বিভাগের সেরা থেকে দেশসেরা

মাসুদ রানা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৪: ২২

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী হালিমাতুস সাদিয়া ১৭তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বা প্রথম শ্রেণির বিচার বিভাগীয় নিয়োগ পরীক্ষা সহকারী জজ পদে প্রথম স্থান লাভ করেছেন।

তার বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার লোহালিয়া গ্রামে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার সাফল্যে এই প্রথমবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী দেশসেরা সহকারী জজ হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন। হালিমাতুস সাদিয়া ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন গতানুগতিক ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার পেশার বাইরে গিয়ে ভিন্নধর্মী কোনো পেশায় নিজেকে দেখবেন। তখন থেকেই পরিবারের অনুপ্রেরণা লাভ করেছেন। বাবার কাছ থেকে এই পেশা সম্পর্কে জানতে পারেন। সেই থেকেই স্বপ্ন বুনা শুরু। সেখান থেকেই বিচারকের পোশাক ও কাঠের হাতুড়ির প্রতি তার ছিল আলাদা আকর্ষণ। স্বপ্নছোঁয়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ভর্তি হন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মনোযোগী ও পরিশ্রমী ছাত্রী। একাডেমিক ফলাফলে বরাবরই ছিলেন সেরা। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় শ্রেণিতেই বিভাগের প্রথম স্থান অর্জন করেন। পড়ালেখার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমেও ছিল তার সাফল্য। অর্জন করেছেন ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা বিতার্কিকের খেতাব’। অংশগ্রহণ করেছিলেন আইন বিভাগ সম্পর্কিত মুটিংয়ে। সেখানে ‘বেস্ট মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। হালিমাতুস সাদিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম থেকেই ভালোভাবে পড়ালেখার চেষ্টা করতাম। প্রতিটি ক্লাস খুব মনোযোগ দিয়ে করেছি এবং ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়গুলোও নোট করে পড়েছি। যার ফলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় শ্রেণিতে আল্লাহর রহমতে প্রথম স্থান অর্জন করতে পেরেছি।

সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নিজের অসামান্য মেধা ও দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। কঠোর প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষায় সারা দেশের হাজার হাজার প্রার্থীকে পেছনে ফেলে হয়েছেন প্রথম। তার এই সাফল্যের পেছনে ছিল নিরবচ্ছিন্ন অধ্যয়ন, ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাস। তিনি বলেন, একাডেমিক জীবনে বিজেএস পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কোর্সগুলো খুব ভালোভাবে পড়েছিলাম, স্নাতকে থাকার সময়েই টুকটাক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলাম। দীর্ঘ পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও সবার দোয়ার ফলে এই সফলতা ছুঁতে পেরেছি।

সাদিয়ার এই অসাধারণ অর্জনে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন পরিবার। সেই সঙ্গে শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধবসহ অনেকেই উৎসাহ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, বাবা স্বপ্ন দেখেয়েছিলেন। সেই পথের সহযাত্রী ছিলেন মা, সাহস জুগিয়েছেন ভাইয়া। বিশেষ করে আমার মায়ের কথা বলতেই হয়। পড়াশোনার সময় তিনি আমার পাশে বসে থাকতেন, সাহস জোগাতেন। রাত বেশি হলে ভয় পাব ভেবে সাহস দিতেন।

সহকারী জজ পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার পর যে বিষয়টি বেশি আনন্দিত করে তা নিয়ে তিনি বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ দেশ সেরা হয়েছেন এটি আমাকে বেশি আনন্দিত করেছে। তার পাশাপাশি আমি আমার বাবা-মাকে জজের বাবা-মা করতে পেরেছি এ বিষয়টিও খুব ভালো লেগেছে। প্রবল আত্মবিশ্বাস, অধ্যবসায় ও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখাই একাডেমিক জীবনে এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাটিতে সফলতার মূলমন্ত্র হিসেবে কাজ করেছে। তিনি জানান, ভালো করতে হলে যে কাউকে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে, নিয়মিত পড়ালেখা করতে হবে, লেগে থাকতে হবে, হাল ছাড়া যাবে না। আমি একাডেমিক জীবনের শুরু থেকেই এই পর্যন্ত নিয়মিত পড়াশোনা করেছি।

তার এই সাফল্য শুধু বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, পুরো দেশের জন্যই গর্বের। নতুন প্রজন্মের আইন শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন, যারা ন্যায়বিচারের আলো ছড়িয়ে দিতে চান। সাফল্যের পর অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হালিমাতুস সাদিয়া বলেন, এই অর্জন শুধু আমার একার নয়, আমার পরিবার, শিক্ষক, বন্ধু ও সংশ্লিষ্ট সবার। আমার স্বপ্ন, আমি সব সময় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করব, কোনো নিরপরাধ মানুষ যেন শাস্তি না পায় এ বিষয়টি নিশ্চিত করাই হবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য। আমার কর্মতৎপরতা ও চেষ্টা দিয়ে বিচারব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করব।

বিষয়:

তারুণ্য
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত