ড. আহমদ আনিসুর রহমান
‘স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে,
কে বাঁচিতে চায়?
দাসত্ব শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে,
কে পরিবে পায়।।’
জাতীয় স্বাধীনতা, দেশ রক্ষা ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব একই সূত্রে গাঁথা। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটা অকল্পনীয়। এই তিনটি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা খুবই দরকার। পরিষ্কার থাকা দরকার, এ তিনটির পারস্পরিক সম্পর্ক সম্পর্কেও।
এ রকম পরিষ্কার ধারণার অভাবেই প্রায়ই স্বাধীনতা, জাতি, দেশ, রাষ্ট্র, সার্বভৌমত্ব নিয়ে নানাজন এমনসব কথা বলেন, যার কোনো অর্থ হয় না। আর এসব নিয়ে অর্থহীন কথা বা চিন্তায় এসবের ক্ষতি হয়। সে ক্ষতি থেকে জাতি হিসেবে আত্মরক্ষার স্বার্থে এখানে সংক্ষেপে কিছু লিখলাম।
জাতির দেশ হয়, দেশ দিয়ে জাতি নয়। জাতি ও তার দেশের সমন্বয় সার্বভৌমত্বমণ্ডিত রূপে হয় রাষ্ট্র। রাষ্ট্র দিয়ে জাতি বা দেশ হয় না, কিন্তু জাতি ও দেশ ছাড়া রাষ্ট্র হয় না।
জাতীয় স্বাধীনতা
স্বাধীনতা হয় জাতির, দেশের নয়– ‘স্বাধীনতা’-এর মৌলিক সংজ্ঞাগত কারণেই। ‘স্বাধীনতা’ হলো, পরের অধীনতার বিপরীতে ‘স্ব’, অর্থাৎ, ‘নিজের অধীন’ হওয়া। ‘নিজের অধীন’ হওয়ার অর্থই হলো, নিজের বিবেচনায় যা দরকার বা শ্রেয়, তার মতো সক্রিয় হওয়া বা থাকা। দেশ তো এক টুকরো মাটি– খুব প্রিয় ‘মাটি’ হলেও, জড় মাটিই তা’। জড় কোনো কিছুর নিজস্ব কোনো বিবেচনা হয় না, নিজের বিবেচনায় সক্রিয় হওয়া বা থাকাও অবাস্তব কল্পনাই শুধু। এমন কল্পনা শিশুতোষ রূপকথাতেই সম্ভব, বাস্তবে নয়।
বাস্তব জগতে স্বাধীনতা রক্ষা করতে বাস্তবতাবিবর্জিত চিন্তাপ্রসূত নীতি বা কর্ম কোনো কাজেই আসতে পারে না। বরং বাস্তবতাবিমুখ করে এমনসব নীতি অনুসরণে সক্রিয়দের তাদের স্বাধীনতা অর্জন বা রক্ষার উদ্দেশ্যসাধনের বিপজ্জনক প্রতিবন্ধকই হয়ে দাঁড়ায়।
তাই বাঙলাদেশের স্বাধীনতা বলতে আসলে বোঝাবে বাঙলাদেশের জনগণের, অর্থাৎ— যে জাতির দেশ বাঙলাদেশ— সেই জাতির স্বাধীনতা।
বাঙলাদেশের জাতীয় পরিচয়
কোন জাতির দেশ ‘বাঙলাদেশ’? ‘বাঙলাদেশ’-এর নামেই তা পরিষ্কার। বাঙলাদেশ হলো, বাঙলার দেশ, অর্থাৎ বাঙলাদেশের জাতি হলো, বাঙলা। বাঙলাদেশের স্বাধীনতা বলতে তাই বোঝাবে, ‘বাঙলা’ জাতির স্বাধীনতা। এই ‘বাঙলা’ শব্দটি যদিও আজকাল প্রচলিত বানান ও উচ্চারণে প্রায়ই ‘বাংলা’, এবং সাম্প্রতিককাল পর্যন্তও প্রায়ই এবং এখনো অনেক সময়ই ‘বাঙলা’ রূপে লেখা হয়– ডিকশনারিতে শুদ্ধতর করে তা’ লেখা হয়, ‘বাঙ্গালা’। তাই, ‘বাংলাদেশ’ বা ‘বাঙলাদেশ’কে শুদ্ধতরভাবে হয়তো লেখ যাবে, ‘বাঙ্গালা দেশ’। আর এ দেশের যৌথ সামাজিক মালিকানা হবে ‘বাঙ্গালা’– সংক্ষেপে আর মূলতই, ‘বাঙ্গাল’ জাতির। এ থেকেই বাঙলাদেশকে ‘বাঙ্গাল’ বলা হতো, যা ইউরোপীয়দের উচ্চারণভ্রমে ‘ব্যাঙ্গাল’ এবং সেখান থেকে ‘বেংগাল’-এর ‘বেংগল’-এর প্রচলন হয়, ইংরেজিতে।
বাঙলাদেশের স্বাধীনতা বলতে আসলে এই ‘বাঙ্গাল’ বা ‘বঙ্গাল’ জাতির নিজস্ব বিবেচনায় নিজেকে পরিচালিত করা, সক্রিয় হওয়া বা থাকাকেই বোঝায়। এটা করার জন্যই তাদের বঙ্গালের দেশ বা বঙ্গলাদেশ তাদের লাগবে। এ জন্য দেশ হিসেবে বঙ্গলাদেশের অখণ্ডতা রক্ষা দরকার। বাঙলাদেশের স্বাধীনতার অর্থের ভেতর তাই বাঙলাদেশের বঙ্গাল জাতির দেশ হিসেবেই ভৌগোলিক অখণ্ডতাও অন্তর্ভুক্ত হবে।
বাঙলাদেশের রাষ্ট্র
আর বঙ্গাল জাতির যে দেশ– বঙ্গালাদেশ– তার অখণ্ডতার দরকার হলো, বঙ্গাল জাতির সার্বভৌমত্ব, তথা বাধাহীনভাবে নিজস্ব ইচ্ছামতো নিজস্ব স্বকীয় মূল্যবোধমতো জীবনযাপনে সক্রিয় হওয়া ও থাকার স্বীকৃত অধিকার ও ক্ষমতা রক্ষার জন্য। আর তা’ রক্ষার জন্যও দরকার হবে নিজস্ব ভূখণ্ডে প্রযুক্ত এই সার্বভৌমত্বমণ্ডিত সক্রিয় অস্তিত্ব, তথা নিজস্ব রাষ্ট্রের। বাঙলাদেশের রাষ্ট্রটি বঙ্গাল বা বাঙালি জাতির নিজস্ব রাষ্ট্রটি।
উল্লেখ্য, বাঙালির এই রাষ্ট্র আজকে পাশ্চাত্যের যে ‘স্টেট’ (State)-এর অনুবাদ করে এমন এক কল্পিত মহাশক্তিধর অশরীরী ভৌতিক সত্তা হিসেবে বোঝা হয়, যার ওপর কোনো শক্তি বা বিবেচ্য নেই– তা’ নয়। বরং তা’ একটি বাস্তব অবস্থার নাম। প্রাচীন সামীয় তথা প্রাচীন আরব্য ভাষার ‘রা’স’, অর্থাৎ ‘মাথা’, যাকে ফার্সিতে ‘সর’, ‘সির’ বা ‘শির’-ও বলে, থেকে সম্ভবত এর উৎপত্তি। ‘রা’স’ থেকে ‘রা’সত’, অর্থাৎ নিজস্ব বিষয়ের মাথায়, অর্থাৎ তার ওপর, নিজেরই অবস্থান। ‘রা’সত’, ভারতীয় উচ্চারণ-অভ্যাসে হয়ে দাঁড়ায়, ‘রাসট’ বা ‘রাস্ট’, তা থেকেই সম্ভবত হয় ‘রাষ্ট্র’। যেমন হয় ‘ঊট’ থেকে ‘ঊষ্ট্র’। এভাবে বাঙালির ঐতিহ্যে ‘রাষ্ট্র’ হলো সার্বভৌমত্বের কার্যকর অবস্থা।
কিন্তু এই যে বঙ্গাল বা বাঙলা জাতি, যাদের রাষ্ট্র অর্জন রক্ষণই তাদের ঐতিহ্য মতে স্বাধীনতা, তারা কারা? তা শতভাগ নিশ্চিত করে বলার তো উপায় নেই, প্রাচীন ইতিহাসের সবকিছুর মতোই। তবে সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতামণ্ডিত, যা কিছু তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়, তার ইতিহাসবিজ্ঞানগত বিশ্লেষণ (Historiographic Analysis)-ভিত্তিক বিশেষজ্ঞসুলভ আন্দাজে (Expert Intuition)-এ যা বোঝা যায়, তাকেই আপাতত সত্য-সম্ভব কার্যকর তত্ত্ব (Tentative Plausible Working Theory) ধরে নিয়ে আগাতে হয়, সব বৈজ্ঞানিক কাজেই যেমন। তাই করব এখন।
জাতক থেকে জাতি
জাতি হলো, ‘জাতক’ থেকে। ‘বঙ্গাল’ জাতি হলো বঙ্গের জাতক বা ‘আল’-জাতককে সাধারণ্যের ভাষায় যে ‘আল-আওলাদ’ বলে, সেই আল-আওলাদ থেকেই, বঙ্গের জাতককে ‘বঙ্গের-আল’, বা ‘বঙ্গ-আল’, সংকুচিত করে, ‘বঙ্গাল’ বলা হয়।
বঙ্গ ছিলেন এক অনার্য সামীয় রাজকুমার। বাঙলাদেশে যিনি নূহ বা নূ: বলে পরিচিত— হিন্দুরা সম্ভবত তাকেই বলে ‘মহা-নূ:’, সংক্ষেপে ‘মনু:’, আর খ্রিষ্টানরা বলে ‘নোয়াহ’ বা ‘নোহ’– তার শ্রেষ্ঠতম সন্তান সাম বা শাম বা শ্যাম। তার এক অধস্তন পুরুষ, আবির-এর সন্তানদের গোত্র পরিচিত হয় ‘দার-আবির’, অর্থাৎ ‘আবির-বাড়ি’ নামে। সেকালের যাযাবর জীবনধারায় স্থায়ী বাড়ি বলে খুব একটা কিছু ছিল না। ‘দার-আবির’ বলতে তাই বোঝায় ‘আবিরের বাড়ির লোক’, বাবা তার সন্তানসন্ততি নিয়ে যে গোত্র গড়ে ওঠে, তাই। ওই যাযাবর জীবনধারায় তারা আদি নিবাস আরব্য উপদ্বীপ থেকে পূর্বদিকে এসে উপমহাদেশে বসতি করেন, আর তাদের এই ‘দার-আবির’ নামটিই সম্ভবত উপমহাদেশীয় উচ্চারণ-অভ্যাসে দ্রাবিড় বলে উচ্চারিত হয়। তাদের অন্যতম অধস্তন, ওয়লী-দরবেশদের মতো স্বভাবের এক রাজা, জনমনভক্তির পাত্র হয়ে ‘ওয়লী-রাজ’ বলে পরিচিত হন। কালে ব্রাহ্মী বর্ণমালায় ‘ওয়’ বলে উচ্চারিত ‘ব’, আর ‘ব’ বলে উচ্চারিত ‘ব’-তে গোলমাল বেধে গিয়ে, ‘ওয়লী-রাজ’, বর্তমানে বাঙলা বর্ণমালা বলে পরিচিত মূলত নেপালের মৈথিলীসহ ব্রাহ্মী হরফে লেখা পুস্তকাদিতে ‘বলি-রাজ’ বলে লিখিত ও পরিচিত হন। তিনি প্রায় নিশ্চিতই ছিলে একেশ্বরবাদী প্রাচীনতর সেই মূল বৌদ্ধধর্মের অনুসারী, যা পরে কারো কারো মনে গৌতমবুদ্ধের উক্তির ভুল বোঝাবুঝিতে নিরীশ্বরবাদী হীনযান আর বহু-ঈশ্বরবাদী মহাযান বৌদ্ধধর্মে বিভক্ত হয়ে হারিয়ে যায়। তার পাঁচ পুত্রের অন্যতম, বঙ্গের জাতক, অর্থাৎ সন্তানরাই বঙ্গের জাতক, তথা ‘আল’ বা ‘আল-আওলাদ’। ‘বঙ্গ-জাত’, ‘বঙ্গ-জাত’ বা ‘বঙ্গ-আল’, ‘বঙ্গাল জাত’, ‘বঙ্গাল জাত’, বা ‘বঙ্গালি জাতি’।
এই মূলত অনার্য সামীয় বা ‘সেমিটিক’ রক্তধারার জাতক, প্রাচীন সেমিটিক সংস্কৃতির ভিত্তিরূপ মূল্যবোধগুলো সমন্বিত ঐতিহ্যের ধারক-বাহক জনগোষ্ঠীই মূল বাঙালা, বঙ্গাল বা বঙ্গালি বা বাঙালি জাতি। তাদের আবাসস্থল দেশটিই বাঙলা, বঙ্গালা, বঙ্গাল, বেঙ্ল বা বাঙলা দেশ।
সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যে জাতীয়তা
জাতক থেকে ‘জাতি’ হলেও, শুধু জন্মযোগে, শোণিতধারার পরিচয়েই কেবল, একটি জাতি হয়ে যায় না। হয় শুধু একটি পাল। বুনো মোষের পালের মতো। কিন্তু পশুতুল্যমাত্র জীবপালকে জাতিতে উন্নীত করার জন্য দরকার ওই রক্তধারার পরিচয়ের সঙ্গে দরকার ওই ‘পালে’-এর মানবিক বুদ্ধিবিবেক সম্পৃক্ত সমাজবদ্ধতার ভিত্তিরূপ কোনো এমন এক সাধারণ মূল্যবোধ সমষ্টির, যা পালের সবাই সাধারণত অনুসরণ করে বা অন্তত করতে সচেষ্ট হয়।
মূল্যবোধ প্রকাশিত হয় সমাজের প্রধান ভাষা, সামাজিক আচরণাভ্যাস আর চারু, কারু, ললিত কলাসহ ও সহ-সমাজে পরিচিত এবং গ্রহণযোগ্য বিভিন্ন ভাবপ্রকাশ মাধ্যমে। সমাজের প্রধান ধর্ম-জাত তার ব্যাপকতর মূল্যবোধ ও তার এবংবিধ প্রকাশ মাধ্যমের সমন্বিত রূপই ব্যাপকার্থের সংস্কৃতি।
এই সংস্কৃতির বিচারে আর অন্যসব সমাজের চেয়ে বিভিন্নতর, স্বতন্ত্র সামষ্টিক পরিচয়েই শোণিতধারার উত্তরাধিকারের বীজে সূচিত জাতীয়তার পূর্ণতাপ্রাপ্তি হয়।
ওয়লী-রাজের পুত্র বঙ্গের জন্মগত উত্তরাধিকারীর যারা, তার মূল্যবোধেরও উত্তরাধিকারী হয়ে তৎভিত্তিতে সমাজবদ্ধ হয়ে স্বীয় আচরণে তার সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যে উদ্ভাসিত হন, তখনই তারা পূর্ণার্থে একটি ‘জাতি’, বঙ্গাল ‘জাতি’ বলে উত্তীর্ণ হন।
বঙ্গাল জাতির বিবর্তন
এই উত্তরণ এক দিন, এক মাস, এক বছর– এমনকি কয়েক বছরেও হয়নি। হয়েছে বহু প্রজন্ম ধরে। জাতীয়তার দুই মৌলিক উপাদান–শোণিতধারা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের বিবর্তনের মাধ্যমে। বিবর্তনেই উন্নতি, প্রগতি, টিকে থেকে ফলবতী হয়ে যুক্তিযুক্ত হতে হয় সবকিছুকেই। যুক্তিযুক্ত না হলে অস্তিত্ব মুছে যায়। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। বঙ্গাল বা বঙ্গালি জাতির ক্ষেত্রেও তাই। আর তার বিবর্তন হয়েছে, শোণিতধারা– আর মূল্যবোধ সমষ্টি, উভয়েরই ক্ষেত্রে।
মূল অনার্য দ্রাবিড় বঙ্গের বংশধারায় প্রজন্ম-পরম্পরায় প্রধানত বিয়ে এবং তার বাইরেও আত্মীকরণের মাধ্যমে আরো বিভিন্ন বংশধারার শোণিত ধারা মিশ্রিত হয়ে বঙ্গাল বা বঙ্গালি জাতির সার্বিক শোণিতসমৃদ্ধ হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ওই মূল অনার্য সামীয় দ্রাবিড় শোণিতধারায়, প্রধানত পাঠান ও আরবসহ অন্যান্য অনার্য সামীয় বংশধারা, প্রধানত তিব্বতি ও কিঞ্চিৎ মুঘলসহ মঙ্গোলীয়, প্রধানত ভারতীয় উচ্চবর্ণ ও কিছু পারস্যজাত আর্য বংশের রক্তধারাও বঙ্গাল বা বাঙালি জাতির সার্বিক শোণিতধারায় মিলিত হয়ে ‘এক দেহে লীন’ হয়েছে।
অন্যদিকে তাদের আদি মূল্যবোধ– প্রধানত একেশ্বরবাদী ও সাম্যবাদী মূল, প্রাচীন বৌদ্ধধর্ম-জাত এমন এক ব্যাপকতর মূল্যবোধ, যা তাদের সমাজের বৌদ্ধ গর-বৌদ্ধ সব মানুষেরই অনুসরণীয় হয়ে পড়ে ও প্রাকৃত ভাষাসহ তৎপ্রকাশক বিবিধ মাধ্যম মিলে এক স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক পরিচয়ের উন্মেষের সূচনা করেছিল। ক্রমে বিবর্তিত হয়ে একপর্যায়ে তা প্রধানত একেশ্বরবাদী ও সাম্যবাদী ইসলামধর্ম-জাত এমন এক ব্যাপকতর মূল্যবোধ, যা তাদের সমাজের মুসলিম-অমুসলিম সব মানুষেরই অনুসরণীয় হয়ে পড়ে ও প্রাকৃত থেকে উত্তীর্ণ হয়ে বাঙলা বা বঙ্গালা ভাষাসহ তৎপ্রকাশক বিবিধমাধ্যম মিলে এমন এক স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক পরিচয়ে উন্নীত করে, যা অবশেষে বাঙালি বা বঙ্গাল জাতিরূপ তাদের পরিচয়ের নিদর্শন হয়ে দাঁড়ায়।
এভাবে অবশেষে বঙ্গাল বা বাঙালির মৌলিক পরিচয় হয়ে দাঁড়ায় বঙ্গের বংশের শোণিতের ও সাংস্কৃতিক উত্তরসূরি জনসমষ্টির প্রধানতম অংশের ভাষা বাঙলা বা বঙ্গালা ভাষা ও সেই প্রধানতম অংশের ধর্ম, ইসলাম থেকে উৎসারিত সেসব মূল্যবোধ, যা তাদের সমাজের মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে প্রায় সবাই অনুসরণ করতে পারে– উদাহরণস্বরূপ সাম্য, সহমর্মিতা, দানশীলতা, শৌর্য ইত্যাদি। এর ফলে, আজকে এসে বঙ্গাল বা বাঙালি জাতি এমন রূপ নিয়েছে যে, আদিতে রক্তে অনার্য সামীয় দ্রাবিড় হলেও আজ সেই নিরেট শোণিতধারা-জাতদের ছাড়াও যারা বাঙলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে আর তাদের এভাবে বিবর্তিত হয়ে আসা সমাজের ঐতিহ্যবাহী সেসব মূল্যবোধ, এ দুয়ে আপন ও আত্মস্থ করে নিলেই বাঙ্গালি বলে গণ্য হবেন। এই মূল্যবোধ ব্যবস্থা হলো এমন, যা আদিতে ব্যাপকতর সমাজের প্রকৃতি লালন ও প্রাচীনতর জৈন-বৌদ্ধ ও প্রধানত বৈষ্ণবসহ মধ্যবর্তী অন্যান্য প্রভাবক হয়ে, চূড়ান্তে ইসলাম ধর্ম থেকে উৎসারিত হলেও ব্যাপকভাবে বৌদ্ধ-মুসলিম, হিন্দু-খ্রিষ্টান নির্বিশেষে সবাই অনুসরণ করতে পারেন।
আর তা না পারলে, যারা পারবেন না, তারা বঙ্গাল বা বাঙালি জাতির মূলধারার অংশ হবেন না বটে– তবে আজ পর্যন্ত এসে বঙ্গাল বা বাঙালির জাতির যে বিবর্তিত রূপ, তার উল্লিখিত দিই উপাদানের কোনো একটিকেও গ্রহণ ও আপন করে নিলে, তার জ্ঞাতি বলে জাতির ব্যাপকতর জীবনে জ্ঞাতি হিসেবে জাতির আপনজন হবেন। বাঙলাদেশের জনগণের প্রধানতম অংশ এই যে বঙ্গাল বা বাঙালি এই জাতি-মূল আর তার দেশেরই বাসিন্দা, বাঙলাদেশের রাষ্ট্রেরই নাগরিক আরো যারা, এই জাতি-মূলের জ্ঞাতি, এ দুয়ে মিলেই হবে বাঙলাদেশের জনগণের জাতীয় জনগোষ্ঠী। যার রাষ্ট্র পরিচালিত হবে জাতীয়তার ওই দুই উপাদানের ভিত্তিতে, এমন এক ন্যায়ানুগ ব্যবস্থায়, যাতে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত জীবনে ব্যাপকতর ঐতিহ্য-জাত ঐতিহ্যবাহী জাতীয় সামাজিক মূল্যবোধের অলঙ্ঘনীয়তার সীমারেখার আওতায় সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবেই যার যার গোষ্ঠীগত ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ ও তার প্রকাশমাধ্যমের চর্চা করবেন। আর ব্যাপকতর জাতীয় জীবনচালিত হবে ব্যাপকতর জাতীয় সমাজের জাতীয় পরিচয়মূলক দুই উপাদানের আলোকে, ভিত্তিতে।
বাঙালির রাষ্ট্র
এই জাতিটিই, বাঙলাদেশ বলে যেটুকু ভূখণ্ড সে তার আবাস্থল হিসেবে অধিকার করেছে, তাতে তার স্বকীয় মূল্যবোধভিত্তিক স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক আঙ্গিকে জীববনধারা পরিচালিত করার সার্বভৌম অধিকার ও ক্ষমতা নিয়ে, প্রথম ১৩৪২ সনে বাঙলা নামে প্রতিষ্ঠা করে বাঙলা নামে তার নিজস্ব স্বাধীন রাষ্ট্র। জ্ঞানর্ষি বীরবাহু সুলতান হাজি শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহর নেতৃত্বে ।
হাজার বছরের চলমান স্বাধীনতা সংগ্রাম
এই জাতিটির তার নিজস্ব রাষ্ট্রটির সার্বভৌমত্ব অধিকার ও ক্ষমতাবলে, তার নিজস্ব ভূখণ্ড, বাঙলাদেশে তার নিজস্ব স্বকীয় সংস্কৃতি ও তৎভিত্তি তার ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ মোতাবেক জীবন যাপনের নিরঙ্কুশ অধিকার ও ক্ষমতাই বাঙলাদেশের স্বাধীনতা।
সেই ১৩৪২ থেকে আজ অবধি, তাই দরকার মতো বারবার পুনরুদ্ধার ও রক্ষার জন্যই এই জাতির সন্তানরা আত্মদান করেছেন এবং এখনো তারই জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। বাঙলার এই স্বাধীনতাকে উদ্ধার করতে বা রক্ষা করতে কতবারই না এই এই বঙ্গাল-বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছে, মুক্তিযুদ্ধে যুঝেছ— দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক থেকে আগত উচ্চবর্ণ আর্য সেন বংশীয় ঔপনিবেশিক শাসকদের শাসন; দিল্লিকেন্দ্রিক মুঘল ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন; লন্ডনকেন্দ্রিক ব্রিটিশ উপনিবেশবাদী সাম্রাজ্যবাদের চাতুর্যপূর্ণ দখল ও শোষণ; তাদেরই ছত্রছায়ায় কলকাতাকেন্দ্রিক উচ্চবর্ণ আর্য জমিদার শ্রেণির নিপীড়ন; এ দুয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পারস্পরিক রক্ষক-মিত্র থেকে কালে খোদ নিজেই ভক্ষকে রূপান্তরিত পিন্ডিকেন্দ্রিক উত্তর পাকিস্তানি আমলা-ব্যবসায়ী-সমরনায়ক চক্রের শোষণ ও সামরিক সন্ত্রাস; বিবিধ বিদেশি নব্য-ঔপনিবেশিক শক্তির স্বার্থে তাদেরই দেশীয় কামলা তথা ‘কম্প্রদার’ শ্রেণির স্বৈরশাসনমূলক সরকারি সন্ত্রাস– এসব থেকে!
স্বাধীনতার এই সংগ্রাম তো চলছেই, চলবে চিরকাল– ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে যা সব স্বাধীনচেতা জাতিরই অনিবার্য ভাগ্যলিপি।
লেখক : শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদ। ঢাকা ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণা ছাড়াও, পাশ্চাত্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
‘স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে,
কে বাঁচিতে চায়?
দাসত্ব শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে,
কে পরিবে পায়।।’
জাতীয় স্বাধীনতা, দেশ রক্ষা ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব একই সূত্রে গাঁথা। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটা অকল্পনীয়। এই তিনটি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা খুবই দরকার। পরিষ্কার থাকা দরকার, এ তিনটির পারস্পরিক সম্পর্ক সম্পর্কেও।
এ রকম পরিষ্কার ধারণার অভাবেই প্রায়ই স্বাধীনতা, জাতি, দেশ, রাষ্ট্র, সার্বভৌমত্ব নিয়ে নানাজন এমনসব কথা বলেন, যার কোনো অর্থ হয় না। আর এসব নিয়ে অর্থহীন কথা বা চিন্তায় এসবের ক্ষতি হয়। সে ক্ষতি থেকে জাতি হিসেবে আত্মরক্ষার স্বার্থে এখানে সংক্ষেপে কিছু লিখলাম।
জাতির দেশ হয়, দেশ দিয়ে জাতি নয়। জাতি ও তার দেশের সমন্বয় সার্বভৌমত্বমণ্ডিত রূপে হয় রাষ্ট্র। রাষ্ট্র দিয়ে জাতি বা দেশ হয় না, কিন্তু জাতি ও দেশ ছাড়া রাষ্ট্র হয় না।
জাতীয় স্বাধীনতা
স্বাধীনতা হয় জাতির, দেশের নয়– ‘স্বাধীনতা’-এর মৌলিক সংজ্ঞাগত কারণেই। ‘স্বাধীনতা’ হলো, পরের অধীনতার বিপরীতে ‘স্ব’, অর্থাৎ, ‘নিজের অধীন’ হওয়া। ‘নিজের অধীন’ হওয়ার অর্থই হলো, নিজের বিবেচনায় যা দরকার বা শ্রেয়, তার মতো সক্রিয় হওয়া বা থাকা। দেশ তো এক টুকরো মাটি– খুব প্রিয় ‘মাটি’ হলেও, জড় মাটিই তা’। জড় কোনো কিছুর নিজস্ব কোনো বিবেচনা হয় না, নিজের বিবেচনায় সক্রিয় হওয়া বা থাকাও অবাস্তব কল্পনাই শুধু। এমন কল্পনা শিশুতোষ রূপকথাতেই সম্ভব, বাস্তবে নয়।
বাস্তব জগতে স্বাধীনতা রক্ষা করতে বাস্তবতাবিবর্জিত চিন্তাপ্রসূত নীতি বা কর্ম কোনো কাজেই আসতে পারে না। বরং বাস্তবতাবিমুখ করে এমনসব নীতি অনুসরণে সক্রিয়দের তাদের স্বাধীনতা অর্জন বা রক্ষার উদ্দেশ্যসাধনের বিপজ্জনক প্রতিবন্ধকই হয়ে দাঁড়ায়।
তাই বাঙলাদেশের স্বাধীনতা বলতে আসলে বোঝাবে বাঙলাদেশের জনগণের, অর্থাৎ— যে জাতির দেশ বাঙলাদেশ— সেই জাতির স্বাধীনতা।
বাঙলাদেশের জাতীয় পরিচয়
কোন জাতির দেশ ‘বাঙলাদেশ’? ‘বাঙলাদেশ’-এর নামেই তা পরিষ্কার। বাঙলাদেশ হলো, বাঙলার দেশ, অর্থাৎ বাঙলাদেশের জাতি হলো, বাঙলা। বাঙলাদেশের স্বাধীনতা বলতে তাই বোঝাবে, ‘বাঙলা’ জাতির স্বাধীনতা। এই ‘বাঙলা’ শব্দটি যদিও আজকাল প্রচলিত বানান ও উচ্চারণে প্রায়ই ‘বাংলা’, এবং সাম্প্রতিককাল পর্যন্তও প্রায়ই এবং এখনো অনেক সময়ই ‘বাঙলা’ রূপে লেখা হয়– ডিকশনারিতে শুদ্ধতর করে তা’ লেখা হয়, ‘বাঙ্গালা’। তাই, ‘বাংলাদেশ’ বা ‘বাঙলাদেশ’কে শুদ্ধতরভাবে হয়তো লেখ যাবে, ‘বাঙ্গালা দেশ’। আর এ দেশের যৌথ সামাজিক মালিকানা হবে ‘বাঙ্গালা’– সংক্ষেপে আর মূলতই, ‘বাঙ্গাল’ জাতির। এ থেকেই বাঙলাদেশকে ‘বাঙ্গাল’ বলা হতো, যা ইউরোপীয়দের উচ্চারণভ্রমে ‘ব্যাঙ্গাল’ এবং সেখান থেকে ‘বেংগাল’-এর ‘বেংগল’-এর প্রচলন হয়, ইংরেজিতে।
বাঙলাদেশের স্বাধীনতা বলতে আসলে এই ‘বাঙ্গাল’ বা ‘বঙ্গাল’ জাতির নিজস্ব বিবেচনায় নিজেকে পরিচালিত করা, সক্রিয় হওয়া বা থাকাকেই বোঝায়। এটা করার জন্যই তাদের বঙ্গালের দেশ বা বঙ্গলাদেশ তাদের লাগবে। এ জন্য দেশ হিসেবে বঙ্গলাদেশের অখণ্ডতা রক্ষা দরকার। বাঙলাদেশের স্বাধীনতার অর্থের ভেতর তাই বাঙলাদেশের বঙ্গাল জাতির দেশ হিসেবেই ভৌগোলিক অখণ্ডতাও অন্তর্ভুক্ত হবে।
বাঙলাদেশের রাষ্ট্র
আর বঙ্গাল জাতির যে দেশ– বঙ্গালাদেশ– তার অখণ্ডতার দরকার হলো, বঙ্গাল জাতির সার্বভৌমত্ব, তথা বাধাহীনভাবে নিজস্ব ইচ্ছামতো নিজস্ব স্বকীয় মূল্যবোধমতো জীবনযাপনে সক্রিয় হওয়া ও থাকার স্বীকৃত অধিকার ও ক্ষমতা রক্ষার জন্য। আর তা’ রক্ষার জন্যও দরকার হবে নিজস্ব ভূখণ্ডে প্রযুক্ত এই সার্বভৌমত্বমণ্ডিত সক্রিয় অস্তিত্ব, তথা নিজস্ব রাষ্ট্রের। বাঙলাদেশের রাষ্ট্রটি বঙ্গাল বা বাঙালি জাতির নিজস্ব রাষ্ট্রটি।
উল্লেখ্য, বাঙালির এই রাষ্ট্র আজকে পাশ্চাত্যের যে ‘স্টেট’ (State)-এর অনুবাদ করে এমন এক কল্পিত মহাশক্তিধর অশরীরী ভৌতিক সত্তা হিসেবে বোঝা হয়, যার ওপর কোনো শক্তি বা বিবেচ্য নেই– তা’ নয়। বরং তা’ একটি বাস্তব অবস্থার নাম। প্রাচীন সামীয় তথা প্রাচীন আরব্য ভাষার ‘রা’স’, অর্থাৎ ‘মাথা’, যাকে ফার্সিতে ‘সর’, ‘সির’ বা ‘শির’-ও বলে, থেকে সম্ভবত এর উৎপত্তি। ‘রা’স’ থেকে ‘রা’সত’, অর্থাৎ নিজস্ব বিষয়ের মাথায়, অর্থাৎ তার ওপর, নিজেরই অবস্থান। ‘রা’সত’, ভারতীয় উচ্চারণ-অভ্যাসে হয়ে দাঁড়ায়, ‘রাসট’ বা ‘রাস্ট’, তা থেকেই সম্ভবত হয় ‘রাষ্ট্র’। যেমন হয় ‘ঊট’ থেকে ‘ঊষ্ট্র’। এভাবে বাঙালির ঐতিহ্যে ‘রাষ্ট্র’ হলো সার্বভৌমত্বের কার্যকর অবস্থা।
কিন্তু এই যে বঙ্গাল বা বাঙলা জাতি, যাদের রাষ্ট্র অর্জন রক্ষণই তাদের ঐতিহ্য মতে স্বাধীনতা, তারা কারা? তা শতভাগ নিশ্চিত করে বলার তো উপায় নেই, প্রাচীন ইতিহাসের সবকিছুর মতোই। তবে সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতামণ্ডিত, যা কিছু তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়, তার ইতিহাসবিজ্ঞানগত বিশ্লেষণ (Historiographic Analysis)-ভিত্তিক বিশেষজ্ঞসুলভ আন্দাজে (Expert Intuition)-এ যা বোঝা যায়, তাকেই আপাতত সত্য-সম্ভব কার্যকর তত্ত্ব (Tentative Plausible Working Theory) ধরে নিয়ে আগাতে হয়, সব বৈজ্ঞানিক কাজেই যেমন। তাই করব এখন।
জাতক থেকে জাতি
জাতি হলো, ‘জাতক’ থেকে। ‘বঙ্গাল’ জাতি হলো বঙ্গের জাতক বা ‘আল’-জাতককে সাধারণ্যের ভাষায় যে ‘আল-আওলাদ’ বলে, সেই আল-আওলাদ থেকেই, বঙ্গের জাতককে ‘বঙ্গের-আল’, বা ‘বঙ্গ-আল’, সংকুচিত করে, ‘বঙ্গাল’ বলা হয়।
বঙ্গ ছিলেন এক অনার্য সামীয় রাজকুমার। বাঙলাদেশে যিনি নূহ বা নূ: বলে পরিচিত— হিন্দুরা সম্ভবত তাকেই বলে ‘মহা-নূ:’, সংক্ষেপে ‘মনু:’, আর খ্রিষ্টানরা বলে ‘নোয়াহ’ বা ‘নোহ’– তার শ্রেষ্ঠতম সন্তান সাম বা শাম বা শ্যাম। তার এক অধস্তন পুরুষ, আবির-এর সন্তানদের গোত্র পরিচিত হয় ‘দার-আবির’, অর্থাৎ ‘আবির-বাড়ি’ নামে। সেকালের যাযাবর জীবনধারায় স্থায়ী বাড়ি বলে খুব একটা কিছু ছিল না। ‘দার-আবির’ বলতে তাই বোঝায় ‘আবিরের বাড়ির লোক’, বাবা তার সন্তানসন্ততি নিয়ে যে গোত্র গড়ে ওঠে, তাই। ওই যাযাবর জীবনধারায় তারা আদি নিবাস আরব্য উপদ্বীপ থেকে পূর্বদিকে এসে উপমহাদেশে বসতি করেন, আর তাদের এই ‘দার-আবির’ নামটিই সম্ভবত উপমহাদেশীয় উচ্চারণ-অভ্যাসে দ্রাবিড় বলে উচ্চারিত হয়। তাদের অন্যতম অধস্তন, ওয়লী-দরবেশদের মতো স্বভাবের এক রাজা, জনমনভক্তির পাত্র হয়ে ‘ওয়লী-রাজ’ বলে পরিচিত হন। কালে ব্রাহ্মী বর্ণমালায় ‘ওয়’ বলে উচ্চারিত ‘ব’, আর ‘ব’ বলে উচ্চারিত ‘ব’-তে গোলমাল বেধে গিয়ে, ‘ওয়লী-রাজ’, বর্তমানে বাঙলা বর্ণমালা বলে পরিচিত মূলত নেপালের মৈথিলীসহ ব্রাহ্মী হরফে লেখা পুস্তকাদিতে ‘বলি-রাজ’ বলে লিখিত ও পরিচিত হন। তিনি প্রায় নিশ্চিতই ছিলে একেশ্বরবাদী প্রাচীনতর সেই মূল বৌদ্ধধর্মের অনুসারী, যা পরে কারো কারো মনে গৌতমবুদ্ধের উক্তির ভুল বোঝাবুঝিতে নিরীশ্বরবাদী হীনযান আর বহু-ঈশ্বরবাদী মহাযান বৌদ্ধধর্মে বিভক্ত হয়ে হারিয়ে যায়। তার পাঁচ পুত্রের অন্যতম, বঙ্গের জাতক, অর্থাৎ সন্তানরাই বঙ্গের জাতক, তথা ‘আল’ বা ‘আল-আওলাদ’। ‘বঙ্গ-জাত’, ‘বঙ্গ-জাত’ বা ‘বঙ্গ-আল’, ‘বঙ্গাল জাত’, ‘বঙ্গাল জাত’, বা ‘বঙ্গালি জাতি’।
এই মূলত অনার্য সামীয় বা ‘সেমিটিক’ রক্তধারার জাতক, প্রাচীন সেমিটিক সংস্কৃতির ভিত্তিরূপ মূল্যবোধগুলো সমন্বিত ঐতিহ্যের ধারক-বাহক জনগোষ্ঠীই মূল বাঙালা, বঙ্গাল বা বঙ্গালি বা বাঙালি জাতি। তাদের আবাসস্থল দেশটিই বাঙলা, বঙ্গালা, বঙ্গাল, বেঙ্ল বা বাঙলা দেশ।
সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যে জাতীয়তা
জাতক থেকে ‘জাতি’ হলেও, শুধু জন্মযোগে, শোণিতধারার পরিচয়েই কেবল, একটি জাতি হয়ে যায় না। হয় শুধু একটি পাল। বুনো মোষের পালের মতো। কিন্তু পশুতুল্যমাত্র জীবপালকে জাতিতে উন্নীত করার জন্য দরকার ওই রক্তধারার পরিচয়ের সঙ্গে দরকার ওই ‘পালে’-এর মানবিক বুদ্ধিবিবেক সম্পৃক্ত সমাজবদ্ধতার ভিত্তিরূপ কোনো এমন এক সাধারণ মূল্যবোধ সমষ্টির, যা পালের সবাই সাধারণত অনুসরণ করে বা অন্তত করতে সচেষ্ট হয়।
মূল্যবোধ প্রকাশিত হয় সমাজের প্রধান ভাষা, সামাজিক আচরণাভ্যাস আর চারু, কারু, ললিত কলাসহ ও সহ-সমাজে পরিচিত এবং গ্রহণযোগ্য বিভিন্ন ভাবপ্রকাশ মাধ্যমে। সমাজের প্রধান ধর্ম-জাত তার ব্যাপকতর মূল্যবোধ ও তার এবংবিধ প্রকাশ মাধ্যমের সমন্বিত রূপই ব্যাপকার্থের সংস্কৃতি।
এই সংস্কৃতির বিচারে আর অন্যসব সমাজের চেয়ে বিভিন্নতর, স্বতন্ত্র সামষ্টিক পরিচয়েই শোণিতধারার উত্তরাধিকারের বীজে সূচিত জাতীয়তার পূর্ণতাপ্রাপ্তি হয়।
ওয়লী-রাজের পুত্র বঙ্গের জন্মগত উত্তরাধিকারীর যারা, তার মূল্যবোধেরও উত্তরাধিকারী হয়ে তৎভিত্তিতে সমাজবদ্ধ হয়ে স্বীয় আচরণে তার সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যে উদ্ভাসিত হন, তখনই তারা পূর্ণার্থে একটি ‘জাতি’, বঙ্গাল ‘জাতি’ বলে উত্তীর্ণ হন।
বঙ্গাল জাতির বিবর্তন
এই উত্তরণ এক দিন, এক মাস, এক বছর– এমনকি কয়েক বছরেও হয়নি। হয়েছে বহু প্রজন্ম ধরে। জাতীয়তার দুই মৌলিক উপাদান–শোণিতধারা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের বিবর্তনের মাধ্যমে। বিবর্তনেই উন্নতি, প্রগতি, টিকে থেকে ফলবতী হয়ে যুক্তিযুক্ত হতে হয় সবকিছুকেই। যুক্তিযুক্ত না হলে অস্তিত্ব মুছে যায়। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। বঙ্গাল বা বঙ্গালি জাতির ক্ষেত্রেও তাই। আর তার বিবর্তন হয়েছে, শোণিতধারা– আর মূল্যবোধ সমষ্টি, উভয়েরই ক্ষেত্রে।
মূল অনার্য দ্রাবিড় বঙ্গের বংশধারায় প্রজন্ম-পরম্পরায় প্রধানত বিয়ে এবং তার বাইরেও আত্মীকরণের মাধ্যমে আরো বিভিন্ন বংশধারার শোণিত ধারা মিশ্রিত হয়ে বঙ্গাল বা বঙ্গালি জাতির সার্বিক শোণিতসমৃদ্ধ হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ওই মূল অনার্য সামীয় দ্রাবিড় শোণিতধারায়, প্রধানত পাঠান ও আরবসহ অন্যান্য অনার্য সামীয় বংশধারা, প্রধানত তিব্বতি ও কিঞ্চিৎ মুঘলসহ মঙ্গোলীয়, প্রধানত ভারতীয় উচ্চবর্ণ ও কিছু পারস্যজাত আর্য বংশের রক্তধারাও বঙ্গাল বা বাঙালি জাতির সার্বিক শোণিতধারায় মিলিত হয়ে ‘এক দেহে লীন’ হয়েছে।
অন্যদিকে তাদের আদি মূল্যবোধ– প্রধানত একেশ্বরবাদী ও সাম্যবাদী মূল, প্রাচীন বৌদ্ধধর্ম-জাত এমন এক ব্যাপকতর মূল্যবোধ, যা তাদের সমাজের বৌদ্ধ গর-বৌদ্ধ সব মানুষেরই অনুসরণীয় হয়ে পড়ে ও প্রাকৃত ভাষাসহ তৎপ্রকাশক বিবিধ মাধ্যম মিলে এক স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক পরিচয়ের উন্মেষের সূচনা করেছিল। ক্রমে বিবর্তিত হয়ে একপর্যায়ে তা প্রধানত একেশ্বরবাদী ও সাম্যবাদী ইসলামধর্ম-জাত এমন এক ব্যাপকতর মূল্যবোধ, যা তাদের সমাজের মুসলিম-অমুসলিম সব মানুষেরই অনুসরণীয় হয়ে পড়ে ও প্রাকৃত থেকে উত্তীর্ণ হয়ে বাঙলা বা বঙ্গালা ভাষাসহ তৎপ্রকাশক বিবিধমাধ্যম মিলে এমন এক স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক পরিচয়ে উন্নীত করে, যা অবশেষে বাঙালি বা বঙ্গাল জাতিরূপ তাদের পরিচয়ের নিদর্শন হয়ে দাঁড়ায়।
এভাবে অবশেষে বঙ্গাল বা বাঙালির মৌলিক পরিচয় হয়ে দাঁড়ায় বঙ্গের বংশের শোণিতের ও সাংস্কৃতিক উত্তরসূরি জনসমষ্টির প্রধানতম অংশের ভাষা বাঙলা বা বঙ্গালা ভাষা ও সেই প্রধানতম অংশের ধর্ম, ইসলাম থেকে উৎসারিত সেসব মূল্যবোধ, যা তাদের সমাজের মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে প্রায় সবাই অনুসরণ করতে পারে– উদাহরণস্বরূপ সাম্য, সহমর্মিতা, দানশীলতা, শৌর্য ইত্যাদি। এর ফলে, আজকে এসে বঙ্গাল বা বাঙালি জাতি এমন রূপ নিয়েছে যে, আদিতে রক্তে অনার্য সামীয় দ্রাবিড় হলেও আজ সেই নিরেট শোণিতধারা-জাতদের ছাড়াও যারা বাঙলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে আর তাদের এভাবে বিবর্তিত হয়ে আসা সমাজের ঐতিহ্যবাহী সেসব মূল্যবোধ, এ দুয়ে আপন ও আত্মস্থ করে নিলেই বাঙ্গালি বলে গণ্য হবেন। এই মূল্যবোধ ব্যবস্থা হলো এমন, যা আদিতে ব্যাপকতর সমাজের প্রকৃতি লালন ও প্রাচীনতর জৈন-বৌদ্ধ ও প্রধানত বৈষ্ণবসহ মধ্যবর্তী অন্যান্য প্রভাবক হয়ে, চূড়ান্তে ইসলাম ধর্ম থেকে উৎসারিত হলেও ব্যাপকভাবে বৌদ্ধ-মুসলিম, হিন্দু-খ্রিষ্টান নির্বিশেষে সবাই অনুসরণ করতে পারেন।
