কোলন ক্যানসারের স্ক্রিনিং

ডা. মইনুদ্দিন আহমেদ
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৩

আমরা কীভাবে কোলন ক্যানসারকে আগে থেকে নির্ণয় করতে পারি এবং এর জন্য সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি নিরূপণ করতে পারি? আমাদের সমাজের কমন রোগগুলো প্রতিরোধ করার জন্য যে পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হয়, সেই পদ্ধতিকে স্ক্রিনিং বলে। যেহেতু কোলন ক্যানসার আমাদের সমাজে খুব বেশি অপরিচিত নয়, সেহেতু এর জন্য স্ক্রিনিং প্রয়োজন। যদিও উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় কোলন ক্যানসার আরো বেশি পরিচিত হওয়ার কারণে সেখানে এর স্ক্রিনিং প্রতিনিয়তই হয়। কিন্তু আমাদের দেশসহ তৃতীয় বিশ্বের অন্য দেশগুলোয় কোলন ক্যানসারের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সে রকম কোনো স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম নেই। ফলে এ ব্যাপারে ব্যক্তিগত উদ্যোগ থাকা দরকার, যাতে আমরা এবং আমাদের পরিবার এই রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারি।

বিজ্ঞাপন

আমাদের সমাজে যারা কোলন ক্যানসারের রোগী আছে, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই Sporadic, অর্থাৎ পারিবারিকভাবে কোলন ক্যানসারের কোনো ইতিহাস ছাড়াই হঠাৎ করেই সমাজে কোলন ক্যানসারের রোগী দেখা যায়। এছাড়া নগণ্যসংখ্যক কিছু মানুষ আছে, যাদের জেনেটিক পদ্ধতিতে কোলন ক্যানসার হয়।

কোলন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের ক্ষেত্রে সবার আগে প্রয়োজন Risk Determination, অর্থাৎ রোগী নিজে কতটুকু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, সেটি নির্ণয় করা। এই Risk Assessment-এর জন্য রোগীদের দুটো ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হলো Average Risk (সাধারণ ঝুঁকি) Group এবং অন্যটা হলো High Risk Group; প্রথমেই আমাদের এটি নির্ধারণ করা দরকার যে রোগী কোন গ্রুপে রয়েছে—যদি High Risk Group-এ থাকে, তাহলে অনেক দ্রুত এবং অল্প সময় পরপর স্ক্রিনিং করতে হয়। আর যদি Average Risk Group-এ থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি স্ক্রিনিং করতে হয়।

m এভারেজ রিস্ক গ্রুপের রোগীই আমাদের সমাজে বেশি দেখা যায়। এভারেজ রিস্ক গ্রুপ বলতে বোঝায় যাদের বয়স ৪৫-৫০-এর বেশি।

m অন্যদিকে, হাই রিস্ক গ্রুপ বলতে বোঝায় যাদের এমন কিছু রোগ আছে, যার কারণে তাদের কোলন ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, যেমন—যদি কারো পারিবারিকভাবে কোলন ক্যানসারের ইতিহাস থাকে। যেমন—একধরনের পরিবার রয়েছে, যাদের বলা হয় Familial Adenomatous Polyposis Coli, অর্থাৎ যাদের পরিবারে একাধিকসংখ্যক মানুষের মলদ্বারে পলিপ পাওয়া যায়—এই রোগীরা অত্যন্ত হাই রিস্কে রয়েছে এবং যাদের মলদ্বারে এ ধরনের পলিপ পাওয়া যায়, তাদের ক্ষেত্রে বলা যায় যে কোলন ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। তাই তাদের খুব দ্রুত কোলন ক্যানসার risk assessment-এ আনতে হয়।

m দ্বিতীয় গ্রুপটা হলো—Hereditary Nonpolyposis Colon Cancer, অর্থাৎ যাদের মলদ্বারে কোনো পলিপ পাওয়া যায় না, কিন্তু তারপরও তাদের পরিবারে দু-তিন জেনারেশনের মধ্যে একাধিক কোলন ক্যানসারের রোগী পাওয়া যায়। অর্থাৎ, first generation বা যারা first degree relative, অর্থাৎ বাবা, ভাই, চাচা—তাদের মধ্যে কোলন ক্যানসার পাওয়া যায়। তাদের পূর্বপুরুষ অর্থাৎ দাদা বা তারও আগের জেনারেশনে যদি কোলন ক্যানসার পাওয়া যায়, তাহলে তাদের Hereditary Nonpolyposis Colon Cancer Family. তারাও অত্যন্ত হাই রিস্ক গ্রুপে থাকেন।

m এছাড়া, যদি কারো Inflammatory Bowel Disease নামের কোনো রোগ থাকে, যেমন আলসারেটিভ কোলাইটিস বা ক্রন্স ডিজিজ, এ ধরনের রোগীরাও অত্যন্ত হাই রিস্ক গ্রুপে থাকে।

m এছাড়া যদি কারো অতীতে কোনো ক্যানসার হওয়ার জন্য পেটের মধ্যে রেডিওথেরাপি নেওয়ার ইতিহাস থাকে, তাহলে তাকেও হাই রিস্ক গ্রুপে রেখে কোলন ক্যানসারের স্ক্রিনিং করতে হয়।

m এছাড়া কেউ যদি HIV পজিটিভ হন, তাহলে তিনিও হাই রিস্ক গ্রুপে থাকেন। তাহলে, কোলন ক্যানসারের স্ক্রিনিংয়ের জন্য রোগীদের দুটো ভাগে ভাগ করা হয়। একটা হলো Average Risk Group, অর্থাৎ যাদের বয়স ৪৫-৫০-এর বেশি। অন্যটা হলো High Risk Group, এখানে রোগীর বয়স যা-ই হোক না কেন, তার যদি কোলন ক্যানসারের ওপরে বর্ণিত High Risk কোনো ফ্যাক্টর থাকে, তাহলে তিনি এই গ্রুপে পড়বেন। তাই রোগীদের নিজেকে যাচাই করা দরকার যে সে কোন গ্রুপে পড়ছে এবং সেই অনুযায়ী কোলন ক্যানসারের স্ক্রিনিং করতে হবে।

লেখক : মেডিসিন ও লিভার রোগবিশেষজ্ঞ

কুড়িগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতাল

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত