কঠোর পরিশ্রমে সাফল্যের শিখরে

ওমর শাহেদ
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৫, ১৪: ২৯

আদনান সানজিদ আলী এক তুমুল মেধাবী মুখ। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে অসাধারণ ফলের জন্য ‘চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল’ পেয়েছেন।

ভালো ফলাফলের জন্য কেমন পরিশ্রম করতে হয়েছে?

আমার সিজিপিএ ৩.৯৭। ধরে রাখতে প্রচুর বেগ পোহাতে হয়েছে। বেশি সাহায্য করেছে সময়ানুবর্তিতা ও হাল ছেড়ে না দেওয়ার মানসিকতা। প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা জার্নি করে আসা-যাওয়া করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাসায় ফেরার পর রাতে টিউশনিও করেছি যাতায়াত খরচের টাকা বহন করতে। এসবের ফাঁকেফাঁকেই একটু-আধটু সময় বের করে আগে হিসাব কষে রাখতাম—কোন কোর্সের কতটুকু পড়ানো শেষ হয়েছে। এর সম্ভাব্য ক্লাস টেস্ট কোন সপ্তাহে হতে পারে এবং সে অবধি আর কী কী টপিক স্যাররা পড়াতে পারেন, তা আইডিয়া করে আগেই স্টাডি ম্যাটেরিয়াল সংগ্রহ করে রাখতাম। এক্ষেত্রে আমাদের বিএলসি (ব্লেন্ডেড লার্নিং সেন্টার) খুব কাজে এসেছে। আমাদের ভার্সিটির এক অনন্য স্টুডেন্ট সার্ভিস ফিচার। বিএলসিতে আমাদের সম্মানিত শিক্ষকরা পুরো সেমিস্টারে তাদের কোর্সের প্ল্যান ও টপিক ওয়াইজ স্টাডি ম্যাটারিয়ালগুলো আগেই আপলোড করে রাখতেন। এরপর অনুমান করতে হতো সপ্তাহের আগেই নিজের ফাঁকা সময়গুলোর একটা লিখিত চার্ট তৈরি করে কখন কোন টপিক কাভার করব। সেই রুটিন তৈরি করে সিলেবাস কাভার করতাম।

এই পরিশ্রমের পেছনে অনুপ্রেরণা…

প্রতিদিন বাসায় ফেরার পর আবার টিউশনি করার পাশাপাশি নিজের পড়াশোনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রচুর হিমশিম খেতে হয়েছে। প্রচুর স্ট্রেস কাজ করত সবসময়। কিন্তু আমাকে সবসময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে ড্যাফোডিলে ভর্তি হওয়ার সেই স্ট্রাগলগুলো, নিজেকে ও বাবা-মাকে দেওয়া কথাগুলো । ২০১৯ সালের এইচএসসি ব্যাচ ছিলাম । রেজাল্টের পর পাবলিকে চান্স পেলাম না, একটি বছর ঘরে বসে ছিলাম। ভালো মানের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ানোর মতো সামর্থ্য ছিল না আমার পরিবারের । ওই একটি বছরের প্রতিটা দিন আমার কাছে একটা পাহাড়সমান চাপ ছিল। আমার বন্ধুবান্ধব সবাই কোথাও না কোথাও পড়ছে, আমি একা পিছিয়ে আছি। এরই মধ্যে করোনাভাইরাসে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিল। সেই সময়টাতেও ড্যাফোডিল সফলভাবে অনলাইনে কার্যক্রম চালু রেখেছিল। কিছু বন্ধুর কাছ থেকে সে তথ্য জানতে পেরেছিলাম। ড্যাফোডিল নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করি। এখানে স্টাডি কষ্ট জানতে শুরু করি। ওয়েভার সিস্টেমের ব্যাপারটিকে স্ট্রং পয়েন্ট ধরে বাবা-মাকে বোঝাই, নিজের যাতায়াত খরচ নিজে বহন করব এবং সর্বোচ্চ ওয়েভার নিয়ে পড়াশোনা করব, যাতে সর্বনিম্ন খরচে পড়াশোনা করে বের হতে পারি । পরিবার আমাকে নিয়ে এগোতে সাহস করল । এই ঘটনাগুলো সবসময় আমাকে তাড়া করত যে আমাকে হার মানলে চলবে না । আমাকে এগিয়ে যেতেই হবে যত স্ট্রেস আসুক না কেন ।

পরীক্ষাগুলোর জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতেন?

সকাল ৭টায় বাসা থেকে বের হয়ে বিকাল বা সন্ধ্যা হয়ে যেত ক্লাস শেষে বাসায় ফিরতে। টিউশনি করে প্রতিদিন সময় পেতাম না পড়ালেখা করার। স্টাডি ম্যাটেরিয়ালগুলো সংগ্রহ করে গুছিয়ে রাখতাম, টোটাল টপিকটার একটা সামারি নিজের মতো করে নোট করে রাখতাম সময় বের করে । এই নোটটাই আমাকে এক্সামের সময় নিজেকে ভালভাবে প্রস্তুত করতে সাহায্য করত ।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা…

ভবিষ্যতে নাসা অথবা স্পেসের মতো মহকাশ গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে স্পেস স্যুটের ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করতে চাই।

বিষয়:

তারুণ্য
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত