আয়াজ আহমদ বাঙালি
রাত যত গাঢ় হয়, বনের পাতায় পাতায় শব্দেরাও থেমে যায়। কিন্তু ঠিক তখনই ধীর পায়ে মাটি ছুঁয়ে এগিয়ে আসে এক বিস্ময়ের প্রতিনিধি। না, সে ভয়ংকর নয়, আক্রমণকারী নয়, এমনকি হিংস্রও নয়। তার শরীর আচ্ছাদিত বর্মের মতো কাঁপা কাঁপা আঁশে আর মুখটি যেন এক লাজুক ভ্রান্তির মতো কুঁচকে থাকা। সে প্যাঙ্গোলিন—প্রকৃতির সবচেয়ে নিরীহ অথচ সবচেয়ে শিকার হওয়া প্রাণী।
প্যাঙ্গোলিন নামটি এসেছে মালয় শব্দ ‘পেনগলিং’ থেকে, যার অর্থ ‘রোল আপ’ বা গুটিয়ে যাওয়া। এই প্রাণীটির প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আসলে তার নিজস্ব গুটিয়ে নেওয়ার ক্ষমতায়। বিপদ দেখলেই সে গোল হয়ে গুটিয়ে যায়, ঠিক যেন কোনো ধাতব বল। তার শরীর ঢেকে থাকে কেরাটিন দিয়ে তৈরি আঁশে এবং প্রতিটি আঁশ যেন তার অস্তিত্বের প্রহরী। অথচ এই আঁশই তার সবচেয়ে বড় অভিশাপ।
বিশ্বে আট প্রজাতির প্যাঙ্গোলিন রয়েছে—চারটি এশিয়ায়, চারটি আফ্রিকায়। বাংলাদেশে দেখা যায় ভারতীয় প্যাঙ্গোলিন, যা মূলত বনভূমি, পাহাড়ি অঞ্চল এবং ঘন ঝোপে বসবাস করে। প্যাঙ্গোলিন নিশাচর, একা চলাফেরা করে এবং ছোট ছোট পিঁপড়ের দলই তার প্রধান খাদ্য।
তাদের লম্বা জিভ প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পৌঁছায়, যেটি দিয়ে তারা গর্তের ভেতর থেকে পিঁপড়া ও উইপোকা সংগ্রহ করে। দাঁত নেই, চোখ ক্ষীণ, কিন্তু শ্রবণ ও গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা অত্যন্ত তীক্ষ্ণ।
এই প্রাণীটি শান্ত, সহিষ্ণু এবং নিঃশব্দ। সে কারো ক্ষতি করে না, নিজের অস্তিত্বের ঘোষণা দেয় না, এমনকি গাছ বা জমিরও কোনো ক্ষতি করে না। অথচ ঠিক এ কারণেই সে প্রতিরোধহীন হয়ে পড়েছে মানুষের হিংস্র লালসার কাছে। চীনা ও ভিয়েতনামী ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতিতে প্যাঙ্গোলিনের আঁশ ব্যবহৃত হয়, বলা হয় এটি ‘ঔষধি’—যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে তার কোনো ভিত্তি নেই।
শুধু আঁশ নয়, তার মাংসও কিছু দেশে বিলাসবহুল ‘ডেলিকেসি’ হিসেবে ধরা হয়। এ দুই কারণে বিশ্বজুড়ে প্যাঙ্গোলিন হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণী। প্রতিবছর হাজারে হাজারে প্যাঙ্গোলিন ধরা পড়ে, হত্যা করা হয়, চামড়া ছাড়িয়ে পাচার হয়ে যায় আন্তর্জাতিক বাজারে।
বন ধ্বংস, উন্নয়ন প্রকল্প, কৃষির বিস্তার এবং চোরাশিকার—সব মিলিয়ে প্যাঙ্গোলিনের অস্তিত্ব এক ভয়াবহ সংকটের মুখে। ইতিমধ্যে IUCN প্যাঙ্গোলিনকে Critically Endangered বা চরম বিপন্ন প্রাণী হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এখনো জানেই না এমন একটি প্রাণী তাদের চারপাশে ছিল বা আছে।
এই প্রাণীটি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্যাঙ্গোলিন প্রতিদিন প্রায় ৭০ মিলিয়ন পিঁপড়া ও উইপোকা খায়, যা কীটপতঙ্গের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাদের না থাকলে কৃষিজমি ও গৃহস্থালির ভারসাম্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রকৃতি কখনোই কোনো প্রাণীকে অপ্রয়োজনীয় করে সৃষ্টি করে না—প্যাঙ্গোলিন তার সবচেয়ে জীবন্ত প্রমাণ।
বিশ্বজুড়ে এখন অনেক সংস্থা, বনবিভাগ ও সচেতন মানুষ প্যাঙ্গোলিন রক্ষায় এগিয়ে আসছে। বনে পাহারা বসানো হয়েছে, পাচার প্রতিরোধে আইন কঠোর করা হচ্ছে এবং মানুষকে সচেতন করার জন্য চলছে প্রচারাভিযান। কিন্তু সময় যেন দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।
প্যাঙ্গোলিন আজও কোনো দূর বনভূমির পাতার নিচে নিঃশব্দে গুটিয়ে পড়ে আছে। তার চোখে ভাসে মানুষের লোভ, পায়ের নিচে জমা পড়ে আছে হাজার বছরের ভার। সে বাঁচতে চায়, কিন্তু মানুষের চোখে সে শুধু পণ্য। সে পথ খুঁজছে ফেরার অথচ সভ্যতা তাকে ঠেলে দিয়েছে বিলুপ্তির অন্ধ গলিতে।
একদিন যদি সব প্যাঙ্গোলিন মুছে যায় পৃথিবীর বুক থেকে, তখন হয়তো কারো কানে ভেসে আসবে একটি গুটিয়ে যাওয়া নীরব আত্মার দীর্ঘশ্বাস—‘আমি কারো ক্ষতি করিনি, তবু কেন আমি আর নেই?’
রাত যত গাঢ় হয়, বনের পাতায় পাতায় শব্দেরাও থেমে যায়। কিন্তু ঠিক তখনই ধীর পায়ে মাটি ছুঁয়ে এগিয়ে আসে এক বিস্ময়ের প্রতিনিধি। না, সে ভয়ংকর নয়, আক্রমণকারী নয়, এমনকি হিংস্রও নয়। তার শরীর আচ্ছাদিত বর্মের মতো কাঁপা কাঁপা আঁশে আর মুখটি যেন এক লাজুক ভ্রান্তির মতো কুঁচকে থাকা। সে প্যাঙ্গোলিন—প্রকৃতির সবচেয়ে নিরীহ অথচ সবচেয়ে শিকার হওয়া প্রাণী।
প্যাঙ্গোলিন নামটি এসেছে মালয় শব্দ ‘পেনগলিং’ থেকে, যার অর্থ ‘রোল আপ’ বা গুটিয়ে যাওয়া। এই প্রাণীটির প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আসলে তার নিজস্ব গুটিয়ে নেওয়ার ক্ষমতায়। বিপদ দেখলেই সে গোল হয়ে গুটিয়ে যায়, ঠিক যেন কোনো ধাতব বল। তার শরীর ঢেকে থাকে কেরাটিন দিয়ে তৈরি আঁশে এবং প্রতিটি আঁশ যেন তার অস্তিত্বের প্রহরী। অথচ এই আঁশই তার সবচেয়ে বড় অভিশাপ।
বিশ্বে আট প্রজাতির প্যাঙ্গোলিন রয়েছে—চারটি এশিয়ায়, চারটি আফ্রিকায়। বাংলাদেশে দেখা যায় ভারতীয় প্যাঙ্গোলিন, যা মূলত বনভূমি, পাহাড়ি অঞ্চল এবং ঘন ঝোপে বসবাস করে। প্যাঙ্গোলিন নিশাচর, একা চলাফেরা করে এবং ছোট ছোট পিঁপড়ের দলই তার প্রধান খাদ্য।
তাদের লম্বা জিভ প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পৌঁছায়, যেটি দিয়ে তারা গর্তের ভেতর থেকে পিঁপড়া ও উইপোকা সংগ্রহ করে। দাঁত নেই, চোখ ক্ষীণ, কিন্তু শ্রবণ ও গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা অত্যন্ত তীক্ষ্ণ।
এই প্রাণীটি শান্ত, সহিষ্ণু এবং নিঃশব্দ। সে কারো ক্ষতি করে না, নিজের অস্তিত্বের ঘোষণা দেয় না, এমনকি গাছ বা জমিরও কোনো ক্ষতি করে না। অথচ ঠিক এ কারণেই সে প্রতিরোধহীন হয়ে পড়েছে মানুষের হিংস্র লালসার কাছে। চীনা ও ভিয়েতনামী ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতিতে প্যাঙ্গোলিনের আঁশ ব্যবহৃত হয়, বলা হয় এটি ‘ঔষধি’—যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে তার কোনো ভিত্তি নেই।
শুধু আঁশ নয়, তার মাংসও কিছু দেশে বিলাসবহুল ‘ডেলিকেসি’ হিসেবে ধরা হয়। এ দুই কারণে বিশ্বজুড়ে প্যাঙ্গোলিন হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণী। প্রতিবছর হাজারে হাজারে প্যাঙ্গোলিন ধরা পড়ে, হত্যা করা হয়, চামড়া ছাড়িয়ে পাচার হয়ে যায় আন্তর্জাতিক বাজারে।
