ইন্টারনেটের দাম কমাতে নতুন লাইসেন্স নীতিমালা

টেলিযোগাযোগ খাতে বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রেজিম সংস্কার নীতি-২০২৫’-এর খসড়ায় দীর্ঘদিনের জটিল ও বহুস্তর বিশিষ্ট লাইসেন্স কাঠামো বাতিল করে তিনটি মূল লাইসেন্সে সীমাবদ্ধ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে কমতে পারে ইন্টারনেটের দাম এবং বাড়বে নিরাপত্তা ও সেবার মান।

২১ এপ্রিল প্রকাশিত এই খসড়া নীতিমালাটি এখন জনমতের জন্য উন্মুক্ত এবং ৩০ এপ্রিল ২০২৫ এর মধ্যে মতামত দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিটিআরসি। এতে করা হয়েছে ‘বর্তমান টেলিকম কাঠামো যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে না। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, ব্যবহারকারীর চাহিদা ও আন্তর্জাতিক প্রবণতা মাথায় রেখে একটি আধুনিক ও দক্ষ নেটওয়ার্ক গঠন এখন সময়ের দাবি।’

প্রস্তাবিত ৩ মূল লাইসেন্স

নতুন কাঠামোয় চালু হতে যাচ্ছে, অ্যাক্সেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার (এএনএসপি), ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও কানেক্টিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (এনআইসিএসপি) এবং ইন্টারন্যাশনাল কানেক্টিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (আইসিএসপি)। এ ছাড়া থাকবে দুটি ঐচ্ছিক এনলিস্টমেন্ট ক্যাটাগরি। এগুলো হলো- ছোট আইএসপি সেবা প্রদানকারী এবং ছোট টেলিকম সেবা প্রদানকারী।

পাশাপাশি নতুন কাঠামোর আওতায় পর্যায়ক্রমে বাতিল করা হচ্ছে পুরোনো লাইসেন্স। সেগুলো হলোÑ ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স), আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি), ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ (এনআইএক্স), কনটেন্ট সেবা প্রদানকারী (টিভিএএস), কল সেন্টার এবং ভেহিকেল ট্র্যাকিং সার্ভিস (ভিটিএস)।

প্রযুক্তি নিরপেক্ষ ও উদ্ভাবনবান্ধব কাঠামো

নতুন লাইসেন্স কাঠামো হবে প্রযুক্তি নিরপেক্ষ। ফলে অপারেটররা জিএসএম, ফাইভ-জি, স্যাটেলাইট বা এনজিএসওসহ যে কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভয়েস, ডেটা, ইন্টারনেট ও ওটিটি সেবা একসঙ্গে দিতে পারবে। খসড়ায় নেটওয়ার্ক নীতিমালায় বড় পরিবর্তনের কথাও বলা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, আইসিএক্স ও এনআইএক্স বাধ্যতামূলক নয়, সব অপারেটরের জন্য পিয়ারিং ও ভয়েস ইন্টারকানেকশন বাধ্যতামূলক, শেয়ার্ড অবকাঠামো ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হবে।

বিটিআরসির মতে, পৃথক ভয়েস ও ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা খরচ বাড়িয়ে সেবার মান কমাচ্ছে এবং বাজারে বাধা সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া বিনিয়োগ আকর্ষণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিথিলতার কথাও বলা হয়েছে। এর আওতায় দেশি আইসিএসপি লাইসেন্সে সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ মালিকানা এবং এনআইসিএসপি লাইসেন্সে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ মালিকানা শর্তসাপেক্ষে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) করতে হবে।

খসড়ায় ছোট উদ্যোক্তাদের স্বীকৃতির কথাও বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, থানা ও উপজেলা পর্যায়ের ছোট আইএসপি ও টেলিকম অপারেটররা পূর্ণ লাইসেন্সের বদলে ‘এনলিস্টমেন্ট’-এর মাধ্যমে বৈধতা পাবে। তবে তাদের নির্ধারিত মানদণ্ড বজায় রাখতে হবে।

নীতিমালা চূড়ান্ত হলে এটি তিন ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। ধাপ অনুযায়ী, সরকারের অনুমোদনের পর নীতিমালা কার্যকর, নতুন লাইসেন্স কাঠামো চালু এবং ২০২৭ সাল থেকে পুরোনো লাইসেন্স আর নবায়নযোগ্য থাকবে না।

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আমার দেশকে বলেন, এই নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে, ইন্টারনেট সেবার মূল্য কমতে পারে, আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ পাচার রোধেও কার্যকর ব্যবস্থা হতে পারে। এ ছাড়া বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি হবে এবং নতুন প্রযুক্তিতে উদ্ভাবনের সুযোগ বাড়বে। একই সঙ্গে এই সংস্কার কার্যকর হলে বাংলাদেশের টেলিকম খাত নতুন যুগে প্রবেশ করবে।