শহীদ নুর আলমের পরিবার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে

হাসিবুর রহমান হাসিব, কুড়িগ্রাম
প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১১: ৩৫
আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১১: ৩৯

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ২০ জুলাই ডান চোখে গুলিবিদ্ধ হন নুর আলম। গুরুতর আহতাবস্থায় গাজীপুর হাসপাতালে নিলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। নুর আলম কুড়িগ্রামের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামের মো. আমীর হোসেন ও নুর বানু বেগম দম্পতির বড় ছেলে। ২১ জুলাই নুর আলমের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থান কুড়িগ্রামের ভোগডাঙা ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামে দাফন করেন স্বজনরা।

নুর আলম পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। বাবা ছিলেন ভ্যানচালক, মা পোশাকশ্রমিক। ঢাকা গাজীপুরের তেলিপাড়া গ্রামে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন নুর আলম। বর্তমানে তাকে হারিয়ে শোকাতুর পুরো পরিবার। তবে নুর আলম নিহত হওয়ার আড়াই মাস পরে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী খাদিজার কোলজুড়ে আসে পুত্র সন্তান। নাম রাখা হয় মো. আব্দুল খালেক।

বিজ্ঞাপন

একদিকে ছেলে হারানোর কষ্ট, অন্যদিকে স্বামী হারানোর যন্ত্রণা। তবে নবজাতকটিকে ঘিরে খুশি পরিবারটিতে। তা সত্ত্বেও অভাবের সংসারে বর্তমানে পরিবারটি ভালো নেই। নুর আলমের নিহত হওয়ার খবরে সরকারি-বেসরকারি ও রাজনৈতিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়ালেও খাদিজার স্বপ্ন আর সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন স্বজনরা।

নুর আলমের বাবা মো. আমীর হোসেন বলেন, ‘আমার দুই ছেলে। বড় ছেলে নুর আলমকে হারিয়ে আমরা ভালো নেই। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা আসতেছে। এখন পর্যন্ত (সাবেক) প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের ১০ লাখ টাকার চেক পেয়েছি।

সে টাকা এখনো ওঠাতে পারিনি। জেলা প্রশাসন থেকে ৫০ হাজার, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর থেকে ২ লাখ ৫ হাজারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক আশ্বাস ও সহযোগিতা পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

নুর আলমের স্ত্রী খাদিজা খাতুন বলেন, ‘ঘটনার দিন সকালবেলা উঠে আমার স্বামী বাইরে এসেছিল। দুপুরের পরে শুনি গুলিতে মারা গেছে। দৌড়ে এসে দেখি আমার স্বামীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ওই দিন রাতে স্বামীর মরদেহ নিয়ে গ্রামে চলে আসি।’

খাদিজা বলেন, ‘অল্প বয়সে আমি স্বামী হারিয়েছি। এই কষ্ট বুঝাতে পারব না। আমার ভবিষ্যৎ কী হবে জানি না। আমার ভবিষ্যৎ এখন নুর আলমের রেখে যাওয়া আমানত সন্তান আব্দুল খালেক। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। জানি না কপালে কী আছে।’

এসব কথা বলতে বলতে অজানা এক আশঙ্কার মাঝে হারিয়ে যান খাদিজা। তার চোখ ছলছল করছিল। খাদিজা বলেন, ‘স্বামী হারানোর শোক যে কী, যার হারাইছে সে-ই জানে। এতকিছুর মাঝে আমি আরও বড় আঘাত পেয়েছি নুর আলমের মারা যাওয়ার ৪৪ দিনের মাথায় আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে বিনা কারণে স্বামীর ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।

গর্ভাবস্থায় আমার শ্বশুর আমার হাত ধরে বের করে দেন। আমি পাশের বাড়িতে রাত যাপন করে আমার বাবাকে ফোন দিই। পরের দিন বাবা আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। আজ ছেলে জন্ম হওয়ার ২১ দিন, তবু ওরা আমার আর সন্তানের খোঁজ নেয় না। এমনকি সন্তানের জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ভোগডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার নওয়াবপুরকে দিয়ে নাম পাল্টানোর চেষ্টা করে।

চৌকিদার যোগসাজশ করে আমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমার শ্বশুরের হাতে দিয়ে আসে। বর্তমানে বিভিন্ন জায়গা থেকে সহযোগিতা করতেছে টাকার খবর যাতে আমি না শুনি, এ কারণে পরিকল্পিতভাবে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।’

এ বিষয়ে ভোগডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মো. নুর আলম। আমি তার পরিবারের নিয়মিত খোঁজ-খবর রেখে আসছি। নুর আলমের স্ত্রীর সঙ্গে বাবা-মায়ের কোনো ঝগড়া-বিবাদ হয়েছে কি না জানি না। জন্মনিবন্ধনের জন্য নুর আলমের শ্বশুর আমার এখানে এসেছিল। সন্তানের নাম পরিবর্তন বিষয়ে কী ঘটেছে আমার জানা নেই। গ্রামপুলিশ নওয়াবুরের কাছ থেকে শুনে বলতে পারব।’

এমবি

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত