প্রযুক্তির দুনিয়ায় এক নতুন বিপ্লবের নাম ফাইভ-জি। চতুর্থ প্রজন্মের (ফোর-জি) পরবর্তী ধাপ হিসেবে এই নেটওয়ার্ক শুধু ইন্টারনেটের গতি বাড়ায়নি, বরং বদলে দিয়েছে যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং বিনোদনের পুরো চিত্র। অনেকেই ফাইভ-জিকে শুধু ‘দ্রুত ইন্টারনেট’ হিসেবে ভাবেন। কিন্তু এর কার্যকারিতা আসলে তার চেয়েও বহুগুণ বেশি।
প্রথম ও প্রধান সুবিধা হলো গতি। ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক ফোর-জির তুলনায় অনেকগুণ দ্রুত ডাউনলোড ও আপলোড সুবিধা দেয়। কয়েক গিগাবাইটের একটি মুভি বা বড় ফাইল কয়েক সেকেন্ডেই ডাউনলোড করা সম্ভব হয়। ফলে ব্যবহারকারীরা অনায়াসে আল্ট্রা এইচডি ভিডিও স্ট্রিমিং, অনলাইন গেমিং কিংবা ভিডিও কনফারেন্স করতে পারবেন বিঘ্ন ছাড়াই।
দ্বিতীয়ত, ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের ল্যাটেন্সি বা প্রতিক্রিয়া সময় অত্যন্ত কম। অর্থাৎ কোনো তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বিলম্ব প্রায় নেই বললেই চলে। এর ফলে রিমোট সার্জারি, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি চালানো কিংবা রোবট নিয়ন্ত্রণের মতো কাজ সম্ভব হচ্ছে নিরাপদ ও কার্যকরভাবে।
তৃতীয়ত, ফাইভ-জি একই সময়ে বিপুলসংখ্যক ডিভাইস সংযুক্ত রাখার ক্ষমতা রাখে। স্মার্ট হোম, স্মার্ট সিটি বা ইন্টারনেট অব থিংস (IoT) কার্যকর করতে এই সক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি এলাকার হাজারো সেন্সর, ক্যামেরা ও স্মার্ট ডিভাইস একসঙ্গে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারবে ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে।
এছাড়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ফাইভ-জি আনতে পারে এক বিশাল পরিবর্তন। শিক্ষার্থীরা সহজেই ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি (VR) ও অগমেন্টেড রিয়্যালিটি (AR) প্রযুক্তির মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষের বাইরেও বাস্তব অভিজ্ঞতা নিতে পারবে। চিকিৎসকরা দূর থেকে রোগী পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এমনকি ভার্চুয়াল অপারেশন থিয়েটারের মাধ্যমে সার্জারিও পরিচালনা করতে পারবেন।
ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ফাইভ-জি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। উচ্চগতির নেটওয়ার্কের কারণে ই-কমার্স, অনলাইন ব্যাংকিং, ডিজিটাল পেমেন্ট আরো দ্রুত, নিরাপদ ও কার্যকর হচ্ছে। একই সঙ্গে কৃষি, শিল্প, পরিবহনসহ নানা খাতে স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সবশেষে বলা যায়, ফাইভ-জি শুধু একটি টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের স্মার্ট জীবনযাত্রার ভিত্তি। যোগাযোগের সীমানা অতিক্রম করে এটি মানুষের জীবনধারা, অর্থনীতি ও প্রযুক্তি ব্যবহারের ধরনকে বদলে দিতে সক্ষম। তাই বলা যায়, ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক মানেই গতি, দক্ষতা আর এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার।


কী-বোর্ড ও মাউসের যত্ন