স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে

নাদিম নওশাদ
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১: ১৫

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট এমন একটি প্রযুক্তি, যা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেটসেবা প্রদান করে। প্রচলিত ব্রডব্যান্ড সংযোগের পক্ষে যেখানে পৌঁছানো কঠিন, স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেখানেও কাজ করতে পারে। এটি দূরবর্তী এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেটসেবা পৌঁছানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের উপাদানগুলো

বিজ্ঞাপন

তিনটি প্রধান উপাদান প্রয়োজন স্যাটেলাইট ইন্টারনেটসেবার জন্য। এগুলো হলোÑস্যাটেলাইট, গ্রাউন্ড স্টেশন (গেটওয়ে) এবং ব্যবহারকারীর টার্মিনাল (স্যাটেলাইট ডিশ ও মডেম)।

স্যাটেলাইট : পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপিত স্যাটেলাইটগুলো সাধারণত ভূ-স্থির কক্ষপথ (Geostationary Orbit-GEO) বা নিম্ন পৃথিবী কক্ষপথে (Low Earth Orbit-LEO) অবস্থান করে। ইন্টারনেট ডাটা পাঠানো ও গ্রহণ করার কাজে স্যাটেলাইটগুলো ব্যবহার করা হয়।

গ্রাউন্ড স্টেশন (গেটওয়ে) : গ্রাউন্ড স্টেশনগুলো স্থলভাগে অবস্থিত এবং স্যাটেলাইটের সঙ্গে ইন্টারনেট মূল অবকাঠামোর সংযোগ স্থাপন করে। গেটওয়েগুলো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ডাটা আদান-প্রদান নিশ্চিত করে এবং ইন্টারনেট ট্র্যাফিক পরিচালনা করে।

ব্যবহারকারীর টার্মিনাল : এটি স্যাটেলাইট ডিশ (একটি বিশেষ অ্যান্টেনা) এবং মডেম নিয়ে গঠিত। ডিশটি স্যাটেলাইট থেকে সংকেত গ্রহণ করে এবং মডেমের মাধ্যমে সেই সংকেতকে ব্যবহারকারীর ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগ হিসেবে দেয়।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রধানত দুই ধরনের হয়। প্রথমটি ভূ-স্থির কক্ষপথ। এই স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর নির্দিষ্ট স্থানের ওপরে স্থির থাকে এবং প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থান করে। তবে, উচ্চতা অনেক বেশি হওয়ার কারণে সংকেত পাঠানো ও গ্রহণে কিছুটা বিলম্ব (ল্যাটেন্সি) হয়। আর দ্বিতীয়টি হলো নিম্ন পৃথিবী কক্ষপথ। এই স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০০ থেকে ২,০০০ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থান করে এবং দ্রুতগতিতে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। নিম্ন উচ্চতার কারণে সংকেত পাঠানো ও গ্রহণে বিলম্ব (ল্যাটেন্সি) কম হয় এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেটসেবা দেওয়া সম্ভব হয়।

কীভাবে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কাজ করে?

ব্যবহারকারী যখন কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে চান, তখন তার ডিভাইস থেকে ওয়েবসাইটে প্রবেশের রিকোয়েস্টটি মডেমের মাধ্যমে স্যাটেলাইট ডিশে পৌঁছায়। ডিশটি সেই রিকোয়েস্ট স্যাটেলাইটে পাঠায়। স্যাটেলাইটটি সেই রিকোয়েস্ট কাছের গেটওয়েতে পাঠায়, যা ইন্টারনেটের মূল অবকাঠামোর সঙ্গে সংযুক্ত। গেটওয়ে রিকোয়েস্ট করা ডাটা ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তা ব্যবহারকারীর ডিশে পাঠায়। ডিশটি সেই ডাটা মডেমের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ডিভাইসে পৌঁছে দেয়, ফলে ব্যবহারকারী ওয়েবসাইটটি দেখতে পান।

বাংলাদেশে এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটসেবার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া সম্ভব হলেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। উচ্চ-বিলম্বিত ইন্টারনেট, আবহাওয়াজনিত সমস্যা এবং উচ্চ খরচ এই সেবার প্রসারে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তবে সঠিক নীতিমালা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে এটি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটসেবা চালুর মাধ্যমে ডিজিটাল বিভাজন কমিয়ে আনা সম্ভব। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে যদি সঠিক বিনিয়োগ ও গবেষণা করা হয়, তবে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নতুন বিপ্লব ঘটাতে পারে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত