাচনে মেয়েদের অংশগ্রহণ এবার সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। আগে রাজনীতি মানেই ভাবা হতো, এটা শুধু ছেলেদের ক্ষেত্র। কিন্তু এবার মেয়েরা সামনে এসেছেন, প্রার্থী হচ্ছেন, প্রচারণা করছেনÑএটি ইতিবাচক পরিবর্তন। আমরা চাই নারী প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, চিকিৎসাসেবা, আবাসন সমস্যা ও সমান সুযোগের বিষয়গুলো তুলে ধরবেন। অনেক সময় মেয়েদের সমস্যাগুলো উপেক্ষিত হয়; রাকসুতে নারীদের সক্রিয় উপস্থিতি তা পরিবর্তন করবে। রাকসু শুধু রাজনীতির জায়গা নয়, এটি নারী নেতৃত্ব বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হতে পারে, যদি সবার সহযোগিতা থাকে।’
নুরুল্লাহ আলম নুর
শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ
‘আমি এমন একটি রাকসু চাই, যা হবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত, স্বাধীন ও শিক্ষার্থীদের প্রকৃত অধিকার রক্ষকের প্রতিচ্ছবি। রাকসু যেকোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সংগঠন বা মতাদর্শের প্রভাবমুক্ত থেকে শুধু শিক্ষার্থীদের অধিকার, সুযোগ ও কল্যাণ নিয়েই কাজ করবেÑএমনটাই প্রত্যাশা করছি। রাজনৈতিক প্যানেলের প্রার্থীরা নির্বাচিত হলেও (যেমনটা ডাকসু, জাকসু ও গকসুতে হয়েছে) তাদের মূল দায়িত্ব হওয়া উচিত দলীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি ও স্বপ্নকে অগ্রাধিকার দেওয়া। আশা করছি, আমরা এমনটাই দেখতে পাব। আমি এমন রাকসু দেখতে চাই, যা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সর্বজনীন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ন্যায়, যুক্তি ও সততার পথে চলবে।’
শেখ নূরউদ্দিন আবীর
শিক্ষার্থী, পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন
‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুধু একাডেমিক ক্ষেত্রেই নন, সারা বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা আমাদের প্রতিভার জানান দিতে চাই। এ জন্য আমাদের দরকার একটি উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম। আমি মনে করি, রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছ থেকে তাদের প্রাপ্য অধিকার আদায় করে নেবেন এবং যার যার প্রতিভা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবেন। এটি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা একটি ভয়ভীতিমুক্ত, রাজনৈতিক আধিপত্যমুক্ত, ছাত্ররাজনীতির নেতিবাচক প্রভাবমুক্ত একটি নিরাপদ ও শিক্ষার্থীবান্ধব আধুনিক ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে চাই।
মোস্তাকুর রহমান জাহিদ
শিক্ষার্থী, এগ্রোনমি এন্ড এগ্রিকালচার এক্সটেনশন
‘আমি চাই একটি আধুনিক, নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার থাকবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে। শিক্ষার্থীরা গবেষণা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং জ্ঞানচর্চার মধ্য দিয়ে নিজেদের সম্ভাবনা বিকশিত করতে পারবেন। সংক্ষেপে বলতে গেলে, আমি চাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠুক একটি আদর্শ উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আবাসন সংকট। একই সঙ্গে শিক্ষার মানোন্নয়ন ও গবেষণার সুযোগ সীমিত। আধুনিক ল্যাব, পর্যাপ্ত বই ও ডিজিটাল রিসোর্স সেন্টারের অভাব শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বিকাশে বড় বাধা। এছাড়া ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। রাকসুর মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করতে চাই। রাকসু যদি কার্যকরভাবে কাজ করে, তাহলে প্রশাসনের জবাবদিহি বাড়বে এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবেন।
সৈয়দ সাকিব
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ
৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এক মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় আছি। ক্যাম্পাসে একটা উৎসবমুখর পরিবেশও বিরাজ করছে। রাকসু নিয়ে যদি বলি, তাহলে আমি এভাবেই বলব যে, এই নির্বাচনে ভোট প্রদানের মাধ্যমে আমার যে ন্যায্য হিস্যা, সেটিই আদায় করা সম্ভবপর হবে। বছরের পর বছর ধরে ছাত্র সংসদ বাবদ ফি নেওয়া হলেও নির্বাচন হয়নি। অর্থের হিসাব বাদ দিলেও এ নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা আমাদের পছন্দমতো শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচন করব, যারা আমাদের হয়ে ভয়েজ রেইজ করবে, বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে।
আমরা দেখেছি, বিভিন্ন সময়ে অযৌক্তিক কোনো ইস্যুতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যখনই আন্দোলন হয়েছে, তখন নির্বাচিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের অভাব আমরা বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছি। রাকসুর মাধ্যমে ভবিষ্যতে যদি কোনো ইস্যুতে আমাদের আবার রাস্তায় নামতে হয়, তখন আন্দোলনের ইমপ্যাক্ট অনেক বেড়ে যাবে। এছাড়া ক্যাম্পাসের মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধানের ক্ষেত্রে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে, কারণ তাদের ম্যানডেট থাকবে। সব মিলিয়ে বলব, রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে নেতৃত্ব বিকাশের যে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় ছিল, সেই অচলায়তনের নিরসন আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে শিগগিরই হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উচ্চারিত হয় গৌরব, ইতিহাস আর আন্দোলনের প্রতীকে। ৩৫ বছর পর আবারও ক্যাম্পাসে ফিরছে —রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)। এক সময় যে সংগঠনটি ছিল শিক্ষার্থীদের অধিকার, নেতৃত্ব ও পরিবর্তনের মূল মঞ্চ, সেটিই এখন পুনর্জাগরণের অপেক্ষায়। আসন্ন রাকসু নির্বাচনকে ঘিরে উচ্ছ্বাস, প্রত্যাশা আর প্রশ্নে মুখর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কেউ দেখছেন এটি নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির সম্ভাবনা হিসেবে, কেউ বা আশঙ্কা করছেন রাজনীতির পুরোনো ছায়া ফিরে আসবে। শিক্ষার্থীরা কেমন রাকসু দেখতে চান।
রাকসুর ইতিহাস
বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এক অনন্য নাম। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি ৭২ বছর ধরে জ্ঞানচর্চা, গবেষণা এবং সাংস্কৃতিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সবুজ আর শান্তির প্রতীক এই বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে উচ্চশিক্ষার আলোকবর্তিকা হিসেবে পরিচিত। এর সুবিশাল ক্যাম্পাস, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং অসংখ্য কৃতী শিক্ষার্থী এটিকে সমৃদ্ধ করেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, যা সংক্ষেপে রাকসু নামে পরিচিত। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬২ সালে। এর মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সৎ, মেধাবী এবং দেশপ্রেমিক ছাত্রনেতৃত্ব তৈরি করা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাকসু দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং পরে সব স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাকসু ছিল শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর। বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলনের সোনালি অর্জনগুলোর পেছনে ছাত্র সংসদগুলোর অবদান অনস্বীকার্য।
রাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ২১ জন প্রতিনিধিকে শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়। পদাধিকারবলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাকসুর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষার্থীরা সরাসরি ভোট দিয়ে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং অন্যান্য পদ নির্বাচন করেন। ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৪ বার রাকসু নির্বাচন হয়েছে। ১৯৫৬-৫৭ সালে প্রথম রাকসু নির্বাচন ‘রাসু’ নামে হলেও ১৯৬২ সাল থেকে এটি ‘রাকসু’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
বিভিন্ন সময় দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামরিক শাসনের কারণে রাকসু নির্বাচন স্থগিত ছিল। ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের কারণে এবং পরে সামরিক শাসনের কারণে ১৯৭৫-৮০ এবং ১৯৮১-৮৮ সাল পর্যন্ত নির্বাচন হয়নি। সর্বশেষ ১৯৮৯-৯০ মেয়াদের জন্য রাকসু নির্বাচন হয়েছিল। এরপর থেকে ৩৫ বছর ধরে রাকসু অচল হয়ে পড়েছিল, যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে শিক্ষার্থীদের কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন না। এতে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া উপেক্ষিত হচ্ছিল এবং নতুন নেতৃত্ব তৈরিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। তবে বহু বাধা-বিপত্তির পর এবছর ১৬ অক্টোবর হতে যাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত রাকসু নির্বাচন।
ফাহিমা করিম বন্যা
শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
‘রাকসু নির্বাচন নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বড়। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি, তারা কয়েক বছর ধরে দেখেছি শিক্ষার্থীদের সমস্যার জায়গায় কেউ সরাসরি কথা বলেন না। রাকসু যদি সত্যিকার অর্থে সক্রিয় হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা, পরিবহন সংকট, পরীক্ষার অনিয়ম বা লাইব্রেরির সেবার মতো বিষয়গুলোয় নীতিনির্ধারণের অংশগ্রহণ বাড়বে। আমরা চাই, নির্বাচিতরা যেন কোনো দলীয় স্বার্থ নয়, শিক্ষার্থীদের বাস্তব চাহিদাকে গুরুত্ব দেন। প্রশাসনের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের মতামত প্রতিফলিত হলে তবেই এটি হবে একটি গণতান্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয়। রাকসু নির্বাচন সেই পরিবর্তনের দরজা খুলে দিতে পারে।’
ত্বাসীন সিদ্দিকা রুপা
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
‘রাকসু নির্বাচন আবার চালু হওয়া মানে আমাদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়া। এত বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে হয়েছে, তাতে শিক্ষার্থীরা শুধু দর্শক ছিলেন। এখন আমরা আমাদের প্রতিনিধি বেছে নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারব, সমস্যার সমাধান চাইতে পারব। এই নির্বাচন আমাদের শেখাবে কীভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কাজ করে, কীভাবে ভোটের মাধ্যমে মতামত প্রকাশ করতে হয়। তবে আমার একটাই প্রত্যাশা, এই নির্বাচন যেন সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়। কোনো প্রভাবশালী গোষ্ঠীর হাতে রাকসু যেন বন্দি না হয়। তাহলেই শিক্ষার্থীরা সত্যিকার অর্থে এর সুফল পাবেন।’
আসমা সুলতানা জেরিন
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
‘রাকসু নির্বাচনে মেয়েদের অংশগ্রহণ এবার সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। আগে রাজনীতি মানেই ভাবা হতো, এটা শুধু ছেলেদের ক্ষেত্র। কিন্তু এবার মেয়েরা সামনে এসেছেন, প্রার্থী হচ্ছেন, প্রচারণা করছেনÑএটি ইতিবাচক পরিবর্তন। আমরা চাই নারী প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, চিকিৎসাসেবা, আবাসন সমস্যা ও সমান সুযোগের বিষয়গুলো তুলে ধরবেন। অনেক সময় মেয়েদের সমস্যাগুলো উপেক্ষিত হয়; রাকসুতে নারীদের সক্রিয় উপস্থিতি তা পরিবর্তন করবে। রাকসু শুধু রাজনীতির জায়গা নয়, এটি নারী নেতৃত্ব বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হতে পারে, যদি সবার সহযোগিতা থাকে।’
নুরুল্লাহ আলম নুর
শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ
‘আমি এমন একটি রাকসু চাই, যা হবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত, স্বাধীন ও শিক্ষার্থীদের প্রকৃত অধিকার রক্ষকের প্রতিচ্ছবি। রাকসু যেকোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সংগঠন বা মতাদর্শের প্রভাবমুক্ত থেকে শুধু শিক্ষার্থীদের অধিকার, সুযোগ ও কল্যাণ নিয়েই কাজ করবেÑএমনটাই প্রত্যাশা করছি। রাজনৈতিক প্যানেলের প্রার্থীরা নির্বাচিত হলেও (যেমনটা ডাকসু, জাকসু ও গকসুতে হয়েছে) তাদের মূল দায়িত্ব হওয়া উচিত দলীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি ও স্বপ্নকে অগ্রাধিকার দেওয়া। আশা করছি, আমরা এমনটাই দেখতে পাব। আমি এমন রাকসু দেখতে চাই, যা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সর্বজনীন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ন্যায়, যুক্তি ও সততার পথে চলবে।’
শেখ নূরউদ্দিন আবীর
শিক্ষার্থী, পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন
‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুধু একাডেমিক ক্ষেত্রেই নন, সারা বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা আমাদের প্রতিভার জানান দিতে চাই। এ জন্য আমাদের দরকার একটি উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম। আমি মনে করি, রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছ থেকে তাদের প্রাপ্য অধিকার আদায় করে নেবেন এবং যার যার প্রতিভা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবেন। এটি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা একটি ভয়ভীতিমুক্ত, রাজনৈতিক আধিপত্যমুক্ত, ছাত্ররাজনীতির নেতিবাচক প্রভাবমুক্ত একটি নিরাপদ ও শিক্ষার্থীবান্ধব আধুনিক ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে চাই।
মোস্তাকুর রহমান জাহিদ
শিক্ষার্থী, এগ্রোনমি এন্ড এগ্রিকালচার এক্সটেনশন
‘আমি চাই একটি আধুনিক, নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার থাকবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে। শিক্ষার্থীরা গবেষণা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং জ্ঞানচর্চার মধ্য দিয়ে নিজেদের সম্ভাবনা বিকশিত করতে পারবেন। সংক্ষেপে বলতে গেলে, আমি চাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠুক একটি আদর্শ উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আবাসন সংকট। একই সঙ্গে শিক্ষার মানোন্নয়ন ও গবেষণার সুযোগ সীমিত। আধুনিক ল্যাব, পর্যাপ্ত বই ও ডিজিটাল রিসোর্স সেন্টারের অভাব শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বিকাশে বড় বাধা। এছাড়া ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। রাকসুর মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করতে চাই। রাকসু যদি কার্যকরভাবে কাজ করে, তাহলে প্রশাসনের জবাবদিহি বাড়বে এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবেন।
সৈয়দ সাকিব
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ
৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এক মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় আছি। ক্যাম্পাসে একটা উৎসবমুখর পরিবেশও বিরাজ করছে। রাকসু নিয়ে যদি বলি, তাহলে আমি এভাবেই বলব যে, এই নির্বাচনে ভোট প্রদানের মাধ্যমে আমার যে ন্যায্য হিস্যা, সেটিই আদায় করা সম্ভবপর হবে। বছরের পর বছর ধরে ছাত্র সংসদ বাবদ ফি নেওয়া হলেও নির্বাচন হয়নি। অর্থের হিসাব বাদ দিলেও এ নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা আমাদের পছন্দমতো শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচন করব, যারা আমাদের হয়ে ভয়েজ রেইজ করবে, বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে।
আমরা দেখেছি, বিভিন্ন সময়ে অযৌক্তিক কোনো ইস্যুতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যখনই আন্দোলন হয়েছে, তখন নির্বাচিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের অভাব আমরা বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছি। রাকসুর মাধ্যমে ভবিষ্যতে যদি কোনো ইস্যুতে আমাদের আবার রাস্তায় নামতে হয়, তখন আন্দোলনের ইমপ্যাক্ট অনেক বেড়ে যাবে। এছাড়া ক্যাম্পাসের মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধানের ক্ষেত্রে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে, কারণ তাদের ম্যানডেট থাকবে। সব মিলিয়ে বলব, রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে নেতৃত্ব বিকাশের যে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় ছিল, সেই অচলায়তনের নিরসন আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে শিগগিরই হতে যাচ্ছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডের পর স্থগিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আগামী ২৭ অক্টোবর পালিত হবে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।
৫ ঘণ্টা আগে১৮৪৬ সালের ১৬ অক্টোবর চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী দিন। বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে প্রথমবারের মতো এক রোগীর শরীরে ব্যথাহীন অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। দাঁতের চিকিৎসক ডা. উইলিয়াম মর্টন রোগী গিলবার্ট অ্যাবটের মুখে ইথার গ্যাস শ্বাসের মাধ্যমে প্রয়োগ করেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই রোগী
৫ ঘণ্টা আগেকরোনা ভ্যাকসিনের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষদের মধ্যে রয়েছে নানা ভুল ধারণা এবং অন্ধবিশ্বাস। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্ক্যাবিসসহ কিছু সংক্রামক চর্মরোগ মহামারির আকার ধারণ করেছে। বেশির ভাগ মানুষ বিশ্বাস করে, করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করার ফলে তাদের বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ হচ্ছে। আবার
৬ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগবালাই আবির্ভাব হয়। বাংলাদেশে হেমন্তকালের শেষের দিকে শীতকাল খুব কাছাকাছি চলে আসে। ঋতু পরিবর্তনের এ সময় তাপমাত্রার ওঠানামা ও শুষ্ক বাতাসের কারণে সর্দি-কাশি, জ্বরসহ অন্যান্য রোগব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা
৬ ঘণ্টা আগে