বন ধ্বংস, উন্নয়ন প্রকল্প, কৃষির বিস্তার এবং চোরাশিকার—সব মিলিয়ে প্যাঙ্গোলিনের অস্তিত্ব এক ভয়াবহ সংকটের মুখে। ইতিমধ্যে IUCN প্যাঙ্গোলিনকে Critically Endangered বা চরম বিপন্ন প্রাণী হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এখনো জানেই না এমন একটি প্রাণী তাদের চারপাশে ছিল বা আছে।
এই প্রাণীটি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্যাঙ্গোলিন প্রতিদিন প্রায় ৭০ মিলিয়ন পিঁপড়া ও উইপোকা খায়, যা কীটপতঙ্গের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাদের না থাকলে কৃষিজমি ও গৃহস্থালির ভারসাম্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রকৃতি কখনোই কোনো প্রাণীকে অপ্রয়োজনীয় করে সৃষ্টি করে না—প্যাঙ্গোলিন তার সবচেয়ে জীবন্ত প্রমাণ।
বিশ্বজুড়ে এখন অনেক সংস্থা, বনবিভাগ ও সচেতন মানুষ প্যাঙ্গোলিন রক্ষায় এগিয়ে আসছে। বনে পাহারা বসানো হয়েছে, পাচার প্রতিরোধে আইন কঠোর করা হচ্ছে এবং মানুষকে সচেতন করার জন্য চলছে প্রচারাভিযান। কিন্তু সময় যেন দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।
প্যাঙ্গোলিন আজও কোনো দূর বনভূমির পাতার নিচে নিঃশব্দে গুটিয়ে পড়ে আছে। তার চোখে ভাসে মানুষের লোভ, পায়ের নিচে জমা পড়ে আছে হাজার বছরের ভার। সে বাঁচতে চায়, কিন্তু মানুষের চোখে সে শুধু পণ্য। সে পথ খুঁজছে ফেরার অথচ সভ্যতা তাকে ঠেলে দিয়েছে বিলুপ্তির অন্ধ গলিতে।
একদিন যদি সব প্যাঙ্গোলিন মুছে যায় পৃথিবীর বুক থেকে, তখন হয়তো কারো কানে ভেসে আসবে একটি গুটিয়ে যাওয়া নীরব আত্মার দীর্ঘশ্বাস—‘আমি কারো ক্ষতি করিনি, তবু কেন আমি আর নেই?’
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন শিশির বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, শাকসু বানচালের চেষ্টা চলছে। শিক্ষার্থীরা এটা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। যদি আগামী সোমবার ভিসি এসে নির্বাচন কমিশন গঠন করে রোডম্যাপ ঘোষণা না করেন, তাহলে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের...
১ ঘণ্টা আগেসংগঠনের তথ্য, উপহার প্রদান, অনুভূতি বক্স এবং মেহেদি দেওয়ার জন্য উৎসবের ছাউনিতে চারটি আলাদা বুথ। সেখানে ছিল নারী শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। আয়োজকরা নতুন সদস্য আহ্বান ও প্রচারপত্র বিলি করেন। ফটকের সামনে একটি ব্যানারে লেখা, ‛প্রিয় ভাইয়েরা, ভেতরে প্রবেশ ও উঁকি মারা থেকে বিরত থাকুন।’
২ ঘণ্টা আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেছেন, ছাত্রদল নেতা ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে—কেউ যেন আইনের ফাঁক দিয়ে কেউ বেরিয়ে না যায়।
৩ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বোরকা ও পর্দাশীল নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। এই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা।
৩ ঘণ্টা আগে