অহংকারী পাখি হরিয়াল

তানজিলা মাহমুদ
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৩: ২৮

হরিয়াল পাখি দেখতে অনেকটা পায়রার মতো। চোখ, ঠোঁটের ধরন, পায়ের গঠন, আকার-আকৃতি পায়রার সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। কোনো কোনো হরিয়ালের পালকের রঙও পায়রাদের মতো হয়। তবে হরিয়ালদের স্বভাব-চরিত্র পায়রাদের চেয়ে একটু ভিন্ন। এদের হাবভাব এমন যে, এরা যেন পায়রাদের তুলনায় উঁচু জাতের পাখি।

হরিয়ালকে ইংরেজিতে Yellow Footed Green Pigeon বলা হয়। তার মানে, যারা এই পাখিটির ইংরেজি নাম রেখেছেন, তারাও মেনে নিয়েছেন এরা পায়রা বা কবুতরেরই সমগোত্রীয়। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Phoenicoptera.

বিজ্ঞাপন

হরিয়ালরা দেখতে পায়রার মতো হলেও এদের জীবনধারণ পদ্ধতিতে কিছু অমিল রয়েছে। যেমন হরিয়ালরা পায়রাদের মতো ধান, কাউন, তিল বা সরিষাজাতীয় শস্য খায় না। এরা সাধারণত ফল খেয়ে বেঁচে থাকে। পাকা ফুল এদের প্রিয় খাদ্য। হরিয়ালরা ঝাঁক বেঁধে ফলবতী গাছের ওপর চড়াও হয় এবং খুব সফলতার সঙ্গে ফল খেয়ে গাছটিকে ফলশূন্য করে দেয়।

পায়রারা গৃহপালিত পাখি, তবে হরিয়ালরা গৃহপালিত নয়। এরা বনের নিরিবিলি প্রান্তে বাস করে। খুঁটে খুঁটে শস্য খায় না বলে মাটিতেও নামে না। এ জন্যই এদের অহংকারী পাখি বলা হয়। এদের গড় আয়তন হয় পায়রাদের মতোই ৩৩ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার। গায়ের রঙ হলদেটে সবুজ। বুক থেকে গলা পর্যন্ত হলুদ রঙের প্রভাব বেশি থাকে। গায়ের রঙের কারণে এরা খুব সহজেই সবুজ পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে। একঝাঁক হরিয়াল যখন কোনো গাছে এসে বসে, তখন পাতা থেকে এদের আলাদা করে বোঝা যায় না। কোনো কোনো হরিল লাল-খয়েরি মেশানো রঙেও হয়।

বাসা বানিয়ে বাস করায় অভ্যস্ত হলেও হরিয়ালরা বাসা বানানোয় দক্ষ নয়। খড়কুটো দিয়ে এরা যেনতেনভাবে বাসা নির্মাণ করে। সেই বাসায় ডিম পাড়ে। তবে এদের বাসাতে প্রচুর ফাঁকফোকর থাকে বলে বেশিরভাগ ডিমই নিচে পড়ে গিয়ে ভেঙে যায়। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে মা হরিয়াল বাচ্চাকে খুঁটে খুঁটে ফল খাওয়ায়। আর কচি পাতা দিয়ে ঢেকে শত্রু পাখিদের কাছ থেকে বাচ্চাদের আড়াল করে রাখে।

হরিয়ালরা পায়রাদের মতো বাকুম বাকুম করে ডাতে না। এরা কুই… কুউ…উ…করে শিস দেয়। আজকাল ফলবতী গাছের সংখ্যা কমে আসায় ক্রমে ক্রমে হরিয়ালদের সংখ্যাও কমে আসছে। আমাদের কর্তব্য এই সুন্দর প্রজাতির পাখিদের রক্ষা করার জন্য সচেতন হওয়া।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত