মাহবুবুল আলম মাসুদ
আব্দুল হক চরম বিরক্তি নিয়ে টেবিলে রাখা কাগজটার ওপর থেকে চোখ তুলে রুস্তম আলীর দিকে তাকালেন। রুস্তম আলী সেই দৃষ্টি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে উদাস চোখে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইল। যেন কিছুই হয়নি। অথচ যা হয়েছে তাতে তার দৃষ্টি পড়ে থাকার কথা পায়ের নখের ওপর। মাস-তিনেক আগে হক সাহেবের হার্টের রক্তনালিতে দুটি স্টেন্ট পরিয়ে দিয়েছেন ডাক্তার। তিনি ইউটিউবে দেখা রাগ নামিয়ে ফেলার নানা কায়দা-কানুন প্রয়োগ করতে লাগলেন। কিন্তু সব কায়দাই কাদায় ডুবে গেল। প্রায় আধা মিনিট পর রুস্তম আলী তার দৃষ্টি রুমে ফিরিয়ে এনে হক সাহেবের বিশাল টেবিলটার এক কোণে ফেলে রাখল। হয়তো হক সাহেবের চোখের ওপরই রাখতে চেয়েছিল কিন্তু শত হলেও হক সাহেব তার ডিডি স্যার আর সে হক সাহেবের গাড়ির ড্রাইভার।
হক সাহেব কাগজটা ঠেলে দিয়ে বললেন, নিয়ে যাও, এই কাগজে আমি সাইন করব না।
রুস্তম আলী হক সাহেবের ব্রহ্মতালু জ্বালিয়ে দিয়ে বলল, না করলেন, কদিন আর আটকাইয়া রাখবেন!
রুস্তম আলী চলে গেল।
হক সাহেব টেবিলের ওপর হাত দুটো রেখে অজগরের মতো ফুঁস ফুঁস করতে লাগলেন।
পরদিন বৃহস্পতিবার। সরকারি ছুটি ছিল। বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার। টানা তিন দিনের ছুটিতে হক সাহেব চলে গেলেন ময়মনসিংহ। স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের কাছে।
ঢাকা ফিরলেন রবিবারে।
রবিবারে এলো রহমতউল্লাহ। রুস্তম আলীদের ইউনিয়ন সভাপতি।
: স্যার, কেমন আছেন?
: ভালো আছি। তোমাদের খবর কী?
: আমরাও ভালো আছি স্যার।
: কিছু বলতে চাও?
: জি স্যার। রুস্তম আলীর ব্যাপারটা স্যার।
: বলেছি তো ওই কাগজে আমি সাইন করব না।
: আপনার কথা ঠিক আছে স্যার। সাইন করার মতো কাগজ তো ওটা না। কিন্তু স্যার এই দশ-বারো হাজার টাকা বাঁচিয়ে দিয়ে আপনি কী করবেন? দেশের কিছু আসবে যাবে তাতে? কোটি কোটি তো লোপাট হয়ে যাচ্ছে।
: আমি এক টাকাও ক্ষতি হতে দেব না। আমি তো বীর না; দেশ উদ্ধারে নামি নাই। ওই সাইন না-করার মতো কাগজে আমিই তো সাইন করি সারা বছরÑকরতে হয়। অন্যায়কে যদি সবাই অধিকার হিসেবে ধরে নেয় তো আমি একা কী করব? কথা তো সেটা না। আমি শুধু রুস্তম আলীকে বলেছিলাম, দেখ রুস্তম, সারা বছরই তো ওভারটাইম না-করেও ওভারটাইম বিল করছো। আমি সাইনও করে দিচ্ছি। এই রোজার মাসটা একটু রয়েসয়ে চলো। এই মাসে ওসব বিল এনো না, আমি কিন্তু সাইন করব না। তারপরও বিরাশি ঘণ্টার ওভারটাইম বিল নিয়া আসছে। আমি কি প্রতিদিন ইফতার করেছি, তারাবি পড়েছি এই অফিসে? সাড়ে ৩টার পর এক মিনিটও তো কোনো দিন থাকিনি। কখনো তদন্ত হলে আমি কী বলব?
: অডিট তো প্রতিবছরই হয় স্যার। আমরাই তো ম্যানেজ করি। ওসব নিয়ে ভাবছেন কেন?
: অডিট বাদ দিলাম। আমি আমার বিবেককে কী বলব?
রহমতউল্লাহ কোনো উত্তর দেয় না।
হক সাহেব বলতে থাকেন, এই যে আমার মেয়েটা ঢাকা ভার্সিটিতে অ্যাডমিশন টেস্ট দিয়ে গেল, আমি বলেছি মেয়েটাকে দিয়ে আস বা নিয়ে আস? ওরা মাঝে-মাঝে ঢাকা আসেÑসিএনজি চেপে, মেট্রোতে চড়ে চলাচল করে। কোনো দিন তো বলি না রুস্তম, অমুককে দিয়ে আস, তমুককে নিয়ে আস।
: না স্যার, বলেন না। আপনি অন্যরকম। এই যে অফিসে এত ঝড়ঝাপটা গেলÑকেউ চলে গেল চিলমারী, কেউ চুনারুঘাট। আপনি স্যার আপনার জায়গাতেই আছেন। সবাই সেটা জানেও।
: সে-কথা বলছি না। চাকরি থাকলে ট্রান্সফার থাকবেই। আমিও ট্রান্সফার হতে পারি।
: তবু স্যার। আপনি আলাদা।
হক সাহেব আর কথা বলেন না।
রহমতউল্লাহ ফাঁক পেয়ে বলে, সাইনটা করে দিয়েন স্যার।
হক সাহেব আবার একটু চটে যান, মানে, তালগাছ রুস্তম আলীর?
: কী করব স্যার? সভাপতি হয়েছি সবার আবদারই রাখতে হয়।
: সব বাদ দিলাম, আমাকে বলে, ‘কদিন আর আটকাইয়া রাখবেন’! কত বড় সাহস!
: বেয়াদব স্যার। আস্ত একটা বেয়াদব। আমি বকা দিয়া দিব। সাইনটা দিয়ে দিয়েন স্যার। আমি যাই।
রহমতউল্লাহ চলে গেল।
পর দিন বিরাশি ঘণ্টার ওভারটাইম বিলে সাইন করে দিলেন হক সাহেব।
হক সাহেব ভেবে দেখলেন, রহমতউল্লাহ যতই তার তালে তালে কথা বলুক আসলে সে তো রুস্তম আলীরই লোক। সাইন না-করা পর্যন্ত নানা রকম প্যাঁচ খেলতে থাকবে। সময়ে রহমতউল্লাহ রুস্তম আলীর চেয়েও বড় বেয়াদব হয়ে যেতে পারে। এরা ভয়ংকর! এদের হাত অনেক লম্বা। তার হাতটা তো ওই বিবেক পর্যন্তই।
ভুয়া বিলে সাইন করে দিয়ে হক সাহেব কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিলেন। ঠিক করলেন, গাড়িই আর রাখবেন না। মাথাই নাই ব্যথা হবে কী করে? ডেপুটি ডিরেক্টরের গাড়ি থাকতেই হবে এমন তো কোনো কথা নেই। ফোন করে পরিবহন পুলের অফিসারকে বললেন, আমার গাড়ি লাগবে না। আমার নামে বরাদ্দ করা গাড়িটা বাতিল করে দিন।
অফিসার একটু চমকাল। বলল, কোনো সমস্যা স্যার?
: না, কোনো সমস্যা নেই।
: সমস্যা হলে বলতে পারেন স্যার। আমি ঠিক করে দিচ্ছি। আপনার গাড়ি থাকবে না তা কি হয়?
: হয় হয়। গাড়ি ছাড়াই আমার চলবে।
সত্যিই গাড়ি ছাড়া ভালোই চলতে লাগল হক সাহেবের। আগে অফিসে যেতে সময় লাগত দশ মিনিট। এখন লাগে পনেরো মিনিট। গাড়ির পথটা ছিল ঘোরা পথ। এখন হেঁটে যান; কোনাকুনি পথে। হাঁটা কোনো সমস্যাই না তার কাছে। গ্রামের ছেলে হক সাহেব। একেবারে শিয়াল-ডাকা গ্রাম। আট মাইল হেঁটে স্কুলে যেতেন। এখন সকাল-বিকাল হাঁটতেই হয়। গরম এখনো পুরোপুরি পড়েনি। গরম পড়লে ঘাম হবে। হোক। অফিসে এসি তো আছেই। বেশি গরম লাগলে রিকশায় যাবেন। তবু গাড়ি নেবেন না, কিছুতেই না।
একটা সপ্তাহ ভালোই গেল।
দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সমস্যা শুরু হলো। একের পর এক দুর্ঘটনায় পড়তে লাগলেন। মাত্র তেরো দিনে তিনটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। ছোটখাটো বলে রক্ষা। কিন্তু ঘন ঘন হওয়ায় মনে কুডাক ডাকতে লাগল।
প্রথমবার পায়ের ওপর দিয়ে রিকশার চাকা চলে গেল। এক্সরে দেখে ডাক্তার বললেন, কিছু হয়নি। সব ঠিক আছে। কয়েক দিন বিশ্রামে থাকতে হবে।
দুদিন পরই অফিসে চলে গেলেন হক সাহেব।
দ্বিতীয়বার রাস্তায় পড়ে থাকা একটা ইটের সঙ্গে উষ্টা খেয়ে আর সামলাতে পারলেন না। পড়ে গেলেন রাস্তায়। কনুইয়ের ছাল চলে গেল।
তৃতীয়টা একটু মারাত্মক এবং সন্দেহজনক। রিকশায় অফিসে আসছিলেন। বাম হাতে হুডটাও ধরা ছিল। তারপরও রিকশা থেকে একেবারে পড়ে গেলেন পেছনের রঙচটা একটা মাইক্রোর ধাক্কায়। এবার হক সাহেবের কনুই এবং হাঁটুর ছাল দুই-ই গেল। ভেবেছিলেন এখানেই শেষ। কিন্তু তা হলো না। পায়ের বুড়ো আঙুল ফুলে গেল। পর দিন এক্সরে করলেন। ডাক্তার বললেন, আঙুলের হাড়ে হালকা চিড় ধরেছে। তেমন কিছু না। রেস্টে থাকলেই সেরে যাবে।
একা একা রেস্ট নেবেন কী করে? ময়মনসিংহ থেকে স্ত্রী ছুটে গেলেন। নিয়ে গেলেন তার কাছে। সপ্তাহখানেক সময়েই সেরে গেল। কিন্তু স্ত্রী ছাড়লেন না। আরেকটা সপ্তাহ রেখে দিলেন। আসার আগে বারবার সাবধান করে দিয়ে বললেন, আগে নিজের জান।
হক সাহেব অফিসে গেলেন দুই সপ্তাহ পর।
রহমতউল্লাহ এলো দেখা করতে।
: স্যার, এখন কেমন আছেন?
: ভালো আছি।
: ব্যথা পুরাপুরি সেরেছে?
: হালকা একটু আছে। সেরে যাবে ইনশাআল্লাহ।
: কেন যে স্যার গাড়িটা ছেড়ে দিলেন? বড় কিছু যদি ঘটে যেত।
: সে তো গাড়িতেও ঘটতে পারে।
: তারপরও স্যার, গাড়ি অনেক সেইফ। গাড়ি থাকলে তো উষ্টা খেতেন না। গাড়িটা নিয়ে নেন। চোরের ডরে তো আর মাটিতে ভাত খাওয়া যায় না স্যার।
এরা দেখা যায় সব খবরই রাখে। উষ্টা খাওয়ার খবরও পেয়ে গেছে। এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। বললেন, গাড়ি ছাড়াই তো বেশ আছি।
: কি যে কন স্যার। দরকারের কথা বাদই দিলাম। শোভা বলে একটা কথাও তো আছে। আপনাকে কি রিকশায় শোভা পায়। গাড়ি ছাড়া আপনার শোভা হয় কী করে? রিকশায় চড়ব আমরা। ছাল গেলেই কী, হাড়গোড় ভাঙলেই কী? গাড়িটা নিয়ে নেন স্যার। গাড়িটা আপনার দরকার। যাই স্যার। ইউনিয়নের একটা মিটিং আছে।
রহমতউল্লাহ চলে গেল।
হক সাহেব খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন। কখন কি ঘটে যায়, কে জানে। রহমতউল্লাহর কথার নানা ব্যাখ্যা মনে ঘুরপাক খেতে লাগল। পরিববহনপুলের অফিসারকে ফোন করে আবার গাড়িটা দিতে বললেন। তবে শর্ত দিলেন, রুস্তম আলী যেন তার গাড়ির ত্রিসীমানায় না থাকে। একটা এক হাতওয়ালা ড্রাইভার হলেও তার চলবে কিন্তু রুস্তম আলী না।
মনে মনে বললেন, ভাত তো খেতেই হবে, খাব; কিন্তু এই থালায় আর না।
আব্দুল হক চরম বিরক্তি নিয়ে টেবিলে রাখা কাগজটার ওপর থেকে চোখ তুলে রুস্তম আলীর দিকে তাকালেন। রুস্তম আলী সেই দৃষ্টি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে উদাস চোখে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইল। যেন কিছুই হয়নি। অথচ যা হয়েছে তাতে তার দৃষ্টি পড়ে থাকার কথা পায়ের নখের ওপর। মাস-তিনেক আগে হক সাহেবের হার্টের রক্তনালিতে দুটি স্টেন্ট পরিয়ে দিয়েছেন ডাক্তার। তিনি ইউটিউবে দেখা রাগ নামিয়ে ফেলার নানা কায়দা-কানুন প্রয়োগ করতে লাগলেন। কিন্তু সব কায়দাই কাদায় ডুবে গেল। প্রায় আধা মিনিট পর রুস্তম আলী তার দৃষ্টি রুমে ফিরিয়ে এনে হক সাহেবের বিশাল টেবিলটার এক কোণে ফেলে রাখল। হয়তো হক সাহেবের চোখের ওপরই রাখতে চেয়েছিল কিন্তু শত হলেও হক সাহেব তার ডিডি স্যার আর সে হক সাহেবের গাড়ির ড্রাইভার।
হক সাহেব কাগজটা ঠেলে দিয়ে বললেন, নিয়ে যাও, এই কাগজে আমি সাইন করব না।
রুস্তম আলী হক সাহেবের ব্রহ্মতালু জ্বালিয়ে দিয়ে বলল, না করলেন, কদিন আর আটকাইয়া রাখবেন!
রুস্তম আলী চলে গেল।
হক সাহেব টেবিলের ওপর হাত দুটো রেখে অজগরের মতো ফুঁস ফুঁস করতে লাগলেন।
পরদিন বৃহস্পতিবার। সরকারি ছুটি ছিল। বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার। টানা তিন দিনের ছুটিতে হক সাহেব চলে গেলেন ময়মনসিংহ। স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের কাছে।
ঢাকা ফিরলেন রবিবারে।
রবিবারে এলো রহমতউল্লাহ। রুস্তম আলীদের ইউনিয়ন সভাপতি।
: স্যার, কেমন আছেন?
: ভালো আছি। তোমাদের খবর কী?
: আমরাও ভালো আছি স্যার।
: কিছু বলতে চাও?
: জি স্যার। রুস্তম আলীর ব্যাপারটা স্যার।
: বলেছি তো ওই কাগজে আমি সাইন করব না।
: আপনার কথা ঠিক আছে স্যার। সাইন করার মতো কাগজ তো ওটা না। কিন্তু স্যার এই দশ-বারো হাজার টাকা বাঁচিয়ে দিয়ে আপনি কী করবেন? দেশের কিছু আসবে যাবে তাতে? কোটি কোটি তো লোপাট হয়ে যাচ্ছে।
: আমি এক টাকাও ক্ষতি হতে দেব না। আমি তো বীর না; দেশ উদ্ধারে নামি নাই। ওই সাইন না-করার মতো কাগজে আমিই তো সাইন করি সারা বছরÑকরতে হয়। অন্যায়কে যদি সবাই অধিকার হিসেবে ধরে নেয় তো আমি একা কী করব? কথা তো সেটা না। আমি শুধু রুস্তম আলীকে বলেছিলাম, দেখ রুস্তম, সারা বছরই তো ওভারটাইম না-করেও ওভারটাইম বিল করছো। আমি সাইনও করে দিচ্ছি। এই রোজার মাসটা একটু রয়েসয়ে চলো। এই মাসে ওসব বিল এনো না, আমি কিন্তু সাইন করব না। তারপরও বিরাশি ঘণ্টার ওভারটাইম বিল নিয়া আসছে। আমি কি প্রতিদিন ইফতার করেছি, তারাবি পড়েছি এই অফিসে? সাড়ে ৩টার পর এক মিনিটও তো কোনো দিন থাকিনি। কখনো তদন্ত হলে আমি কী বলব?
: অডিট তো প্রতিবছরই হয় স্যার। আমরাই তো ম্যানেজ করি। ওসব নিয়ে ভাবছেন কেন?
: অডিট বাদ দিলাম। আমি আমার বিবেককে কী বলব?
রহমতউল্লাহ কোনো উত্তর দেয় না।
হক সাহেব বলতে থাকেন, এই যে আমার মেয়েটা ঢাকা ভার্সিটিতে অ্যাডমিশন টেস্ট দিয়ে গেল, আমি বলেছি মেয়েটাকে দিয়ে আস বা নিয়ে আস? ওরা মাঝে-মাঝে ঢাকা আসেÑসিএনজি চেপে, মেট্রোতে চড়ে চলাচল করে। কোনো দিন তো বলি না রুস্তম, অমুককে দিয়ে আস, তমুককে নিয়ে আস।
: না স্যার, বলেন না। আপনি অন্যরকম। এই যে অফিসে এত ঝড়ঝাপটা গেলÑকেউ চলে গেল চিলমারী, কেউ চুনারুঘাট। আপনি স্যার আপনার জায়গাতেই আছেন। সবাই সেটা জানেও।
: সে-কথা বলছি না। চাকরি থাকলে ট্রান্সফার থাকবেই। আমিও ট্রান্সফার হতে পারি।
: তবু স্যার। আপনি আলাদা।
হক সাহেব আর কথা বলেন না।
রহমতউল্লাহ ফাঁক পেয়ে বলে, সাইনটা করে দিয়েন স্যার।
হক সাহেব আবার একটু চটে যান, মানে, তালগাছ রুস্তম আলীর?
: কী করব স্যার? সভাপতি হয়েছি সবার আবদারই রাখতে হয়।
: সব বাদ দিলাম, আমাকে বলে, ‘কদিন আর আটকাইয়া রাখবেন’! কত বড় সাহস!
: বেয়াদব স্যার। আস্ত একটা বেয়াদব। আমি বকা দিয়া দিব। সাইনটা দিয়ে দিয়েন স্যার। আমি যাই।
রহমতউল্লাহ চলে গেল।
পর দিন বিরাশি ঘণ্টার ওভারটাইম বিলে সাইন করে দিলেন হক সাহেব।
হক সাহেব ভেবে দেখলেন, রহমতউল্লাহ যতই তার তালে তালে কথা বলুক আসলে সে তো রুস্তম আলীরই লোক। সাইন না-করা পর্যন্ত নানা রকম প্যাঁচ খেলতে থাকবে। সময়ে রহমতউল্লাহ রুস্তম আলীর চেয়েও বড় বেয়াদব হয়ে যেতে পারে। এরা ভয়ংকর! এদের হাত অনেক লম্বা। তার হাতটা তো ওই বিবেক পর্যন্তই।
ভুয়া বিলে সাইন করে দিয়ে হক সাহেব কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিলেন। ঠিক করলেন, গাড়িই আর রাখবেন না। মাথাই নাই ব্যথা হবে কী করে? ডেপুটি ডিরেক্টরের গাড়ি থাকতেই হবে এমন তো কোনো কথা নেই। ফোন করে পরিবহন পুলের অফিসারকে বললেন, আমার গাড়ি লাগবে না। আমার নামে বরাদ্দ করা গাড়িটা বাতিল করে দিন।
অফিসার একটু চমকাল। বলল, কোনো সমস্যা স্যার?
: না, কোনো সমস্যা নেই।
: সমস্যা হলে বলতে পারেন স্যার। আমি ঠিক করে দিচ্ছি। আপনার গাড়ি থাকবে না তা কি হয়?
: হয় হয়। গাড়ি ছাড়াই আমার চলবে।
সত্যিই গাড়ি ছাড়া ভালোই চলতে লাগল হক সাহেবের। আগে অফিসে যেতে সময় লাগত দশ মিনিট। এখন লাগে পনেরো মিনিট। গাড়ির পথটা ছিল ঘোরা পথ। এখন হেঁটে যান; কোনাকুনি পথে। হাঁটা কোনো সমস্যাই না তার কাছে। গ্রামের ছেলে হক সাহেব। একেবারে শিয়াল-ডাকা গ্রাম। আট মাইল হেঁটে স্কুলে যেতেন। এখন সকাল-বিকাল হাঁটতেই হয়। গরম এখনো পুরোপুরি পড়েনি। গরম পড়লে ঘাম হবে। হোক। অফিসে এসি তো আছেই। বেশি গরম লাগলে রিকশায় যাবেন। তবু গাড়ি নেবেন না, কিছুতেই না।
একটা সপ্তাহ ভালোই গেল।
দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সমস্যা শুরু হলো। একের পর এক দুর্ঘটনায় পড়তে লাগলেন। মাত্র তেরো দিনে তিনটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। ছোটখাটো বলে রক্ষা। কিন্তু ঘন ঘন হওয়ায় মনে কুডাক ডাকতে লাগল।
প্রথমবার পায়ের ওপর দিয়ে রিকশার চাকা চলে গেল। এক্সরে দেখে ডাক্তার বললেন, কিছু হয়নি। সব ঠিক আছে। কয়েক দিন বিশ্রামে থাকতে হবে।
দুদিন পরই অফিসে চলে গেলেন হক সাহেব।
দ্বিতীয়বার রাস্তায় পড়ে থাকা একটা ইটের সঙ্গে উষ্টা খেয়ে আর সামলাতে পারলেন না। পড়ে গেলেন রাস্তায়। কনুইয়ের ছাল চলে গেল।
তৃতীয়টা একটু মারাত্মক এবং সন্দেহজনক। রিকশায় অফিসে আসছিলেন। বাম হাতে হুডটাও ধরা ছিল। তারপরও রিকশা থেকে একেবারে পড়ে গেলেন পেছনের রঙচটা একটা মাইক্রোর ধাক্কায়। এবার হক সাহেবের কনুই এবং হাঁটুর ছাল দুই-ই গেল। ভেবেছিলেন এখানেই শেষ। কিন্তু তা হলো না। পায়ের বুড়ো আঙুল ফুলে গেল। পর দিন এক্সরে করলেন। ডাক্তার বললেন, আঙুলের হাড়ে হালকা চিড় ধরেছে। তেমন কিছু না। রেস্টে থাকলেই সেরে যাবে।
একা একা রেস্ট নেবেন কী করে? ময়মনসিংহ থেকে স্ত্রী ছুটে গেলেন। নিয়ে গেলেন তার কাছে। সপ্তাহখানেক সময়েই সেরে গেল। কিন্তু স্ত্রী ছাড়লেন না। আরেকটা সপ্তাহ রেখে দিলেন। আসার আগে বারবার সাবধান করে দিয়ে বললেন, আগে নিজের জান।
হক সাহেব অফিসে গেলেন দুই সপ্তাহ পর।
রহমতউল্লাহ এলো দেখা করতে।
: স্যার, এখন কেমন আছেন?
: ভালো আছি।
: ব্যথা পুরাপুরি সেরেছে?
: হালকা একটু আছে। সেরে যাবে ইনশাআল্লাহ।
: কেন যে স্যার গাড়িটা ছেড়ে দিলেন? বড় কিছু যদি ঘটে যেত।
: সে তো গাড়িতেও ঘটতে পারে।
: তারপরও স্যার, গাড়ি অনেক সেইফ। গাড়ি থাকলে তো উষ্টা খেতেন না। গাড়িটা নিয়ে নেন। চোরের ডরে তো আর মাটিতে ভাত খাওয়া যায় না স্যার।
এরা দেখা যায় সব খবরই রাখে। উষ্টা খাওয়ার খবরও পেয়ে গেছে। এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। বললেন, গাড়ি ছাড়াই তো বেশ আছি।
: কি যে কন স্যার। দরকারের কথা বাদই দিলাম। শোভা বলে একটা কথাও তো আছে। আপনাকে কি রিকশায় শোভা পায়। গাড়ি ছাড়া আপনার শোভা হয় কী করে? রিকশায় চড়ব আমরা। ছাল গেলেই কী, হাড়গোড় ভাঙলেই কী? গাড়িটা নিয়ে নেন স্যার। গাড়িটা আপনার দরকার। যাই স্যার। ইউনিয়নের একটা মিটিং আছে।
রহমতউল্লাহ চলে গেল।
হক সাহেব খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন। কখন কি ঘটে যায়, কে জানে। রহমতউল্লাহর কথার নানা ব্যাখ্যা মনে ঘুরপাক খেতে লাগল। পরিববহনপুলের অফিসারকে ফোন করে আবার গাড়িটা দিতে বললেন। তবে শর্ত দিলেন, রুস্তম আলী যেন তার গাড়ির ত্রিসীমানায় না থাকে। একটা এক হাতওয়ালা ড্রাইভার হলেও তার চলবে কিন্তু রুস্তম আলী না।
মনে মনে বললেন, ভাত তো খেতেই হবে, খাব; কিন্তু এই থালায় আর না।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন শিশির বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, শাকসু বানচালের চেষ্টা চলছে। শিক্ষার্থীরা এটা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। যদি আগামী সোমবার ভিসি এসে নির্বাচন কমিশন গঠন করে রোডম্যাপ ঘোষণা না করেন, তাহলে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের...
৫ ঘণ্টা আগেসংগঠনের তথ্য, উপহার প্রদান, অনুভূতি বক্স এবং মেহেদি দেওয়ার জন্য উৎসবের ছাউনিতে চারটি আলাদা বুথ। সেখানে ছিল নারী শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। আয়োজকরা নতুন সদস্য আহ্বান ও প্রচারপত্র বিলি করেন। ফটকের সামনে একটি ব্যানারে লেখা, ‛প্রিয় ভাইয়েরা, ভেতরে প্রবেশ ও উঁকি মারা থেকে বিরত থাকুন।’
৬ ঘণ্টা আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেছেন, ছাত্রদল নেতা ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে—কেউ যেন আইনের ফাঁক দিয়ে কেউ বেরিয়ে না যায়।
৭ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বোরকা ও পর্দাশীল নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। এই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা।
৮ ঘণ্টা আগে