একজন গেমার যখন নতুন গেমিং পিসি কিনে নিয়ে আসেন, তার চোখে থাকে উত্তেজনা। শক্তিশালী প্রসেসর, দারুণ গ্রাফিকস কার্ড, RGB লাইট, লিকুইড কুলিং—সব মিলিয়ে যেন অন্য জগতের যন্ত্র। একই সময়ে অন্যদিকে অফিসে বসে কাজ করেন যে কর্মী, তার কম্পিউটারটিও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও বাহ্যিক আলো ঝলকানি নেই। দুই ধরনের কম্পিউটারই কাজের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু তাদের যত্ন নেওয়ার পদ্ধতি এক নয়। যে যত্ন গেমিং পিসির জন্য যথেষ্ট। তা অফিস পিসির ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়। আবার অফিস পিসির মতো ব্যবহার করলে গেমিং পিসি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তও হতে পারে। তাই পার্থক্যটা জানা জরুরি।
গেমিং পিসির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ। উচ্চ ক্ষমতার প্রসেসর ও গ্রাফিকস কার্ড যখন ভারী গেম চালায়, তখন প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। দীর্ঘক্ষণ খেলা হলে ফ্যানের গতি বেড়ে যাওয়ায়, সিস্টেমের তাপমাত্রা ৭০-৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁতে পারে। তাই গেমিং পিসির যত্নে কুলিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ধুলা পরিষ্কার করা। ভালো মানের কুলিং ফ্যান বা লিকুইড কুলিং ব্যবহার করা। থার্মাল পেস্ট সময়মতো পরিবর্তন করা। এসব কাজ না করলে প্রসেসরের আয়ু কমে যেতে পারে। এমনকি অতিরিক্ত গরমে পিসি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। অনেক সময় গেমাররা পিসিকে টেবিলের নিচে বা দেয়ালের গায়ে ঠেসে রাখেন। এতে বাতাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাপ বের হতে পারে না। যন্ত্রের ক্ষতি হয়। তাই গেমিং পিসির জন্য খোলামেলা জায়গা অত্যন্ত জরুরি। অফিস পিসির গল্প একটু ভিন্ন। অফিসের কম্পিউটারগুলো দিনে আট বা দশ ঘণ্টা চলে। কিন্তু তাদের ওপর চাপ কম। সাধারণত ব্রাউজিং, ডকুমেন্ট প্রসেসিং, এক্সেল, ইমেইল—এসব হালকা কাজই হয়। তাই তাপমাত্রা বাড়ে না, প্রসেসরও তেমন ব্যস্ত থাকে না। অফিস পিসির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো স্থির বিদ্যুতের সরবরাহ। হঠাৎ বিদ্যুৎ ওঠানামা বা লোডশেডিংয়ে ডেটা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই অফিস পিসির জন্য ভালো মানের ইউপিএস এবং সার্জ প্রটেক্টর থাকা অপরিহার্য। এছাড়া নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট, অ্যান্টিভাইরাস, ডেটা ব্যাকআপ। এসব বিষয় অফিস পিসিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। নিত্যদিনের কাজেই দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।
তবে দুই ধরনের কম্পিউটারেই কিছু যত্ন অভিন্ন। ধুলাবালি কম্পিউটারের সবচেয়ে বড় শত্রু। ফ্যান, ভেন্ট, কী-বোর্ড, মাদার বোর্ড—সব জায়গায় ধুলা জমতে থাকে। গরম বাড়ে, যন্ত্র ধীর হয়ে পড়ে। তাই মাসে অন্তত একবার ধুলা পরিষ্কার করা উচিত। আরেকটি সাধারণ যত্ন হলোÑপাওয়ার সাপ্লাই। গেমিং পিসির ক্ষেত্রে উচ্চক্ষমতার পাওয়ার সাপ্লাই প্রয়োজন। কারণ গ্রাফিকস কার্ড ও প্রসেসর অনেক বিদ্যুৎ নেয়। সস্তা পাওয়ার সাপ্লাই ব্যবহার করলে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অফিস পিসির ক্ষেত্রে খুব শক্তিশালী পাওয়ার সাপ্লাই না লাগলেও, মানসম্মত ব্র্যান্ড ব্যবহার করাই ভালো। নষ্ট পাওয়ার সাপ্লাই যেকোনো সময় পুরো সিস্টেমকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। গেমিং পিসিতে আপগ্রেডের প্রয়োজনও বেশি। নতুন গেম, নতুন সফটওয়্যারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাখতে হয়। র্যাম বাড়ানো, গ্রাফিকস কার্ড পরিবর্তন বা স্টোরেজ আপগ্রেড করতে হয় নিয়মিত। অফিস পিসিতে আপগ্রেড কম লাগে। তবে SSD ব্যবহারে গতি বাড়ে এবং কাজ আরো আরামদায়ক হয়। অনেক অফিস এখনো HDD দিয়ে চলছে। ফলে কম্পিউটার ধীর, ফাইল খোলায় সময় লাগে। অথচ ছোট একটি SSD লাগালেই কর্মীদের কাজের গতি দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে। দিন শেষে একটাই কথা—গেমিং পিসি এবং অফিস পিসি দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাদের চাহিদা আলাদা। গেমিং পিসি চায় ঠান্ডা বাতাস, শক্তিশালী পাওয়ার ও দ্রুত আপগ্রেড। অফিস পিসি চায় স্থিতিশীল বিদ্যুৎ, ব্যাকআপ এবং নিরাপদ সফটওয়্যার পরিবেশ। যে কম্পিউটারকে যত্ন দেওয়া হয়। সে-ই দীর্ঘদিন কাজ করে। বাকি সব শুধুই যন্ত্রপাতির বয়স কমিয়ে দেয়। তাই পিসি কেনা যত সহজ, যত্ন নেওয়াই শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিষয়।

