ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা আসছেন পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বশীর আহমেদ
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮: ৫৩
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯: ৩২
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। ফাইল ছবি

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী (যিনি দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রীও) ইসহাক দার ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা সফরে আসছেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ঢাকা–ইসলামাবাদ সম্পর্কের নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে। এ সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে জরুরি ভিত্তিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের এ নতুন যাত্রা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, দেশের পরিবির্তিত পরিস্থিতির কারণে বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নতুন পরিবর্তন এসেছে। পাকিস্তারের সঙ্গে নানা বিষয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো নতুন করে পুনর্বিবেচনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাণিজ্য, যোগোযোগ ও সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ দুই দেশের মধ্যে নতুন করে একটি আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য দুই দেশই এখন একমত।

বিজ্ঞাপন

কর্মকর্তারা জানান, আগামী ৪ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার একদিনের সফরে ঢাকায় আসবেন। দীর্ঘ ১৩ বছর পর পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্র মন্ত্রীর এটি হবে প্রথম ঢাকা সফর। এর আগে ২০১২ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খা ঢাকায় এসেছিলেন। সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডি–৮ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানাতে পাকিস্তানের বিশেষ দূত হিসেবে ১২ ঘণ্টার সফরে তিনি ঢাকায় আসেন।

ইসহাক দার ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ সফরের সময় বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা করছেন। ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া অনু বিভাগ) ইশরাত জাহানের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার ওপর জোর দিচ্ছে পাকিস্তান। গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এবং ডিসেম্বরে কায়রোতে ডি–৮ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। পাকিস্তানের শীর্ষনেতা দুইবারের আলোচনাতেই বাংলাদেশের শীর্ষনেতাকে ইসলামাবাদ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কূটনীতিক জানিয়েছেন, পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফর নিয়ে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। দুই দেশের সম্পর্ক নিবিড় করার প্রয়াসে পাকিস্তানের উচ্চপর্যায়ের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল এ মাসে ঢাকায় আসছে। তিনি জানান, এ বছরের জুনে ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ ভবন উদ্বোধনকে ঘিরে ড. ইউনূসকে ইসলামাবাদ নেওয়া যায় কি না- এমন বিষয়টি পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বিবেচনা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সম্পর্ক গভীর করার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আর দেশটির এমন আগ্রহে ড. ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নানা তৎপরতায় স্পষ্ট। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে।

ভিসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বাড়ছে। পাকিস্তানের একটি কম খরচের বিমান সংস্থা ফ্লাই জিন্নাহ বাংলাদেশে যাত্রী পরিবহন শুরুর অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে। তবে একাত্তরের ইস্যুটি সুরাহা করে সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে আগ্রহী বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস গত মাসে কায়রোতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে সাক্ষাতে এ অবস্থানই তুলে ধরেছেন। ওই সাক্ষাতে তিনি বলেন, ‘বিষয়গুলো (একাত্তরের) বারবার আসছে। আসুন, আমরা সামনে এগিয়ে যেতে সেই বিষয়গুলোর ফয়সালা করি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিষয়গুলো চিরতরে সুরাহা করে ফেলা ভালো হবে।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। যদিও এর মধ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের চতুর্থ বৈঠকটি ২০১০ সালের নভেম্বরে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সম্পর্কে যে টানাপড়েনের শুরু, পরে তা চরম তিক্ততায় রূপ নেয়।

দুই দেশের সম্পর্কের টানাপড়েন, সেই টানাপড়েন থেকে তিক্ততা, কূটনীতিকদের পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার সব মিলিয়ে সম্পর্ক একেবারে শীতল হয়ে পড়েছিল। ফলে ২০১২ সালে পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকটি ঢাকায় হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি। পাকিস্তান এখন ঢাকায় পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের পাশাপাশি ইসলামাবাদে মন্ত্রীদের নেতৃত্বে যৌথ অর্থনৈতিক পরিষদের (জেইসি) বৈঠক আয়োজন করতে আগ্রহী। দুই দেশের সব শেষ জেইসি ঢাকায় হয়েছিল ২০০৫ সালে।

ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের এই নতুন যাত্রা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, দেশের পরিবির্তিত পরিস্থিতির কারণে বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নতুন পরিবর্তন এসেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে নানা বিষয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো নতুন করে পুনর্বিবেচনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাণিজ্য, যোগোযোগ ও সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ দুই দেশের মধ্যে নতুন করে একটি আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য দুই দেশই এখন একমত।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত