আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

এখনো ৭০ ভাগ মানুষ অক্সিজেন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত

স্টাফ রিপোর্টার
এখনো ৭০ ভাগ মানুষ অক্সিজেন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত
প্রতীকী ছবি

দেশের ৫৮ ভাগ জেলা সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেন চিকিৎসাব্যবস্থা থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মতো প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই বললেই চলে। ফলে ৭০ ভাগ মানুষ প্রয়োজনীয় ও মানসম্মত অক্সিজেন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত।

বিজ্ঞাপন

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই সংকট শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম-আয়ের দেশগুলোতে প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর বড় কারণ অক্সিজেন রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং জাতীয় অক্সিজেন রোডম্যাপ না থাকা।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রথমবারের মতো আয়োজিত অক্সিজেন সামিটে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ‘ন্যাশনাল রোডম্যাপ টু সেফ, অ্যাফর্ডেবল অ্যান্ড রিলেবল মেডিকেল অক্সিজেন ফর অল’ শিরোনামে সামিটটি আয়োজন করে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি), দ্য ল্যানসেট গ্লোবার হেলথ, এভরি ব্রেথ কাউন্টস এবং ইউনিটেইড। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।

সামিটে বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৩৭৪ মিলিয়ন মানুষের একিউট মেডিকেল কন্ডিশনে এবং অস্ত্রোপচারের সময় অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। এ জন্য প্রতি বছর বিশ্বে ন্যূনতম ১ দশমিক ২ বিলিয়ন কিউবিক মিটার মেডিকেল অক্সিজেনের দরকার হয়। যাদের মেডিকেল অক্সিজেনের দরকার হয়, তাদের মধ্যে প্রায় ৩০৬ মিলিয়ন (৮২ শতাংশ) মানুষই বসবাস করেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।

তাৎক্ষণিক বা জরুরি প্রয়োজন (অ্যাজমা, অ্যানিমিয়া ও ডায়রিয়া) ও অস্ত্রোপচারের সময় বিপুল পরিমাণ মেডিকেল অক্সিজেন দরকার হয় এসব দেশে। সে হিসাবে বাংলাদেশেও অক্সিজেনের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান রয়েছে। বিশেষ করে জেলা ও উপজেলার মতো প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে। মেডিকেল অক্সিজেনের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে হাজার হাজার জীবন বাঁচানো সম্ভব বলে উল্লেখ করেন তারা।

অনুষ্ঠানে ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ কমিশনের কমিশনার ড. শামস এল আরেফিন তার গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে মেডিকেল অক্সিজেন সেবার কাভারেজে বড় ধরনের ঘাটতি ও বৈষম্য বিদ্যমান। এসব দেশে তীব্র অসুস্থতা বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয়তায় অক্সিজেন দরকার এমন প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে মাত্র ৮৯ মিলিয়ন (৩০ ভাগেরও কম) মানুষ পর্যাপ্ত অক্সিজেন থেরাপি পাচ্ছেন। অর্থাৎ এখনো প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ প্রয়োজনীয় অক্সিজেন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। এই ঘাটতি এইচআইভি/এইডস (২৩ শতাংশ) ও যক্ষ্মা (২৫ শতাংশ) চিকিৎসার ঘাটতির তুলনায় অনেক বেশি।

তীব্র অসুস্থ রোগীদের মধ্যে অক্সিজেন প্রাপ্যতার দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে সাব সাহারান আফ্রিকা, যেখানে মাত্র ৯ শতাংশ (১ দশমিক ৮ মিলিয়ন) মানুষ অক্সিজেন পাচ্ছেন, যদিও প্রয়োজন প্রায় ২১ মিলিয়ন মানুষের। এরপর রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া। এখানে ৩২ দশমিক ১ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে মাত্র ২২ ভাগ (৭ মিলিয়ন) অক্সিজেন সেবা পাচ্ছেন।’

আরেক বিজ্ঞানী ড. আহমেদ এহসানূর রহমান ‘দ্য ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ কমিশন রিপোর্ট অন মেডিকেল অক্সিজেন সিকিউরিটি’র প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত বৈশ্বিক তথ্য তুলে ধরে জানান, ‘বিশ্বের ৯ মিলিয়ন রোগী দীর্ঘমেয়াদে (সিওপিডি রোগে) মেডিকেল অক্সিজেন ব্যবহার করেন। এর মধ্যে ৮২ ভাগ মানুষ দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকার মতো অঞ্চলগুলোতে বাস করেন। বিশ্বের অনেক দেশেই মেডিকেল অক্সিজেনের সরবরাহ বেশ অপ্রতুল।’

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, দেশে বর্তমানে অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য ২৯টি পিএসএ প্লান্ট কার্যকর। এখনো ৭০টি অকার্যকর অবস্থায় আছে। এগুলো চালু করা দরকার। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি ন্যাশনাল অক্সিজেন নেটওয়ার্ক দাড় করানোর চেষ্টা করছি। অক্সিজেন প্রাপ্যতায় এখনো ব্যবধান আছে, কিন্তু এ নিয়ে কাজ করছি। বর্তমান সরকার অক্সিজেনকে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ হিসেবে ঘোষণা করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।’

আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘মেডিকেল অক্সিজেনের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে আমরা হাজার হাজার জীবন বাঁচাতে সক্ষম হব। বিগত কয়েক বছরে দেশে অক্সিজেন উৎপাদনে অনেকখানি এগিয়েছি। তবে তা পর্যাপ্ত না। মানুষের দীর্ঘমেয়াদি অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে। সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবার একযোগে কাজ করার মধ্য দিয়ে এ সমস্যা মোকাবিলা করতে পারি।’

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন