খোরশেদ মুকুল
ফররুখ আহমদ অজস্র কবিতা রচনা করলেও গদ্য, বিশেষত চিন্তামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন খুব কম। এর বাইরে লিখেছেন নাটক, গুটিকয়েক অসাধারণ গল্প এবং অসমাপ্ত একটি উপন্যাস।
বিশ্বের মুসলিমদের কর্তৃত্ব হারানো, শিক্ষা, জ্ঞান, শিল্প, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি থেকে বঞ্চিত হওয়ার বেদনা যেমন আল্লামা ইকবাল ও কাজী নজরুল ইসলামকে ব্যথিত ও মর্মাহত করেছিল, সেই বেদনার আঘাত ফররুখকেও সমভাবে ব্যথিত করেছিল। কবিতার মতো তার প্রবন্ধগুলো পাঠ করলেও একটা জাগরণী জজবা অনুভূত হয়। আবদুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদিত ফররুখ আহমদের রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ডে (বাংলা একাডেমি, আষাঢ় ১৪০৩/জুন ১৯৯৬) পাঁচটি অগ্রন্থিত প্রবন্ধ পাওয়া যায়। ঝরঝরে শব্দে তথ্য-তত্ত্ব দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে যৌক্তিক অবস্থান সময়ের প্রতিকূলে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যক্ত করেছেন কবি। গ্রন্থভুক্ত এই পাঁচটি প্রবন্ধ ছাড়াও বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত কিছু গদ্য পাওয়া যায়।
তন্ময় ও মন্ময় ক্যাটাগরির প্রবন্ধগুলোর প্রকাশকাল সম্পর্কে সম্পাদক মারফত জানা যায়- ‘ইকবাল প্রসঙ্গ’; প্রথম প্রকাশ : ‘সওগাত’, মাঘ ১৩৫৩। প্রবন্ধশেষে ‘ক্রমশ’ নির্দেশ ছিল, কিছু আর প্রকাশিত হয়নি, অর্থাৎ প্রবন্ধটি অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। ‘নজরুল প্রসঙ্গ’; প্রথম প্রকাশ: ‘ফররুখ-রচনাবলী’ (প্রথম খণ্ড, ১৯৭৯, আহমদ পাবলিশিং হাউস)। ‘নজরুল-সাহিত্যের পটভূমি’; প্রথম প্রকাশ: ‘নজরুল পরিচিতি’ (১৯৫৯, পাকিস্তান পাবলিকেশনস)। ঢাকা রেডিওতে বেতার-কথিকা হিসেবে কবি কর্তৃক পঠিত। ‘পাকিস্তান : রাষ্ট্রভাষা ও সাহিত্য’; প্রথম প্রকাশ : ‘সওগাত’, আশ্বিন ১৩৫৪। ‘ব্যায়ামশিক্ষক মোহাম্মদ জনাব আলী’। ‘সওগাত’, আশ্বিন ১৩৪৫। এফ আহমদ নামে ফররুখ আহমদ এই লেখাটি লিখেছিলেন।
‘ইকবাল প্রসঙ্গ’ প্রবন্ধটি আল্লামা ইকবালের সামগ্রিক সাহিত্যের কোনো মূল্যায়ন নয়। তবে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে অধঃপতিত মুসলিম সমাজের জন্য ইকবাল কেন প্রাসঙ্গিক তা খুব যৌক্তিকভাবেই তুলে ধরেন কবি। তিনি বলেন, ‘ইকবালের কবিতার ওপর বিশেষভাবে জোর দেওয়ার উদ্দেশ্য এই যে, পৃথিবীর কাব্যভাণ্ডারে ইকবাল যে বিশিষ্ট জাগরণের বাণী বয়ে এনেছেন, তা সব কালের উপযোগী হলেও আদর্শচ্যুত ও পরাধীন মুসলমান সমাজের জন্যই তার প্রয়োজনীয়তা সবচাইতে বেশি। এ কথা অনস্বীকার্য যে, ইকবালের বিপ্লবী চিন্তার অগ্নিস্ফুলিঙ্গেই ভারতীয় মুসলিমের মনে আজাদীর স্বপ্ন-বহ্নি মেঘের মতো পক্ষ বিস্তার করেছে।’
আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক শুধু আল্লামা ইকবালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্য ‘আসরার-ই-খুদী’র সংক্ষিপ্ত আলোচনাই করেছেন। আল্লামা ইকবালের মতোই ফররুখ আহমদ সমাজ এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন। কিন্তু বিরোধী চিন্তার সিঁড়ি অতিক্রম করে সত্যের মিনারে ওঠার যে দৃষ্টান্ত ইকবালের আছে, ফররুখ সে পথে হাঁটেননি। তবে তিনি ইকবাল দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন তা সত্য। ‘ইকবালের নির্বাচিত কবিতা’ সংকলনের ভূমিকায় সৈয়দ আলী আহসান লিখেছেন, “অনুবাদের জন্য ফররুখ আহমদের অবলম্বন ছিল নিকলসনকৃত ‘আসরারে খুদী’র ইংরেজি তর্জমা।” বলাই বাহুল্য অনুবাদে মূল কাব্যভাষার, কাব্যছন্দের ও কাব্য-উপমার অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও কাব্যচিন্তা, কাব্যভাবনার ও কাব্যবিষয়ের মর্মার্থটা থেকে যায়। এ থেকে বোঝা যায়, তিনি ইকবালকে কতটুকু ধারণ করেছেন।
‘ইকবাল প্রসঙ্গ’ লেখার মধ্য দিয়ে ফররুখ আহমদের ইকবাল পাঠের একটা বিশেষ পরিচয় পাওয়া যায়। ইকবালের প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করে তিনি লেখেন, “উনিশ শতকের প্রাচ্যের অগ্নিপুরুষ সৈয়দ জামালউদ্দীন আফগানী আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন মুসলিমপ্রধান দেশগুলিকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করতে। তার সে চেষ্টা সম্পূর্ণরূপে বিফল হয়নি। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত তিনি যে প্রাণ-বন্যার সঞ্চার করেছিলেন, উনিশ শতকের শেষ দিকে তার দেহাবসানের পর ইকবাল এলেন তারই উত্তরাধিকারী হয়ে। প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের দর্শনে সমান অভিজ্ঞ আল্লামা ইকবাল প্রচার করলেন মূল ইসলামের প্রাণবাণী। দাস মনোভাবাপন্ন স্থবির জাতি একদিন বিস্ময়ে শুনল স্বাধীন জীবনের প্রবহমান সংগীত।”
পলাশীর আম্রকাননে মুসলমানের স্বাধীনতার সূর্য নিভে যাওয়ার পর সিপাহি বিদ্রোহের ব্যর্থতায় মুসলমানের অন্তরাত্মায় যে হীনম্মন্যতার গ্লানি চেপে বসেছিল, স্থবিরতা নেমে এসেছিল, সেই স্থবিরত্বে জাগরণের ঢেউ সঞ্চার করলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ভারতের পশ্চিম প্রান্তে আল্লামা ইকবাল অবশ্য অনেক আগেই সন্ধান দিয়েছিলেন আবেহায়াতের। তবুও এ কথা স্বীকার করতেই হবে, পলাশী যুদ্ধের পর নজরুল ইসলাম বাঙালি মুসলমানের জাগরণের প্রথম কবি। তার কবিতা আমাদের জাতিসত্তায় মিশে আছে—আমাদের প্রেরণার মিনারে তোলে স্বাধীনতার আজান। তাকে নিয়ে ফররুখ আহমদ ‘নজরুল প্রসঙ্গ’ প্রবন্ধে সমালোচনার দৃষ্টিতে লিখেছেন, “নজরুলের শক্তি যেমন বিস্ময়কর, তার কাব্যিক স্খলনও তেমনি বিস্ময়কর। অদম্য ভাবাবেগের জন্য তার অধিকাংশ দীর্ঘ কবিতাই নিখুঁতভাবে জমাট বাঁধতে পারেনি, শব্দচয়নের দিক দিয়েও তার দুর্বলতা আছে যথেষ্ট। অগভীর জীবনবোধ ও দার্শনিক দৃষ্টিশক্তির অভাব তার সবচেয়ে বড় ত্রুটি। শুধু এই একটি কারণেই তিনি সর্বকালের কবি হতে পারেননি। নজরুল নিজেও তা বুঝতেন এবং সে কথা স্বীকার করে গেছেন। কিন্তু নজরুলের সহজ স্বীকৃতি ও অবহেলা বাঙালি মুসলমান সমাজের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে, কারণ তারা আরও চেয়েছিল নজরুলের কাছে; তারা তাদের নিজের দর্শন, জীবনবোধ ও ইতিহাসের অভিব্যক্তি চেয়েছিল কবি নজরুলের কবিতায়।” কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য ও কাব্য আন্দোলন নিয়ে এমন মন্তব্য হজম করা অনেকের জন্যই কঠিন। আমরা এর নেপথ্য কারণ তালাশ করতে গিয়ে ফররুখ-গবেষক শাহাবুদ্দীন আহমদের গুরুত্বপূর্ণ একটা মন্তব্য চোখে পড়ে। তিনি ‘মুসলিম রেনেসাঁসের কবি ফররুখ আহমদ’ বইয়ে উল্লেখ করেন, ‘ফররুখ রচনাবলী’র সম্পাদক মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ্ ও আবদুল মান্নান সৈয়দ তাদের রচনা-পরিচয়ে লিখেছেন, ‘নজরুল প্রসঙ্গ’ প্রবন্ধটি ফররুখ আহমদের পাণ্ডুলিপি থেকে নেওয়া। লেখাটি কোথাও প্রকাশিত হয়েছে কি না জানা যায়নি।
যেহেতু এই লেখাটি ফররুখের জীবিতকালে কোথাও প্রকাশিত হয়নি, সেজন্য মনে হয় ফররুখ তার এই মন্তব্য প্রকাশের ব্যাপারে দ্বিধান্বিত ছিলেন। বলাই বাহুল্য নজরুলের সমগ্র কাব্য ফররুখের এই লেখার সময় প্রকাশিত ছিল না। নজরুলের মুখ্য রচনা তার সংগীত বা গান, যেগুলো তার শ্রেষ্ঠ কবিতা। ফররুখের জীবিতকালে এর অধিকাংশই ছিল অপ্রকাশিত। ১৯৬৪ সালের ২৫ মে ‘নজরুল রচনাবলী’র প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। ১৯৭৭ সালে ‘নজরুল রচনাবলী’র চতুর্থ খণ্ড প্রকাশিত হয়। ১৯৮৪ সালের মে’তে ‘নজরুল রচনাবলী’র পঞ্চম খণ্ড প্রকাশিত হয়। ফররুখ আহমদের মৃত্যু হয় ১৯৭৪ সালের অক্টোবরে। উদ্ধৃত লেখাটি মনে হয় চল্লিশের দশকের লেখা। সুতরাং সম্পূর্ণ নজরুল ইসলামকে দেখা বা জানা ফররুখের পক্ষে সম্ভব হয়নি। অবশ্য যেহেতু দুই কবির জীবনাদর্শ ও মতাদর্শ ভিন্ন প্রকৃতির, সেজন্য পূর্বসূরির প্রতি উত্তরসূরির যৎকিঞ্চিৎ অভিযোগ অকল্পনীয় নয়।
সামগ্রিক বিচারে ফররুখ আহমদের ‘নজরুল-সাহিত্যের পটভূমি’ প্রবন্ধটি পাঠ করলে বোঝা যায়, তিনি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি কতটা আবেগতাড়িত ছিলেন। কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য মুসলিম সমাজ এবং ব্যক্তি ফররুখের জীবনে কতটা প্রেরণাদায়ী শক্তি, সেটা নজরুল ইসলামের ওপর লেখা ফররুখ আহমদের প্রথম জীবনের একটি কবিতা থেকে উপলব্ধি করা যায়, যেখানে তিনি নজরুল ইসলামকে ‘আমাদের কবি’ বলে অভিহিত করেন। কারণ বহু শতাব্দী ধরে বাঙালি মুসলমান আরবি-ফারসিমিশ্রিত যে বাংলা জবান গড়ে তুলেছিল, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ষড়যন্ত্র যে ভাষার কণ্ঠরোধ করেছিল, কাজী নজরুলের বলিষ্ঠ লেখনীতে তার নতুন প্রকাশ পায়। কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব নিয়ে আলোচ্য প্রবন্ধে ফররুখ আহমদ বলেন, “খিলাফৎ আন্দোলন-কালে কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব একাধিক কারণে স্মরণীয়। আত্মবিস্মৃত জাতি বহুদিন পরে শুনল তার আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা। নতুন করে পেল সে তার ঐতিহ্যের পরিচয়। স্বতন্ত্র তমদ্দুনের বৈপ্লবিক দাবিতে পাকিস্তান আন্দোলন সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রগতিশীল বলে একদা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিনন্দিত হয়েছিল, তার গোড়াপত্তন হয় এ সময় থেকেই।” অর্থাৎ ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় নজরুলের আবির্ভাব আকস্মিক হলেও অবশ্যম্ভাবী, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ঘুমন্ত জাতিকে ঢেকে স্বাধীনতার সবক শিখিয়েছেন যুগের এই মুয়াজ্জিন-কবি। আমাদের হারানো ইতিহাস-ঐতিহ্য স্বচ্ছ মেঘের মতো ভেসে বেড়ায় তার কবিতার ক্যানভাসজুড়ে। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমাদের শক্তি ও সত্তা—আমাদের গন্তব্য কোথায় এবং কোত্থেকে আমাদের যাত্রা।
ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত হয় ‘পাকিস্তান : রাষ্ট্রভাষা ও সাহিত্য’ প্রবন্ধটি। গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়া উচিত বলে আলোচ্য প্রবন্ধে মন্তব্য করেন ফররুখ আহমদ। তিনি বলেন, “কী কুৎসিত পরাজয়ী মনোবৃত্তি এর পেছনে কাজ করছে, এ কথা ভেবে আমি বিস্মিত হয়েছি। যে মনোবৃত্তির ফলে প্রায় দুশো বছর বাংলা ভাষায় ইসলামের প্রবেশ প্রায় নিষিদ্ধ ছিল, সেই অন্ধ মনোবৃত্তি নিয়েই আবার আমরা ইসলামকে গলা টিপে মারার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছি। দুঃখের বিষয় সন্দেহ নেই। কিন্তু আরো দুঃখের কথা এই যে, পূর্ব পাকিস্তানে এমন মানুষ আছেন (সংখ্যায় যত অল্পই হোক না কেন) যারা একমাত্র মানসিক দুর্বলতার জন্যই মাতৃভাষাকে মাতৃভাষার মাধ্যমে অস্বীকার করে ইসলামী ঐতিহ্যের মহান দায়িত্ব অপর একটি প্রাদেশিক ভাষার কিঞ্চিৎ-পরিপুষ্ট ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছেন।”
ইসলামি রাষ্ট্রের শত্রু কুফরি ও ক্যাপিটালিজমকেই জাতীয় শত্রু বলে চিহ্নিত করেন ফররুখ আহমদ। তিনি এই বিষয়ে লিখেছেন, “রাষ্ট্রভাষা ও জাতীয় সাহিত্য গড়ে তোলার প্রথম পদক্ষেপে বিত্তবানের সহযোগিতা কামনাকে কেউ যদি পুঁজিবাদের সমর্থন মনে করেন, তাহলে ভুল করবেন। কারণ ইসলামি রাষ্ট্রের বা পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ শত্রু বলে সর্বপ্রথম গণ্য হতে পারে কুফরি ও ক্যাপিটালিজম। আর ওই দুটোর বিরুদ্ধেই বৈরী মনোভাব নিয়ে আমাদের জাতীয় সাহিত্য গড়ে উঠবে বলেই আমার বিশ্বাস! সুতরাং পাকিস্তান রাষ্ট্র, রাষ্ট্রভাষা ও আমাদের জাতীয় সাহিত্য গড়ে তুলতে সহযোগিতা (সাহায্য নয়) করতে পারেন কেবলমাত্র তারাই, যাদের দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামি গণতন্ত্রের আলোক-দীপ্ত।”
শেখ সুলেমান নামক এক মুসলিম যুবকের বিজয়গাথার কথা বলতে গিয়ে ৫০ বছর বয়স্ক ব্যায়াম-শিক্ষক জনাব আলীর ঐকান্তিকতা ও পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করে ‘ব্যায়াম-শিক্ষক মোহাম্মদ জনাব আলী’ প্রবন্ধটি লেখেন ফররুখ আহমদ। জাতীয় পর্যায়ে গৌরবের অংশ হিসেবে এখানে আরও কয়েকজন মুসলিম যুবকের কথা তিনি উল্লেখ করেন, যারা শূন্য থেকে শুরু করে মোহাম্মদ আলীর জিমন্যাস্টিক ক্লাবের মাধ্যমে মুসলিম সমাজের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তাই এই সেক্টরে আরো মনোযোগ দেওয়ার জন্য কবির একান্ত আহ্বান। কবি আশার আলোর কথা বলতে গিয়ে লেখেন, “মুসলমানদের জীবনে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। বহুদিনের সঞ্চিত তিমিরে সূর্যরশ্মিসম্পাত হয়েছে। ব্যায়ামের দিকেও তার অন্যথা হয়নি।”
আলোচ্য প্রবন্ধগুলোকে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে বিচার করলে কবিতার বিষয়বস্তু থেকে আলাদা করা কঠিন হয়ে যাবে। ধ্যান-জ্ঞান যার মুসলিম জাগরণ, তার ক্ষেত্রে এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। কবিতার ছন্দ কিংবা গদ্যের চাল ভিন্ন মাধ্যমে অভিন্ন উদ্দেশ্য লক্ষ করা যায় ফররুখ আহমদের লেখনীতে। তত্ত্ব ও তথ্যের নান্দনিক গাঁথুনিতে মুসলিম জাগরণের অপরিহার্য ব্যক্তি ও মাধ্যমকে আমাদের সামনে হাজির করেছেন কবি।
ফররুখ আহমদ অজস্র কবিতা রচনা করলেও গদ্য, বিশেষত চিন্তামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন খুব কম। এর বাইরে লিখেছেন নাটক, গুটিকয়েক অসাধারণ গল্প এবং অসমাপ্ত একটি উপন্যাস।
বিশ্বের মুসলিমদের কর্তৃত্ব হারানো, শিক্ষা, জ্ঞান, শিল্প, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি থেকে বঞ্চিত হওয়ার বেদনা যেমন আল্লামা ইকবাল ও কাজী নজরুল ইসলামকে ব্যথিত ও মর্মাহত করেছিল, সেই বেদনার আঘাত ফররুখকেও সমভাবে ব্যথিত করেছিল। কবিতার মতো তার প্রবন্ধগুলো পাঠ করলেও একটা জাগরণী জজবা অনুভূত হয়। আবদুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদিত ফররুখ আহমদের রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ডে (বাংলা একাডেমি, আষাঢ় ১৪০৩/জুন ১৯৯৬) পাঁচটি অগ্রন্থিত প্রবন্ধ পাওয়া যায়। ঝরঝরে শব্দে তথ্য-তত্ত্ব দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে যৌক্তিক অবস্থান সময়ের প্রতিকূলে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যক্ত করেছেন কবি। গ্রন্থভুক্ত এই পাঁচটি প্রবন্ধ ছাড়াও বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত কিছু গদ্য পাওয়া যায়।
তন্ময় ও মন্ময় ক্যাটাগরির প্রবন্ধগুলোর প্রকাশকাল সম্পর্কে সম্পাদক মারফত জানা যায়- ‘ইকবাল প্রসঙ্গ’; প্রথম প্রকাশ : ‘সওগাত’, মাঘ ১৩৫৩। প্রবন্ধশেষে ‘ক্রমশ’ নির্দেশ ছিল, কিছু আর প্রকাশিত হয়নি, অর্থাৎ প্রবন্ধটি অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। ‘নজরুল প্রসঙ্গ’; প্রথম প্রকাশ: ‘ফররুখ-রচনাবলী’ (প্রথম খণ্ড, ১৯৭৯, আহমদ পাবলিশিং হাউস)। ‘নজরুল-সাহিত্যের পটভূমি’; প্রথম প্রকাশ: ‘নজরুল পরিচিতি’ (১৯৫৯, পাকিস্তান পাবলিকেশনস)। ঢাকা রেডিওতে বেতার-কথিকা হিসেবে কবি কর্তৃক পঠিত। ‘পাকিস্তান : রাষ্ট্রভাষা ও সাহিত্য’; প্রথম প্রকাশ : ‘সওগাত’, আশ্বিন ১৩৫৪। ‘ব্যায়ামশিক্ষক মোহাম্মদ জনাব আলী’। ‘সওগাত’, আশ্বিন ১৩৪৫। এফ আহমদ নামে ফররুখ আহমদ এই লেখাটি লিখেছিলেন।
‘ইকবাল প্রসঙ্গ’ প্রবন্ধটি আল্লামা ইকবালের সামগ্রিক সাহিত্যের কোনো মূল্যায়ন নয়। তবে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে অধঃপতিত মুসলিম সমাজের জন্য ইকবাল কেন প্রাসঙ্গিক তা খুব যৌক্তিকভাবেই তুলে ধরেন কবি। তিনি বলেন, ‘ইকবালের কবিতার ওপর বিশেষভাবে জোর দেওয়ার উদ্দেশ্য এই যে, পৃথিবীর কাব্যভাণ্ডারে ইকবাল যে বিশিষ্ট জাগরণের বাণী বয়ে এনেছেন, তা সব কালের উপযোগী হলেও আদর্শচ্যুত ও পরাধীন মুসলমান সমাজের জন্যই তার প্রয়োজনীয়তা সবচাইতে বেশি। এ কথা অনস্বীকার্য যে, ইকবালের বিপ্লবী চিন্তার অগ্নিস্ফুলিঙ্গেই ভারতীয় মুসলিমের মনে আজাদীর স্বপ্ন-বহ্নি মেঘের মতো পক্ষ বিস্তার করেছে।’
আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক শুধু আল্লামা ইকবালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্য ‘আসরার-ই-খুদী’র সংক্ষিপ্ত আলোচনাই করেছেন। আল্লামা ইকবালের মতোই ফররুখ আহমদ সমাজ এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন। কিন্তু বিরোধী চিন্তার সিঁড়ি অতিক্রম করে সত্যের মিনারে ওঠার যে দৃষ্টান্ত ইকবালের আছে, ফররুখ সে পথে হাঁটেননি। তবে তিনি ইকবাল দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন তা সত্য। ‘ইকবালের নির্বাচিত কবিতা’ সংকলনের ভূমিকায় সৈয়দ আলী আহসান লিখেছেন, “অনুবাদের জন্য ফররুখ আহমদের অবলম্বন ছিল নিকলসনকৃত ‘আসরারে খুদী’র ইংরেজি তর্জমা।” বলাই বাহুল্য অনুবাদে মূল কাব্যভাষার, কাব্যছন্দের ও কাব্য-উপমার অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও কাব্যচিন্তা, কাব্যভাবনার ও কাব্যবিষয়ের মর্মার্থটা থেকে যায়। এ থেকে বোঝা যায়, তিনি ইকবালকে কতটুকু ধারণ করেছেন।
‘ইকবাল প্রসঙ্গ’ লেখার মধ্য দিয়ে ফররুখ আহমদের ইকবাল পাঠের একটা বিশেষ পরিচয় পাওয়া যায়। ইকবালের প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করে তিনি লেখেন, “উনিশ শতকের প্রাচ্যের অগ্নিপুরুষ সৈয়দ জামালউদ্দীন আফগানী আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন মুসলিমপ্রধান দেশগুলিকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করতে। তার সে চেষ্টা সম্পূর্ণরূপে বিফল হয়নি। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত তিনি যে প্রাণ-বন্যার সঞ্চার করেছিলেন, উনিশ শতকের শেষ দিকে তার দেহাবসানের পর ইকবাল এলেন তারই উত্তরাধিকারী হয়ে। প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের দর্শনে সমান অভিজ্ঞ আল্লামা ইকবাল প্রচার করলেন মূল ইসলামের প্রাণবাণী। দাস মনোভাবাপন্ন স্থবির জাতি একদিন বিস্ময়ে শুনল স্বাধীন জীবনের প্রবহমান সংগীত।”
পলাশীর আম্রকাননে মুসলমানের স্বাধীনতার সূর্য নিভে যাওয়ার পর সিপাহি বিদ্রোহের ব্যর্থতায় মুসলমানের অন্তরাত্মায় যে হীনম্মন্যতার গ্লানি চেপে বসেছিল, স্থবিরতা নেমে এসেছিল, সেই স্থবিরত্বে জাগরণের ঢেউ সঞ্চার করলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ভারতের পশ্চিম প্রান্তে আল্লামা ইকবাল অবশ্য অনেক আগেই সন্ধান দিয়েছিলেন আবেহায়াতের। তবুও এ কথা স্বীকার করতেই হবে, পলাশী যুদ্ধের পর নজরুল ইসলাম বাঙালি মুসলমানের জাগরণের প্রথম কবি। তার কবিতা আমাদের জাতিসত্তায় মিশে আছে—আমাদের প্রেরণার মিনারে তোলে স্বাধীনতার আজান। তাকে নিয়ে ফররুখ আহমদ ‘নজরুল প্রসঙ্গ’ প্রবন্ধে সমালোচনার দৃষ্টিতে লিখেছেন, “নজরুলের শক্তি যেমন বিস্ময়কর, তার কাব্যিক স্খলনও তেমনি বিস্ময়কর। অদম্য ভাবাবেগের জন্য তার অধিকাংশ দীর্ঘ কবিতাই নিখুঁতভাবে জমাট বাঁধতে পারেনি, শব্দচয়নের দিক দিয়েও তার দুর্বলতা আছে যথেষ্ট। অগভীর জীবনবোধ ও দার্শনিক দৃষ্টিশক্তির অভাব তার সবচেয়ে বড় ত্রুটি। শুধু এই একটি কারণেই তিনি সর্বকালের কবি হতে পারেননি। নজরুল নিজেও তা বুঝতেন এবং সে কথা স্বীকার করে গেছেন। কিন্তু নজরুলের সহজ স্বীকৃতি ও অবহেলা বাঙালি মুসলমান সমাজের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে, কারণ তারা আরও চেয়েছিল নজরুলের কাছে; তারা তাদের নিজের দর্শন, জীবনবোধ ও ইতিহাসের অভিব্যক্তি চেয়েছিল কবি নজরুলের কবিতায়।” কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য ও কাব্য আন্দোলন নিয়ে এমন মন্তব্য হজম করা অনেকের জন্যই কঠিন। আমরা এর নেপথ্য কারণ তালাশ করতে গিয়ে ফররুখ-গবেষক শাহাবুদ্দীন আহমদের গুরুত্বপূর্ণ একটা মন্তব্য চোখে পড়ে। তিনি ‘মুসলিম রেনেসাঁসের কবি ফররুখ আহমদ’ বইয়ে উল্লেখ করেন, ‘ফররুখ রচনাবলী’র সম্পাদক মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ্ ও আবদুল মান্নান সৈয়দ তাদের রচনা-পরিচয়ে লিখেছেন, ‘নজরুল প্রসঙ্গ’ প্রবন্ধটি ফররুখ আহমদের পাণ্ডুলিপি থেকে নেওয়া। লেখাটি কোথাও প্রকাশিত হয়েছে কি না জানা যায়নি।
যেহেতু এই লেখাটি ফররুখের জীবিতকালে কোথাও প্রকাশিত হয়নি, সেজন্য মনে হয় ফররুখ তার এই মন্তব্য প্রকাশের ব্যাপারে দ্বিধান্বিত ছিলেন। বলাই বাহুল্য নজরুলের সমগ্র কাব্য ফররুখের এই লেখার সময় প্রকাশিত ছিল না। নজরুলের মুখ্য রচনা তার সংগীত বা গান, যেগুলো তার শ্রেষ্ঠ কবিতা। ফররুখের জীবিতকালে এর অধিকাংশই ছিল অপ্রকাশিত। ১৯৬৪ সালের ২৫ মে ‘নজরুল রচনাবলী’র প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। ১৯৭৭ সালে ‘নজরুল রচনাবলী’র চতুর্থ খণ্ড প্রকাশিত হয়। ১৯৮৪ সালের মে’তে ‘নজরুল রচনাবলী’র পঞ্চম খণ্ড প্রকাশিত হয়। ফররুখ আহমদের মৃত্যু হয় ১৯৭৪ সালের অক্টোবরে। উদ্ধৃত লেখাটি মনে হয় চল্লিশের দশকের লেখা। সুতরাং সম্পূর্ণ নজরুল ইসলামকে দেখা বা জানা ফররুখের পক্ষে সম্ভব হয়নি। অবশ্য যেহেতু দুই কবির জীবনাদর্শ ও মতাদর্শ ভিন্ন প্রকৃতির, সেজন্য পূর্বসূরির প্রতি উত্তরসূরির যৎকিঞ্চিৎ অভিযোগ অকল্পনীয় নয়।
সামগ্রিক বিচারে ফররুখ আহমদের ‘নজরুল-সাহিত্যের পটভূমি’ প্রবন্ধটি পাঠ করলে বোঝা যায়, তিনি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি কতটা আবেগতাড়িত ছিলেন। কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য মুসলিম সমাজ এবং ব্যক্তি ফররুখের জীবনে কতটা প্রেরণাদায়ী শক্তি, সেটা নজরুল ইসলামের ওপর লেখা ফররুখ আহমদের প্রথম জীবনের একটি কবিতা থেকে উপলব্ধি করা যায়, যেখানে তিনি নজরুল ইসলামকে ‘আমাদের কবি’ বলে অভিহিত করেন। কারণ বহু শতাব্দী ধরে বাঙালি মুসলমান আরবি-ফারসিমিশ্রিত যে বাংলা জবান গড়ে তুলেছিল, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ষড়যন্ত্র যে ভাষার কণ্ঠরোধ করেছিল, কাজী নজরুলের বলিষ্ঠ লেখনীতে তার নতুন প্রকাশ পায়। কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব নিয়ে আলোচ্য প্রবন্ধে ফররুখ আহমদ বলেন, “খিলাফৎ আন্দোলন-কালে কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব একাধিক কারণে স্মরণীয়। আত্মবিস্মৃত জাতি বহুদিন পরে শুনল তার আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা। নতুন করে পেল সে তার ঐতিহ্যের পরিচয়। স্বতন্ত্র তমদ্দুনের বৈপ্লবিক দাবিতে পাকিস্তান আন্দোলন সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রগতিশীল বলে একদা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিনন্দিত হয়েছিল, তার গোড়াপত্তন হয় এ সময় থেকেই।” অর্থাৎ ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় নজরুলের আবির্ভাব আকস্মিক হলেও অবশ্যম্ভাবী, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ঘুমন্ত জাতিকে ঢেকে স্বাধীনতার সবক শিখিয়েছেন যুগের এই মুয়াজ্জিন-কবি। আমাদের হারানো ইতিহাস-ঐতিহ্য স্বচ্ছ মেঘের মতো ভেসে বেড়ায় তার কবিতার ক্যানভাসজুড়ে। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমাদের শক্তি ও সত্তা—আমাদের গন্তব্য কোথায় এবং কোত্থেকে আমাদের যাত্রা।
ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত হয় ‘পাকিস্তান : রাষ্ট্রভাষা ও সাহিত্য’ প্রবন্ধটি। গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়া উচিত বলে আলোচ্য প্রবন্ধে মন্তব্য করেন ফররুখ আহমদ। তিনি বলেন, “কী কুৎসিত পরাজয়ী মনোবৃত্তি এর পেছনে কাজ করছে, এ কথা ভেবে আমি বিস্মিত হয়েছি। যে মনোবৃত্তির ফলে প্রায় দুশো বছর বাংলা ভাষায় ইসলামের প্রবেশ প্রায় নিষিদ্ধ ছিল, সেই অন্ধ মনোবৃত্তি নিয়েই আবার আমরা ইসলামকে গলা টিপে মারার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছি। দুঃখের বিষয় সন্দেহ নেই। কিন্তু আরো দুঃখের কথা এই যে, পূর্ব পাকিস্তানে এমন মানুষ আছেন (সংখ্যায় যত অল্পই হোক না কেন) যারা একমাত্র মানসিক দুর্বলতার জন্যই মাতৃভাষাকে মাতৃভাষার মাধ্যমে অস্বীকার করে ইসলামী ঐতিহ্যের মহান দায়িত্ব অপর একটি প্রাদেশিক ভাষার কিঞ্চিৎ-পরিপুষ্ট ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছেন।”
ইসলামি রাষ্ট্রের শত্রু কুফরি ও ক্যাপিটালিজমকেই জাতীয় শত্রু বলে চিহ্নিত করেন ফররুখ আহমদ। তিনি এই বিষয়ে লিখেছেন, “রাষ্ট্রভাষা ও জাতীয় সাহিত্য গড়ে তোলার প্রথম পদক্ষেপে বিত্তবানের সহযোগিতা কামনাকে কেউ যদি পুঁজিবাদের সমর্থন মনে করেন, তাহলে ভুল করবেন। কারণ ইসলামি রাষ্ট্রের বা পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ শত্রু বলে সর্বপ্রথম গণ্য হতে পারে কুফরি ও ক্যাপিটালিজম। আর ওই দুটোর বিরুদ্ধেই বৈরী মনোভাব নিয়ে আমাদের জাতীয় সাহিত্য গড়ে উঠবে বলেই আমার বিশ্বাস! সুতরাং পাকিস্তান রাষ্ট্র, রাষ্ট্রভাষা ও আমাদের জাতীয় সাহিত্য গড়ে তুলতে সহযোগিতা (সাহায্য নয়) করতে পারেন কেবলমাত্র তারাই, যাদের দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামি গণতন্ত্রের আলোক-দীপ্ত।”
শেখ সুলেমান নামক এক মুসলিম যুবকের বিজয়গাথার কথা বলতে গিয়ে ৫০ বছর বয়স্ক ব্যায়াম-শিক্ষক জনাব আলীর ঐকান্তিকতা ও পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করে ‘ব্যায়াম-শিক্ষক মোহাম্মদ জনাব আলী’ প্রবন্ধটি লেখেন ফররুখ আহমদ। জাতীয় পর্যায়ে গৌরবের অংশ হিসেবে এখানে আরও কয়েকজন মুসলিম যুবকের কথা তিনি উল্লেখ করেন, যারা শূন্য থেকে শুরু করে মোহাম্মদ আলীর জিমন্যাস্টিক ক্লাবের মাধ্যমে মুসলিম সমাজের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তাই এই সেক্টরে আরো মনোযোগ দেওয়ার জন্য কবির একান্ত আহ্বান। কবি আশার আলোর কথা বলতে গিয়ে লেখেন, “মুসলমানদের জীবনে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। বহুদিনের সঞ্চিত তিমিরে সূর্যরশ্মিসম্পাত হয়েছে। ব্যায়ামের দিকেও তার অন্যথা হয়নি।”
আলোচ্য প্রবন্ধগুলোকে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে বিচার করলে কবিতার বিষয়বস্তু থেকে আলাদা করা কঠিন হয়ে যাবে। ধ্যান-জ্ঞান যার মুসলিম জাগরণ, তার ক্ষেত্রে এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। কবিতার ছন্দ কিংবা গদ্যের চাল ভিন্ন মাধ্যমে অভিন্ন উদ্দেশ্য লক্ষ করা যায় ফররুখ আহমদের লেখনীতে। তত্ত্ব ও তথ্যের নান্দনিক গাঁথুনিতে মুসলিম জাগরণের অপরিহার্য ব্যক্তি ও মাধ্যমকে আমাদের সামনে হাজির করেছেন কবি।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন শিশির বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, শাকসু বানচালের চেষ্টা চলছে। শিক্ষার্থীরা এটা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। যদি আগামী সোমবার ভিসি এসে নির্বাচন কমিশন গঠন করে রোডম্যাপ ঘোষণা না করেন, তাহলে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের...
৬ ঘণ্টা আগেসংগঠনের তথ্য, উপহার প্রদান, অনুভূতি বক্স এবং মেহেদি দেওয়ার জন্য উৎসবের ছাউনিতে চারটি আলাদা বুথ। সেখানে ছিল নারী শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। আয়োজকরা নতুন সদস্য আহ্বান ও প্রচারপত্র বিলি করেন। ফটকের সামনে একটি ব্যানারে লেখা, ‛প্রিয় ভাইয়েরা, ভেতরে প্রবেশ ও উঁকি মারা থেকে বিরত থাকুন।’
৭ ঘণ্টা আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেছেন, ছাত্রদল নেতা ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে—কেউ যেন আইনের ফাঁক দিয়ে কেউ বেরিয়ে না যায়।
৮ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বোরকা ও পর্দাশীল নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। এই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা।
৯ ঘণ্টা আগে