মুরাদনগরে হিন্দু নারী ধর্ষণের প্রতিবাদে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জবি সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৫, ১৭: ১১

কুমিল্লার মুরাদনগরে হিন্দু নারী ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলেছেন, এই ঘটনা শুধু একটি নিপীড়নের চিত্র নয়—বরং এটি রাষ্ট্রের ব্যর্থতার নগ্ন উদাহরণ।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৯ জুন) দুপুরে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ফোরাম’-এর ব্যানারে শিক্ষার্থীরা ভাস্কর্য চত্বরে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন।

মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে আবার ভাস্কর্য চত্বরে ফিরে আসে। শিক্ষার্থীরা তখন স্লোগান দেন—“আমার বোন ধর্ষিতা কেন?”, “ধর্ষকদের বিচার কর”, “নিরাপত্তা দাও, না হয় গদি ছেড়ে দাও”।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা এখন প্রতিদিনের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ালেও রাষ্ট্র যেন নির্বিকার। প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা, বিচারহীনতা এবং রাজনৈতিক প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জবি শাখার সভাপতি ইভান তাহসীব বলেন, “প্রতিদিন ধর্ষণের খবর দেখে আমরা যেন অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি। অথচ এই অভ্যস্ততার মধ্যেও নিরাপত্তাহীনতা বেড়েই চলেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব ছিল মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কিন্তু তারা ব্যর্থ। মুরাদনগরের ধর্ষিতার চাচার বক্তব্য—‘কাল আমার ঘরেও এমন হতে পারে’—এই কথাটাই আমাদের সবাইকে নাড়া দেয়।”

গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী অরুণাভ আশরাফ বলেন, “ধর্ষণের পর ভিকটিম ব্লেমিং, স্লাট শেমিংয়ের মাধ্যমে অপরাধকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এটি ক্ষমতার অপব্যবহার। যতদিন সমাজ কাঠামোর এই পচন বদলাবে না, ততদিন নারীর নিরাপত্তা আসবে না।”

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুল আলম মারুফ বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার এলেও সংখ্যালঘু ও নারীর ওপর সহিংসতা থামেনি। বরং বেড়েছে। মুরাদনগরের ঘটনাও সেই ধারাবাহিক নিপীড়নেরই অংশ। কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া এই পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়।”

ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী সামিরা মৌ বলেন, “২৭ জুনের ধর্ষণের ঘটনা গণমাধ্যমে আসতে দুই দিন লেগে গেছে। ২৯ জুন জানা যায়, ৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশ তৎক্ষণাত ব্যবস্থা নেয়নি কেন? কারা চেয়েছিল এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে? শুধু এই ঘটনাই নয়—সাস্টে ধর্ষণ, বম আদিবাসী নারীদের নিপীড়ন, ভোলায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী হত্যাকাণ্ড—সবই প্রমাণ করে, নারীর নিরাপত্তায় আন্তরিক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সরকার।”

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, মুরাদনগরের ঘটনাসহ সব ধর্ষণ ও নিপীড়নের নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের গাফিলতি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও রাষ্ট্রীয় নীরবতা নিয়ে জবাবদিহির দাবি তোলেন তাঁরা।

বক্তারা হুঁশিয়ার করে বলেন, “রাষ্ট্র যদি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারকে এর রাজনৈতিক মূল্য দিতে হবে।”

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত