সিজোফ্রেনিয়ার ঝুঁকি ও চিকিৎসা

ডা. বুলবুল আহমদ খান
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ৫০

সিজোফ্রেনিয়ার প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে অযৌক্তিক সন্দেহ, গায়েবি আওয়াজ শোনা, অসংলগ্ন আচরণ, অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা এবং বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া। সাধারণত ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে। তবে কিছু ক্ষেত্রে ৪০ বছরের কাছাকাছি বয়সেও এটি দেখা দিতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির আত্মহত্যার প্রবণতা সাধারণ মানুষের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। তখন তাকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করতে হয়। চিকিৎসা নিলে রোগী স্বাভাবিক জীবনে আসতে পারে। চিকিৎসা না করালে এটি বেশি মাত্রায় বেড়ে যায়। তাতে দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে অসুবিধা হয়। সিজোফ্রেনিয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

গবেষণায় দেখা গেছে, বংশগত প্রভাব মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা এবং মানসিক চাপের মতো পরিবেশগত কারণগুলো এই রোগের জন্য দায়ী হতে পারে। পরিবারে কারো এ রোগ থাকলে অন্য সদস্যের ঝুঁকি বেড়ে যায় । শৈশব ও কিশোর বয়সে বিরূপ অভিজ্ঞতা স্বীকার হওয়া, যেমনÑ শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন। অথবা কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তীব্র মানসিক চাপের সম্মুখীন হওয়া, কিশোর বা তরুণ বয়সে গাঁজা, ইয়াবা কোকেন ইত্যাদি নেশা করলে।

এ রোগের চিকিৎসা

ওষুধ সেবনে রোগের তীব্রতা কমবে এবং জীবনযাত্রায় ও সামাজিক জীবনে তার প্রতিফলন ঘটবে। আস্তে আস্তে ভ্রান্ত বিশ্বাস, গায়েবি কথা শোনার মতো অভিজ্ঞতা কমবে। চিন্তাভাবনায় স্বাভাবিকতা আসবে, উদ্যম ফিরে আসবে ও নিজের কাজ নিজে করতে পারবে। যখন চিকিৎসার ফলে রোগের উন্নতি হতে থাকে, তখন চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সাইকোথেরাপির মাধ্যমে চিন্তাভাবনা সমস্যাগুলো কমতে সাহায্য করে। মানসিক চাপ কমাতে ও মোকাবিলা করতে রোগীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। রোগ ফিরে আসার প্রাথমিক লক্ষণগুলো চেনানো হয়, যেন দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারে। দৈনন্দিন কাজকর্মে বেশিরভাগ তেজস্ক্রিয় রোগীর সাহায্য প্রয়োজন হয়। এ জন্য তাদের সামাজিক দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যাতে করে আগের চেয়ে ভালোভাবে দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে পারে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সিজিপি নিয়ে রোগীর পরিবারের সদস্যদের তার সঙ্গে কীভাবে চলতে হবে, তার রোগের লক্ষণগুলো কীভাবে সামলাতে হবে, তার জন্য ফ্যামিলি থেরাপি দিতে হয়। রোগীর কাজের জন্য ও চাকরির জন্য সাহায্যের প্রয়োজন হয়। সিজোফ্রেনিয়ার মতো গুরুতর মানসিক সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা রোগী ও তার পরিবারের জন্য খুবই কঠিন। এ জন্য চিকিৎসক ও টিমের সঙ্গে শক্তিশালী ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং যোগাযোগ রক্ষা করাও রোগের ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করবে। পরিবার ও বন্ধুদের সিজোফ্রেনিয়া রোগ সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলে বুঝতে পারবেন এই রোগের চিকিৎসা কেন গুরুত্বপূর্ণ । এতে রোগীর সঙ্গে সহানুভূতিশীল হতে সাহায্য করবে পরিবারের লোকদের।

এ ছাড়া পরিবার ও সমাজের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রোগীকে চিকিৎসার জন্য। তার মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া দরকার। চিকিৎসা না করালে সিজোফ্রেনিয়া রোগের সামাজিক ও পেশাগত জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ঘুমের ওষুধ থেকে জীবনধারার পরিবর্তনের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে বেশি।

সিজোফ্রেনিয়া রোগীকে প্রভাবিত করে

  • আত্মহত্যার চেষ্টা ও আত্মহত্যার চিন্তা করা।
  • এনজাইটি ডিসঅর্ডার ও শুচিবায়ু রোগে আক্রান্ত হওয়া।
  • বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়া।
  • সিগারেট, মদ বা অন্যান্য মাদকের নেশা বেশি মাত্রায় করা।
  • দারিদ্র্য ও উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়া।
  • সামাজিক বিচ্ছিন্নতা।
  • স্বাস্থ্য ও চিকিৎসায় জটিলতা।
  • নির্যাতিত হওয়া।
  • হিংসাত্মক ও আক্রমণাত্মক আচরণ করা। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিজোফ্রেনিয়া রোগী নিজে পরিস্থিতির শিকার হয়।
  • অন্যান্য শারীরিক রোগ ও তার জটিলতা বেড়ে যাওয়া।

সিজোফ্রেনিয়া রোগী নিজের লক্ষণ বা তার সমস্যা বুঝতে পারে না। তাই পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধবদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসতে হয়। পরিচিত কারো এমন লক্ষণ থাকলে তার সঙ্গে কথা বলুন। কারোর সাহায্যের জন্য উৎসাহিত করুন। চিকিৎসা নেওয়ার জন্য সাহায্য করুন। মনোযোগ বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা নেওয়ার সময় তার সঙ্গে যেতে পারেন। কিন্তু আপনি তাকে জোর করতে বা বাধ্য করতে পারেন না। রোগী যদি নিজের জন্য বা অন্যের জন্য বিপজ্জনক হয়, খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়, নিজেকে ঘরে আটকে রাখে, তবে জরুরি পরিষেবা ৯৯৯-এ ফোন করতে পারেন। জরুরি পরিষেবার সাহায্য নিয়ে চিকিৎসা করানো জরুরি। সিজোফ্রেনিয়া একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ হলেও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ

উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত