মহান ভাষা আন্দোলন

সৈয়দ আবদাল আহমদ
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ৩৭
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ৫৩

মোদের গরব মোদের আশা

আ-মরি বাংলা ভাষা।

বিজ্ঞাপন

ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস। মায়ের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি এক রক্তঝরা আন্দোলন হয়েছিল। সেটা আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন। ভাষা আন্দোলনের ওই দিনটি আমাদের কাছে ‘রক্তে রাঙা একুশে ফেব্রুয়ারি’। সেই দিনটিই অমর একুশে, মহান শহীদ দিবস। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

এবারের একুশে ফেব্রুয়ারি এসেছে ভিন্নমাত্রা নিয়ে আরেক মহান বিপ্লবকে ধারণ করে। বাংলা একাডেমির অমর একুশের ‘বইমেলা প্রাঙ্গণে গেলেই চোখে পড়ে একটি স্লোগান ৫২-এর চেতনায়, ২৪-এর প্রেরণা’ বায়ান্নর চেতনাকে ধারণ করেই ৩৬ দিনের এই বিপ্লব সংঘটিত হয়, যা ‘জুলাই বিপ্লব’ নামে পরিচিত। এই বিপ্লবে পনেরো বছরের এক নিকৃষ্ট স্বৈরশাসনের পতন ঘটেছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ছিল পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে। এখানে সেই গল্পটাই বলব

ইংরেজরা ২০০ বছর রাজত্ব করার পর ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ছেড়ে যায়। এ সময় তারা দেশকে দুভাগ করে যায়। ৪৭-এর দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগ হয়। ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। আমাদের এই বাংলাদেশ পাকিস্তানের একটি অংশ ছিল, তখন এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। আরেকটি অংশ পশ্চিম পাকিস্তান। পাকিস্তানের মানুষের ছিল নানা ভাষা।

পাঞ্জাবের লোকদের ভাষা পাঞ্জাবি, সিন্ধুর লোকদের ভাষা সিন্ধি, বেলুচিস্তানের লোকদের ভাষা বেলুচি, করাচির লোকদের ভাষা উর্দু আর পূর্ব পাকিস্তানের লোকদের ভাষা বাংলা। ১৯৪৭-এ স্বাধীনতার পরপরই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। এ নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা শুরু করে চক্রান্ত। পাকিস্তানের অধিকাংশ জনগণের ভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দু ও ইংরেজিকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেওয়া হলো। পূর্ব পাকিস্তানের নেতারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানালেন। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা তা মানতে চাইলেন না। তাই ভাষার দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়। তমদ্দুন মজলিশ নামে প্রতিষ্ঠিত একটি সংগঠন এ আন্দোলন শুরু করে, যার নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক আবুল কাসেম। এরপর ছাত্ররা রাজপথে নেমে আসে। ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন।

২১ মার্চ ঢাকার রমনার মাঠে (রেসকোর্স ময়দান, বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক জনসভায় জিন্নাহ ঘোষণা করেন, ‘উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।’ ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের বিশেষ সমাবর্তনে দেওয়া ভাষণেও তিনি একই উক্তি করেন। এর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। কার্জন হলে উর্দুর পক্ষে জিন্নাহর বক্তব্যের প্রথম ‘নো নো’ বলে প্রতিবাদ জানান ভাষাসংগ্রামী আবদুল মতিন, যিনি ভাষামতিন নামে পরিচিত। একই সঙ্গে অন্যরাও প্রতিবাদ জানান। এভাবেই জিন্নাহর বক্তব্য তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে। এ সময় কিছুক্ষণের জন্য মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ চুপ থেকে আবার বক্তব্য শুরু করেন এবং তার মন্তব্যে অটল থাকেন।

এ ঘটনার পর গোটা পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। ভাষার জন্য এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে শহরে, গ্রামগঞ্জে। পেরিয়ে যায় কয়েকটি বছর। ১৯৫০ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়; এর আহ্বায়ক ছিলেন আবদুল মতিন। এরপর আসে ১৯৫২ সাল। ভাষা আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিতে থাকে। এ সময় জিন্নাহ ও লিয়াকত আলী খান বেঁচে নেই। লিয়াকত আলী খানের জায়গায় প্রধানমন্ত্রী হন খাজা নাজিমউদ্দীন। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি করাচি থেকে ঢাকায় আসেন।

পল্টন ময়দানে নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগের অধিবেশনে বলেন, ‘প্রাদেশিক ভাষা কী হবে তা ঠিক করবে প্রাদেশিক পরিষদ। তবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দুই।’ তার এই বক্তব্যে আবার তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে ছাত্ররা বিক্ষোভ শুরু করে। ৩০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট পালিত হয়। ৩১ জানুয়ারি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে বার লাইব্রেরিতে ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। এর আহ্বায়ক হন কাজী গোলাম মাহবুব। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল, জনসভা ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে। কিন্তু এ কর্মসূচি বানচাল করার জন্য নূরুল আমীন সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি আকস্মিক ১৪৪ ধারা জারি করে।

ওইদিনই মাইকযোগে ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারার জারির বিষয়টি ঢাকার সর্বত্র প্রচার করা হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ নবাবপুরে আওয়ামী লীগ অফিসে ১৪৪ ধারা ভাঙা হবে কী হবে না, এ নিয়ে বৈঠকে বসে। বৈঠকে অলি আহাদসহ কয়েকজন ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন। তবে ওই বৈঠকে ১১-৪ ভোটে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করা এবং হরতাল প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কিছু সংগ্রামী ছাত্রনেতার উদ্যোগে বিভিন্ন হলের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রতিনিধিরা ফজলুল হক হলের পুকুর পাড়ে মিলিত হন। এদের মধ্যে ছিলেন গাজীউল হক, আবদুল মোমেন, মোহাম্মদ সুলতান, এমআর আখতার মুকুল, আহমদ রফিক, জিল্লুর রহমান প্রমুখ।

তারা যেকোনো মূল্যে ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন। পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে ছোট ছোট মিছিল এসে জড়ো হতে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের আমতলায়, যা এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইমার্জেন্সির ঢাকা সামনের জায়গাটা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আমতলায় গাজীউল হকের সভাপতিত্বে ছাত্রদের সভা হয়। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে কেঁপে ওঠে চারদিক।

সমাবেশ থেকে ছাত্রনেতারা, বিশেষ করে ভাষামতিন-খ্যাত আবদুল মতিন ঘোষণা দেন, ১৪৪ ধারা আমরা ভাঙবই। আবদুস সামাদ আজাদ তার বক্তব্যে ১৪৪ ধারা ভাঙার কৌশল বর্ণনা করে বলেন, দশজন দশজন করে মিছিল নিয়ে আমরা ১৪৪ ধারা ভাঙব। প্রথম দশজনের মিছিলে নেতৃত্ব দেন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান শেলী (যিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলেন)। এভাবেই সেদিন মিছিল নিয়ে ১৪৪ ধারা ভেঙে এগিয়ে যেতে থাকেন। পুলিশ তাদের বাধা দেয়, লাঠিপেটা করে এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররাও পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ অবস্থায় বহু ছাত্রকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেলে নিয়ে যায়।

অবস্থার অবনতি এতটাই হয় যে, বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের সামলাতে ব্যর্থ হয়ে গণপরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসরমাণ মিছিলের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান রফিউদ্দিন আহমদ, আবদুল জব্বার, আবুল বরকত (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান এমএ শ্রেণির ছাত্র)। আবদুস সালাম আহত হয়ে হাসপাতালে মারা যান। আহত হন আরো অনেকে। এ ঘটনার পর সারাদেশে হরতাল পালিত হয়। ছাত্রদের আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে এবং গণআন্দোলনে রূপ নেয়।

ভাষার জন্য এভাবে প্রাণ দেওয়ার ঘটনা, রাজপথে রক্ত দেওয়ার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন নজির সৃষ্টি করে। রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা ভাষার মর্যাদা। আমাদের এই ভাষা আন্দোলন আজ জাতিসংঘের স্বীকৃতি লাভ করেছে। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদ দিবস অমর একুশের দিনটি আজ দেশে দেশে পালিত হচ্ছে। এই হলো ভাষা আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

এক নজরে ভাষা আন্দোলনের ঘটনাপঞ্জি

  • ১৭ মে ১৯৪৭ হায়দ্রাবাদে এক ভাষণে মুসলিম লীগ নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামান বলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা। জুলাই মাসে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন এক বিবৃতিতে মন্তব্য করেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। এর প্রতিবাদ করে আজাদ পত্রিকায় জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সমস্যা শীর্ষক প্রবন্ধ লিখে বাংলা ভাষার পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন।
  • ১৯৪৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রিন্সিপাল আবুল কাসেমের নেতৃত্বে ‘তমদ্দুন মজলিশ’ গঠিত হয়। এই সংগঠনের উদ্যোগে ভাষা আন্দোলনের প্রথম পুস্তিকা ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ প্রকাশ করে বাংলার পক্ষে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়। একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রিন্সিপাল আবুল কাসেমের সভাপতিত্বে সর্বপ্রথম ছাত্র সমাবেশ হয়।
  • ২৭ নভেম্বর ১৯৪৭ করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুর পক্ষে সুপারিশ করা হয়। এর বিরুদ্ধে ৫ ডিসেম্বর ঢাকায় ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীর বিক্ষোভ হয়। ৬ ডিসেম্বরে নূরুল হক ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক করে তমদ্দুন মজলিশ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হওয়ার পর ছাত্র বিক্ষোভ হয়। এই কমিটি ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে হাজার মানুষের স্বাক্ষর নিয়ে একটি স্মারকলিপি সরকারকে দেয়।
  • ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান গণপরিষদে উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকে পরিষদের প্রথম ব্যবহারিক ভাষা হিসেবে গ্রহণের আনুষ্ঠানিক দাবি উত্থাপন করেন ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি।
  • ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়, যার আহ্বায়ক ছিলেন শামসুল আলম।
  • ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ রমনার রেসকোর্স মাঠে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেন ‘উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’। ২৪ মার্চ কার্জন হলের বক্তৃতায় একই ঘোষণা দিলে আবদুল মতিনসহ অন্য ছাত্ররা ‘নো নো’ বলে জিন্নাহর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান।
  • ১৯৪৯, ১৯৫০ ও ১৯৫১ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবস পালিত হয়।
  • ১৯৫০ সালের ১১ মার্চ আবদুল মতিনকে আহ্বায়ক করে ‘বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়।
  • ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে খাজা নাজিমউদ্দীন বলেন, পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা উর্দু এবং উর্দু হরফে বাংলা লেখার প্রচলন সফলভাবে এগিয়ে চলছে।
  • ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বার লাইব্রেরিতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে ১৫ সদস্যের সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় কাজী গোলাম মাহবুবকে আহ্বায়ক করে।

১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে এবং সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সমর্থনে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।

  • ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নূরুল আমীন সরকার এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে জনসভা, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিল নিষিদ্ধ করে।
  • ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে পুলিশ বাহিনী ও টিয়ার গ্যাস স্কোয়াড অবস্থান নেয়। নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে আমতলা চত্বরে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জড়ো হতে থাকে।
  • ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় গাজীউল হকের সভাপতিত্বে ছাত্রসভা শুরু হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্রের মত অনুসারে রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রস্তাব গ্রহণ করে ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর দশজনের মিছিল ১৪৪ ধারা ভাঙতে থাকে। পুলিশের হামলায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্র হয়। বিকাল ৩টা ১০ মিনিটে ছাত্রদের ওপর পুলিশ দুই দফায় ২৭ রাউন্ড গুলি চালায়। শহীদ হন চারজন। প্রথম শহীদ হন এমএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবুল বরকত। এরপর জব্বার ও রফিক উদ্দিন। পরে আবদুস সালাম।
  • ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা সর্বপ্রথম শহীদ মিনার নির্মাণকাজ শুরু করেন এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। প্রথম শহীদ মিনারটি ছিল ১০ ফুট উঁচু আর ৬ ফুট চওড়া। এ মিনার নির্মাণের তদারকিতে ছিলেন জিএস সরফুদ্দিন আর নকশা করেছিলেন বদিউল আলম।
  • ১৯৫২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভাষাশহীদ শফিউরের পিতা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন। গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে গণপরিষদের সদস্য দৈনিক আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন পরিষদ থেকে পদত্যাগ করলে তাকে দিয়ে এ শহীদ মিনার আবার উদ্বোধন করা হয়।
  • ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে পাকিস্তানের সরকারি বাহিনী শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলে।
  • ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত একুশের প্রভাতফেরিতে গাজীউল হক রচিত ‘ভুলবো না ভুলবো না একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলবো না’ গানটি গাওয়া হতো।
  • ১৯৫৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শিল্পী হামিদুর রহমানকে দিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশা করা হয়। তার ওপরই গড়ে ওঠে বর্তমান শহীদ মিনার।
  • ১৯৫৬ সালের সংবিধানে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা মর্যাদা প্রদান করে।
  • ১৯৫৬ সালে প্রথম সরকারিভাবে ২১ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অমর একুশের দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার মওলানা ভাসানী ও শহীদ আবুল বরকতের মাকে সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
  • ২০০৭ সালে ভাষা আন্দোলন জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ছবিসংবলিত ডাকটিকিট প্রকাশ করে।
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত