বিশ্বসাহিত্য
মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম
মিসরের শিশুসাহিত্য শুরুতে ছিল ইউরোপীয় শিশুসাহিত্যের প্রতিচ্ছবি। পরবর্তী সময়ে বিদেশি সাহিত্যের অনুকরণ, অনুবাদ ও রূপান্তরের মাধ্যমে পদার্পণ করে মৌলিকতার স্বর্ণযাত্রায়। উনিশ শতকের প্রথম দিকে মুহাম্মদ আলি পাশার সময়কালে অনুবাদের হাত ধরে শুরু হয় আধুনিক শিশুসাহিত্যের অভিযাত্রা। এই যাত্রার অগ্রদূত ছিলেন রিফাআ রাফি আত তাহতাবি। প্যারিসে শিক্ষা গ্রহণকালে তিনি ইউরোপীয় সভ্যতার মুগ্ধতায় মাতোয়ারা হোন। দেশে ফিরে এসে শিশুমনে সেই সভ্যতার আলো ছড়িয়ে দিতে হাত দেন অনুবাদে। তার ‘হিকায়াতুল আতফাল’ (শিশুগল্প সমগ্র) কেবল সাধারণ গল্পের সংকলন নয়—এটি নতুন প্রজন্মের জন্যে এমন একটি জানালা, যা উন্মুক্ত করলে বিনোদনের সঙ্গে শিক্ষার সুবাস পাওয়া যায়।
শিশুসাহিত্যের আসল রূপকথা শুরু হয় যখন মঞ্চে অবতীর্ণ হন কবিকুল শিরোমণি আহমেদ শওকি। তিনি ফরাসি কবি লা ফঁতেনের গল্পের অনুকরণে ‘হিকায়াতুল আতফাল’ শিরোনামে পঞ্চাশাধিক ছন্দবদ্ধ গল্পকাব্য এবং সুমধুর সুরে ‘দিওয়ানুল আতফাল’ নামে একগুচ্ছ শিশুকাব্য রচনা করেন। শওকি জানতেন—শিশুসাহিত্য কেবল সময় কাটানোর উপাদান নয়, বরং জীবন ও পৃথিবীকে চেনার এক অমূল্য সোপান। তাই প্রাণীর গল্পের আড়ালে তিনি শিশুদের শিখিয়েছেন বুদ্ধি, সততা, সহানুভূতি আর ভাষার সৌন্দর্য উপভোগ করার শিল্প।
এরপর আসেন মুহাম্মদ উসমান জালাল, যিনি লা ফঁতেনের কাহিনিকে মিসরীয় ফ্লেভারে রূপ দেন তার ‘আল উয়ুন আল ইওয়াকিজ’ (সজাগ নয়ন) গ্রন্থে। ইব্রাহিম আল আরবও লা ফঁতেনের ধাঁচে বিনির্মাণ করেন তার অনবদ্য শিশুকাব্যগ্রন্থ ‘আদাবুল আরাব’। অনূদিত গল্পের পাশাপাশি মৌলিক ও সৃজনশীল সৃষ্টি প্রয়াসও ধীরে ধীরে অঙ্কুরিত হতে থাকে। আলি ফিকরির ‘মুসামারাতুল বানাত’ (মেয়েদের নৈশগল্প) এবং ‘আন নুসহ আল মুবীন’ (শিশুদের উপদেশমালা) তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের শুরুতে মিসরের শিশুসাহিত্যে দেখা যায় এক নবজাগরণ—দুই মহিরুহ মুহাম্মদ আল হিরাওয়ি ও কামিল আল কিলানির হাত ধরে। বিদ্রুপ সহ্য করেও হিরাওয়ি লিখে যান সহজ ভাষায় নৈতিকতা ও সৌন্দর্যের মিশেলে ‘সামিরুল আতফাল’ (শিশুদের আড্ডাসঙ্গী) সিরিজ। আর কামিল কিলানি? তিনি হয়ে ওঠেন আরবি শিশুসাহিত্যের ‘পিতৃপুরুষ’—দুই শতাধিক গল্প, নাটক, সীরাতুন্নবী, আর দেশ-বিদেশের নানা সংস্কৃতির মেলবন্ধনে তিনি শিশুমনে জ্বালান কল্পনার প্রদীপ।
পরবর্তী বছরগুলোয় এই ধারা আরো প্রসারিত হয়—হামিদ আল কাসাবির শিক্ষামূলক গল্প, মুহাম্মদ সাঈদ আল আরইয়ানের শিল্পসমৃদ্ধ রচনা, মাহমুদ আবুল ওয়াফার নৈতিক ও শিক্ষামূলক শিশুতোষ, সাইয়্যেদ কুতুবের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক গল্প, আব্দুত তাওয়াব ইউসুফের বহুমুখী ও তথ্যসমৃদ্ধ শিশুসাহিত্য, তারপর আব্দুর রহিম আস সা‘আতি, আব্দুল হামিদ জুদাহ আস সাহহার, আতিয়্যা আল ইবরাশী, ইয়াকুব আশশারুনি, আহমদ ফদল শাবলুল, আহমদ নাজিব, রানিয়া হুসাইন আমিন, ইবরাহীম আযুয, আহমদ নাজীব, নাবিলা রাশেদ, ইবরাহীম শেরাবি প্রমুখের অবদানে মিসরের শিশুসাহিত্য হয়ে ওঠে সমৃদ্ধিশালী ও বৈচিত্র্যময়।
মিসরের শিশুসাহিত্য আজ অনুবাদের সীমা পেরিয়ে এটি এমন বিস্তৃত বাগানের রূপ নিয়েছে, যেখানে ঐতিহ্যের ফুল ও আধুনিকতার ফল পাশাপাশি থাকে ফুটে। অনুবাদ, মৌলিক রচনা, নীতি-শিক্ষা ও বিনোদন—সব মিলিয়ে এটি হয়ে উঠেছে নতুন প্রজন্মের জ্ঞান, কল্পনা ও স্বপ্নের অমূল্য ভান্ডার।
মিসরের এই অগ্রযাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যের উন্নয়ন ও বিকাশে বিশ্বভাষার শিশুতোষ রচনার অনুবাদ, অনুকরণ ও রূপান্তরের বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে মানসম্মত শিশুতোষ সাহিত্য প্রকাশে বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন। বিনোদনের আড়ালে নৈতিক শিক্ষার মিশ্রণে মৌলিক গল্প, কবিতা, নাটক, উপন্যাস ও বিজ্ঞানভিত্তিক রচনা সৃষ্টির উদ্যোগ প্রত্যাশিত। বিদ্যালয় ও পাড়া-মহল্লায় শিশু পাঠাগার স্থাপন করে পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, যাতে শিশুরা বইভীতির পরিবর্তে বইপ্রীতিতে আগ্রহী হয়, পড়ালেখায় মনোযোগী হয় এবং টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে উপযুক্ত হতে পারে।
মিসরের শিশুসাহিত্য শুরুতে ছিল ইউরোপীয় শিশুসাহিত্যের প্রতিচ্ছবি। পরবর্তী সময়ে বিদেশি সাহিত্যের অনুকরণ, অনুবাদ ও রূপান্তরের মাধ্যমে পদার্পণ করে মৌলিকতার স্বর্ণযাত্রায়। উনিশ শতকের প্রথম দিকে মুহাম্মদ আলি পাশার সময়কালে অনুবাদের হাত ধরে শুরু হয় আধুনিক শিশুসাহিত্যের অভিযাত্রা। এই যাত্রার অগ্রদূত ছিলেন রিফাআ রাফি আত তাহতাবি। প্যারিসে শিক্ষা গ্রহণকালে তিনি ইউরোপীয় সভ্যতার মুগ্ধতায় মাতোয়ারা হোন। দেশে ফিরে এসে শিশুমনে সেই সভ্যতার আলো ছড়িয়ে দিতে হাত দেন অনুবাদে। তার ‘হিকায়াতুল আতফাল’ (শিশুগল্প সমগ্র) কেবল সাধারণ গল্পের সংকলন নয়—এটি নতুন প্রজন্মের জন্যে এমন একটি জানালা, যা উন্মুক্ত করলে বিনোদনের সঙ্গে শিক্ষার সুবাস পাওয়া যায়।
শিশুসাহিত্যের আসল রূপকথা শুরু হয় যখন মঞ্চে অবতীর্ণ হন কবিকুল শিরোমণি আহমেদ শওকি। তিনি ফরাসি কবি লা ফঁতেনের গল্পের অনুকরণে ‘হিকায়াতুল আতফাল’ শিরোনামে পঞ্চাশাধিক ছন্দবদ্ধ গল্পকাব্য এবং সুমধুর সুরে ‘দিওয়ানুল আতফাল’ নামে একগুচ্ছ শিশুকাব্য রচনা করেন। শওকি জানতেন—শিশুসাহিত্য কেবল সময় কাটানোর উপাদান নয়, বরং জীবন ও পৃথিবীকে চেনার এক অমূল্য সোপান। তাই প্রাণীর গল্পের আড়ালে তিনি শিশুদের শিখিয়েছেন বুদ্ধি, সততা, সহানুভূতি আর ভাষার সৌন্দর্য উপভোগ করার শিল্প।
এরপর আসেন মুহাম্মদ উসমান জালাল, যিনি লা ফঁতেনের কাহিনিকে মিসরীয় ফ্লেভারে রূপ দেন তার ‘আল উয়ুন আল ইওয়াকিজ’ (সজাগ নয়ন) গ্রন্থে। ইব্রাহিম আল আরবও লা ফঁতেনের ধাঁচে বিনির্মাণ করেন তার অনবদ্য শিশুকাব্যগ্রন্থ ‘আদাবুল আরাব’। অনূদিত গল্পের পাশাপাশি মৌলিক ও সৃজনশীল সৃষ্টি প্রয়াসও ধীরে ধীরে অঙ্কুরিত হতে থাকে। আলি ফিকরির ‘মুসামারাতুল বানাত’ (মেয়েদের নৈশগল্প) এবং ‘আন নুসহ আল মুবীন’ (শিশুদের উপদেশমালা) তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের শুরুতে মিসরের শিশুসাহিত্যে দেখা যায় এক নবজাগরণ—দুই মহিরুহ মুহাম্মদ আল হিরাওয়ি ও কামিল আল কিলানির হাত ধরে। বিদ্রুপ সহ্য করেও হিরাওয়ি লিখে যান সহজ ভাষায় নৈতিকতা ও সৌন্দর্যের মিশেলে ‘সামিরুল আতফাল’ (শিশুদের আড্ডাসঙ্গী) সিরিজ। আর কামিল কিলানি? তিনি হয়ে ওঠেন আরবি শিশুসাহিত্যের ‘পিতৃপুরুষ’—দুই শতাধিক গল্প, নাটক, সীরাতুন্নবী, আর দেশ-বিদেশের নানা সংস্কৃতির মেলবন্ধনে তিনি শিশুমনে জ্বালান কল্পনার প্রদীপ।
পরবর্তী বছরগুলোয় এই ধারা আরো প্রসারিত হয়—হামিদ আল কাসাবির শিক্ষামূলক গল্প, মুহাম্মদ সাঈদ আল আরইয়ানের শিল্পসমৃদ্ধ রচনা, মাহমুদ আবুল ওয়াফার নৈতিক ও শিক্ষামূলক শিশুতোষ, সাইয়্যেদ কুতুবের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক গল্প, আব্দুত তাওয়াব ইউসুফের বহুমুখী ও তথ্যসমৃদ্ধ শিশুসাহিত্য, তারপর আব্দুর রহিম আস সা‘আতি, আব্দুল হামিদ জুদাহ আস সাহহার, আতিয়্যা আল ইবরাশী, ইয়াকুব আশশারুনি, আহমদ ফদল শাবলুল, আহমদ নাজিব, রানিয়া হুসাইন আমিন, ইবরাহীম আযুয, আহমদ নাজীব, নাবিলা রাশেদ, ইবরাহীম শেরাবি প্রমুখের অবদানে মিসরের শিশুসাহিত্য হয়ে ওঠে সমৃদ্ধিশালী ও বৈচিত্র্যময়।
মিসরের শিশুসাহিত্য আজ অনুবাদের সীমা পেরিয়ে এটি এমন বিস্তৃত বাগানের রূপ নিয়েছে, যেখানে ঐতিহ্যের ফুল ও আধুনিকতার ফল পাশাপাশি থাকে ফুটে। অনুবাদ, মৌলিক রচনা, নীতি-শিক্ষা ও বিনোদন—সব মিলিয়ে এটি হয়ে উঠেছে নতুন প্রজন্মের জ্ঞান, কল্পনা ও স্বপ্নের অমূল্য ভান্ডার।
মিসরের এই অগ্রযাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যের উন্নয়ন ও বিকাশে বিশ্বভাষার শিশুতোষ রচনার অনুবাদ, অনুকরণ ও রূপান্তরের বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে মানসম্মত শিশুতোষ সাহিত্য প্রকাশে বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন। বিনোদনের আড়ালে নৈতিক শিক্ষার মিশ্রণে মৌলিক গল্প, কবিতা, নাটক, উপন্যাস ও বিজ্ঞানভিত্তিক রচনা সৃষ্টির উদ্যোগ প্রত্যাশিত। বিদ্যালয় ও পাড়া-মহল্লায় শিশু পাঠাগার স্থাপন করে পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, যাতে শিশুরা বইভীতির পরিবর্তে বইপ্রীতিতে আগ্রহী হয়, পড়ালেখায় মনোযোগী হয় এবং টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে উপযুক্ত হতে পারে।
গাজা পুনরুদ্ধারের এই সময়ে ‘ফিলিস্তিন সাংস্কৃতিক পুরস্কার’ ঘোষণা করেছে ‘ফিলিস্তিন ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট’। ১৩তম আসরের মূল থিম নির্ধারণ করা হয়েছে—‘জেরুজালেম, গাজা উপত্যকা, গোটা ফিলিস্তিন ও জায়নবাদের বিরোধিতা’।
৩ দিন আগেএকশ বছর আগের কথা। ১৮৮৯ সাল। তুরিনে আজকের মতোই এক দিনে ফ্রিডরিখ নিৎশে কার্লো আলবার্তো পথের ৬ নম্বর বাড়ির ফটক দিয়ে বেরিয়ে আসেন। কখনো হাঁটতে বের হতেন, আবার কখনো পোস্ট অফিসে চিঠিপত্র তুলতে যেতেন।
৪ দিন আগেবাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী আয়োজিত ইসলামি বইমেলায় প্রতিদিনই জড়ো হন হাজারো মানুষ। বিশেষত সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারে বইপ্রেমীদের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মতো। আর এই জনস্রোতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একদল স্বপ্নবাজ তরুণের হাতে গড়া ‘লিটলম্যাগ কর্নার’।
৪ দিন আগেইসলাম-পূর্ব সময়ে এক ভয়ংকর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল যেন আরবরা। সমগ্র আরবে চলছিল ভয়াবহ অরাজকতা। গোত্রে গোত্রে শত্রুতা। সারাক্ষণ একে অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টায় রত। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি ও মারামারি থেকে শুরু করে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া; বছরের পর বছর ধরে সেই যুদ্ধ চলা।
৪ দিন আগে