স্বপ্নপূরণ হলো

আন্দালিব রহমান
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ৪১

পুরো নাম রাহাত চৌধুরী পুলক। পিএসসিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন। এসএসসি যাত্রাবাড়ীর সবুজ বিদ্যাপীঠ উচ্চবিদ্যালয় থেকে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস। কিন্তু তুলনামূলক নম্বর কম থাকায় স্বপ্নের সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ভর্তি হতে পারেননি। রাগে-দুঃখে সিদ্ধান্ত নিলেন মানবিক বিভাগে চলে যাবেন। ভর্তি হলেন রাজধানীর নতুন আকর্ষণ সবুজবাগ সরকারি কলেজে। তখন এখানে মাত্র তিনটি সিট খালি ছিল।

কলেজে কৃষিশিক্ষার অধ্যাপক, আফসানা বিনতে সিদ্দিক হুট করে একটি পরীক্ষা নিলেন। কলেজের প্রথম এই টেস্টে পুলক প্রথম হলেন ও আত্মবিশ্বাস তৈরি হলো—‘আমি পারব।’ এর মাঝে কলেজের বিতর্কচর্চার ক্লাবে যুক্ত হলেন। তার সমাজবিজ্ঞানের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় কলেজের ওয়েবসাইটে, বিষয়—‘ক্লাসরুম, বেঞ্চ প্রভৃতি জায়গায় মানুষ যে লেখালেখি করে, তার পাঁচটি কারণ খুঁজে বের করো।’ ই-ম্যাগাজিনেও লেখা প্রকাশিত হলো। বিজ্ঞান জাদুঘর ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। এই কাজগুলো আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে ভয়ভীতি দূর করে দেয় এবং তার যে মেধা আছে, সেটির পরিস্ফুটন ঘটায়।

এভাবে ইয়ার ফাইনাল চলে আসে। নিয়মিত পড়ালেখা ও শিক্ষকদের ভালো গাইডেন্সের কারণে পুরো কলেজে ইয়ার ফাইনালে প্রথম হন পুলক। প্রথম হওয়ার আশা করে পরীক্ষা দেননি, বরং তার সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। রেজাল্ট যখন দেয়, অনেকটা অবাক হন এবং বিস্ময়ের সঙ্গে জানতে পারলেন, প্রথম হয়েছেন। তিনি এর আগে একবারই সবার সেরা হয়েছেন, সেটি কিন্ডারগার্টেনের প্লে-শ্রেণিতে। তার সাফল্যের কারণ হিসেবে তিনি নিয়মিত ক্লাস করা এবং প্রতিদিনই পড়া চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।

এই ফলাফলের জন্য কলেজের তিন অধ্যাপক—কৃষিশিক্ষার আফসানা বিনতে সিদ্দিক, ইতিহাসের এনায়েত চৌধুরী ও সমাজবিজ্ঞানের ইসমাঈল হোসেনের কাছে তিনি কৃতজ্ঞ। ইসমাঈল স্যার খুব ইন্টারেস্টিং মানুষ, নিয়মিত প্রজেক্টরে ক্লাস নেন, নানা ভিডিও দিয়ে পাঠ্যসূচি আকর্ষণীয় করে তোলেন। এনায়েত স্যার ও আফসানা ম্যাডামের ক্লাস খুব ভালো হয়। তাদের পরীক্ষায় পুলক খুব ভালো নম্বর পেতেন বলে তারা খুব উৎসাহ দিতেন। স্কুলজীবনের ইংরেজি শিক্ষক মোহাম্মদ ইয়ার আলির অবদানের কথাও বলেন।

এইচএসসিতে তার এ প্লাস এসেছে এবং সাধারণ বৃত্তি লাভ করেছেন। তিনি মনে করেন, ইয়ার ফাইনালে যে প্রথম হয়েছেন, তা তাকে আত্মবিশ্বাসী করেছে এবং ভালো ফলাফলের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে তার পরিবার, শিক্ষক ও বন্ধুরা বড় আশা দেখতে শুরু করেন, পুলকের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ভালো হবে। তিনি কোচিংয়েও নিয়মিত মডেল টেস্টে প্রথম হয়েছেন। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পড়তেন। শেষের দিকে ১২-১৪ ঘণ্টাও পড়তে হয়েছে। তিনি বিগত বছরের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করেছেন ভালো করে। খুঁজে বের করেছেন কোন টপিকগুলো গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলোতে গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন বিউপিতে। সেখানে পছন্দ লোকপ্রশাসন পেয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সি ইউনিটে ১৫তম। জাহাঙ্গীরনগরের আইনে ১৪তম হলেও তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে প্রথম পছন্দ হিসেবে রাখেন এবং সেটিই পেয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটে ৫৫৪তম । তার ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বি ইউনিটে ৭৩, ডি’তে ১৪২তম।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত