ভারী বর্ষণে ক্ষতি লক্ষাধিক হেক্টর ফসলি জমি

গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে সারা দেশে এক লাখ ৩৯ হাজার হেক্টর বিভিন্ন ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভাষ্যমতে, জলাবদ্ধতায় মাঠে থাকা আউশ, আমন বীজতলা, বোনা আমন, পাট, শাকসবজি, ফলবাগান, পান, তরমুজ পানিতে নিমজ্জিত হয়ে কৃষকের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে পানি নেমে যাচ্ছে, এতে ক্ষতির পরিমাণও কমে আসছে বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর।

রোববার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মনিটরিং ও বাস্তবায়ন শাখার অতিরিক্ত পরিচালক ড. জামাল উদ্দীন বলেন, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সারা দেশের ২১ জেলায় কৃষিজমি প্লাবিত হয়েছে। প্রথমদিকে আক্রান্ত জমির পরিমাণ বেশি থাকলেও দ্রুত কমে আসছে। তিনি বলেন, শুরুতে এক লাখ ৩৯ হাজার হেক্টর জমি প্লাবিত হলেও দুদিন আগে এর পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ৭৬ হেক্টর এবং গত শনিবার আরো কমে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার হেক্টর।

এটা আরো কমে আসতে পারে আশঙ্কা করে তিনি বলেন, সারা দেশে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় ফেনী ও বরিশাল অঞ্চলের কৃষিজমি। তবে পানি দ্রুত নেমে গিয়ে বরিশাল অঞ্চল অনেকটাই রিকভারি করেছে।

কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. জামাল বলেন, আমরা আক্রান্ত জমির পরিমাণ অ্যাসেস করছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে আরো দুই-তিনদিন সময় লাগতে পারে। তবে রোববার বিকাল নাগাদ ক্ষয়ক্ষতির একটা প্রাথমিক ধারণা পেতে পারি।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কোনো প্রণোদনা দেওয়া হবে কি নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে কৃষি মন্ত্রণালয়কে জানাব। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালোকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা এবং শরীয়তপুরসহ দেশের ২১ জেলার অন্তত ৭২ হাজার ৭৬ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

এর মধ্যে ৪৪ হাজার ৬৬২ হেক্টর জমির আউশ, ১৪ হাজার ৩৯৩ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, ১৩৫ হেক্টর জমির পাট, ৯ হাজার ৬৭৩ হেক্টর জমির শাকসবজি, ১১৪ হেক্টর জমির কলা, ২৯৩ হেক্টর জমির পেঁপে, ৩৮৭ হেক্টর জমির পান, ২৯৭ হেক্টর জমির বোনা আমন আবাদ, ১০৪ হেক্টর জমির মরিচ, ২৯৩ হেক্টর জমির পেঁপে, ২৮১ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন তরমুজসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এর মধ্যে শুধু কুমিল্লা জেলাতেই ১১ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলÑআউশ, আমন, শাকসবজি, মরিচ, আখ তলিয়েছে পানিতে। এ ছাড়া নোয়াখালী জেলার সাত হাজার ৮০৬ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল যেমন আউশ, আমন, শাকসবজি, মরিচ, তরমুজ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ফেনী জেলার এক হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল আউশ, আমন, শাকসবজি, মরিচ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

তবে বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টিপাত কমে আসায় ফসল পানিতে ডুবে থাকার হার কমে আসছে বলে জানায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।