আর তা না পারলে, যারা পারবেন না, তারা বঙ্গাল বা বাঙালি জাতির মূলধারার অংশ হবেন না বটে– তবে আজ পর্যন্ত এসে বঙ্গাল বা বাঙালির জাতির যে বিবর্তিত রূপ, তার উল্লিখিত দিই উপাদানের কোনো একটিকেও গ্রহণ ও আপন করে নিলে, তার জ্ঞাতি বলে জাতির ব্যাপকতর জীবনে জ্ঞাতি হিসেবে জাতির আপনজন হবেন। বাঙলাদেশের জনগণের প্রধানতম অংশ এই যে বঙ্গাল বা বাঙালি এই জাতি-মূল আর তার দেশেরই বাসিন্দা, বাঙলাদেশের রাষ্ট্রেরই নাগরিক আরো যারা, এই জাতি-মূলের জ্ঞাতি, এ দুয়ে মিলেই হবে বাঙলাদেশের জনগণের জাতীয় জনগোষ্ঠী। যার রাষ্ট্র পরিচালিত হবে জাতীয়তার ওই দুই উপাদানের ভিত্তিতে, এমন এক ন্যায়ানুগ ব্যবস্থায়, যাতে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত জীবনে ব্যাপকতর ঐতিহ্য-জাত ঐতিহ্যবাহী জাতীয় সামাজিক মূল্যবোধের অলঙ্ঘনীয়তার সীমারেখার আওতায় সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবেই যার যার গোষ্ঠীগত ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ ও তার প্রকাশমাধ্যমের চর্চা করবেন। আর ব্যাপকতর জাতীয় জীবনচালিত হবে ব্যাপকতর জাতীয় সমাজের জাতীয় পরিচয়মূলক দুই উপাদানের আলোকে, ভিত্তিতে।
বাঙালির রাষ্ট্র
এই জাতিটিই, বাঙলাদেশ বলে যেটুকু ভূখণ্ড সে তার আবাস্থল হিসেবে অধিকার করেছে, তাতে তার স্বকীয় মূল্যবোধভিত্তিক স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক আঙ্গিকে জীববনধারা পরিচালিত করার সার্বভৌম অধিকার ও ক্ষমতা নিয়ে, প্রথম ১৩৪২ সনে বাঙলা নামে প্রতিষ্ঠা করে বাঙলা নামে তার নিজস্ব স্বাধীন রাষ্ট্র। জ্ঞানর্ষি বীরবাহু সুলতান হাজি শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহর নেতৃত্বে ।
হাজার বছরের চলমান স্বাধীনতা সংগ্রাম
এই জাতিটির তার নিজস্ব রাষ্ট্রটির সার্বভৌমত্ব অধিকার ও ক্ষমতাবলে, তার নিজস্ব ভূখণ্ড, বাঙলাদেশে তার নিজস্ব স্বকীয় সংস্কৃতি ও তৎভিত্তি তার ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ মোতাবেক জীবন যাপনের নিরঙ্কুশ অধিকার ও ক্ষমতাই বাঙলাদেশের স্বাধীনতা।
সেই ১৩৪২ থেকে আজ অবধি, তাই দরকার মতো বারবার পুনরুদ্ধার ও রক্ষার জন্যই এই জাতির সন্তানরা আত্মদান করেছেন এবং এখনো তারই জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। বাঙলার এই স্বাধীনতাকে উদ্ধার করতে বা রক্ষা করতে কতবারই না এই এই বঙ্গাল-বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছে, মুক্তিযুদ্ধে যুঝেছ— দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক থেকে আগত উচ্চবর্ণ আর্য সেন বংশীয় ঔপনিবেশিক শাসকদের শাসন; দিল্লিকেন্দ্রিক মুঘল ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন; লন্ডনকেন্দ্রিক ব্রিটিশ উপনিবেশবাদী সাম্রাজ্যবাদের চাতুর্যপূর্ণ দখল ও শোষণ; তাদেরই ছত্রছায়ায় কলকাতাকেন্দ্রিক উচ্চবর্ণ আর্য জমিদার শ্রেণির নিপীড়ন; এ দুয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পারস্পরিক রক্ষক-মিত্র থেকে কালে খোদ নিজেই ভক্ষকে রূপান্তরিত পিন্ডিকেন্দ্রিক উত্তর পাকিস্তানি আমলা-ব্যবসায়ী-সমরনায়ক চক্রের শোষণ ও সামরিক সন্ত্রাস; বিবিধ বিদেশি নব্য-ঔপনিবেশিক শক্তির স্বার্থে তাদেরই দেশীয় কামলা তথা ‘কম্প্রদার’ শ্রেণির স্বৈরশাসনমূলক সরকারি সন্ত্রাস– এসব থেকে!
স্বাধীনতার এই সংগ্রাম তো চলছেই, চলবে চিরকাল– ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে যা সব স্বাধীনচেতা জাতিরই অনিবার্য ভাগ্যলিপি।
লেখক : শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদ। ঢাকা ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণা ছাড়াও, পাশ্চাত্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
৮ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
৮ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
৮ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১ দিন আগে