জন্ডিস ও এর প্রতিকার

ডা. মো. জমশেদ আলম খান
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৯: ০৪

হেপাটাইটিস একটি সংক্রামক রোগ। এই রোগটির ভাইরাস যখন আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, তখন আমরা হেপাটাইটিস বা জন্ডিস নামক রোগে আক্রান্ত হই। এই ভাইরাস খাদ্য ও পানির সঙ্গে এবং অনেক সময় রক্তের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। হেপাটাইটিস ভাইরাস পাঁচটি-যেমন : হেপাটাইটিস এ ভাইরাস, হেপাটাইটিস বি ভাইরাস, হেপাটাইটিস সি ভাইরাস, হেপাটাইটিস ডি ভাইরাস এবং হেপাটাইটিস ই ভাইরাস। এই ভাইরাসগুলোর মধ্যে হেপাটাইটিস এ ভাইরাস এবং হেপাটাইটিস ই ভাইরাস খাদ্য ও পানির মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি ভাইরাস রক্ত ও সেক্সের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস ই ভাইরাস আমাদের শরীর তিন মাসের বেশি থাকে না কিন্তু হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি ভাইরাস আমাদের শরীরের দীর্ঘদিন অবস্থান করে। হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি ভাইরাসকে নটোরিয়াস ভাইরাস বলা হয়। কারণ তারা আমাদের দেহে দীর্ঘমেয়াদি রোগের সৃষ্টি করে থাকে। ভাইরাসগুলোর শরীরে অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে ভাইরাল হেপাটাইটিস বা জন্ডিসকে দুভাগে ভাগ করা যায়। একটি হচ্ছে স্বল্পমেয়াদি হেপাটাইটিস বা অ্যাকিউট হেপাটাইটিস আর অন্যটি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি হেপাটাইটিস বা ক্রনিক হেপাটাইটিস। স্বল্পমেয়াদি বলতে আমরা বুঝি, যে জন্ডিসটি আমাদের দেহে তিন মাসের কম সময় অবস্থান করে আর দীর্ঘমেয়াদি জন্ডিসটি আমাদের দেহে তিন মাসের অধিক সময় অবস্থান করে। আজ আমরা অ্যাকিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস নিয়ে আলোচনা করব। আগেই বলেছি, ভাইরাল হেপাটাইটিস এ এবং ভাইরাল হেপাটাইটিস ই অ্যাকিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস ছড়ায়। ভাইরাল হেপাটাইটিস বি এবং ভাইরাল হেপাটাইটিস সি অ্যাকিউট ও ক্রনিক হেপাটাইটিস ছড়ায়।

অ্যাকিউট ভাইরাল হেপাটাইটিসের উপসর্গ

বিজ্ঞাপন

১. জন্ডিস অর্থাৎ চোখ হলুদ হওয়া।

২. প্রস্রাব হলুদ হওয়া।

৩. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।

৪. ক্ষুধামান্দ্য।

৫. পেটের ওপর ভাগের ডানদিকে মৃদু ব্যথা অনুভব করা।

অ্যাকিউট ভাইরাল হেপাটাইটিসের লক্ষণ

১. জন্ডিস।

২. আপার abdominal টেন্ডারনেস।

অ্যাকিউট ভাইরাল হেপাটাইটিসের জটিলতা

১. একুড লিভার ফেলিওর।

২. ক্রনিক হেপাটাইটিস।

ভাইরাল হেপাটাইটিসের পরীক্ষা

লিভার ফাংশন টেস্ট যেমন সেরাম বিলিরুবিন, এএলটি, অ্যালকালাইন ফসফাটেজ, প্রথম মিন টাইম।

ভাইরাল মার্কার : এন্টি এইচএভিআইজিএম, এন্টি এইচইভিআইজিএম, এইচবিএসএজি, এন্টি এইচসিভি, আলট্রাসনোগ্রাম অব হেপাটোবিলিয়ারি সিস্টেম।

চিকিৎসা

১. পূর্ণ বিশ্রাম চার হতে ছয় সপ্তাহ।

২. স্বাভাবিক খাবার। স্বাভাবিক খাবার কাকে বলে? রোগী অসুখ হওয়ার আগে যা খেতু, এখনো তাই খাবে, বাড়ির লোক যা খায়, সে তাই খাবে। একই পাতিলে রান্না, একই ধরনের তেল, ঝাল, হলুদ ও লবণ। রোগীর জন্য কোনো পৃথক রান্নার প্রয়োজন নেই। রোগী তৈলাক্ত খাবার খাবে না। যেমন : গুরুর মাংস, খাসির মাংস, বাইরের খাবার, ফাস্টফুড, দাওয়াত, শিঙাড়া, পুরি ও লুচি।

শরবত খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। যেমন : গুড়ের শরবত, চিনির শরবত, লেবুর শরবত, ডাবের পানি ইত্যাদি। এগুলো খাবার কোনো প্রয়োজন নেই। মনে রাখবেন, আপনার হয়েছে জন্ডিস লিভারের রোগ, লিভার ভালো না হওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত শরবত খেয়ে কিডনির লোড বাড়ানোর দরকার নেই। তৃষ্ণা লাগলে পানি খাবেন, তৃষ্ণা না লাগলে পানি খাওয়ারও প্রয়োজন নেই।

কিছু ওষুধ

১. আরসোকল ৩০০ এমজি একটি করে দিনে দুবার এক মাস।

২. গ্যাসের বড়ি যেমন ইসোমি প্রাজোল ২০ একটি করে দিনে দুবার এক মাস।

৩. পায়খানা না হলে সিরাপ ল্যাকটুলোজ তিন চামচ করে রাতে এক মাস।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান লিভার বিভাগ

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ

বিষয়:

জন্ডিস
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত