ফাইটার জেটের জন্মকথা

জুবাইর আল হাদী
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ১৯

আদিম যুগে যুদ্ধ মানেই ছিল রণাঙ্গনে ঢাল-তলোয়ার হাতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই। যুদ্ধের ময়দানে সশরীর অবস্থান। বর্তমান সময়ে এটা রূপকথার গল্পের মতোই মনে হয়। কারণ, সময় এখন পাল্টে গেছে। বিশ্ব আজ আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে। প্রযুক্তির অবদানের কারণে ঢাল-তলোয়ার হাতে যুদ্ধ করতে হয় না।

এখন যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে ফাইটার জেট, ড্রোন, ব্যালাস্টিক, গাইডেড মিসাইলসহ এ রকম বিভিন্ন প্রযুক্তির হাতে। এখন ফাইটার জেটের গর্জনেই শত্রুপক্ষ কেঁপে ওঠে। আধুনিক এই যুদ্ধবিমানগুলো মুহূর্তের মধ্যে হাজার মাইল দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। পাইলটদের দক্ষতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর রাডার প্রযুক্তি। একসময় যেখানে সৈন্যরা মাঠে লড়াই করত মুখোমুখি, এখন সেখানে আকাশে লড়াই চলে অতি নিখুঁত পরিকল্পনায়। প্রযুক্তি শুধু যুদ্ধের ধরন বদলায়নি, বদলে দিয়েছে শক্তির সংজ্ঞাও।

বিজ্ঞাপন

এবার জানা যাক, আসমান কাঁপানো এই ফাইটার জেটের জন্মকথা বা শুরুর ইতিহাস। আমরা অনেকেই জানি, রাইট ভ্রাতৃদ্বয় নামে সমধিক পরিচিত উইলবার রাইট এবং অরভিল রাইটের হাত ধরে আবিষ্কার হয় উড়োজাহাজ। মূলত এরপরই শুরু হয় বিমান নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা। ফলে ১৯১৪ সালে শুরু হওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেই আবিষ্কৃত হয় যুদ্ধবিমান। সে সময় বোম্বার নামে পরিচিত যুদ্ধবিমানগুলো শত্রুর এলাকায় গিয়ে বোমা ফেলে আসত। এছাড়া বোমা ফেলার জন্য ব্যবহার করা হতো বেলুন। মাটি থেকে মিসাইল ছুড়ে বিমান ধ্বংস করার পদ্ধতি আবিষ্কৃত না হওয়ায় প্রতিপক্ষের যুদ্ধবিমান এবং বেলুন ঠেকাতে আবিষ্কার করা হয় ফাইটার জেট।

বর্তমান সময়ের উন্নত ফাইটার জেট অ্যালুমিনিয়াম, ইস্পাত এবং টাইটানিয়ামের মতো ধাতুর তৈরি হলেও তখনকার সময়ের ফাইটার জেটগুলো ছিল কাঠ ও ফেব্রিকের। বহন করত হালকা অস্ত্র। গতি ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬০ কিলোমিটার। কাঠের তৈরি হলেও যুদ্ধক্ষেত্রে ফাইটার জেটের অবদান দেখে এগুলো উন্নয়ন শুরু করল। ফলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মধ্যেই উন্নত হয়ে ধাতব বডির ফাইটার জেট আকাশে ওড়ে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফাইটার জেটের ইতিহাসে শুরু হয় নতুন অধ্যায়। যুদ্ধক্ষেত্রে শক্তি বাড়াতে প্রতিটি জেটে সংযুক্ত হয় মেশিনগান আর গতি গিয়ে পৌঁছায় ঘণ্টায় প্রায় ৬৪০ কিলোমিটারে। ইঞ্জিন প্রযুক্তিতে আসে বড়সড় উন্নয়ন, ফলে তৈরি হতে থাকে দুই ইঞ্জিনের যুদ্ধবিমান।

পঞ্চাশের দশকে যুক্ত হয় রাডার ব্যবস্থা, যা ফাইটার জেটের এক বিশাল পরিবর্তন। এখন আর শত্রুর বিমান চোখে দেখা না গেলেও পাইলটরা রাডারের সাহায্যে দূর থেকে শনাক্ত করতে পারতেন তাদের অবস্থান। এরপর ষাটের দশকে কামানের পাশাপাশি যুক্ত হয় ‘এয়ার টু এয়ার’ মিসাইল, যা আকাশযুদ্ধের ধরনই বদলে দেয়। বিশেষ করে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় ফাইটার জেট হয়ে ওঠে এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী যুদ্ধাস্ত্র।

সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির প্রতিযোগিতায় বেড়েছে এই বিমানের সক্ষমতা গতি, মিসাইল শক্তি, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ প্রতিরক্ষা—সবকিছুতেই এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন।

এরপর কিছু জেটে যুক্ত হয় ‘এয়ার টু ল্যান্ড’ মিসাইল, যার মাধ্যমে স্থল টার্গেটে হামলা সম্ভব হয়। আবার কিছু যুদ্ধবিমান শুধু নজরদারির কাজেও ব্যবহৃত হতে শুরু করে। কোথাও একাই যুদ্ধ সামলান পাইলট, আবার কিছু মডেলে তার সঙ্গে থাকেন এক বা একাধিক সহ-ক্রু, যা যুদ্ধে আরো নিখুঁত ও সমন্বিত আঘাতের জন্য সাহায্য করে। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির অবদান এই ফাইটার জেট শুধু একটি যুদ্ধযান নয়, এটি এক দেশের প্রযুক্তিগত সামর্থ্য ও প্রতিরক্ষা শক্তির প্রতীক।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত