প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি : স্মার্টফার্মিংয়ে নতুনত্ব

আরিফ বিন নজরুল
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫: ২৯
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫: ৪৯

বাংলাদেশের কৃষি শুধু অর্থনীতির মেরুদণ্ড নয়, এটি গ্রামীণ জীবনের প্রাণও বটে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন, শ্রমিক সংকট আর উৎপাদনব্যয় বৃদ্ধির কারণে প্রচলিত কৃষিব্যবস্থা ক্রমেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। কিন্তু কৃষকসমাজ হাল ছাড়েনি। প্রযুক্তিকে সঙ্গী করে তারা পা রেখেছে এক নতুন যুগে। এই যুগের নাম স্মার্টফার্মিং। যেখানে লাঙলের জায়গায় এসেছে উন্নতমানের ট্রাক্টর, ড্রোন, সেন্সর, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর মোবাইল অ্যাপ।

আজকের কৃষকের হাতে শুধু কোদাল নয়, আছে আধুনিক প্রযুক্তির শক্তি। আকাশে উড়ে যাওয়া ড্রোন এখন জমির ছবি তুলে জানাচ্ছে—কোথায় পানি কম, কোথায় পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়েছে, কোথায় সার প্রয়োজন। ধানক্ষেতে ইতোমধ্যেই ড্রোন দিয়ে সার ও কীটনাশক ছেটানো শুরু হয়েছে। এতে কৃষকের শ্রম বাঁচছে, খরচ কমছে আর জমির প্রতিটি ইঞ্চি পাচ্ছে সমান যত্ন।

বিজ্ঞাপন

কৃষির ভেতরে বিপ্লব ঘটাচ্ছে ইন্টারনেট অব থিংস (IoT)। মাঠে বসানো সেন্সর মাটির আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, পিএইচ মাত্রা মেপে সরাসরি তথ্য পাঠাচ্ছে কৃষকের মোবাইলে। ফলে কৃষক জানছেন কখন জমিতে পানি দিতে হবে, কখন সার প্রয়োগ করা দরকার। পানির অপচয় বন্ধ হচ্ছে, উৎপাদনব্যয় কমছে। একসময় যা আন্দাজের ওপর নির্ভর করত, এখন তা হচ্ছে বিজ্ঞানের নির্ভুল হিসাবে।

শুধু গ্রামে নয়, শহরেও স্মার্টফার্মিংয়ের প্রয়োগ বাড়ছে। তবে পথ পুরোপুরি মসৃণ নয়। গ্রামীণ কৃষকের পক্ষে স্মার্টফোন বা সেন্সর কিনে ব্যবহার করা সবসময় সহজ নয়। ইন্টারনেটও অনেক জায়গায় দুর্বল। আবার প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রশিক্ষণের অভাবও বড় বাধা। তাই সরকার, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি উদ্যোগকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কৃষকদের হাতে সহজে প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে হবে। প্রশিক্ষণ দিতে হবে, সহজ ঋণ সুবিধা দিতে হবে।

তারপরও আশার আলো স্পষ্ট। বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই ড্রোনভিত্তিক সেচব্যবস্থা, ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস, সেন্সর প্রযুক্তি বাস্তবায়নের পথে। বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা কেন্দ্র আর স্টার্টআপগুলো কৃষিতে এক নতুন অধ্যায় লিখছে।

সব মিলিয়ে স্মার্টফার্মিং শুধু খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর উপায় নয়; বরং এটি কৃষকের জীবনের মান উন্নত করবে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হবে। একসময় কৃষি ছিল ভাগ্যের খেলা, এখন তা তথ্যনির্ভর ও বিজ্ঞানের ওপর দাঁড়ানো একটি টেকসই শিল্পে পরিণত হচ্ছে।

বাংলাদেশে কৃষি আর শুধু মাঠের কাজ নয়; এটি হয়ে উঠছে ডিজিটাল যুগের স্মার্ট সমাধান। কৃষক আর প্রযুক্তি একসঙ্গে মিলে এগিয়ে যাচ্ছে ভবিষ্যতের দিকে—নতুন যুগের দিকে, যার নাম হচ্ছে স্মার্টফার্মিং

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত