কখন এবং কেন টনসিল অপারেশন করাবেন

ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ০০

টনসিল আমাদের শরীরের এক ধরনের লসিকাগ্রন্থি বা লিম্ফয়েড টিস্যু, যা গলার ভেতরে দুই পাশে অবস্থিত। এর মূল কাজ হলো মুখ ও শ্বাসনালির মাধ্যমে প্রবেশ করা জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরকে সুরক্ষা দেওয়া। তবে এই টনসিলে সংক্রমণ বা প্রদাহ হলে একে আমরা বলি টনসিলাইটিস (Tonsillitis)। এটি একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর সমস্যা, যা সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে তিন থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। যদিও প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও এ রোগ হতে পারে।

টনসিল অপারেশন কি জরুরি?

বিজ্ঞাপন

টনসিল অপারেশন (Tonsillectomy) কোনো জীবনরক্ষাকারী জরুরি অপারেশন নয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে এটি করা অত্যন্ত উপকারী ও প্রয়োজনীয়। অনেক অভিভাবক মনে করেন, টনসিল কেটে ফেললে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। আসলে তা নয়, কারণ গলা ও ঘাড়ে আরো অনেক লসিকাগ্রন্থি থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধে কাজ চালিয়ে যায়।

কখন টনসিল অপারেশন প্রয়োজন

নিচের যেকোনো অবস্থার মধ্যে পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শে টনসিল অপারেশন করা উচিত—

✅ বছরে চার থেকে পাঁচবারের বেশি টনসিলে ইনফেকশন হলে।

✅ ইনফেকশন এত তীব্র হয় যে খাওয়া বা ঘুমানো কষ্টকর হয়ে পড়ে।

✅ টনসিল এত বড় হয় যে শ্বাসকষ্ট বা নাক ডাকার সমস্যা দেখা দেয়।

✅ টনসিলের কারণে অ্যাবসেস বা পুঁজ জমে যায়।

✅ দীর্ঘদিন ওষুধ খেয়েও উপশম না পাওয়া গেলে।

✅ একপাশের টনসিল অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে গেলে বা টনসিলে সন্দেহজনক ক্ষত দেখা গেলে (বায়োপসি পরীক্ষার জন্য অপারেশন করা হয়)।

শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব

চার থেকে ১০ বছরের শিশুদের মধ্যে ঘনঘন সর্দি-কাশি ও গলাব্যথা হলে প্রায়ই দেখা যায় টনসিল ও নাকের পেছনের টনসিল (অ্যাডিনয়েড) ফুলে যায়। এতে শিশুর খেতে বা গিলতে কষ্ট হয়, মুখ দিয়ে লালা পড়ে, ঘনঘন জ্বর ও গলাব্যথা হয় এবং রাতে ঘুমের মধ্যে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়।

এই লক্ষণগুলো অবহেলা করলে শিশুর বৃদ্ধি ও ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই প্রয়োজনে দ্রুত পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অপারেশন করানো উচিত।

টনসিল অপারেশন কতটা নিরাপদ

বর্তমানে টনসিল অপারেশন একটি নিরাপদ ও নিয়মিতভাবে সম্পন্ন হওয়া সার্জারি, যা অভিজ্ঞ ইএনটি সার্জনরা প্রতিদিন করে থাকেন। অপারেশনের পর সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যেই রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।

শেষ কথা

টনসিলের বারবার ইনফেকশন বা অতিরিক্ত ফোলা অবস্থাকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। ওষুধে উপশম না হলে অপারেশন করানোই শ্রেয়—এটি নিরাপদ, কার্যকর ও দীর্ঘ মেয়াদে জীবনযাত্রার মান উন্নত করে।

লেখক : আবাসিক সার্জন (ইএনটি)

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত