স্তন ক্যানসারের চ্যালেঞ্জ

ডা. মো. রিফাত জিয়া হোসেন
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১০: ৩০

স্তন ক্যানসার হলো এক ধরনের ক্যানসার, যা স্তনের কোষে শুরু হয়। এটি তখন ঘটে যখন স্তন কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং একটি পিণ্ড বা ভর তৈরি করে, যা প্রায়ই ইমেজিং বা শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। এটি মূলত মহিলাদের প্রভাবিত করলেও পুরুষদেরও স্তন ক্যানসার হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

স্তন ক্যানসারের প্রকারভেদ

স্তনের নির্দিষ্ট কোষগুলোর ওপর ভিত্তি করে স্তন ক্যানসার শ্রেণিবদ্ধ করা হয়, যেগুলো ক্যানসারে পরিণত হয়। প্রধান প্রকারগুলোর মধ্যে রয়েছে—

১. ডাক্টাল কার্সিনোমা ইন সিটু (DCIS) : একটি অ-আক্রমণাত্মক ক্যানসার, যেখানে অস্বাভাবিক কোষগুলো স্তন নালির আস্তরণে পাওয়া যায়। এটি নালির বাইরে ছড়িয়ে পড়ে না।

২. ইনভেসিভ ডাক্টাল কার্সিনোমা (IDC) : সবচেয়ে সাধারণ প্রকার। দুধনালিতে শুরু হয় এবং কাছাকাছি টিস্যু আক্রমণ করে।

৩. ইনভেসিভ লোবুলার কার্সিনোমা (ILC) : দুধ উৎপাদনকারী লোবিউলে শুরু হয় এবং কাছাকাছি টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

৪. ট্রিপল-নেগেটিভ স্তন ক্যানসার : ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন ও HER2 রিসেপ্টরের অভাব। আরো আক্রমণাত্মক এবং চিকিৎসা করা কঠিন।

৫. HER2-পজিটিভ স্তন ক্যানসার : HER2 প্রোটিন অতিরিক্ত উৎপাদন করে, যার ফলে কোষের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। প্রায়ই লক্ষ্যযুক্ত থেরাপিতে ভালো সাড়া দেয়।

৬. প্রদাহজনক স্তন ক্যানসার : বিরল ও আক্রমণাত্মক। স্তনে ফোলাভাব, লালভাব ও উষ্ণতা সৃষ্টি করে।

৭. মেটাস্ট্যাটিক (চতুর্থ পর্যায়) স্তন ক্যানসার : হাড়, লিভার, ফুসফুস বা মস্তিষ্কের মতো শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশে স্তন ক্যানসার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে, যেখানে উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান এর প্রভাব তুলে ধরেছে। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের (IARC) একটি প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে প্রতি বছর প্রায় ১২ হাজার ৭৬৪ মহিলা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন, যার ফলে প্রতি বছর ৬ হাজার ৮৪৪ জন মারা যান। বিশ্বব্যাপী গড় বয়স ৪৫ বছর হলেও বাংলাদেশে এটি ৩৫ বছর, যা তরুণ মহিলাদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বেশি বলে ইঙ্গিত দেয়।

বিলম্বিত রোগ নির্ণয় এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ স্তন ক্যানসার রোগী ছয় মাসেরও বেশি সময় বিলম্বের পরেই চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেন, যদিও ৮৩ শতাংশ স্তন ক্যানসারের লক্ষণ, যেমন পিণ্ডের মতো লক্ষণীয় লক্ষণ অনুভব করেন। এই বিলম্ব মূলত সামাজিক নিষেধাজ্ঞা ও সচেতনতার অভাবের জন্য দায়ী। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ ও জনসচেতনতার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তারা ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারণার পক্ষে এবং মহিলাদের নিয়মিত স্ক্রিনিং করার জন্য উৎসাহিত করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় সফল চিকিৎসার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৯০ শতাংশ স্তন ক্যানসার রোগী সময়মতো এবং উপযুক্ত যত্নের মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। চিকিৎসার অবকাঠামোর দিক থেকে বাংলাদেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। ঢাকায় বেশ কয়েকটি বিস্তৃত ক্যানসার কেন্দ্র রয়েছে, যা রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে সার্জারি, কেমোথেরাপি, লক্ষ্যযুক্ত থেরাপি এবং রেডিওথেরাপি-সহ বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি পর্যন্ত পরিষেবা প্রদান করে। উল্লেখযোগ্যভাবে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ও হাসপাতাল (NICRH) বছরের পর বছর ধরে সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে এবং এটিকে এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীত করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

মাওলানা মুহিবুল্লাহ মাদানি নিখোঁজ, সন্দেহের তীর ইসকনের দিকে

সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন তালুকদারের মৃত্যুতে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের শোক

রাবাদার রেকর্ডে স্বস্তিতে প্রোটিয়ারা

যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভ নিয়ে খামেনির উপহাস

হোয়াইট হাউসে বলরুম নিয়ে রহস্য, নির্মাণে টাকা দিচ্ছে কারা

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত