
ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সর্বপ্রথম ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যবর্তী পর্যায়ে শেখ মুজিবের শাসনামলে। এ কথা বর্তমান লেখক সেই ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের ওপর গবেষণাপত্রসহ ১৯৮০ সালে প্রকাশিত ‘আওয়ামী লীগ ও বাকশাল ১৯৭২-৭৫’ গ্রন্থে প্রথম তুলে ধরেন। এখন অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি নতুন করে সেই মুজিবীয় ফ্যাসিবাদের কালেই বিষয়টি যে গোড়ায় বিষবৃক্ষ রোপণ ও বর্ধন করেছিল এবং ভিত্তি তৈরি করেছিল, তা তুলে ধরছেন। মুজিবের সেই আওয়ামী-বাকশালী ফ্যাসিবাদই পরবর্তীকালে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের জুন পর্যন্ত তার কন্যা শেখ হাসিনার শাসনে নতুন করে দেখা দেয় এবং ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যবর্তী পর্যায়ে তা মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছে যায়। মোদ্দা কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের জন্মদাতা শেখ মুজিব। সেই ফ্যাসিবাদকে অক্টোপাসীয় মাত্রায় নেওয়া এবং অমনিভরাসের চূড়ান্ত বেপরোয়া বন্য দাঁতালে পরিণত করা, জ্যাকিল অ্যান্ড হাইডের ডাবল ফেস দেওয়া এবং ভয়াবহতম ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে পরিণত করার কারিগর ও কুশীলব হচ্ছেন মাফিয়া রানি খুনি শেখ হাসিনা। এই যোগসূত্রটি কোনোক্রমেই ভুলে যাওয়া যাবে না। নচেৎ আওয়ামী দানব ভিন্ন চাণক্য পন্থায় ঘুরপথে ফিরে আসবে। সমগ্র রাষ্ট্রীয় কোষাগার লুণ্ঠনের অর্থ বিনিয়োগ করে, দেশের রাজনৈতিক, সামরিক, পুলিশি, আমলাতান্ত্রিক, বাণিজ্যিক ও বৈচারিক শঠতাকে প্রশ্রয় দিয়ে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎকোচ পাইয়ে দিয়ে তারা পার পেয়ে যাবে, প্রকৃত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি থেকে রেহাই পাবে, তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এমনকি নামে-বেনামে কিংবা হিন্দুস্তানি হিন্দুত্ববাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তি তাদের এদেশীয় সাউথ ব্লক ও ‘র’-এর সংশ্লিষ্ট কিংকর কুশীল গোষ্ঠী এবং বিগত ১৬ বছরের দালাল মিডিয়ার সাংঘাতিক নামক দোসররা জিলাপির ম্যাজিকের সহায়তায় সরাসরি নির্বাচনে ঢুকে যেতে পারে। দেশবাসীকে এটাও বেদনার সঙ্গে দেখতে হতে পারে এবং এটা অসম্ভব কিছু নয়। পুনর্বাসনের পথ ধরে সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোনোর জন্য এ পথ তারা গ্রহণ করতেই পারে। ক্রোকোডাইল টিয়ারস যখন বদলে গিয়ে সবচেয়ে বিপজ্জনক ডেমন ও ড্রাকুলার নির্মম চেহারা নিয়ে আবার দেশবাসীর জীবনকে, এই রাষ্ট্র শাসনকে এবং আরো বেশি করে কসাই খুনি ফ্যাসিবাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটাতে পারে।
এ ছাড়া পুনর্বার আগ্রাসী আওয়ামী-বাকশালী ফ্যাসিবাদের স্টিমরোলারে পড়ে গেলে প্রতিশোধের কারবালায় ঢুকে যাবে দেশ, বিবরের অতলে তলিয়ে যাবে। আমাদের সংকীর্ণ রাজনৈতিক চক্র এবং আমলাতন্ত্র ও কুশীলবরা লেনদেনে ডুবে গিয়ে বিরাট অংশ ব্রাহ্মণ্যবাদের পদলেহন করে ছাত্র-জনতার ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এত হাজারো প্রাণদান, এত হাজার আহত, এত অধিক সংখ্যক পঙ্গুত্ববরণকারী ও এত অবর্ণনীয় ত্যাগস্বীকারকারীদের সবাইকে পায়ে মাড়িয়ে উৎকোচ ও ক্ষমতার উন্মাদনায় তাড়িত হয়ে বর্ষা বিপ্লবের আট মাস পেরোতে না পেরোতেই গোপন অভিসন্ধির পর্যায় ছাড়িয়ে প্রকাশ্য হালতে রঙ্গলীলা শুরু করে দিয়েছে। কাজেই দেশবাসী ও ছাত্র-জনতা—হুঁশিয়ার, সাবধান। দেশঘাতী, দ্বীনঘাতী, রাষ্ট্রঘাতী, জনঘাতী, স্বাধীনতাঘাতী আওয়ামী-বাকশালী শ্বাপদকুল কিন্তু আবারও তাদের হিন্দু ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রভুদের এবং দেশের অভ্যন্তরের রাজনৈতিক চক্র, কুশীল চক্র, আমলা ও সামরিক চক্র, পুলিশ চক্র এবং বিজেপি চক্রের বিশেষ ইশারা ও আমন্ত্রণ পেয়ে ঢুকে যেতে পারে। তেমন পরিস্থিতি তৈরি হতে যাচ্ছে বলে মনে হলে তাদের সেই স্পেস দেওয়া যাবে না কোনোক্রমেই। গণতন্ত্রের নামে, ক্ষমা ও অনুশোচনার নামে, মানবাধিকারের তামাশায়—কোনোভাবেই যেন ফ্যাসিবাদী পলাতক লীগ আবার রাজনীতি ও ক্ষমতার মঞ্চে নটবর হয়ে উঠতে না পারে, নতুন করে দেশকে পরাধীনতা ও ঔপনিবেশিকতার মাঝে ঢুকিয়ে দিতে না পারে, সেজন্য ছাত্র-জনতাকে তাদের কালেক্টিভ মেমোরিকে বারংবার রিকালেক্ট করতে হবে, শান দিতে হবে এবং নতুন করে ধারাল করতে হবে, যাতে চাণক্য নেতৃত্বে আওয়ামী-বাকশালী মর্ষকাম, ধর্ষকাম, ক্ষমতা রতিপট, অবৈধ রমণক্রিয়ায় শ্রেষ্ঠ শ্বাপদদের ক্ষমতা আর কখনো ফিরে না আসে। এই শ্বাপদ গোষ্ঠীর দূতিয়াল রাজনৈতিক চক্র যেন কোনোভাবেই উপরোক্ত পুনর্বাসন প্রকল্পে যুক্ত না থাকতে পারে, সে ব্যাপারে অতি সচেতন থাকতে হবে ছাত্র-জনতাকে গ্ল্যাডিয়েটর গার্ড হিসেবে। দেশ ও জাতির স্বার্থকে তাদের নিজেদেরই পাহারা দিতে হবে। এত দিনেও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী-বাকশালীর শ্বাপদদের একজনেরও, একটি মামলারও নিষ্পত্তি হয়নি কেন, সে প্রশ্ন তুলতে হবে। ক্ষমতার পালাবদলের ডামাডোলে ফ্যাসিবাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংকীর্ণ স্বার্থান্ধে শ্বাপদের নির্বাচনী রাজনীতির বৈতরণী পার হওয়ার ইতর অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে। নতুন সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট, নতুন চার্টার অব কালেক্টিভ সিটিজেন এনটিটি গড়ে তুলতেই হবে। নতুন ও আকাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র ও শাসন বন্দোবস্ত নির্মাণের জন্য কেবল সংস্কৃতি নয়, বরং খোল-নলচে পুরোনো বন্দোবস্তকে বদলে ফেলাই হবে বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীন সম্মতিভিত্তিক সামষ্টিক প্রকৃত কল্যাণধর্মী, আয়োজন-নিয়োজন, উদ্যোগ-প্রয়াস বাস্তবায়নের একমাত্র বিকল্পহীন পথ।
জনগণ তো এত বছর ধরে এবং পরিশেষে ৩৬ জুলাইয়ের ইতিহাস সৃষ্টিকারী দিনগুলোয় এত বেশি ত্যাগ স্বীকার করেনি পলাতক ফ্যাসিস্ট লীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য। অথচ আবার তো খুন, ধর্ষণ, গুম, জেল-জুলুম, অনাচার, অত্যাচার, লুটপাট, পাচার এবং বিবরের জীবনে ফিরে যেতে চায় না তারা। তাই ছাত্র-জনগণের প্রতি আহ্বান—মধ্যস্বত্বভোগী পরগাছাচক্র, তা যেক্ষেত্রেই হোক না কেন তাদের বিশ্বাস করবেন না। তাদের কথায় কান দেবেন না। তাদের সব কুকর্ম, সংকীর্ণ গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠান প্রকল্প এবং বিশেষত ফ্যাসিবাদের জন্য স্পেস করে দেওয়ার গোপন প্রকাশ্য ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতেই হবে। নচেৎ আবার পরতে হবে গোলামির জিঞ্জির। আবার ফিরে আসবে ফ্যাসিবাদী অন্ধকারের কালো যুগ। আওয়ামী-বাকশালী ফ্যাসিবাদে যে ব্যক্তিতন্ত্র, আমিত্ববাদ, পরিবার-গোষ্ঠীচক্র, দলদাসত্ব গড়ে উঠেছিল, সেসবকে চিরতরে কবরস্থ করতে হবে। তাদের এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে আর গণচোরা দোসরদের রুখে দিতেই হবে। সব ক্ষেত্রই খুঁজে বের করুন। বেগম খালেদা জিয়ার বাসার সামনে বালুর ট্রাক দিয়ে আটকে দেওয়া ওই শ্রমিকনেতাকে কীভাবে এখন শ্রমিক দলের নেতা হিসেবে গ্রহণ করা হলো? বের করুন ওই ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও ফ্যাসিবাদের সাঙ্গাতদের, যে বা যারা এখন বিএনপি বা জামায়াতে ঠাঁই নিচ্ছে, ভোল পাল্টে বুক ফুলিয়ে হাঁটার সুযোগ পাচ্ছে, তারা কারা?
নাম নেবেন জিয়ার সৈনিকের আর কাজ চালাবেন আওয়ামী পলাতক ফ্যাসিবাদের পক্ষে, তা হবে না। প্রকাশ্যে কাছা খুলে উদোম হয়ে থাকবেন, তা তো চলতে দেওয়া যেতে পারে না। এমনকি তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী পান্ডাদের বিএনপি ও জামায়াত থেকে বহিস্কারের আওয়াজ তুলুন। তারা কথা না শুনলে, লেনদেনের বিনিময়ে আওয়ামী পুনর্বাসন প্রকল্পে লেগে থাকলে নির্বাচনের সুযোগ পাওয়া মাত্রই এই বেইমানির, এই গাদ্দারির উপযুক্ত জবাব দেবেন। হিন্দুস্তানি হিন্দু আধিপত্যবাদের সমর্থক, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সমর্থক এবং তাদের পুনর্বাসনকারীদের সুস্পষ্ট গণশত্রু ও জাতির শত্রু হিসেবে ঘোষণা দিন। তাদের নামধাম, ঠিকানা, সাকিনসহ সব প্রকাশ করে দিন। এটা ফজলু হোক বা বজলু হোক, জসিম হোক বা জাফর হোক—কোনোরকম ছাড় দেওয়া যাবে না। রঙ্গমঞ্চের ক্ষমতা, উন্মাদনা ও অস্থির দলগুলোর আচরণ প্রতিমুহূর্তে পর্যবেক্ষণ করুন। নতুনভাবে দলদাস হয়ে উঠতে যাওয়া ১৪ দলের প্রকল্প ভেস্তে দিন। তরুণ-যুবক ছাত্র ভাইদের বলছি, ছোট ভাইয়েরা আপনাদের ফ্যাসিবাদের সাঙ্গাতদের পুনর্বাসন করার ব্যাপারে হুঁশিয়ার, সাবধান ও সংযত হতে হবে। নানাভাবে লিভ টুগেদার, গে-লেসবিয়ান-সহ এলজিবিটিকিউয়ের ফাঁদকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে হবে। ইনক্লুসিভ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক প্লুরালিজম বা বহুত্ববাদের প্রকৃত সুস্থ মানে ছাড়িয়ে তা যেন ৯২ দশমিক ৫ ভাগ মুসলিমের, ইসলামের অনুসারীদের আকিদাহ ও ঈমানকে আক্রান্ত না করে। ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ আনতে পারবেন না, একথা নিকৃষ্ট চাণক্য কূটকৌশল ও শাহবাগি ইতরামিরই বহিঃপ্রকাশ বটে। কোনোভাবেই আপনারা দায় ও দরদের নামে ত্রিবেণী সঙ্গমে পঞ্চরস আর গঞ্জিকা ক্রিয়ার প্রক্রিয়ায় প্রবিষ্টকরণের একাঙ্কিকা নাটকের নটবর বানাতে পারবেন না দেশবাসীকে। দৈশিক ইসলামের সংস্করণ বের করতে যাবেন না। আপনাদের এসব ভণ্ডামি ও চতুরতা লোকেরা ঠিকই বুঝতে পারে। এসব করে আপনি ও আপনারা শাহবাগি বাইনারি থিসিস দিয়ে আদতেই সেক্যুলার নষ্টামি ও গোমূত্রকে সামনে আনছেন। আপনারা বঙ্গভূমি ও ইসলামের নামে চরম তঞ্চকতা ও গুরুমার্গীয় কায়দার ইসলামি সংস্করণ বের করতে এবং উপস্থাপন করতে যাবেন না। আপনাদের এসব ভণ্ডামি ও চতুরতা লোকেরা ঠিকই বুঝতে পারে। এসব করে আপনি ও আপনারা কিন্তু শাপলা ও শাহবাগি বাইনারি থিসিস দিয়ে আদতেই সেক্যুলার, নষ্টামি, দৈশিক ইসলাম প্রভৃতি রঙ-বেরঙের পানীয় পান করিয়ে জনগণকে বোধহীন, দিশাহীন ও ঈমানহারা করতে চাচ্ছেন, তা আপনাদের করতে দেওয়া হবে না ইনশাআল্লাহ। আপনাদের রাজনীতির নটবর ফুলবাবুরা আর নানা শ্রেণির কিংকর ভাঁড় কুশীলের মুখ ও মুখোশ উন্মোচিত করে দেওয়া বিপ্লবী ছাত্র-জনতার কাজ। আর তথ্যজগতের সাংঘাতিক বিভীষণ ধূর্ত নেতাদের কোনো কিছুই আপনাদের সচেতন জনতার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। আপনাদের কেউ ছাড় দেবে না। বহু বছর ধরে অনেক খেলা দেখিয়েছেন এবং ধন্বন্তরি বটিকা গিলিয়েছেন আপনারা। আমাদের কাজ হচ্ছে, আপনাদের নিকৃষ্টতম চেহারা উন্মোচিত করে দেওয়া আপামর জনগণের সামনে। আপনি নরসুন্দর মার্কা উপদেষ্টা হন, রাজনীতির খেলোয়াড় হন, কুশীল-কুলাঙ্গার হন, কিংবা হন না মিডিয়ার সাংঘাতিক ধূর্ত নেতা, কোনো কিছুতেই আপনারা সচেতন জনতার রোষ থেকে রেহাই পাবেন না।
জুলাই ৩৬ বিপ্লবের ছাত্র-জনতার বিজয়ের মাধ্যমে আমাদের জনজীবনে আকাঙ্ক্ষার যে বিপ্লব ঘটে গেছে, সেটাকে আপনারা চাইছেন খুব বেশি করে হতাশার বিপ্লব উৎপাদনের পথে নিয়ে যেতে। তাতে করে জনগণ বিভ্রান্ত হয়ে আপনাদের নিজস্ব ফরমুলাধীন ইনক্লুসিভ ট্যাবলেট গিলে আওয়ামী-বাকশালীবাদের পুনর্বাসন মেনে নেবে, এই আশা আপনারা করছেন। কিন্তু তা দুরাশামাত্র। জনগণ এটা বুঝতে পেরেছে যে, আপনারা রাষ্ট্রকাঠামো ও শাসন বন্দোবস্ত অপরিবর্তিত রেখেই পুরোনো মদকে নতুন বোতলে সামনে এনে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছেন। তারা তাদের দ্বীন ও ঈমান হারিয়ে ইসলামকে পরিত্যাগ করে আপনাদের সেক্যুলার নাস্তিকতা মেনে নেবে, এটা ভাববেন না। তারা লিভ টুগেদারকে স্বীকৃতি দেবে, এলজিবিটিকিউকে প্রশ্রয় দেবে—এটা একটু গঞ্জিকা অধিক সেবনেরই প্রতিক্রিয়া মাত্র। মনে রাখবেন, চিরাচরিত ‘গায়ে মানে না আপনি মোড়লিপনা’র নিম্নতম ও ঘৃণ্যতম কালচারের জনসেবক নামক জনধর্ষকদের পরিচয় এতে করে উন্মোচিত হয়ে যাচ্ছে। আপনারা বন্দরে সন্ধ্যা নামাচ্ছেন। আপনারা সক্রিয়ভাবে আত্মরতির ব্যাধি ছড়াচ্ছেন। সচেতন ছাত্র-জনতার দায়িত্ব হচ্ছে, এই বদমাশদের চরিত্র উন্মোচন করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ-প্রত্যাখ্যানের পথে হাঁটা। এ ছাড়া আপনাদের মনের কথা হচ্ছে এই যে, আপনারাই একমাত্র খেলোয়াড়। দৈশিক নির্বাচনের মাঠ দেখে এখন আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারছি, জনগণ হচ্ছে আপনাদের কাছে ফুটবল আর আপনারা মাঠে আছেন তাদের লাথি মারার জন্য। আর আরেক দল আছে কাউন্টার কনস্টিটুয়েন্সি শুধুই ওত পেতে; আছে পানি ঘোলা করে জনহতাশার ও বিচ্ছিন্নতার মুখে ক্ষমতা কুক্ষিগতকরণের কুমতলবে। জনগণ এর কোনোটাই হতে দিতে পারে না। তারা বুঝে ফেলেছে এই সত্য—রাজনীতি তোমার জন্য খেলা/ আমার জন্য জীবন/ ক্ষমতা তোমার জন্য মৃগয়া/ যখন শিকার জনগণ।
কোটি কোটি দলবিহীন দলদাস অনিচ্ছুক জনগণ—চলুন আমরা ভার্টিক্যাল হিউম্যান বিয়িং হয়ে উঠি। আমরা সচেতন ও স্বচালিত সমষ্টিবোধে উদ্বুদ্ধ নাগরিক কমিউনিটি হয়ে উঠি। আমরা আমাদের ৩৬ জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট বাস্তবায়ন করার জন্য ৩২-এর ফ্যাসিস্ট হিন্দুত্ববাদী বয়ানকে পরিত্যাগ করি।
চলুন, দেশকে বাঁচাই, দেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এবং ২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির ঈমানিবোধ, বিবেচনা ও মানস দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের শাহবাগি মরীচিকার আহ্বান থেকে বের হতেই হবে। সমগ্র বাংলাদেশে আমাদের জনমানুষের দাবি হচ্ছে, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। সমগ্র দেশের ভূগোল, ভূখণ্ড, রাজনীতি ও জাতীয় স্বার্থকে সামনে আনা এবং সমুন্নত রাখাই আমাদের কাজ, আমাদের দায়িত্ব। আমরা আমাদের দ্বীন ছাড়ব না, ঈমান হারাব না। আমাদের ৯২ দশমিক ৫ ভাগ মানুষকে ইসলামের আসমানি লাইট হাউসই পথ দেখাবে। আমরা কোনোক্রমে পলাতক ফ্যাসিস্ট লীগের সঙ্গে লেনদেনের নটবরদের সহ্য করব না, যেকোনো মূল্যে রুখে দেবো। দীর্ঘ পথচলা পেরিয়ে মঞ্জিলে মকসুদে রমজান ১৪৪৬-এর এই জুমা মোবারকের দিনে আমরা যেন ভুলে না যাই—এই সিয়ামের মাসেই হুদাল লিন নাস হিসেবে আল-কোরআন নাজিল হয়েছিল সমগ্র মানবজাতির মুক্তির বার্তা নিয়ে। আমরা যেন ভুলে না যাই, এই রমজান মাসের ১৭ তারিখে বদরের যুদ্ধে ইসলাম ও মুসলিমদের বিজয় নিশ্চিত হয়েছিল। আমরা যেন ভুলে না যাই, এই রমজানের ২০ তারিখেই ফতেহ মক্কা বা মক্কা বিজয় ঘটেছিল । আমরা যেন আমাদের নিশানা, ঠিকানা, গন্তব্য আর লক্ষ্য ভুলে না যাই। হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’অমাল ওয়াকিল।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সর্বপ্রথম ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যবর্তী পর্যায়ে শেখ মুজিবের শাসনামলে। এ কথা বর্তমান লেখক সেই ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের ওপর গবেষণাপত্রসহ ১৯৮০ সালে প্রকাশিত ‘আওয়ামী লীগ ও বাকশাল ১৯৭২-৭৫’ গ্রন্থে প্রথম তুলে ধরেন। এখন অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি নতুন করে সেই মুজিবীয় ফ্যাসিবাদের কালেই বিষয়টি যে গোড়ায় বিষবৃক্ষ রোপণ ও বর্ধন করেছিল এবং ভিত্তি তৈরি করেছিল, তা তুলে ধরছেন। মুজিবের সেই আওয়ামী-বাকশালী ফ্যাসিবাদই পরবর্তীকালে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের জুন পর্যন্ত তার কন্যা শেখ হাসিনার শাসনে নতুন করে দেখা দেয় এবং ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যবর্তী পর্যায়ে তা মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছে যায়। মোদ্দা কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের জন্মদাতা শেখ মুজিব। সেই ফ্যাসিবাদকে অক্টোপাসীয় মাত্রায় নেওয়া এবং অমনিভরাসের চূড়ান্ত বেপরোয়া বন্য দাঁতালে পরিণত করা, জ্যাকিল অ্যান্ড হাইডের ডাবল ফেস দেওয়া এবং ভয়াবহতম ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে পরিণত করার কারিগর ও কুশীলব হচ্ছেন মাফিয়া রানি খুনি শেখ হাসিনা। এই যোগসূত্রটি কোনোক্রমেই ভুলে যাওয়া যাবে না। নচেৎ আওয়ামী দানব ভিন্ন চাণক্য পন্থায় ঘুরপথে ফিরে আসবে। সমগ্র রাষ্ট্রীয় কোষাগার লুণ্ঠনের অর্থ বিনিয়োগ করে, দেশের রাজনৈতিক, সামরিক, পুলিশি, আমলাতান্ত্রিক, বাণিজ্যিক ও বৈচারিক শঠতাকে প্রশ্রয় দিয়ে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎকোচ পাইয়ে দিয়ে তারা পার পেয়ে যাবে, প্রকৃত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি থেকে রেহাই পাবে, তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এমনকি নামে-বেনামে কিংবা হিন্দুস্তানি হিন্দুত্ববাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তি তাদের এদেশীয় সাউথ ব্লক ও ‘র’-এর সংশ্লিষ্ট কিংকর কুশীল গোষ্ঠী এবং বিগত ১৬ বছরের দালাল মিডিয়ার সাংঘাতিক নামক দোসররা জিলাপির ম্যাজিকের সহায়তায় সরাসরি নির্বাচনে ঢুকে যেতে পারে। দেশবাসীকে এটাও বেদনার সঙ্গে দেখতে হতে পারে এবং এটা অসম্ভব কিছু নয়। পুনর্বাসনের পথ ধরে সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোনোর জন্য এ পথ তারা গ্রহণ করতেই পারে। ক্রোকোডাইল টিয়ারস যখন বদলে গিয়ে সবচেয়ে বিপজ্জনক ডেমন ও ড্রাকুলার নির্মম চেহারা নিয়ে আবার দেশবাসীর জীবনকে, এই রাষ্ট্র শাসনকে এবং আরো বেশি করে কসাই খুনি ফ্যাসিবাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটাতে পারে।
এ ছাড়া পুনর্বার আগ্রাসী আওয়ামী-বাকশালী ফ্যাসিবাদের স্টিমরোলারে পড়ে গেলে প্রতিশোধের কারবালায় ঢুকে যাবে দেশ, বিবরের অতলে তলিয়ে যাবে। আমাদের সংকীর্ণ রাজনৈতিক চক্র এবং আমলাতন্ত্র ও কুশীলবরা লেনদেনে ডুবে গিয়ে বিরাট অংশ ব্রাহ্মণ্যবাদের পদলেহন করে ছাত্র-জনতার ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এত হাজারো প্রাণদান, এত হাজার আহত, এত অধিক সংখ্যক পঙ্গুত্ববরণকারী ও এত অবর্ণনীয় ত্যাগস্বীকারকারীদের সবাইকে পায়ে মাড়িয়ে উৎকোচ ও ক্ষমতার উন্মাদনায় তাড়িত হয়ে বর্ষা বিপ্লবের আট মাস পেরোতে না পেরোতেই গোপন অভিসন্ধির পর্যায় ছাড়িয়ে প্রকাশ্য হালতে রঙ্গলীলা শুরু করে দিয়েছে। কাজেই দেশবাসী ও ছাত্র-জনতা—হুঁশিয়ার, সাবধান। দেশঘাতী, দ্বীনঘাতী, রাষ্ট্রঘাতী, জনঘাতী, স্বাধীনতাঘাতী আওয়ামী-বাকশালী শ্বাপদকুল কিন্তু আবারও তাদের হিন্দু ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রভুদের এবং দেশের অভ্যন্তরের রাজনৈতিক চক্র, কুশীল চক্র, আমলা ও সামরিক চক্র, পুলিশ চক্র এবং বিজেপি চক্রের বিশেষ ইশারা ও আমন্ত্রণ পেয়ে ঢুকে যেতে পারে। তেমন পরিস্থিতি তৈরি হতে যাচ্ছে বলে মনে হলে তাদের সেই স্পেস দেওয়া যাবে না কোনোক্রমেই। গণতন্ত্রের নামে, ক্ষমা ও অনুশোচনার নামে, মানবাধিকারের তামাশায়—কোনোভাবেই যেন ফ্যাসিবাদী পলাতক লীগ আবার রাজনীতি ও ক্ষমতার মঞ্চে নটবর হয়ে উঠতে না পারে, নতুন করে দেশকে পরাধীনতা ও ঔপনিবেশিকতার মাঝে ঢুকিয়ে দিতে না পারে, সেজন্য ছাত্র-জনতাকে তাদের কালেক্টিভ মেমোরিকে বারংবার রিকালেক্ট করতে হবে, শান দিতে হবে এবং নতুন করে ধারাল করতে হবে, যাতে চাণক্য নেতৃত্বে আওয়ামী-বাকশালী মর্ষকাম, ধর্ষকাম, ক্ষমতা রতিপট, অবৈধ রমণক্রিয়ায় শ্রেষ্ঠ শ্বাপদদের ক্ষমতা আর কখনো ফিরে না আসে। এই শ্বাপদ গোষ্ঠীর দূতিয়াল রাজনৈতিক চক্র যেন কোনোভাবেই উপরোক্ত পুনর্বাসন প্রকল্পে যুক্ত না থাকতে পারে, সে ব্যাপারে অতি সচেতন থাকতে হবে ছাত্র-জনতাকে গ্ল্যাডিয়েটর গার্ড হিসেবে। দেশ ও জাতির স্বার্থকে তাদের নিজেদেরই পাহারা দিতে হবে। এত দিনেও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী-বাকশালীর শ্বাপদদের একজনেরও, একটি মামলারও নিষ্পত্তি হয়নি কেন, সে প্রশ্ন তুলতে হবে। ক্ষমতার পালাবদলের ডামাডোলে ফ্যাসিবাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংকীর্ণ স্বার্থান্ধে শ্বাপদের নির্বাচনী রাজনীতির বৈতরণী পার হওয়ার ইতর অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে। নতুন সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট, নতুন চার্টার অব কালেক্টিভ সিটিজেন এনটিটি গড়ে তুলতেই হবে। নতুন ও আকাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র ও শাসন বন্দোবস্ত নির্মাণের জন্য কেবল সংস্কৃতি নয়, বরং খোল-নলচে পুরোনো বন্দোবস্তকে বদলে ফেলাই হবে বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীন সম্মতিভিত্তিক সামষ্টিক প্রকৃত কল্যাণধর্মী, আয়োজন-নিয়োজন, উদ্যোগ-প্রয়াস বাস্তবায়নের একমাত্র বিকল্পহীন পথ।
জনগণ তো এত বছর ধরে এবং পরিশেষে ৩৬ জুলাইয়ের ইতিহাস সৃষ্টিকারী দিনগুলোয় এত বেশি ত্যাগ স্বীকার করেনি পলাতক ফ্যাসিস্ট লীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য। অথচ আবার তো খুন, ধর্ষণ, গুম, জেল-জুলুম, অনাচার, অত্যাচার, লুটপাট, পাচার এবং বিবরের জীবনে ফিরে যেতে চায় না তারা। তাই ছাত্র-জনগণের প্রতি আহ্বান—মধ্যস্বত্বভোগী পরগাছাচক্র, তা যেক্ষেত্রেই হোক না কেন তাদের বিশ্বাস করবেন না। তাদের কথায় কান দেবেন না। তাদের সব কুকর্ম, সংকীর্ণ গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠান প্রকল্প এবং বিশেষত ফ্যাসিবাদের জন্য স্পেস করে দেওয়ার গোপন প্রকাশ্য ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতেই হবে। নচেৎ আবার পরতে হবে গোলামির জিঞ্জির। আবার ফিরে আসবে ফ্যাসিবাদী অন্ধকারের কালো যুগ। আওয়ামী-বাকশালী ফ্যাসিবাদে যে ব্যক্তিতন্ত্র, আমিত্ববাদ, পরিবার-গোষ্ঠীচক্র, দলদাসত্ব গড়ে উঠেছিল, সেসবকে চিরতরে কবরস্থ করতে হবে। তাদের এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে আর গণচোরা দোসরদের রুখে দিতেই হবে। সব ক্ষেত্রই খুঁজে বের করুন। বেগম খালেদা জিয়ার বাসার সামনে বালুর ট্রাক দিয়ে আটকে দেওয়া ওই শ্রমিকনেতাকে কীভাবে এখন শ্রমিক দলের নেতা হিসেবে গ্রহণ করা হলো? বের করুন ওই ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও ফ্যাসিবাদের সাঙ্গাতদের, যে বা যারা এখন বিএনপি বা জামায়াতে ঠাঁই নিচ্ছে, ভোল পাল্টে বুক ফুলিয়ে হাঁটার সুযোগ পাচ্ছে, তারা কারা?
নাম নেবেন জিয়ার সৈনিকের আর কাজ চালাবেন আওয়ামী পলাতক ফ্যাসিবাদের পক্ষে, তা হবে না। প্রকাশ্যে কাছা খুলে উদোম হয়ে থাকবেন, তা তো চলতে দেওয়া যেতে পারে না। এমনকি তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী পান্ডাদের বিএনপি ও জামায়াত থেকে বহিস্কারের আওয়াজ তুলুন। তারা কথা না শুনলে, লেনদেনের বিনিময়ে আওয়ামী পুনর্বাসন প্রকল্পে লেগে থাকলে নির্বাচনের সুযোগ পাওয়া মাত্রই এই বেইমানির, এই গাদ্দারির উপযুক্ত জবাব দেবেন। হিন্দুস্তানি হিন্দু আধিপত্যবাদের সমর্থক, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সমর্থক এবং তাদের পুনর্বাসনকারীদের সুস্পষ্ট গণশত্রু ও জাতির শত্রু হিসেবে ঘোষণা দিন। তাদের নামধাম, ঠিকানা, সাকিনসহ সব প্রকাশ করে দিন। এটা ফজলু হোক বা বজলু হোক, জসিম হোক বা জাফর হোক—কোনোরকম ছাড় দেওয়া যাবে না। রঙ্গমঞ্চের ক্ষমতা, উন্মাদনা ও অস্থির দলগুলোর আচরণ প্রতিমুহূর্তে পর্যবেক্ষণ করুন। নতুনভাবে দলদাস হয়ে উঠতে যাওয়া ১৪ দলের প্রকল্প ভেস্তে দিন। তরুণ-যুবক ছাত্র ভাইদের বলছি, ছোট ভাইয়েরা আপনাদের ফ্যাসিবাদের সাঙ্গাতদের পুনর্বাসন করার ব্যাপারে হুঁশিয়ার, সাবধান ও সংযত হতে হবে। নানাভাবে লিভ টুগেদার, গে-লেসবিয়ান-সহ এলজিবিটিকিউয়ের ফাঁদকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে হবে। ইনক্লুসিভ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক প্লুরালিজম বা বহুত্ববাদের প্রকৃত সুস্থ মানে ছাড়িয়ে তা যেন ৯২ দশমিক ৫ ভাগ মুসলিমের, ইসলামের অনুসারীদের আকিদাহ ও ঈমানকে আক্রান্ত না করে। ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ আনতে পারবেন না, একথা নিকৃষ্ট চাণক্য কূটকৌশল ও শাহবাগি ইতরামিরই বহিঃপ্রকাশ বটে। কোনোভাবেই আপনারা দায় ও দরদের নামে ত্রিবেণী সঙ্গমে পঞ্চরস আর গঞ্জিকা ক্রিয়ার প্রক্রিয়ায় প্রবিষ্টকরণের একাঙ্কিকা নাটকের নটবর বানাতে পারবেন না দেশবাসীকে। দৈশিক ইসলামের সংস্করণ বের করতে যাবেন না। আপনাদের এসব ভণ্ডামি ও চতুরতা লোকেরা ঠিকই বুঝতে পারে। এসব করে আপনি ও আপনারা শাহবাগি বাইনারি থিসিস দিয়ে আদতেই সেক্যুলার নষ্টামি ও গোমূত্রকে সামনে আনছেন। আপনারা বঙ্গভূমি ও ইসলামের নামে চরম তঞ্চকতা ও গুরুমার্গীয় কায়দার ইসলামি সংস্করণ বের করতে এবং উপস্থাপন করতে যাবেন না। আপনাদের এসব ভণ্ডামি ও চতুরতা লোকেরা ঠিকই বুঝতে পারে। এসব করে আপনি ও আপনারা কিন্তু শাপলা ও শাহবাগি বাইনারি থিসিস দিয়ে আদতেই সেক্যুলার, নষ্টামি, দৈশিক ইসলাম প্রভৃতি রঙ-বেরঙের পানীয় পান করিয়ে জনগণকে বোধহীন, দিশাহীন ও ঈমানহারা করতে চাচ্ছেন, তা আপনাদের করতে দেওয়া হবে না ইনশাআল্লাহ। আপনাদের রাজনীতির নটবর ফুলবাবুরা আর নানা শ্রেণির কিংকর ভাঁড় কুশীলের মুখ ও মুখোশ উন্মোচিত করে দেওয়া বিপ্লবী ছাত্র-জনতার কাজ। আর তথ্যজগতের সাংঘাতিক বিভীষণ ধূর্ত নেতাদের কোনো কিছুই আপনাদের সচেতন জনতার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। আপনাদের কেউ ছাড় দেবে না। বহু বছর ধরে অনেক খেলা দেখিয়েছেন এবং ধন্বন্তরি বটিকা গিলিয়েছেন আপনারা। আমাদের কাজ হচ্ছে, আপনাদের নিকৃষ্টতম চেহারা উন্মোচিত করে দেওয়া আপামর জনগণের সামনে। আপনি নরসুন্দর মার্কা উপদেষ্টা হন, রাজনীতির খেলোয়াড় হন, কুশীল-কুলাঙ্গার হন, কিংবা হন না মিডিয়ার সাংঘাতিক ধূর্ত নেতা, কোনো কিছুতেই আপনারা সচেতন জনতার রোষ থেকে রেহাই পাবেন না।
জুলাই ৩৬ বিপ্লবের ছাত্র-জনতার বিজয়ের মাধ্যমে আমাদের জনজীবনে আকাঙ্ক্ষার যে বিপ্লব ঘটে গেছে, সেটাকে আপনারা চাইছেন খুব বেশি করে হতাশার বিপ্লব উৎপাদনের পথে নিয়ে যেতে। তাতে করে জনগণ বিভ্রান্ত হয়ে আপনাদের নিজস্ব ফরমুলাধীন ইনক্লুসিভ ট্যাবলেট গিলে আওয়ামী-বাকশালীবাদের পুনর্বাসন মেনে নেবে, এই আশা আপনারা করছেন। কিন্তু তা দুরাশামাত্র। জনগণ এটা বুঝতে পেরেছে যে, আপনারা রাষ্ট্রকাঠামো ও শাসন বন্দোবস্ত অপরিবর্তিত রেখেই পুরোনো মদকে নতুন বোতলে সামনে এনে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছেন। তারা তাদের দ্বীন ও ঈমান হারিয়ে ইসলামকে পরিত্যাগ করে আপনাদের সেক্যুলার নাস্তিকতা মেনে নেবে, এটা ভাববেন না। তারা লিভ টুগেদারকে স্বীকৃতি দেবে, এলজিবিটিকিউকে প্রশ্রয় দেবে—এটা একটু গঞ্জিকা অধিক সেবনেরই প্রতিক্রিয়া মাত্র। মনে রাখবেন, চিরাচরিত ‘গায়ে মানে না আপনি মোড়লিপনা’র নিম্নতম ও ঘৃণ্যতম কালচারের জনসেবক নামক জনধর্ষকদের পরিচয় এতে করে উন্মোচিত হয়ে যাচ্ছে। আপনারা বন্দরে সন্ধ্যা নামাচ্ছেন। আপনারা সক্রিয়ভাবে আত্মরতির ব্যাধি ছড়াচ্ছেন। সচেতন ছাত্র-জনতার দায়িত্ব হচ্ছে, এই বদমাশদের চরিত্র উন্মোচন করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ-প্রত্যাখ্যানের পথে হাঁটা। এ ছাড়া আপনাদের মনের কথা হচ্ছে এই যে, আপনারাই একমাত্র খেলোয়াড়। দৈশিক নির্বাচনের মাঠ দেখে এখন আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারছি, জনগণ হচ্ছে আপনাদের কাছে ফুটবল আর আপনারা মাঠে আছেন তাদের লাথি মারার জন্য। আর আরেক দল আছে কাউন্টার কনস্টিটুয়েন্সি শুধুই ওত পেতে; আছে পানি ঘোলা করে জনহতাশার ও বিচ্ছিন্নতার মুখে ক্ষমতা কুক্ষিগতকরণের কুমতলবে। জনগণ এর কোনোটাই হতে দিতে পারে না। তারা বুঝে ফেলেছে এই সত্য—রাজনীতি তোমার জন্য খেলা/ আমার জন্য জীবন/ ক্ষমতা তোমার জন্য মৃগয়া/ যখন শিকার জনগণ।
কোটি কোটি দলবিহীন দলদাস অনিচ্ছুক জনগণ—চলুন আমরা ভার্টিক্যাল হিউম্যান বিয়িং হয়ে উঠি। আমরা সচেতন ও স্বচালিত সমষ্টিবোধে উদ্বুদ্ধ নাগরিক কমিউনিটি হয়ে উঠি। আমরা আমাদের ৩৬ জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট বাস্তবায়ন করার জন্য ৩২-এর ফ্যাসিস্ট হিন্দুত্ববাদী বয়ানকে পরিত্যাগ করি।
চলুন, দেশকে বাঁচাই, দেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এবং ২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির ঈমানিবোধ, বিবেচনা ও মানস দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের শাহবাগি মরীচিকার আহ্বান থেকে বের হতেই হবে। সমগ্র বাংলাদেশে আমাদের জনমানুষের দাবি হচ্ছে, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। সমগ্র দেশের ভূগোল, ভূখণ্ড, রাজনীতি ও জাতীয় স্বার্থকে সামনে আনা এবং সমুন্নত রাখাই আমাদের কাজ, আমাদের দায়িত্ব। আমরা আমাদের দ্বীন ছাড়ব না, ঈমান হারাব না। আমাদের ৯২ দশমিক ৫ ভাগ মানুষকে ইসলামের আসমানি লাইট হাউসই পথ দেখাবে। আমরা কোনোক্রমে পলাতক ফ্যাসিস্ট লীগের সঙ্গে লেনদেনের নটবরদের সহ্য করব না, যেকোনো মূল্যে রুখে দেবো। দীর্ঘ পথচলা পেরিয়ে মঞ্জিলে মকসুদে রমজান ১৪৪৬-এর এই জুমা মোবারকের দিনে আমরা যেন ভুলে না যাই—এই সিয়ামের মাসেই হুদাল লিন নাস হিসেবে আল-কোরআন নাজিল হয়েছিল সমগ্র মানবজাতির মুক্তির বার্তা নিয়ে। আমরা যেন ভুলে না যাই, এই রমজান মাসের ১৭ তারিখে বদরের যুদ্ধে ইসলাম ও মুসলিমদের বিজয় নিশ্চিত হয়েছিল। আমরা যেন ভুলে না যাই, এই রমজানের ২০ তারিখেই ফতেহ মক্কা বা মক্কা বিজয় ঘটেছিল । আমরা যেন আমাদের নিশানা, ঠিকানা, গন্তব্য আর লক্ষ্য ভুলে না যাই। হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’অমাল ওয়াকিল।

এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৮ ঘণ্টা আগে
‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৮ ঘণ্টা আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৮ ঘণ্টা আগে
গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে