রিল-শর্টসে মস্তিষ্কে কী ঘটছে, জানেন

এফ আই মাসউদ
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২: ২০
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯: ৫৪
ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুকে একটি রিলের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৩ মিনিট। ইনস্টাগ্রামে ৯০ সেকেন্ড ও ইউটিউবের শর্টসের দৈর্ঘ্য এক মিনিট। এই স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিও একবার দেখা শুরু করলে আমরা দেখতেই থাকি। এতো বেশি দেখার ফলে আমাদের নেশায় পরিণত হয়। আর এই অভ্যাসে মস্তিষ্কে কী ঘটছে, তা কি আপনি জানেন? স্বাভাবিকভাবেই এ প্রশ্নের জবাব দেয়া অনেকটা কঠিন। ইচ্ছা বা অনিচ্ছাই রিল বা শর্টস দেখা দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে কারো কারো। সম্প্রতি চীনের গবেষকেরা একটি বিশ্লেষণে জানিয়েছেন, রিল-শর্টস দেখার অভ্যাস মস্তিষ্কে, মানসিক স্বাস্থ্যে এবং আচরণে কী কী প্রভাব ফেলে।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষাবিষয়ক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম সাইয়ের মনোবিজ্ঞানী অ্যান্ড্রি রাইজিক বলেছেন, ছোট ছোট ভিডিও দেখার অভ্যাস মানব মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে— অধিক হিংসাত্মক অথবা পরশ্রীকাতর হওয়া। অন্য কারো সাফল্য বা জীবনযাত্রা দেখে হিংসা অনুভব হওয়া।

১১২ কলেজ শিক্ষার্থীর ওপর একটি গবেষণা চালিয়েছিলেন চীনের তিয়ানজিন নরমাল ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞরা। রিল ও শর্টস মস্তিষ্কে কী কী প্রভাব ফেলে, সেসব উঠে এসেছে ওই গবেষণায়।

রিল বা শর্টসে ঈর্ষা ও আসক্তি

রিল বা শর্টসে ঈর্ষাকাতর মানুষদের আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। নেতিবাচক আবেগ থেকে মনকে ভুলিয়ে রাখার জন্য বা অন্য কারো সঙ্গে নিজের তুলনা করতে শর্টসে ডুবে যান।

রিল বা শর্টসে মস্তিস্কের পরিবর্তন

রিল বা শর্টসে মস্তিষ্কের যে অংশ আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্ত নিতে ভূমিকা রাখে, সেই অংশে বেশি পরিবর্তন দেখা যায়। আবার এর অর্থ এমনও নয় যে, শর্টস বা রিল মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ অভ্যাস মস্তিস্কের কার্যকারিতাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।

রিল বা শর্টসে জিনের ভূমিকা

গবেষণায় কিছু জিন পাওয়া গেছে, যার কার্যকারিতা ছোট ছোট ভিডিওর আসক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যা এ ধরনের আসক্ত হওয়ার প্রবণতা কিছুটা জন্মগতভাবেও হতে পারে।

রিল বা শর্টসের ঝুঁকিতে কিশোর-কিশোরীরা

কিশোর-কিশোরীদের শর্টস বা রিলসের প্রতি আসক্তি হওয়ার ঝুঁকি বেশি দেখা যায়। কারণ নির্দিষ্ট কিছু জিন বয়ঃসন্ধিকালে অনেক বেশি সক্রিয় থাকে।

রিল-শর্টস মস্তিষ্কে যেভাবে প্রভাব ফেলে

পুরস্কার গ্রহণের অভ্যাসে পরিবর্তন

কিছু রিল ও শর্টসে দ্রুত দৃশ্য পরিবর্তন ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়ে থাকে আবেগকে। এ ধরনের ভিডিওগুলো এক ধরনের ‘পুরস্কৃত’ করে মস্তিষ্ককে। বলা যায়, মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেম। মস্তিস্ক যদি এ ধরনের উদ্দীপনায় অভ্যস্ত হয়, তাহলে মস্তিষ্ক এ ধরনের পুরষ্কার আরও চাইতে থাকবে। যা থেকে ভিডিও দেখার আসক্তি বাড়তে থাকে।

মনোযোগ কমে যাওয়া

মস্তিষ্কের ‘প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স’ অংশ মানুষের পরিকল্পনা ও আত্মনিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ। তবে ছোট ছোট ভিডিও বেশি পরিমাণ দেখা হলে এ অংশের কার্যারিতা কমে যেতে পারে। এ জন্য ভিডিও দেখা নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয়। যা থেকে কোনো কিছুর ব্যাপারে পরিকল্পনা করে কঠিন মনে হয়।

তথ্য গ্রহণের পদ্ধতিতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা

দীর্ঘদিন ধরে রিল বা শর্টস দেখার ফলে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে ভিডিওগুলোর তথ্যের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত হতে পারে। এ থেকে দীর্ঘ ও জটিল কোনো ব্যাপারে মনোযোগ দেয়া কঠিন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ধীরগতিও হতে পারে।

আবেগ নিয়ন্ত্রণে জটিলতা

প্রায়ই দেখা যায় নেতিবাচক আবেগ, যেমন— ঈর্ষা বা দুঃখ থেকে নিজেকে ভালো রাখতে রিল বা শর্টস দেখেন অনেকে। এসব সাময়িক সময়ের জন্য আপনাকে ভালো রাখলেও আপনার নেতিবাচক আবেগ দীর্ঘমেয়াদে বাড়িয়ে দিতে পারে।

গবেষণা অনুযায়ী, রিল বা শর্টসের কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক থাকতে পারে। তবে এসব অতিরিক্ত দেখার ফলে অভ্যাসগত পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক। সেসব অভ্যাস সবার ওপরই একই ধরনের প্রভাব ফেলবে, এমনটাও নয়।

মূলত ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহারের ধরনের ওপর প্রভাব ভিন্ন হতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে আরও অধিকতর গবেষণার প্রয়োজন। তবে কিশোর-কিশোরীদের জন্য সচেতন থাকা জরুরি।

সূত্র: ডেভ ইউএ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত