কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট

জীবন রক্ষায় সিপিআর

অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফউল্লাহ
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৫, ১১: ৩০

প্রতিবছর প্রায় ১৮ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মৃত্যুর কারণ হলো কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ ২৪ হাজার মানুষ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মৃত্যুবরণ করে। এ অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসা না পেলে রোগীর জীবনহানির সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। বিশেষত বাংলাদেশের পল্লী, পার্বত্য ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে জরুরি চিকিৎসা সুবিধা প্রায় নেই বললেই চলে। এসব স্থানে অনেক মানুষ হৃদরোগ সম্পর্কে সচেতন নয়। তারা জানে না নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, চাপ ও দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ, সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম—এসব বিষয় হৃদরোগ প্রতিরোধে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের সচেতন করা খুবই জরুরি, যদিও তাদের কাছে সেই সুযোগ সীমিত। সেই সঙ্গে অনেক এলাকায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছানোও কষ্টসাধ্য। তাদের পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধার অভাব রয়েছে। এ কারণে আমাদের সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, হৃদরোগ এক নীরব ঘাতক, যা যেকোনো সময় হঠাৎ করে আঘাত হানতে পারে। শহর হোক বা গ্রামÑসবখানেই এ রোগের ঝুঁকি রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

হৃদরোগ প্রতিরোধে

আমাদের সবারই সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার। খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান থেকে বিরত থাকা এবং সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা—এসব অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শিশুদের মধ্যেও এই শিক্ষা দিতে হবে। শুধু পরিবারে নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও। স্কুল-কলেজে হৃদরোগ ও সিপিআর সম্পর্কে শিক্ষাদান এবং সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বাবা-মা এবং অভিভাবকদেরও শিশুদের স্বাস্থ্যবান করে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে। এই শিক্ষাই তাদের সারাজীবন কাজে আসবে এবং একটি সুস্থ জীবন নিশ্চিত করবে। সবশেষে বলা যায়, হৃদরোগ ও কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। আর এই সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে আমাদের সবারই।

কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র

—প্রতিবছর প্রায় ১৮ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগে মারা যায়।

—এর মধ্যে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট একটি বড় অংশ।

—কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হলে মৃত্যুহার প্রায় ৯০%।

—প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ ২৪ হাজার মানুষ এ কারণে মারা যায়।

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী?

হঠাৎ করে হৃৎস্পন্দনের সমস্যা দেখা দিলে হৃদয়ের পাম্পিং ক্ষমতা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হৃৎপিণ্ড শরীরের অন্যান্য অঙ্গে রক্ত পৌঁছাতে পারে না, রক্তচাপ দ্রুত কমে যায় এবং মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে মানুষ অচেতন হয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই যদি চিকিৎসা শুরু না হয়, মৃত্যু অনিবার্য হয়ে পড়ে। এটি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট নামে পরিচিত।

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী হয়?

হঠাৎ অচেতনতা, শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং পালস না পাওয়া—এই লক্ষণগুলো দেখা দেয়। দ্রুত সিপিআর এবং চিকিৎসা শুরু করা গেলে জীবন বাঁচানো সম্ভব।

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বনাম হার্ট অ্যাটাক। হার্ট অ্যাটাকে রক্তনালি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে হৃৎপিণ্ডে অক্সিজেন পৌঁছায় না এবং কিছু অংশ নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে হঠাৎ হৃৎস্পন্দন সম্পূর্ণ থেমে যায়। ফলে মস্তিষ্ক, ফুসফুসসহ সমস্ত অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়।

হার্ট অ্যাটাক থেকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টও হতে পারে।

উপসর্গ

—হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

—ধড়ফড় বা হঠাৎ অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন।

—ধমনিতে স্পন্দন না পাওয়া ।

সম্ভাব্য কারণগুলো

—হার্ট অ্যাটাক।

—অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন।

—কার্ডিওমায়োপ্যাথি।

—জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি।

—অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম।

—মানসিক চাপ বা আতঙ্ক।

—হৃদযন্ত্রে আঘাত।

—ড্রাগ বা অ্যালকোহল গ্রহণ।

—শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা।

—শরীরে অক্সিজেনের অভাব।

—রক্ত চলাচলের ব্যাঘাত।

লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান

শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

বিষয়:

সিপিআর

মাওলানা মুহিবুল্লাহ মাদানি নিখোঁজ, সন্দেহের তীর ইসকনের দিকে

সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন তালুকদারের মৃত্যুতে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের শোক

রাবাদার রেকর্ডে স্বস্তিতে প্রোটিয়ারা

যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভ নিয়ে খামেনির উপহাস

হোয়াইট হাউসে বলরুম নিয়ে রহস্য, নির্মাণে টাকা দিচ্ছে কারা

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত