ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা আমাদের দেশে একেবারেই সাধারণ রোগ মনে হলেও, এর প্রভাব কিন্তু কখনোই হালকাভাবে নেওয়ার মতো নয়। ঋতু পরিবর্তনের সময় হঠাৎ জ্বর, কাশি আর দুর্বলতায় কাবু হয়ে পড়া—এসবই ফ্লুর সাধারণ উপসর্গ। তবে ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের জন্য এটি মারাত্মক জটিলতাও ডেকে আনতে পারে। আমাদের দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জাকে সাধারণত ‘মৌসুমি ফ্লু’ বলে অবহেলা করা হয়। কিন্তু জানেন কি, ফ্লু আক্রান্ত হওয়ার পরপরই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি প্রায় ১০ গুণ বেড়ে যায়? সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নিলে এই ঝুঁকি সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো যায়।
হৃদরোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন কতটা কার্যকর?
আমরা জানি, কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ ঝুঁকি কমায় প্রায় ৩০ শতাংশ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ প্রায় ২৫ শতাংশ এবং ধূমপান বন্ধ করলে সর্বোচ্চ ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত ঝুঁকি কমানো সম্ভব। কিন্তু ফ্লু ভ্যাকসিন একাই হৃদরোগের ঝুঁকি ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করতে পারে। অর্থাৎ, এটি শুধু ভাইরাস প্রতিরোধ নয়, বরং হৃদরোগ প্রতিরোধের এক শক্তিশালী হাতিয়ার।
মৌসুমি ফ্লুর টিকা
বর্তমানে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে Influvax Tetra নামের একটি কার্যকর ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন। এটি একটি quadrivalent vaccine—অর্থাৎ একসঙ্গে চার ধরনের ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। প্রতি ডোজ মাত্র শূন্য দশমিক ৫ মিলি, যা পেশিতে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। ভ্যাকসিনে রয়েছে সর্বশেষ আপডেটেড চারটি ভাইরাস স্ট্রেইন, যাতে মৌসুমি ফ্লু থেকে ভালো সুরক্ষা মেলে। প্রতি শূন্য দশমিক ৫ মিলি ডোজে ফ্লু ভ্যাকসিনে চারটি গুরুত্বপূর্ণ ভাইরাস স্ট্রেইন থাকে—
H1N1, H3N2, B/Victoria ও B/Yamagata। এগুলো মৌসুমি ফ্লুর প্রধান ধরন থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
কেন নেবেন এই টিকা?
🔹 ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধ করে।
🔹 হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও প্রবীণদের জন্য অতিরিক্ত সুরক্ষা দেয়।
🔹 হার্ট অ্যাটাক ও অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার জটিলতার ঝুঁকি কমায়।
উপসংহার
শুধু মৌসুমি ফ্লু থেকে বাঁচতেই নয়, বরং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা অত্যন্ত কার্যকর। তাই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের—বিশেষ করে প্রবীণ, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের—প্রতিবছর মৌসুমি ফ্লু ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অতএব, ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা শুধু ফ্লু প্রতিরোধেই নয়, বরং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও প্রমাণিতভাবে কার্যকর। নিয়মিত ভ্যাকসিন নেওয়া মানে নিজের হৃদয়কে আরো নিরাপদ রাখা।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিওলজি
সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

