ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর

গবেষণা ও উদ্ভাবনের নবদিগন্তে

ড. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ১৯

দেশের প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিষয়ক শিক্ষার এক উজ্জ্বল অগ্রদূত ‘ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর’। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ডুয়েট দেশের প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণা, উদ্ভাবন এবং বিকাশে অনন্য অবদান রেখে চলেছে। ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া ডুয়েটের এই অগ্রযাত্রা একটি স্বপ্নপূরণের ইতিহাস। শিক্ষা, প্রযুক্তি ও শিক্ষার মান উন্নয়ন, গবেষণা, উদ্ভাবন, শিল্পক্ষেত্রে সুদৃঢ় সম্পৃক্ততা—এসবই ডুয়েটকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে।

প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও ক্যাম্পাস পরিচিতি : স্বপ্ন থেকে বাস্তবতার অগ্রযাত্রা

বিজ্ঞাপন

শিল্পনগরী গাজীপুরের সবুজ প্রকৃতির শান্ত ছায়াতলে দেশের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষার স্বপ্নতরী ডুয়েটের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮০ সালে ঢাকার তেজগাঁওয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে ‘কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং, ঢাকা’ নামে। ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠানটি ‘ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয় এবং ১৯৮৩ সালে স্থানান্তরিত হয় গাজীপুরের বর্তমান ক্যাম্পাসে। ১৯৮৬ সালে এটি রূপ নেয় ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি), ঢাকা’ নামে। সবশেষে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রকৌশল ও প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রসরমাণ বিশ্বের সঙ্গে সংগতি রক্ষা ও সমতা অর্জন এবং জাতীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা, আধুনিক জ্ঞানচর্চা ও শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি এবং সম্প্রসারণের নিমিত্তে মহান জাতীয় সংসদের আইনের মাধ্যমে এটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়ে স্বপ্নের বীজ রোপিত হয়। ‘প্রযুক্তিই প্রগতি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এক দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে নামকরণ করা হয় ‘ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর’। যাদের শ্রম, নিষ্ঠা ও ত্যাগের মাধ্যমে ডুয়েট আজকের এই অবস্থানে এসেছে, বিশেষ করে ডুয়েট নামকরণের আন্দোলনে যারা ভূমিকা রেখেছেন, তাদের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

রাজধানী থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার উত্তরে গাজীপুর শহরের বিআইডিসি সড়কে অবস্থিত মেইন ও দ্বিতীয় ক্যাম্পাস মিলে বর্তমানে ডুয়েটের মোট আয়তন প্রায় ২৫ দশমিক ২৯ একর। এর ভেতরেই আছে শহীদ আবু সাঈদ প্রশাসনিক ভবন, শহীদ শাকিল পারভেজ অডিটোরিয়াম, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম একাডেমিক ভবন, পুরোনো একাডেমিক ভবন, টেক্সটাইল ওয়ার্কশপ ভবন, শিক্ষার্থীদের জন্য বিজয় ২৪ হল, একটি ছাত্রী হলসহ সর্বমোট সাতটি আবাসিক হল এবং কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, কেন্দ্রীয় মসজিদ, ছাত্র কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

duet1

উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগ : জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন যাত্রা

প্রথমে আমি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের যাত্রায় আজ থেকে এক বছর আগে ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর আমি ডুয়েটের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি। এর আগে আমি বিভিন্ন সময়ে ডুয়েটের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালক, হলের দায়িত্বসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছি। আমি জাপানের নাগোয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে থার্মো-ফ্লুইড মেকানিক্সে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করি। পরে ২০১৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার ইনছিয়ন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং ২০১৫ সালে ইয়োনসেই ইউনিভার্সিটিতে পোস্টডক্টরাল রিসার্চ করেছি। যন্ত্রকৌশল বিভাগে শিক্ষকতা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রকল্পে কারিগরি বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করাসহ সব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমি প্রাণপণে ডুয়েটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেছি।

একই দিনে উপ-উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরেফিন কাওসার। তিনি ডুয়েটের ডিন, বিভাগীয় প্রধানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং জাপানের সাইতামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যন্ত্রকৌশল বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। যোগদানের পর আমাদের একটাই অঙ্গীকার ছিল—জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের ওপর যে গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, আমরা প্রত্যেকের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে তা পালন করব এবং ডুয়েটকে গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করব।

এম-ডুয়েট প্রকল্প : বিশ্বমানের ও উদ্ভাবনমুখী ডুয়েট গড়ে তোলার যুগান্তকারী পদক্ষেপ

গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুষ্ঠিত সভায় চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়েছে ‘ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর-এর গবেষণাগারসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ আধুনিকায়ন এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন (এম-ডুয়েট)’ শীর্ষক প্রকল্পটি।

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণাগার আধুনিকায়ন, ১১ হাজার ৫০৮ বর্গমিটার একাডেমিক ভবন এবং ৩৩ হাজার ৫০০ বর্গমিটার ল্যাবরেটরি ভবন নির্মাণ, নতুন ১ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন সুবিধা ও নিরাপত্তা এবং আন্তঃক্যাম্পাস যোগাযোগের উন্নয়ন। প্রকল্পটি ডুয়েটের বিদ্যমান একাডেমিক ও গবেষণা কার্যক্রমকে বিশ্বমানের ও উদ্ভাবনমুখী করে গড়ে তোলার জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।

অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প : নতুন বিভাগ-ইনস্টিটিউট চালুকরণ এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি

সম্প্রতি বাস্তবায়িত হয়েছে ‘ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর-এর অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম সংশোধনী)’। এ প্রকল্পের আওতায় প্রতিষ্ঠিত তিনটি আধুনিক ও গবেষণাভিত্তিক ইনস্টিটিউট এবং দুটি বিভাগে ইতোমধ্যে গ্র্যাজুয়েট ও পোস্টগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মেইন ক্যাম্পাসে শহীদ আবু সাঈদ প্রশাসনিক ভবন, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম একাডেমিক ভবন, টেক্সটাইল ওয়ার্কশপ ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের ফলে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আরো গতিশীল এবং শিক্ষার্থীদের সেবা সহজে ও দ্রুত প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। আবাসন সংকট নিরসনে নির্মাণ করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলের ছয়টি ফ্লোর এবং শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে বিজয় ২৪ হল, অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি ভবন, সুবিন্যাস্ত একাডেমিক ভবন এবং প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবনের কেন্দ্র আইসিটি ইনকিউবেটর নির্মিত হয়েছে। এই প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নের ফলে ডুয়েটের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে ব্যাপক সম্প্রসারণ ও গতিশীলতা ফিরে এসেছে।

ইউজিসির হিট প্রজেক্টসহ বিভিন্ন প্রজেক্ট : ডুয়েটের সুযোগ ও সাফল্য

সম্প্রতি ‘হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট)’ প্রকল্পের তিনটি উপ-প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইউজিসির সঙ্গে ডুয়েটের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই প্রকল্পগুলো ডুয়েটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। এছাড়া আগের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরে ডুয়েটের শিক্ষকদের জন্য ইউজিসির অর্থায়নে পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) দপ্তরের আয়োজনে ‘রিসার্চ প্রোজেক্ট অ্যাওয়ার্ডিং’ অনুষ্ঠানে ৩৪টি গবেষণা প্রকল্পের আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষায় উদ্ভাবনী পরিবেশ তৈরি, গবেষণা ও উদ্ভাবনের গতি বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের গবেষণায় সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।

আর্কিটেকচার বিভাগের আইএবি অ্যাক্রেডিটেশন : এক গৌরবময় স্বীকৃতি

ডুয়েটের আর্কিটেকচার বিভাগ এ বছর ৩০ এপ্রিল অর্জন করেছে ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ (আইএবি) কর্তৃক প্রদত্ত মর্যাদাপূর্ণ অ্যাক্রেডিটেশন সনদের মতো এক গৌরবময় স্বীকৃতি। এই সনদ ডুয়েটের শিক্ষার মান, শিক্ষকদের নিষ্ঠা এবং শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল দক্ষতার এক উজ্জ্বল স্বীকৃতি। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ডুয়েটের আর্কিটেকচার বিভাগ দেশের পেশাগত মানদণ্ডে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান অর্জন করেছে।

একাডেমিক উৎকর্ষ : হাতে-কলমে প্রকৌশল শিক্ষার অনন্য উদাহরণ

ডুয়েটের শিক্ষার্থীরা তাত্ত্বিক জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি হাতে-কলমে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করে। বর্তমানে এখানে পরিচালিত হচ্ছে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ও ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার (বিআর্ক) এবং পোস্টগ্রাজুয়েট পর্যায়ে এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, এম ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএসসি, পিজিডি, এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রাম। তবে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে শুধু ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং/আর্কিটেকচারে পাস করা শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম বর্ষে ভর্তি করা হয়।

এখানে চারটি অনুষদের অধীনে রয়েছে ১৪টি বিভাগ ও তিনটি ইনস্টিটিউট, একটি রিসার্চ সেন্টার। বিভাগগুলো হলো—সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, আর্কিটেকচার বিভাগ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, মেটেরিয়ালস অ্যান্ড মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, রসায়ন বিভাগ, গণিত বিভাগ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ এবং মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগ। ইনস্টিটিউটগুলো হলো—ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি এবং ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট। এছাড়া সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি রিসার্চ নামে একটি রিসার্চ সেন্টার রয়েছে। বর্তমানে ডুয়েট প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থী, ২৭৮ শিক্ষক, ১৫২ কর্মকর্তা, ৩৩৫ কর্মচারীসহ অসংখ্য অ্যালামনাই নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি প্রাণবন্ত একাডেমিক পরিবার।

গবেষণা ও কনসালট্যান্সি : আধুনিক ল্যাবরেটরি ও প্রযুক্তি সুবিধায় উদ্ভাবনী পরিবেশ

ডুয়েটের পাঠ্যক্রম পরিকল্পনায় রয়েছে তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক শিক্ষার সমন্বয়। প্রতিটি কোর্সের সঙ্গে যুক্ত থাকে আধুনিক ল্যাবরেটরি কার্যক্রম, প্রকল্পভিত্তিক শিক্ষা, শিল্প-প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ/অ্যাটাচমেন্ট, গবেষণামূলক কাজ এবং বাস্তব সমস্যার সমাধানভিত্তিক প্রজেক্ট। যেমন নির্মাণবিষয়ক প্রকল্পে শিক্ষার্থীরা কংক্রিট ও স্ট্রাকচার টেস্টিং এবং পরিবেশবান্ধব ও জলবায়ু-সহায়ক নির্মাণসহ নানা ধরনের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং এবং সফটওয়্যারভিত্তিক প্রকল্পে অংশগ্রহণ শিক্ষার্থীদের দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে। এখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শক্তি, থার্মোডাইনামিক্স, ফ্লুইড মেকানিক্স-সম্পর্কিত প্রকল্প পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থীদের পাওয়ার সিস্টেম কমিউনিকেশনস, ভিএলএসআই এবং স্মার্ট গ্রিড প্রযুক্তি নিয়ে কাজের সুযোগ করে দেয়। এখানে তুলা থেকে সুতা ও কাপড় তৈরি এবং রঙ করা, গার্মেন্ট টেক্সটাইলের গুণগত মান নিশ্চিত করা, টেক্সটাইল কম্পোজিট ও টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে পরিবেশ দূষণ রোধ, স্থাপত্য নকশা, থ্রিডি মডেলিং ও প্রজেক্ট ডিজাইনের কাজ এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, পুষ্টি, নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে পরিচালিত গবেষণা শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখার সুযোগ করে দেয়।

ডুয়েটের কনসালট্যান্সি রিসার্চ অ্যান্ড টেস্টিং সার্ভিস অফিসের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিল্প ও উন্নয়ন সংস্থাকে প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত পরামর্শ প্রদান, প্রকৌশল নকশা যাচাই, নির্মাণসামগ্রী ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতির গুণগত মান পরীক্ষণসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত সেবা দেওয়া হয়, যা দেশের প্রযুক্তি ও প্রকৌশল খাতের অগ্রগতি, শিল্পোন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

স্মার্ট ও প্রযুক্তিনির্ভর ক্যাম্পাস : একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার

ডুয়েটের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমকে গতিশীল এবং সেবা প্রদান প্রক্রিয়াকে আধুনিক, দ্রুত, স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর করার লক্ষ্যে আইসিটি সেল এবং কম্পিউটার সেন্টারের উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল সিস্টেম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে। যেমন—শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের প্ল্যাটফর্ম ই-লার্নিং, ভর্তি প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজ করার জন্য অ্যাডমিশন সিস্টেম উইথ রেজাল্ট প্রসেসিং প্ল্যাটফর্ম, শিক্ষার্থীদের কোর্স রেজিস্ট্রেশন, ফলাফল দেখা, একাডেমিক তথ্য সংরক্ষণসহ সব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইউজিআর ও পিজিআর সিস্টেম, গবেষণা ও প্রকাশনা কার্যক্রম আধুনিকায়নে জার্নাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিকে ডিজিটালাইজেশন, শিক্ষকদের একাডেমিক কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য ফ্যাকাল্টি প্রোফাইল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা ও ট্র্যাকিং প্রক্রিয়া সহজতর করার লক্ষ্যে সিএএসআর ম্যানেজমেন্ট পোর্টাল, বেতন, ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক লেনদেন অনলাইনে করার জন্য পে-রোল সিস্টেম, যানবাহন ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার পর্যবেক্ষণ এবং অনুমোদনের জন্য ভেহিকল ট্র্যাকার ও ট্রান্সপোর্ট রিকুইজিশন সিস্টেম, নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করতে অনলাইন জব অ্যাপ্লিকেশন সাবমিশন পোর্টাল এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে ডিজিটালাইজ করার লক্ষ্যে ডি-নথি এবং স্টেকহোল্ডারদের ছাড়পত্র-সংক্রান্ত ক্লিয়ারেন্স সিস্টেমসহ কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ক্যাম্পাস নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট ও ডিজিটাল ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু আছে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইল অ্যাকাউন্ট প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া ডুয়েট অ্যালামনাই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইদের একক নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, গবেষণা সহযোগিতা এবং সামাজিক উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহায়তা করছে।

কো-কারিকুলার ও এক্সট্রা-কারিকুলার কার্যক্রম : শিক্ষার সঙ্গে সৃজনশীলতার মেলবন্ধন

ডুয়েটে পড়াশোনার পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হয় কো-কারিকুলার ও এক্সট্রা-কারিকুলার কার্যক্রমে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) দপ্তরের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, নেতৃত্বগুণ, প্রযুক্তি দক্ষতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধের বিকাশে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠন। এগুলো হলো—ডুয়েট রোবোটিক্স ক্লাব, ডুয়েট ডিবেটিং সোসাইটি, সৃজনী, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, ডুয়েট ক্যারিয়ার অ্যান্ড রিসার্চ ক্লাব, ডুয়েট সাংবাদিক সমিতি, ডুয়েট টেক্সটাইল ক্যারিয়ার অ্যান্ড রিসার্চ ক্লাব, এএসসিই স্টুডেন্ট চ্যাপ্টার, ডুয়েট ম্যাথ ক্লাব, ডুয়েটিয়ান ব্লাড ডোনেশন সোসাইটি (স্বজন), সিআর ফোরাম, ডুয়েট কম্পিউটার সোসাইটি, স্থাপত্য সংঘ, ইইই স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, ডিএসএমই (ডুয়েট সোসাইটি অব মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারস), ডুয়েট ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, ডুয়েট স্পোর্টিং ক্লাব, ডুয়েট দাওয়াহ সার্কেল (ডিডিসি), বাণী অর্চনা সংসদ ও বৌদ্ধ ছাত্রকল্যাণ পরিষদ।

ডুয়েট রোবোটিক্স ক্লাব দেশের অন্যতম সেরা উদ্ভাবনী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে স্বীকৃতি, ডুয়েট ডিবেটিং সোসাইটির সৃজনশীল বিতর্ক চর্চা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ, ডুয়েট কম্পিউটার সোসাইটির প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কর্মশালা, ডুয়েট ম্যাথ ক্লাবের গণিত অলিম্পিয়াড, স্থাপত্য সংঘের নকশা, মডেল তৈরি ও ডিজাইন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ, সাংস্কৃতিক সংগঠন সৃজনীর নাটক, সংগীত, আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাবের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন ও প্রতিযোগিতার আয়োজন, ডুয়েট ফটোগ্রাফিক সোসাইটির ফটোগ্রাফির মাধ্যমে সৃজনশীলতার প্রকাশ, ডুয়েট সাংবাদিক সমিতির রিপোর্টিং তথা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা চর্চা, ব্লাড ডোনেশন সোসাইটির (স্বজন) নিয়মিত রক্তদান কর্মসূচি পরিচালনা এবং ডুয়েট দাওয়াহ সার্কেল (ডিডিসি), বাণী অর্চনা সংসদ, বৌদ্ধ ছাত্রকল্যাণ পরিষদ ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া ডুয়েট স্পোর্টিং ক্লাবের খেলাধুলার আয়োজন, সিআর ফোরাম এবং ডুয়েট ক্যারিয়ার অ্যান্ড রিসার্চ ক্লাব শিক্ষার্থীদের চাকরি বাজারে প্রস্তুত করতে সেমিনার, কর্মশালা ও গবেষণাভিত্তিক কার্যক্রম আয়োজন করে যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকের (শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র) বছরজুড়ে আন্তঃহল ও আন্তঃবিভাগ ক্রিকেট, ভলিবল, ফুটবলসহ বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় খেলাধুলায় অংশগ্রহণ এবং জিমনেসিয়াম পরিচালনাসহ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ইনডোর ও আউটডোর প্রতিযোগিতার আয়োজন শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ লাভে সহায়তা করছে।

শিক্ষার্থীদের আবাসন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা : নিরাপদ ও অনুপ্রেরণাদায়ক পরিবেশ

বর্তমান প্রশাসনের লক্ষ্য কেবল মানসম্মত শিক্ষা প্রদান নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সার্বিক জীবনমান উন্নয়ন এবং আধুনিক গবেষণার সুযোগ তৈরি করা। বর্তমানে ডুয়েটে আবাসিক হলগুলোয় রয়েছে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা, রিডিং রুম, গেস্ট রুম, ইনডোর গেমের সুবিধাসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা। হলগুলোয় খাবারের মানোন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ এবং নিরাপত্তা জোরদারের জন্য নেওয়া হয়েছে নানা ধরনের উদ্যোগ। ক্যাম্পাসজুড়ে মশানিধনের জন্য আধুনিক ফগার মেশিন ব্যবহার, শিক্ষার্থীদের অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণ প্রদান, শহীদ শাকিল পারভেজ অডিটোরিয়াম আধুনিকায়ন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন এবং বিভিন্ন ভবন ও হলে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ওয়াটার পিউরিফিকেশন প্লান্ট চালু করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সহজ করতে পরিবহন ব্যবস্থা উন্নতিকরণ এবং আধুনিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য মেডিকেল সেন্টার সম্প্রসারণ, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও উন্নত যন্ত্রপাতি সংযোজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবায়ও আনা হচ্ছে আরো নতুনত্ব।

ডুয়েটের সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারে রয়েছে ৩৮ হাজার ২৪১টি বইসহ জার্নাল, ই-বুক, অডিও-ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্ট ইত্যাদি মিলিয়ে প্রায় ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৮৩৬টি গ্রন্থাগার সামগ্রী মজুতসহ উন্নতমানের রিডিং রুম এবং উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা। শিক্ষার্থী ও গবেষকরা সহজেই এই বিপুল তথ্যভান্ডার ব্যবহার করে বিশ্বমানের গবেষণায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোলাবোরেশন, কনফারেন্স, সেমিনার : অর্জন ও সাফল্য

জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে প্রশাসনের মূল দৃষ্টি ছিল গবেষণা ও উদ্ভাবনের ওপর। এর ফলে সম্প্রতি একাধিক আন্তর্জাতিক কোলাবোরেশনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়েছে। ইতোমধ্যে জাপানের সাগা ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব ফুকুই, মালয়েশিয়ার সানওয়ে ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া পার্লিস, ব্রুনাইয়ের ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি ব্রুনাই, তুরস্কের সেলজুক ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, মেঘনা নিট কম্পোজিট লিমিটেড, ওয়ালটনসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন খ্যাতনামা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ডুয়েটের স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক জ্ঞান বিনিময়, যৌথ গবেষণা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান সম্প্রসারণ এবং উচ্চশিক্ষায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইজিআইএস, জাপানের জাইকাসহ বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বেশ কিছু আন্তর্জাতিক কনফারেন্স ডুয়েটের গবেষণা ও প্রকাশনার ক্ষেত্রকে সমৃদ্ধ করেছে। গত এক বছরে ২০টিরও অধিক কর্মশালা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণ শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের গবেষণায় নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে ডুয়েটে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স সেলের উদ্যোগে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয়ে কর্মশালা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণের আয়োজন হচ্ছে। এছাড়া ডুয়েটের গর্বিত অ্যালামনাইরা আজ দেশ-বিদেশের শিল্প, নির্মাণ, তথ্যপ্রযুক্তি, জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্বের মাধ্যমে মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে ডুয়েটের সুনাম বৃদ্ধি করে চলেছেন।

একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ও জব ফেয়ার : সম্মাননা ও শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের প্ল্যাটফর্ম

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২তম বর্ষপূর্তিতে ২০২৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর ‘ডুয়েট ডে-২০২৫’ অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষার্থীদের ডিনস অ্যাওয়ার্ড এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কিউ ওয়ান ইনডেক্স জার্নালে প্রকাশনার জন্য ‘একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ডুয়েট মসজিদের ডিজাইন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।

শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম বৃদ্ধিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে কোলাবোরেশনের জন্য এ বছর ১৬ জানুয়ারি দিনব্যাপী ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সপো অ্যান্ড জব ফেয়ার, ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি ৫০টিরও অধিক বিভিন্ন স্বনামধন্য ইন্ডাস্ট্রির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এই জব ফেয়ারের মাধ্যমে এবং পরবর্তী সময়ে ডুয়েটের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগদান করা হয়। এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) দপ্তরের মাধ্যমে ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং অ্যান্ড প্লেসমেন্ট সেন্টার (সিসিপিসি) বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

শেষ কথা

আমরা এমন এক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, যখন প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সাইবার সিকিউরিটিসহ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের প্রস্তুতি গ্রহণ করে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করাই এখন সময়ের দাবি। ডুয়েট সেই দায়িত্ব পালনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমাদের লক্ষ্য কেবল ডিগ্রি প্রদান নয়, বরং দেশের প্রকৌশল ও প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে টেকসই ও বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করা। আমি বিশ্বাস করি, আগামীতে ডুয়েট বিশ্বের শীর্ষ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাতারে পৌঁছে যাবে। ডুয়েটের শিক্ষক ও গবেষকদের আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা ও উদ্ভাবনকে অগ্রাধিকার এবং শিক্ষার্থীদের গ্লোবাল লিডার হিসেবে গড়ে তুলতে সবার সহযোগিতা চাই। আমরা চাই, আমাদের শিক্ষার্থীরা শুধু জ্ঞানে নয়, সততায়, চরিত্রে, প্রজ্ঞায় ও উদ্ভাবনী চিন্তায় নেতৃত্ব দেবে। প্রাণপ্রিয় এই ডুয়েট হবে এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে প্রযুক্তি ও মানবিকতা পাশাপাশি বিকশিত হয়ে শিক্ষা ও উদ্ভাবনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

বিষয়:

আমার দেশ
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত