আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

কানিজের মোমের দুনিয়া

ওমর শাহেদ
কানিজের মোমের দুনিয়া

সুগন্ধিযুক্ত মোম দিয়ে নানা ধরনের শোপিস বানান কানিজ ফাতেমা। সেগুলো বিক্রি করেন অনলাইনে।

ব্যবসা করবেন-এই চিন্তাটি কানিজ ফাতেমার মাথায় এলো নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর। তখন থেকে তার পেছনে পরিবারের বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করতে হচ্ছিল। প্রতিদিন যাতায়াত ভাড়াও দিতে হতো। তখন তার মাথায় এলো এভাবে পরিবার থেকে টাকা নিয়ে কতদিন চলবেন? ফলে টিউশনি করা শুরু করলেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি টানা দেড় বছর টিউশনি করার পর একসময় মনে হলো এভাবে অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভিন্ন কিছু করতে হবে। যেখানে কষ্ট কম হবে আবার নিজেকেও চালাতে পারবেন। তখন থেকেই আসলে ব্যবসা করার বুদ্ধিটি মাথায় এলো।

বিজ্ঞাপন

ব্যবসাটি শুরু করেছিলেন একটি গরু দিয়ে। কিনেছিলেন টিউশনির জমানো টাকা দিয়ে। তার একটি খামার করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ভাগ্য প্রথমবার তার সহায় ছিল না। ছয় থেকে সাত মাস পর গরুটি অসুস্থ হয়ে গেল। ফলে বিক্রি করে দিতে হলো।

এরপর নিজেই নিজেকে বোঝালেন, ভেঙে পড়লে চলবে না, একবার না পারিলে দেখো শতবার। তারপর তিনি ভাবলেন, অনলাইননির্ভর কিছু করবেন। তারপর থেকে আস্তে আস্তে অনেকগুলো এ ধরনের ব্যবসা সম্পর্কে জানলেন। মনে ধরে গেল বিদেশের ব্যবসায়ীদের মোম দিয়ে ফুলদানি, জুয়েলারি বক্স, ট্রে বানানোর ব্যবসা।

প্রথমদিকে কাঁচামাল কীভাবে, কোথায় পাবেন বুঝতে পারেননি। গুগল, ইউটিউবে অনেক খোঁজ করে বুঝলেন, বাংলাদেশে সব কাঁচামাল নেইও। বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তারপর থেকে দেশ-বিদেশ করেই চলছে।

কানিজ ফাতেমা নানা ধরনের সুগন্ধিময় মোমের শৌখিন জিনিস বানান। ফুলের মোম, গ্লাস মোম, পিলার মোম, কেক মোমসহ প্রায় ২০০ ডিজাইনের মোমের তৈরি শোপিস ও বিভিন্ন ধরনের মোম আছে তার কাছে। এ ছাড়া আছে আরো নানা ধরনের ঘর সাজানোর শোপিস। যেগুলো তিনি নিজের হাতে বানান। সেগুলোর মধ্যে আছে নানা ধরনের ফুলদানি, ট্রে, গহনার বাক্স ইত্যাদি। তিনি আরো তৈরি করেন, সিক্রেট মেসেজ ক্যান্ডেল, লাভ বাবল ক্যান্ডেল, বাবল ক্যান্ডেল, টেডি ক্যান্ডেল, জার ক্যান্ডেল, ডেইজি ফুলের ক্যান্ডেল, ঘর সাজানোর সরঞ্জাম ইত্যাদি। এ ছাড়া ক্রেতাদের পছন্দ অনুসারে অর্ডার পেলে তাদের মতো করে পণ্য তৈরি করেন।

তবে তাদের বাসার কারো এই ব্যবসাটি মনে ধরল না। নর্থ সাউথের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে মোমের ব্যবসা করবেনÑএটি কেউ মেনে নিতে পারছিলেন না। শুরুর দিকে অবশ্য তাকে কেউই কিছু বলেননি। তবে কাজের ও অর্ডারের চাপ যত বাড়ছিল, বাড়ির সবার চোখে তত বেশি পড়ে যাচ্ছিলেন কানিজ ফাতেমা। তারপরও তিনি শুরু থেকে সারা রাত জেগে কাজ করতেন। ওদিকে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর তিনি কাজে হাত দিতেন। তার ঘরেই কাজ করতেন তিনি। ঘরটি খুব অগোছালো থাকত। এই চলতে চলতে এক দিন বাবা এসে তার অগোছালো ঘর দেখে মেয়েকে বকাবকি করলেন। তিনি খুব কষ্ট পেলেন। আর রাগ করে সব মোমের পণ্য ভেঙে ফেললেন। সেদিন সারা রাত কেঁদেছেন। সকালে নিজেই নিজেকে প্রেরণা জোগালেনÑএতদিন কাজ করে এখান পর্যন্ত যেহেতু আসতে পেরেছি, তাহলে আরো অনেক দূর যেতে পারব। ধীরে ধীরে বাসার পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে এলো।

তার ব্যবসাটি অনলাইননির্ভর। ক্যান্ডেলা বাই কানিজ নামে তার একটি পেজ আছে। সেখান থেকেই মূলত বিক্রিবাট্টা করেন তিনি। এখন স্থানীয় কিছু দোকানেও পণ্য সরবরাহ করছেন। নারী উদ্যোক্তা হিসেবে তার মনোবল অনেক। আমি পারব-এটি ভেবেই তিনি শুরু করেছিলেন। আর সব বাধাকে নিজের অসাধারণ মনোবল দিয়ে উপেক্ষা করে এগিয়ে চলেছেন। বাধাগুলো তিনি বাধা হিসেবে দেখেন না, চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন।

এখন তিনি পড়ালেখা করছেন তৃতীয় বর্ষে। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে। আর থাকেন ঢাকার উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো-একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হবেন ও নিজের ক্যান্ডেলা বাই কানিজ ব্যান্ডটিকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেবেন।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

স্বৈরাচার দেশে জুলুমতন্ত্র কায়েম করে সবকিছু লুটেপুটে নিয়েছে: জাহিদুল ইসলাম

৩০০ কোটি টাকা বাজেটে নতুন বাবরি মসজিদের ভিত্তি স্থাপন ভারতে

তালাকের পর আবার বিয়ে, যে ব্যাখ্যা দিলেন আবু ত্বহার স্ত্রী সাবিকুন নাহার

আমিরুলের হ্যাটট্রিকে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারাল বাংলাদেশ

আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র করলে তা রুখে দেওয়া হবে

এলাকার খবর
খুঁজুন