পরোপকারী ঈপ্সিতা

রহিমা আক্তার মৌ
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১১: ১৩
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ১২
ঈপ্সিতা চৌধুরী

পারিবারিক নাম ববি হলেও লেখার জগতে তাকে ঈপ্সিতা চৌধুরী নামে চেনে সবাই। সেই ঈপ্সিতাকে এখন সবাই ‘মানবতার ফেরিওয়ালি’ বলে ডাকে। তিনি জড়িত আছেন শিক্ষকতা পেশায়। ২০০৮ সাল থেকে দৈনিক ইত্তেফাকের ‘ঠাট্টা’, দৈনিক আমার দেশ-এর ‘ভিমরুল’-সহ বিভিন্ন দৈনিকে নিয়মিত লিখতেন। দৈনিক পত্রিকার পাশাপাশি বিভিন্ন লিটল ম্যাগে ও ব্লগে লিখতেন। এ সবকিছুর বাইরে তিনি ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে কিছু সামাজিক কাজ করেন।

২০১৭ সালে দিনাজপুরে বড় আকারে বন্যা দেখা দিলে এলাকার স্কুলে আশ্রয় নেওয়া আট হিন্দু পরিবারের ২৫ সদস্যের জন্য খাবার ও কাপড়ের ব্যবস্থা করেন ঈপ্সিতা চৌধুরী। এসব কাজের পাশাপাশি তিনি পুরো দিনাজপুরের সার্বিক অবস্থা টাইমলাইনে তুলে ধরেন। তখন ঈপ্সিতার পাবনার এক ডাক্তার বান্ধবী নক করে বলেন, ‘ঈপ্সিতা আমি তোমার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের কিছু সহযোগিতা করতে চাই।’ সেই প্রথম ঈপ্সিতা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজের বাইরে গিয়ে ডোনারদের হয়ে কাজ করতে শুরু করেন। অনেক বন্ধু ও ছোট বোনদের সহযোগিতায় পুরো দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার্তদের সাহায্য করেন। তাদের এই মানবিক কাজ নিয়ে দিনাজপুরের করতোয়া পত্রিকা একটা নিউজও প্রকাশ করে। সেই থেকে আর থেমে যায়নি ঈপ্সিতা ও তার সহযোদ্ধাদের মানবতার কাজ।

বিজ্ঞাপন

সারা বছর শীত, গ্রীষ্ম, করোনা, রোজা, ঈদ ও বিভিন্ন দুর্যোগের সময় ঈপ্সিতা তার বন্ধুদের সহযোগিতায় বা ডোনেশনে মানুষকে সাহায্য করে আসছেন। বন্ধুদের মাধ্যমে স্কুল লাইব্রেরি, স্কুলে খেলনা উপহার, বাচ্চাদের পড়াশোনার দায়িত্বসহ আরো অনেককিছু করেন। এক শীতে আমি নিজেও ঈপ্সিতাকে কিছু শীতের কাপড় এবং নগদ অর্থ পাঠাই, তিনি অসহায়দের মাঝে তা বিলি করেন। এরই মাঝে ঈপ্সিতা জয়েন করেন নিজের এসএসসি ক্লাবে। সেখানেও এমন অনেক ডোনার বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় হয়, যাদের মাধ্যমে মানুষকে স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করে দেন। বিভিন্ন জায়গার টিউবওয়েল বসানো, টয়লেট করে দেওয়া, ভ্যান দিয়ে কর্মের ব্যবস্থা করে দেওয়াসহ এক মসজিদে স্টিলের খাটিয়া, চৌকি, গিলাফ, কার্পেট, আরো কয়েকটি মসজিদে ফ্যান ও কার্পেট দান করেন। দুটো মেয়ের বিয়ের যাবতীয় খরচ বহন করেন তার ডোনার বন্ধুদের সহযোগিতায়। এমন বন্ধুদের ‘আল্লাহ প্রদত্ত বন্ধু’ বলেন ঈপ্সিতা।

এভাবে সারা বছর ঈপ্সিতা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নেন কার কী প্রয়োজন? তাদের সেসবের ব্যবস্থা করেন তার ডোনার বন্ধুদের সহযোগিতায়। সবচেয়ে মানবিক দিক হলো, ঈপ্সিতা কখনো কারো কাছে সাহায্য চেয়ে পোস্ট করেন না, কিংবা কাউকে নক করেন না। ঈপ্সিতার বিভিন্ন কাজ ও লেখা দেখে তার বন্ধুরা স্বেচ্ছায় তার কাছে সাহায্য পাঠান। এই সাহায্য কোথায় কীভাবে বণ্টন করেন—সেসব কাজের হিসাব কেউ চান না। তারা জানেন, মানবতার ফেরিওয়ালি ঈপ্সিতা ঠিক জায়গায় সঠিকভাবেই কাজ করেন।

তবুও ঈপ্সিতা স্বচ্ছতার খাতিরে সবাইকে হিসাব দেন এবং তার কাজগুলো এফবি ক্লাবে প্রকাশ করেন। পর্দার আড়ালে থাকা এই বন্ধুরা আজ ঈপ্সিতাকে একটি নতুন জগৎ দিয়েছেন, যেখানে একটাই কথা— ‘মানুষ মানুষের জন্য।’ আর এই পর্দার আড়ালে থাকা বন্ধুরাই তাকে ‘মানবতার ফেরিওয়ালি’ বানিয়েছে। দিনাজপুর শহরের প্রতিটি আনাচেকানাচে আজ ঈপ্সিতা একটি পরিচিত মুখ।

কিছু কাজ নিজে ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবেই করেন, আর ডোনার বন্ধুদের ডোনেশন দিয়ে যখন যে কাজ করেন, সেখানে নিজের সময় ও শ্রম দেন। বড় ধরনের কাজ হলে বন্ধুদের সঙ্গে নিজেও কন্ট্রিবিউট করেন। মাঝেমধ্যে ঈপ্সিতার বন্ধুরা নক করে বলেন, ‘আমি কিছু টাকা দেব, তুমি কোনো কাজ করে দাও।’ তখনই ঈপ্সিতা পরিকল্পনা করে খুঁজে বের করেন, কাকে কোন কাজে সাহায্য করা প্রয়োজন। কখনো আবার অন্যদের সমস্যা তুলে ধরেন, তখন বন্ধুরা এগিয়ে আসেন সমস্যা সমাধান করতে।

এভাবেই বন্ধুদের সহযোগিতায় ঈপ্সিতা বিভিন্ন মানবিক কাজ করে যাচ্ছেন এবং যাবেন। তাদের কাজ চলমান। পর্যাপ্ত সাহায্য পেলে ইনশাআল্লাহ সামনে ঈপ্সিতা একটা বেড়ার মসজিদ পাকা করার কাজে হাত দেবেন। তিনি বলেন, ‘ভালো থাকুক আমার আল্লাহ প্রদত্ত বন্ধুরা।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত