শিক্ষা ও গবেষণার মিলনমেলা: নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫: ২৪

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশ এবং দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জনজীবন ও সম্পদের সুষম ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। দুই দশকের এই একাডেমিক যাত্রায় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যথাযথ পাঠদান ও গবেষণার গুণগত মান বজায় রেখে দেশের অন্যতম একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ও ক্যাম্পাস পরিচিতি

বিজ্ঞাপন

২০০১ সালের ১৫ জুলাই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আইন জারি হয়। পরবর্তী সময়ে তৎকালীন সরকারের প্রচেষ্টায় নোয়াখালী জেলা শহর থেকে আট কিলোমিটার দক্ষিণে ১০১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য। দেশের ২২তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০০৬ সালের ২২ জুন এই ১০১ একর জায়গায় চারটি বিভাগ, ১৩ শিক্ষক ও ১৮০ শিক্ষার্থী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পথচলা শুরু হয়।

একাডেমিক প্রোগ্রাম

বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার সম্প্রসারণ ও বিকাশের বিকল্প নেই। এই বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে দেশের পঞ্চম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতটি অনুষদ রয়েছে। অনুষদগুলো যথাক্রমে—ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তি অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, জীববিজ্ঞান অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদ, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, শিক্ষাবিজ্ঞান অনুষদ এবং আইন অনুষদ। এসব অনুষদে মোট বিভাগের সংখ্যা ৩১টি। এছাড়া নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন সায়েন্সেস (আইআইএস) এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইটি) নামে দুটি ইনস্টিটিউটও রয়েছে। এ দুটি ইনস্টিটিউটে ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে দুটি অনার্স ও মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। অর্থাৎ অনুষদ ও ইনস্টিটিউট মিলিয়ে মোট ৩৩টি বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) পরিচালনা করছে নোবিপ্রবি। এছাড়া ইনস্টিটিউটগুলোয় ডিপ্লোমা প্রোগ্রামও চালু রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ৯ হাজার ২ জন এবং শিক্ষক রয়েছেন ৪১৬ জন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা ৯২। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের নিরলস প্রচেষ্টায় গবেষণার মান বৃদ্ধিকল্পে সম্প্রতি ১১টি বিভাগে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে।

nabipro

রিসার্চ এক্সিলেন্স

যথাযথ পাঠদানের পাশাপাশি গবেষণায় দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। জ্ঞানক্ষেত্রের বিভিন্ন শাখায় খ্যাতনামা ও স্কোপাস-ইনডেক্সড বিভিন্ন জার্নালে এ পর্যন্ত নোবিপ্রবি শিক্ষকদের ২ হাজার ২৩৬টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এসব গবেষণা প্রবন্ধ দেশ ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশংসা লাভ করেছে। প্রতি বছর সরকারের জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ বিষয়ক প্রকল্পের গবেষণার জন্য যে অনুদান প্রদান করা হয়, তাতে নোবিপ্রবি শিক্ষকদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ থাকে। এ বছর, অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নোবিপ্রবি থেকে এ গবেষণা অনুদান পেয়েছেন ১১টি বিভাগের ২০ শিক্ষক। এছাড়া নোবিপ্রবির গবেষণা কার্যক্রমকে সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য নোবিপ্রবি রিসার্চ সেল থেকেও গবেষকদের অনুদান প্রদান করা হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গবেষণা খাতে ২১৪ শিক্ষককে ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে নোবিপ্রবি রিসার্চ সেল থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের গবেষণা প্রতিবেদনের সংকলন নিয়ে ২০১৮ সাল থেকে নোবিপ্রবি রিসার্চ সেল কর্তৃক ‘জার্নাল অব নোয়াখালী সায়েন্স অব টেকনোলজি (JNSTU)’ নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, এটি একটি পিয়ার-রিভিউড জার্নাল। এই জার্নালের মান বৃদ্ধি ও অনলাইন ভার্সনকে আরো সহজতর করার লক্ষ্যে কাজ করছে নোবিপ্রবি রিসার্চ সেল। এছাড়া নোবিপ্রবির বাংলা বিভাগ থেকে ‘নোবিপ্রবি বাংলা বিভাগ গবেষণা পত্রিকা’ প্রকাশিত হয়, যেখানে ভাষা, সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি, ফোকলোর-বিষয়ক গবেষণা প্রবন্ধ ছাপা হয়। নোবিপ্রবির নতুন রিসার্চ ফাইন্ডিংগুলোর মধ্যে রয়েছে কাঁকড়ার সম্পূরক খাবার, মুরগির অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া, পানিতে ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিক কণার উপস্থিতি ও ক্যানসার-বিষয়ক গবেষণা।

র‌্যাংকিং ও স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলপমেন্ট সেল

র‌্যাংকিং ও স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলপমেন্ট সেল নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন প্রশাসনিক ইউনিট, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অগ্রগতি, বৈশ্বিক স্বীকৃতি ও কৌশলগত উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে। এই সেলের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্ববিদ্যালয়কে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং সূচকে অন্তর্ভুক্ত করা, একাডেমিক ও গবেষণামূলক কর্মক্ষমতা বিশ্লেষণ করা এবং গঠনমূলক ডেটা সংগ্রহ ও উপস্থাপনের মাধ্যমে নীতিনির্ধারকদের সহায়তা প্রদান করা। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যোগদানের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন এবং ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষ এক হাজারের মধ্যে স্থান অর্জনের লক্ষ্যে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ২০২৪ সালের ১৩ নভেম্বর র‌্যাংকিং বিষয়ে একটি কর্মশালায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আদনান মান্নানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ৬৫তম একাডেমিক কাউন্সিল সভায় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হককে আহ্বায়ক এবং ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফাহদ হুসাইনকে সদস্য সচিব করে ১৪ সদস্যবিশিষ্ট ‘র‌্যাংকিং উন্নীতকরণ কমিটি’ গঠন করা হয়। কমিটি সম্ভাব্যতা যাচাই ও সুপারিশ প্রদানের পাশাপাশি ২০২৫ সালের ১৬-১৭ ফেব্রুয়ারি এক কর্মশালার মাধ্যমে র‌্যাংকিং প্রক্রিয়া, বাস্তবায়ন পরিকল্পনা, ডেটা ব্যবস্থাপনা ও করণীয় বিষয় উপস্থাপন করে। পুরো প্রক্রিয়াটি আরো কাঠামোগত রূপ দিতে ২০২৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ৬৪তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় ‘র‌্যাংকিং সেল’ নামে একটি স্বতন্ত্র অফিস অনুমোদন দেওয়া হয়। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হককে পরিচালক এবং ড. ফাহদ হুসাইনকে অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ‘র‌্যাংকিং সেল’-এর কাজের পরিধি পুনর্মূল্যায়ন ও কৌশলগত সুপারিশ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য ২০২৫ সালের ১৭ মে অনুষ্ঠিত ৬৫তম রিজেন্ট বোর্ডের সভায় ‘র‌্যাংকিং সেল’-এর নাম সংশোধন করে ‘র‌্যাংকিং অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলপমেন্ট সেল’ নামকরণ করা হয়। র‌্যাংকিং ও স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলপমেন্ট সেলের কার্যকর নেতৃত্ব, দলগত প্রচেষ্টা ও তথ্যনির্ভর কর্মপ্রক্রিয়া আগামী দিনে নোবিপ্রবিকে একটি বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

noadd

উচ্চশিক্ষা, পিএইচডি ও স্কলারশিপ

নোবিপ্রবির ছাত্রছাত্রীরা আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কোরিয়া, চীন, তুরস্কসহ ইউরোপের নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেলোশিপ ও স্কলারশিপ নিয়ে এমএস, এমফিল ও পিএইচডি করছে। এ পর্যন্ত নোবিপ্রবির ১২টি বিভাগে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে এবং পিএইচডি ফেলোশিপ, প্রকাশনা প্রণোদনা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর যৌথ গবেষণার (মাস্টার্স) জন্য অনুদান প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন বিশ্বের শীর্ষ র‌্যাংকিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অধ্যয়নের সুযোগ পান, সে বিবেচনায় এশিয়া ও ইউরোপের উন্নত ও আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে ‘শিক্ষাসহযোগিতা’ (এমওইউ) চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা স্বীয় মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত বিষয়ভিত্তিক ও প্রায়োগিক জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এমওইউ

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত শিক্ষা ও গবেষণায় পারস্পরিক সহায়তার জন্য এ পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ৪৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। সম্প্রতি তুরস্কের আলানিয়া আলাদিন কেইকুবাত বিশ্ববিদ্যালয়, নিদে ওমর হালিসদেমির বিশ্ববিদ্যালয় ও আঙ্কারা ইয়েলদিরিম বায়োজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে।

সহশিক্ষা কার্যক্রম

প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রমকেও প্রাধান্য দিচ্ছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের শারীরিক-মানসিক বিকাশ ও ক্রীড়াক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে শরীরচর্চা বিভাগ। এই বিভাগের উদ্যোগে ছাত্রছাত্রীদের হলগুলোয় এবং কেন্দ্রীয় মাঠে বিভিন্ন ক্রীড়াবিষয়ক বিভিন্ন টুর্নামেন্ট ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সহশিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত বিদ্যমান ক্লাবগুলোকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বগুণ বিকাশে ‘জ্ঞান, শৃঙ্খলা ও একাত্মতা’ এই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে স্বেচ্ছাসেবামূলক সংগঠন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এবং রোভার স্কাউট গঠন করা হয়েছে। নোবিপ্রবির এই সংগঠন দুটির সদস্যরা বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদ্‌যাপনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহায়তা করে থাকে। ‘যুক্তিতে মুক্তি’ এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে এগিয়ে নিতে শিক্ষার্থীরা গড়ে তুলেছে ডিবেটিং সোসাইটি (এনএসটিউডিএস)। ছায়া জাতিসংঘ হিসেবে ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করে এনএসটিইউ মডেল ইউনাইটেড ন্যাশন্স অ্যাসোসিয়েশন (এনএসটিইউমুনা)। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য গণমাধ্যমে তুলে ধরার প্রয়াসে গড়ে তোলা হয়েছে নোবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি ও নোবিপ্রবি প্রেস ক্লাব। এছাড়া শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে শব্দকুটির, লুমিনারি, চলো পাল্টাই, ধ্রুপদ, নোবিপ্রবি ডান্স ক্লাব, অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব-সহ ৪৫টি ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবামূলক সংগঠন নোবিপ্রবিতে একযোগে কাজ করছে।

আবাসন সুবিধা

শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনে নোবিপ্রবিতে পাঁচটি সৌন্দর্যমণ্ডিত হল রয়েছে। হলগুলো হলো—ভাষাশহীদ আব্দুস সালাম হল, হযরত বিবি খাদিজা হল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক উকিল হল, নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী হল ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ছাত্রী হল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য আবাসন সংকট নিরসনে ৮০টি ফ্ল্যাটসমৃদ্ধ ১০ তলা টাওয়ার রয়েছে। এছাড়া প্রভোস্ট ও হাউস টিউটরদের জন্য ৩০টি ফ্ল্যাটের ১০তলা টাওয়ার এবং কর্মচারীদের জন্য ১০তলা একটি টাওয়ার রয়েছে।

শিক্ষা কার্যক্রম, গবেষণা, ভৌত অবকাঠামো ও আনুষঙ্গিক সুবিধা বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বর্তমান প্রশাসনের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে; যেমন শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম বৃদ্ধি, উন্নত মানের বহুতল একাডেমিক ভবন নির্মাণ, সেমিনার রুম, রিডিং রুম, উচ্চগতিসম্পন্ন ওয়াই-ফাই ও ইন্টারনেট, পরিবহন ও ল্যাব ফ্যাসিলিটি ইতোমধ্যে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া নির্মাণাধীন দশতলাবিশিষ্ট সাড়ে চার লাখ বর্গফুটের তৃতীয় একাডেমিক ভবন চালু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম পাবে নতুন গতি। যাবতীয় ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের গতি এগিয়ে নিতে বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও রিভার্স অসমোসিস প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। আবাসিক হলগুলোয় খাবারের মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে মশা নিধনের জন্য পর্যাপ্ত ফগার মেশিন আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য সুলভে উন্নত মানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে মেডিকেল সেন্টারের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। মেডিকেল সেন্টারের পক্ষ থেকে অগ্নিনির্বাপণ-বিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং হলগুলোয় ফার্স্ট এইড বক্স প্রদান, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও প্রায়োগিক জ্ঞান এবং গবেষণাকে সমৃদ্ধ করতে নোবিপ্রবি গ্রন্থাগারে ২৫ হাজার ৬৯৫টি বই, ৮০০টি জার্নাল, ১৪ হাজার ইলেকট্রনিক বই, ২ লাখ ৫০ হাজার গবেষণাভিত্তিক আর্টিকেল এবং সাড়ে তিন হাজার প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিষয়ক ইলেকট্রনিক জার্নাল সন্নিবেশ করা হয়েছে।

nommm

প্রস্তাবিত সমুদ্রসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট বাস্তবায়নের কাজ ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নোবিপ্রবি ময়নাদ্বীপ অঞ্চলকে দৃষ্টিনন্দন পরিযায়ী পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ভাষাশিক্ষাকে বিকশিত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক ভাষা ইনস্টিটিউট'। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অংশ হিসেবে নোবিপ্রবির ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণের আয়োজন করছে। ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সব অফিসকে ডি-নথি কার্যক্রমের আওতায় আনতে সরকারের উদ্যোগের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে এ বছর জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডি-নথি যুগে পদার্পণ করেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। নোবিপ্রবির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে—তৃতীয় একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজ সম্পন্নকরণ, প্রশাসনিক ভবনকে সম্প্রসারিত করা (এনেক্স ভবন), একাডেমিক ভবন-৪ নির্মাণ, টিএসসি, ক্রীড়া কমপ্লেক্স, বিশ্ববিদ্যালয় গেট, একটি ছাত্র ও একটি ছাত্রী হলের নির্মাণকাজসহ পাঁচটি নতুন কম্পোনেন্ট অন্তর্ভুক্তকরণ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার অব এক্সিলেন্স প্রকল্প চালু, ল্যাবরেটরি স্কুল প্রতিষ্ঠা, কেন্দ্রীয় মসজিদ দোতলাকরণ ও ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

রিসার্চ ফেয়ার ও একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫

২০২৫ সালের ২৩ জুন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদ্‌যাপন, রিসার্চ ফেয়ার ও একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মিলিত প্রয়াসে এ আয়োজন অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। গবেষণাকেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের যে স্বপ্ন আমরা দেখি, তা বাস্তবায়নে এই আয়োজনটি গবেষণা ও উদ্ভাবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সম্মানিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। রিসার্চ ফেয়ারের মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণার বহুমাত্রিকতা ও তাৎপর্য তুলে ধরা হয়েছে। যারা শিক্ষাক্ষেত্রে অনন্য কৃতিত্ব অর্জন করেছেন, তাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডের মাধ্যমে । এর মাধ্যমে ৭০ শিক্ষককে ভাইস-চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড ও রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড এবং ৩১ শিক্ষার্থীকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

ইউজিসির হিট প্রজেক্টে নোবিপ্রবির সাফল্য

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট) প্রজেক্টে অংশগ্রহণ করে নোবিপ্রবির ছয় শিক্ষক প্রায় ২০ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছেন এবং ওই প্রজেক্টে নোবিপ্রবি বর্তমানে সেরা ১০-এর মধ্যে অবস্থান করছে।

উপাচার্যের বক্তব্য

২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। জুলাই অভ্যুত্থানের এক মাসের মাথায় রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এক পত্রের মাধ্যমে এক গুরুদায়িত্ব দেওয়া হলো। অপেক্ষাকৃত নবীন এ অধ্যাপকের কাঁধে এলো নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্যের কার্যভার। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের আনন্দ, জুলাই অভ্যুত্থানে ঝরেপড়া তাজা প্রাণগুলোর স্মরণে অশ্রুজল, তারুণ্যের মিছিল আর স্লোগান থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সব অংশীজনের একরাশ প্রত্যাশা পূরণের একটি বড় চ্যালেঞ্জ—এমন মিশেল অনুভূতির মধ্য দিয়েই দায়িত্ব গ্রহণ করি। এ দায়িত্ব শুধু আমার জন্য নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি মানুষের জন্য ছিল একটি নতুন সূচনার প্রতীক। জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে দেশ যেমন নতুন পথের সন্ধানে ছিল, তেমনি নোবিপ্রবিও প্রত্যাশা করছিল নতুন দিগন্ত উন্মোচনের। গত এক বছরে আমরা শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও স্থানীয় জনগণের প্রত্যাশা পূরণের উদ্দেশ্যে একটি আধুনিক, গবেষণাভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল

উপাচার্য

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত