চাকরির বাজারে প্রভাব এআইয়ের

শিফা চৌধুরী
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৫, ১০: ৩৫

প্রযুক্তির জগতে এক নীরব বিপ্লব ঘটছে—এই বিপ্লবের নাম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা Artificial Intelligence (এআই)। আগে যা কল্পনা ছিল, আজ তা বাস্তব। একসময়ের সায়েন্স ফিকশন এখন আমাদের অফিস, বাসা, হাসপাতাল এমনকি গাড়ির স্টিয়ারিংয়েও জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু এই অভাবনীয় অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে—এই প্রযুক্তি কি মানুষের চাকরি কেড়ে নিচ্ছে, নাকি নতুন সুযোগ তৈরি করছে?

বিজ্ঞাপন

এআইয়ের প্রভাব

এআই এখন এমন কাজগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে করতে পারছে, যেগুলো আগে মানুষ করত। যেমন : ডাটা এন্ট্রি, কাস্টমার সার্ভিসে চ্যাটবট, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে সাংবাদিকতাও! এর ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানে কম জনবলেই বেশি কাজ হচ্ছে। এদিকে নিম্ন-দক্ষতাসম্পন্ন কাজ হুমকির মুখে পড়েছে। যেসব কাজ বেশি পুনরাবৃত্তিমূলক ও নিয়মভিত্তিক, সেগুলো এআই খুব সহজেই করে ফেলছে। ফলে কারখানার শ্রমিক, ব্যাংকের টেলার বা সাধারণ অফিস অ্যাসিস্ট্যান্টদের চাকরি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে।

তবে কি সবই নেতিবাচক?

একদম না! এআই যেমন কিছু চাকরি কমিয়ে দিচ্ছে, তেমনি নতুন ধরনের কাজ তৈরি করছে। যেমন : ডাটা সায়েন্টিস্ট, মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার, এআই প্রম্পট ডিজাইনার, রোবোটিকস অপারেটর, এআই অ্যাকাউন্টিবিলিটি স্পেশালিস্ট চাকরির জন্য প্রয়োজন নতুন দক্ষতা, যা আমাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জন করতে হবে।

মানুষ-মেশিন সহযোগিতা

এআই সব সময় মানুষকে প্রতিস্থাপন করছে না, বরং সহযোগিতা করছে। যেমন : একজন ডাক্তার এআইয়ের সাহায্যে রে-রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দ্রুত রোগ নির্ণয় করতে পারছেন। একজন শিক্ষক এআইয়ের সাহায্যে শিক্ষার্থীদের আরো ব্যক্তিকেন্দ্রিকভাবে শেখাতে পারছেন।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশেও এআই ধীরে ধীরে বিভিন্ন খাতে প্রবেশ করছে। ব্যাংক, হেলথকেয়ার, ই-কমার্স, এমনকি কৃষি খাতেও এআইয়ের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। তবে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো—টেকসই শিক্ষানীতি ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাতে ভবিষ্যতের চাকরির জন্য আমাদের যুবসমাজ প্রস্তুত থাকতে পারে।

আমাদের করণীয় কী?

প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কোডিং, ডাটা অ্যানালিটিকস, ক্রিটিক্যাল থিংকিং ইত্যাদি দক্ষতা অর্জন করা। সৃজনশীলতা এবং মানবিক গুণাবলি বাড়ানো। যেসব গুণ মেশিনের নেই, যেমন : সহানুভূতি, নেতৃত্ব, সৃজনশীলতা—এসবই ভবিষ্যতের মূল শক্তি।

আজীবন শেখার মানসিকতা রাখা প্রয়োজন। এআই প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। তাই শেখাও হওয়া উচিত চলমান প্রক্রিয়া। পরিশেষে বলতে চাই, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চাকরির বাজারে শুধু ‘চাকরি হারানো’র গল্প নয়—এটা ‘রূপান্তরের’ গল্প। এটি সেই দুনিয়ার দরজা খুলছে, যেখানে মানুষ এবং মেশিন একসঙ্গে কাজ করবে। প্রতিযোগিতা নয় বরং সহযোগিতায় বিশ্বাস রেখে প্রস্তুতি যার থাকবে, ভবিষ্যৎ হবে তার।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত