শরতের পাখিদের কনসার্ট

বিচিত্র কুমার
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ২১

শরৎকাল এলে প্রকৃতি যেন নিজের হাতে এক বিশাল মঞ্চ সাজিয়ে ফেলে। আকাশে নীল রঙ গাঢ় হয়, সাদা মেঘেরা হালকা ভেসে বেড়ায়, কাশফুল হাওয়ায় দোলে আর শিউলির গন্ধ ভোরবেলা চারপাশ ভরিয়ে দেয়। এ সময়টাতেই শুরু হয় এক অদ্ভুত আয়োজন—পাখিদের কনসার্ট। এ কনসার্ট প্রকৃতির সঙ্গে পাখিদের মিলেমিশে তৈরি করা সুরের এক মনোমুগ্ধকর উৎসব।

প্রতিদিন ভোরের আলো ফুটতেই এই কনসার্টের শুরু। প্রথমে শালিকরা ঘুম ভাঙার ডাক দেয়, যেন কনসার্টের ঘণ্টা বাজছে। এরপর কাকরা তাদের গম্ভীর গলায় ঘোষণা করে—‘এবার অনুষ্ঠান শুরু হতে যাচ্ছে!’ ঠিক তখনই দোয়েল, কোকিল, টুনটুনি আর বাবুই একসঙ্গে মেলাতে থাকে নিজেদের সুর। কেউ টেনে দীর্ঘ ডাক দেয়, কেউবা ছোট ছোট সুরে ঝরঝর করে বাজাতে থাকে গান। মাঠের মাঝখান থেকে ঝাঁক বেঁধে আসা চড়ুই পাখিরা তো একেবারে কোরাস দলের মতো।

বিজ্ঞাপন

এই কনসার্টে মঞ্চ হলো খোলা আকাশ, দর্শক হলো প্রকৃতি নিজেই—গাছপালা, নদী, ফুল আর মানুষ। শরতের সোনালি রোদ যখন পাতায় পাতায় ঝরে পড়ে, তখন পাখিদের কণ্ঠস্বর যেন আরো মিষ্টি শোনায়।

পাখিদের কনসার্টের একটি শিক্ষণীয় দিকও আছে। পাখিরা একে অন্যের সঙ্গে মিলেমিশে গান গায়। দোয়েলের গান আলাদা, শালিকের গান আলাদা, আবার টুনটুনির ডাক একেবারেই ভিন্ন। তবু সবাই মিলেমিশে যখন গান গায়, তখন অপূর্ব সুরেলা পরিবেশ তৈরি হয় । এখান থেকেই শিশুরা শিখতে পারে—মিলেমিশে কাজ করলে পৃথিবী সুন্দর হয়। যেমন একটি ক্লাসে কেউ ভালো আঁকতে পারে, কেউ ভালো গান গাইতে পারে, আবার কেউ ভালো পড়তে পারে। যদি সবাই মিলে একে অন্যকে সহযোগিতা করে, তবে সবার প্রতিভা আরো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

আরো একটি শিক্ষা লুকিয়ে আছে এই কনসার্টের মধ্যে। পাখিরা কখনো কৃত্রিম আলো বা মাইক্রোফোন ব্যবহার করে না, তবু তাদের গান সবার হৃদয়ে পৌঁছে যায়। এর মানে হলো, প্রকৃতির জিনিসই সবচেয়ে সুন্দর। আমাদের অযথা প্রকৃতি নষ্ট না করে বরং তাকে ভালোবাসতে হবে। গাছে গাছে পাখি না থাকলে এই কনসার্টও থাকত না। তাই শিশুরা যেন গাছপালা কেটে না ফেলে, নদী-খাল ময়লা না করে, বরং প্রকৃতিকে নিজের বন্ধু হিসেবে দেখে—এই শিক্ষা নেওয়া খুব জরুরি।

শরতের এই পাখির কনসার্ট আমাদের মনে করিয়ে দেয়, বই-পুস্তকের পড়াশোনা যেমন জরুরি, তেমনি প্রকৃতি থেকে শেখাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভোরবেলার পাখিদের গান যেমন মনকে প্রফুল্ল করে, তেমনি শিশুদের শেখায় শৃঙ্খলা—কারণ পাখিরা প্রতিদিন একই সময়ে উঠে গান শুরু করে। এতে বোঝা যায়, সময়ের সঠিক ব্যবহার জীবনে আনন্দ আনে।

সবশেষে বলা যায়, শরতের পাখিদের এই কনসার্ট শুধু গান নয়, এটি প্রকৃতির উপহার। এটি শিশুদের মনে গড়ে তোলে আনন্দ, শৃঙ্খলা, সহযোগিতা আর প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা। তাই শরতের সকাল মানেই শুধু সাদা কাশফুল নয়, সোনালি রোদ নয়—বরং পাখিদের সুরেলা কনসার্ট, যা শুনে যে কেউ শিখতে পারে, পৃথিবীকে সুন্দর রাখতে হলে একসঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত