বাহলুলের উদ্যোক্তা তৈরির গল্প

শওকত আলী
প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৫, ১০: ৪০
বাহলুল

ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে নিজে একদিন সফল উদ্যোক্তা হবেন এবং উদ্যোক্তা তৈরি করবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন বারবার বাধার মুখে পড়ে। তবে সদিচ্ছা থাকায় দেরিতে হলেও স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। বলছি, ঢাকার দোহার উপজেলার পূর্বচর এলাকার ইসমাইল মোল্লার ছেলে বাহলুলের কথা।

বিজ্ঞাপন

দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া বাহলুলদের প্রধান পেশা ছিল কৃষি। কৃষিকাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করতে হতো তাদের। ১০ ভাইবোনের সবার ছোট তিনি। দারিদ্র্যের কশাঘাতে বড় হয়েছেন। কখনো খেয়ে আবার কখনো না খেয়ে কেটেছে। পদ্মা নদীর কূল ঘেঁষে বাড়ি হওয়ায় বারবার ভাঙন-আতঙ্কে দিন কাটাতে হয়েছে। অন্য ভাইবোনেরা পড়াশোনার তেমন সুযোগ না পেলেও বড় ভাইদের সহযোগিতায় পড়ালেখা চালিয়ে গিয়েছেন বাহলুল।

২০১৫ সালে খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা পাস করার পরপরই চাকরি হয় মৌলভীবাজার জেলার একটি সোলার কোম্পানিতে। কিছুদিন চাকরিও করেন। তবে কিছুতেই মন বসাতে পারছিলেন না, যে কারণে একসময় চাকরি ছেড়ে দেন; ভাবেন, নিজে নিজে কিছু করবেন এবং অন্যদের কাজের সুযোগ তৈরি করে দেবেন। এর মধ্যে কেটে যায় আরো তিনটি বছর।

২০১৭ সালে অনলাইনে কিছু করার উদ্যোগ থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে পণ্য বেচাকেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন বাহলুল। আইটি সেক্টরে অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য মোবাইল অ্যাপসসহ কিছু প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে। দেশে তখন মহামারি করোনাভাইরাস চলে এসেছে। ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন মানুষজন। কোথাও কোনো কাজ নেই, খাবার নেই। সে সময় বাহলুল ‘দোহার তরুণ উদ্যোক্তা’ নামের ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ তৈরি করে নিজস্ব উৎপাদিত পণ্য তৈরির সুযোগ করে দেন। এই উপজেলার অধিকাংশ মানুষজন প্রবাসী হওয়ায় অনলাইনে বেচাবিক্রিতে ব্যাপক সাড়া পড়ে।

দোহার, নবাবগঞ্জ ও শ্রীনগর এলাকার বেকার তরুণ-তরুণীদের নিজস্ব পণ্য বেচাবিক্রির মাধ্যমে বেশ পরিচিতি হয়ে ওঠে পেজটি। রকমারি চা পাতা, বেড কভার, পোশাক, নকশিকাঁথা, চিতই পিঠা, আচার, রান্না করা খাবার যেমন খিচুড়ি, বিরিয়ানি, ঝাল ফ্রাই, নুডুলসসহ আরো নানা ধরনের উপাদেয় খাবার পাওয়া যায় পেজ থেকে। লকডাউন শিথিল হলে সরাসরি পণ্য কেনার জন্য উপজেলার জয়পাড়া থানার মোড় এলাকায় একটি অফিস নেন তারা। সেখানে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা তাদের ছোট ছোট স্টল বরাদ্দ পেয়ে তাদের পণ্যসামগ্রী সাজিয়ে রাখার সুযোগও পান। বর্তমানে দোহার তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রায় ১০০ উদ্যোক্তা নিয়মিত পণ্যসামগ্রী বেচাবিক্রি করে খুব ভালো আছেন। আরো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছেন।

একসময় বাহলুল চিন্তা করেন, তিনি যেহেতু কৃষক পরিবারের সন্তান, সেজন্য ‘গৃহস্থালি’ নামে একটি ফেজবুক পেজ খুলবেন। সেই চিন্তাধারা থেকে তার ব্যক্তিগত পেজ গৃহস্থালি খোলা হলো। এখানকার জিনিসপত্র তার বাড়িতে উৎপাদিত হচ্ছে। গৃহস্থালিতে মধু, খেজুরের গুড়, আখের গুড়, সরিষার তেল, ঘি, নারিকেল তেল, হাতে ভাজা খই, হেলদি ফুড, বাদাম, খেজুর ইত্যাদি বিক্রির ভালো বাজার তৈরি হয়েছে। অনলাইনে অর্ডার করে ঘরে বসেই ক্রেতারা পেয়ে যাচ্ছেন পণ্যসামগ্রীগুলো।

তরুণ উদ্যোক্তা জুবায়ের আহমেদ সাকী জানান, করোনাকালে দোহার তরুণ উদ্যোক্তার যাত্রা শুরু হয়। বাহলুল নামের এক যুবক প্রথমে উদ্যোগী হয়ে ফেসবুকে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলেন। এখন আলহামদুলিল্লাহ এই পেজের মাধ্যমে অনলাইন বিজনেস করে অনেকে ভালো আছেন। আমিও তাদের একজন। আমার ভাগ্যও ঘুরে গেছে।

আশা বেলায়েত নামের আরেক উদ্যোক্তা জানান, আমি একসময় বেকার ছিলাম। দোহার তরুণ উদ্যোক্তা পেজটি খোলার পর সাংসারিক কাজের ফাঁকে বিভিন্ন খাবার আইটেম তৈরি করে এই অনলাইনে সেল করছি। বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। সময়টাও আমার ভালো কাটছে।

এসব কাজের প্রাণপুরুষ বাহলুল জানান, চাকরি করার মধ্যে কোনো স্বাধীনতা নেই। তাই খুব ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতাম নিজে নিজে কিছু করার। সেই স্বপ্ন থেকেই দোহার তরুণ উদ্যোক্তা দিয়ে আমার যাত্রা শুরু হয়। দ্বিতীয়ত, বেকারত্ব থেকে নানা চিন্তাভাবনায় যুবকেরা খুব সহজেই নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। বেকারত্ব দূর করার জন্য উদ্যোক্তা তৈরি করাই ছিল আমার প্রধান লক্ষ্য। কতটুকু সফল হয়েছি তা জানি না! নেশামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে প্রত্যেকের জায়গা থেকে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলেন, দোহার তরুণ উদ্যোক্তা ফেসবুক পেজটি বর্তমান অবস্থা থেকে ই-কর্মাস সাইটে উন্নীত করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। সবার সহযোগিতা থাকলে শিগগির আমরা এ কাজটি শুরু করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত