সাক্ষাৎকারে সিইসি নাসির উদ্দীন

জাতীয় সংসদ নির্বাচনই এখন ইসির অগ্রাধিকার

স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ২৯
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩: ১২

নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বটাকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তারা জাতিকে একটি সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে চান। তিনি বলেন, দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ নয়, সুযোগ মনে করছি। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাই। নির্বাচন কমিশনে জনগণের আস্থা ফেরাতে সবই করা হবে জানান সিইসি। তিনি বলেন, কমিশন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে কিছু ভাবছে না। তারা সংসদ নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে। রাজনৈতিক দল, জনগণ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের চাহিদা অনুযায়ী জাতিকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সিইসি বদ্ধপরিকর।

দৈনিক আমার দেশকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এসব কথা বলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন আমার দেশ-এর স্টাফ রিপোর্টার জাহিদুল ইসলাম

বিজ্ঞাপন

আমার দেশ : নির্বাচন কমিশনের সামনে কী চ্যালেঞ্জ আছে বলে আপনি মনে করেন? এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আপনার কী পদক্ষেপ থাকবে?

প্রধান নির্বাচন কমিশনার : আমাদের সামনে প্রধান কাজ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেদিকে এগুচ্ছি এবং সেটাই আমাদের অগ্রাধিকার। সেদিকে এগোচ্ছি এবং সেটাই আমাদের অগ্রাধিকার। জাতীয় নির্বাচনের মতো বিশেষ কাজ যখন সামনে চলে আসে তখন চ্যালেঞ্জ তো থাকেই। কিন্তু প্রথম থেকে বলে আসছি, আমি এগুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি না। দেখছি সুযোগ হিসেবে। মনে হয়েছে, এ সময়ে এসে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আমার ওপর একটা দায়িত্ব এসেছে দেশকে কিছু দেওয়ার জন্য। আমি বিষয়টিকে এভাবে নিয়েছি। তাই কোনোটাকে চ্যালেঞ্জ মনে করি না। সুযোগটার সদ্ব্যবহার করতে চাই। সত্যিকার অর্থে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চাই। সেই লক্ষ্যে কাজ করছি এবং আমার সব কর্মকাণ্ড সেই লক্ষ্যে নিবেদিত করেছি।

আমার দেশ : বিগত আওয়ামী লীগ শাসন আমলের কর্মকাণ্ডের কারণে নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা শূন্যের কোঠায় পৌঁছে গেছে। এই আস্থা ফেরাতে আপনার বিশেষ পদক্ষেপ থাকবে কি না?

সিইসি : অবশ্যই পদক্ষেপ থাকবে, আস্থা ফেরাতে যা যা করার লাগবে সেটাই করব। আপনারা জেনে থাকবেন ইতোমধ্যে আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা করার উদ্যোগ নিয়েছি। এটা নিচ্ছি কারণ মানুষ তো ভোট দেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল তাই অনেকে ভোটার হতে চায়নি, বিশেষ করে যারা মহিলা ভোটার রয়েছেন তাদের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছিল- ভোটার হয়ে লাভ কী? মানুষ ভোটের ওপর সম্পূর্ণ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে- এখন এটা পুনরুদ্ধার গতানুগতিক পন্থায় সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য আমরা ভোটার করার জন্য বাড়ি বাড়ি যাব, তাদের আশ্বস্ত করব- এবারের ভোট আগের মতো হবে না- আপনারা সত্যিকার অর্থে সুন্দরভাবে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন। তাছাড়া মানুষকে আশ্বস্ত করার জন্য যা যা করার দরকার সেটা করব।

আমার দেশ : শুনেছি আগের আমলে আপনি নিজেও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি, কেন পারেননি এটা বলবেন কী?

সিইসি : কথাটা ঠিক। কারণ ২০১৪ সালে যখন আমি দেখেছি ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জয়ী হয়ে গেছেন; মনে হয়েছে, এ ভোটে গিয়ে কী হবে? আমি না গেলে লাভ নেই, লসও নেই। এজন্য আমি ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি। ২০১৮ সালে সব দল অংশ নিল, ভেবেছিলাম একটা ভালো ভোট হবে। পরে শুনলাম, রাতেই ভোট হয়ে গেছে। তারপরও সেন্টারে গেলাম। গিয়ে দেখি সেন্টারে কোনো লোকজন নেই। ভোট আগেই হয়ে গেছে। ২৪ সালে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আপনারা তো জানেন, এ নির্বাচন ছিল ডামি নির্বাচন, কষ্ট করে আর যাইনি।

আমার দেশ : প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে কথা বলেছেন, সে হিসাবে আপনাদের হাতে যে সময় আছে, তার মধ্যে ভোট করতে আপনার প্রস্তুতি কতটা?

সিইসি : বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর এক ঘণ্টাও সময় নষ্ট করিনি। জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করার জন্য আমরা প্রথম দিন থেকে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি। নির্বাচন আয়োজনে যা যা দরকার, তাতে আমরা অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছি। আইন অনুযায়ী, ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা করা হয়, ২ মার্চ তা প্রকাশ করা হয়। এটাও থাকবে, পাশাপাশি আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করে যোগ-বিয়োগ করব। তরুণ সমাজকে যাতে ভোটার করতে পারি, সেদিকে খেয়াল রাখব। অনেক বিদেশি নাগরিক ভোটার হয়ে গেছে তাদের বাদ দিতে হবে, অনেকে মারা গেছে, তাদের কর্তন করতে হবে। নির্বাচন আয়োজনে আমাদের প্রস্তুতি থেমে নেই। আমাদের প্রস্তুতি প্রতিদিনই এগিয়ে যাচ্ছে।

আমার দেশ : আপনাদের এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?

সিইসি : আমরা অফিশিয়াল কোনো রোডম্যাপ দেওয়ার কথা ভাবছি না, তবে আমাদের নিজেদের জন্য রোডম্যাপ আছে, কোন কাজটা আগে করব; কোনটা গুরুত্ব দেব; এ বিষয়ে আমাদের নিজেদের ব্যক্তিগত রোডম্যাপ আছে। না হলে আমরা কাজ এগিয়ে নিয়ে যাব কীভাবে। কিন্তু জনগণকে জানানোর জন্য কোনো রোডম্যাপ আমরা এ মুহূর্তে ভাবছি না।

আমার দেশ : এক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন কি না?

সিইসি : আমরা সরকারের কথায় চলি না। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও সাংবিধানিক সংস্থা। সরকারের তরফ থেকে কোনো চাপ নেই, কোনো নির্দেশনা নেই। আমরা একদম স্বাধীনভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সরকারের কোনো সিদ্ধান্তের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি না। আমরা আমাদের মতো কাজ করে যাচ্ছি।

আমার দেশ : জাতীয় নির্বাচনের একটা ধারণা পেয়েছি, স্থানীয় সরকারের নির্বাচন নিয়ে আপনাদের কোনো প্রস্তুতি আছে কি না?

সিইসি : এ মূহর্তে আমরা সেটা ভাবছি না। আমরা সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের জন্য কিছুটা অপেক্ষা করছি। রিপোর্টের সুপারিশ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেটা দেখতে হবে। আমাদের মাথায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনের চিন্তা নেই। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি জাতীয় নির্বাচনের।

আমার দেশ : জাতীয় নির্বাচন বড় নির্বাচন, তার আগে মাঠের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বোঝার জন্য স্থানীয় সুরকার নির্বাচন করবেন কি না?

সিইসি : দেখেন, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো চাচ্ছে নির্বাচিত সরকার, তারাই তো আমাদের বড় অংশীজন- সব বড় বড় দল চাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাত থেকে একটা নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা যাক, আমরা চাই ওই দাবির প্রতি সম্মান জানাতে। প্রধান উপদেষ্টাও সেটা চান। প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনের ইঙ্গিত দেননি। পরীক্ষামূলক স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করার মতো চিন্তাভাবনা এ মুহূর্তে আমাদের নেই।

আমার দেশ : আপনারা ইতিমধ্যে চারটি কমিটি গঠন করেছেন, কমিটির কার্যপরিধি দেখে মনে হচ্ছে, আপনারা আগের কমিশনগুলোর পুরোনো পথে হাঁটছেন? এর সঙ্গে কি আপনি একমত?

সিইসি : আমাদের কাজটি তো ভাগ করে দিতে চারজন কমিশনকে দিয়ে চারটি কমিটি করে দিয়েছি। একজন নির্বাচন দেখবেন, একজন নির্বাচনের আইনগত দিক দেখবেন, একজন প্রমোশন দেখবেন, একজন আইনশৃঙ্খলা বিষয় দেখবেন। একজন সীমানা নির্ধারণ ও রাজনৈতি দলগুলোর নিবন্ধন দেখবেন। আগের সব কিছু বাদ দিতে হবে এমনটা নয়, যেটা ভালো সেটা নিতে তো অসুবিধা নেই। ওনারা যার কাজ দেখে সুপারিশ তৈরি করবেন, আমরা সেটা আবার কমিশন সভায় আলোচনা করে যেটা গ্রহণযোগ্য হবে সেটা সিদ্ধান্ত নেব। আলাদা কমিটি হলেও সব চিন্তায় আমরা এক হব।

আমার দেশ : কার্যপরিধিতে দুটি জিনিস দেখলাম, জন-তহবিল আইন এবং ই-ভোটিং চালুর কথা। এটা আপনারা বাস্তবায়ন করবেন কি না?

সিইসি : আমরা ওইভাবে কিছু চিন্তা করছি না। আগে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ আসুক, তাদের সুপারিশে দেখি কি বলে- তাদের সুপারিশে যেগুলো গ্রহণযোগ্য হবে, সেভাবে আমরা এগোবো। আমরা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের অপেক্ষায় আছি। বাংলাদেশের ভেতরে ই-ভোটিং করব, এটা আমাদের চিন্তার মধ্যে নেই।

আমার দেশ : ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে নানা বিতর্ক- এটা নিয়ে ভবিষ্যতে কি পরিকল্পনা আছে?

সিইসি : এটা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে, আমরা জাতীয় নির্বাচন ইভিএম ব্যবহারের বিষয় বিবেচনা করছি না। জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহারের কোনো বিবেচনা নেই।

আমার দেশ : সর্বশেষ তিনটি কমিশনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আছে, তা নিয়ে তদন্ত করে বিচারের বিষয়ে সরকারের কাছে কোনো সুপারিশ করবেন কি না?

সিইসি : আমাদের সঙ্গে সংস্কার কমিশনের একটি মিটিং হয়েছে। সেখানে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। তারা বলেছে, শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। এখন ওনারা যদি সুপারিশ করেন, তাহলে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগে দেখি সুপারিশগুলো আসুক, তারপর দেখি কি করা যায়- দেখা যাবে।

আমার দেশ : আগের তিনটি নির্বাচনে ভোটের হার নিয়ে প্রশ্ন ছিল- কমিয়ে দেওয়া বা বাড়িয়ে দেওয়া, ওই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবেন কি না?

সিইসি : মুশকিল হচ্ছে আমরা ২০১৮ সালের কোনো মূল্যায়ন রিপোর্ট পাচ্ছি না। ১৮-এর মূল্যায়ন রিপোর্ট আমরা খোঁজ করছি, পেলে বুঝতে পারব। তবে এতটুকু বলতে চাই- সব সময় পেছনের দিকে তাকালে আমরা সামনে এগোতে পারব না। একটা লাশের পোস্টমর্টেম আর কত করব- পোস্টমর্টেম করে কোনো লাভ নেই। কোনো ফায়দা হবে না। আগে যা যা ভুল হয়েছে, এগুলো যাতে আমরা না করি। এটি একটি লাভ যে, তাদের ভুলগুলো আপনারা সমালোচনা করছেন। এ থেকে আমাদের একটি শিক্ষা হলো এই কাজটা করলে আমাদের সমালোচনাও তৈরি হবে। তো আগে যে অনিয়ম হয়েছে, সেটা আমাদের জন্য একটা শিক্ষা হয়ে থাকবে। আমরা এই পথে আর হাঁটব না। একটা ভালো দিক আছে। ওই পথে হাঁটার প্রয়োজন নেই। আমাদের অসম্ভব সুবিধা হলো, আমাদের এখানে সরকারি কোনো দল নেই যে, চাপ দিয়ে হলেও এটা করাবে। দ্বিতীয় হলো বড় পার্টিগুলো যারা নির্বাচন চায়, তারা ১৫ বছর ধরে ভোটের অধিকারের জন্য যুদ্ধ করেছে। সুষ্ঠু ভোটের দাবির জন্য আন্দোলন করেছে। তাদের দাবির কাজটাই তো আমরা বাস্তবায়ন করে দেব। তার ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর একটি সহযোগিতা পাব বলে আমরা বিশ্বাস করি। আগে এরকম পরিবেশ ছিল না, সরকারি দল বনাম বিরোধীদল। এখন যারা আছে, সবাই তো চায় সুষ্ঠু ভোট হোক। তারা আমাদের সহযোগিতা করবে- এ ব্যাপারে আমি খুব আত্মবিশ্বাসী।

আমার দেশ : আগের নির্বাচনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থারগুলো দায়িত্বের বাইরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন, যেটাকে আমরা হস্তক্ষেপ বলতে পারি- এরকম ঘটছে অনেক প্রার্থীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরকম কোনো ঘটনায় আমরা পুনরায় দেখব কি না?

সিইসি : ইনশা আল্লাহ দেখবেন না। এর আগে শুনেছি, কবর থেকে ভোট দিয়ে গেছে, মৃত ভোটার বাদ যায়নি। ভোটার নম্বর খালি পাইছে ভোট দিয়ে দিছে। এবার সব বাহিনীর দায়িত্ব হবে তার বাইরে। কেউ কিছু করতে পারবে না।

আমার দেশ : নির্বাচনে কারা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন? নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা দাবি করছেন, তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়ার জন্য কিন্তু আমরা সব সময় জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করেছি। এবার কোনো পরিবর্তনের চিন্তা আছে কি না?

সিইসি : আমরা বিষয়টি পরীক্ষা করছি, যাদের দিয়ে নির্বাচন সুন্দর হবে আমরা সেভাবে কাজ করব। আমি আগে থেকে বলতে পারব না ডিসি সাহেবকে দিলে নির্বাচন সুন্দর হবে বা আমার অফিসার ভালো হবে। আলাপ-আলোচনা করছি, কীভাবে কাদের দায়িত্ব দিলে নির্বাচন সুন্দর হবে সেটা দেখছি।

আমার দেশ : বিগত তিন কমিশন কতগুলো কিংস পার্টিকে নিবন্ধন দিয়েছে? নিবন্ধনের যে শর্তগুলো ছিল, তার মধ্যে অনেক শর্ত পূরণ হয়নি বলে অভিযোগ আছে। এগুলো নিয়ে তদন্ত করবেন কি না বা আপনারা নতুন রাজনৈতি দলগুলোকে নিবন্ধন দেবেন কি না?

সিইসি : আমার তো নিবন্ধন দিতে হবে। রাজনীতি করার অধিকার সংবিধানে আছে, আপনি রাজনীতি করলে আমি আপনাকে মানা করতে পারব না, আপনি দল করলে মানা করতে পারব না। কিন্তু নিবন্ধন করতে হলে আমার কিছু শর্ত মানতে হবে- ওই শর্তপূরণ হলে আমি নিবন্ধন দেব, না হলে দেব না। অনেকে দেখা করে বলেন- স্যার, আমার দলকে ভেঙে ফেলছে, সরকার কিছু লোক ভাগিয়ে নিয়ে গেছে। তখন সরকারে যারা ছিল, তারা নিবন্ধন নিয়ে গেছে। সংস্কার কমিশন যখন সুপারিশ দেবে, তখন হয়তো রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের ব্যাপারে কোন সুপারিশ দেবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেব। আমরা কিংস পার্টি মিংস পার্টি বলে বিশ্বাস করি না।

আমার দেশ : যে কিংস পার্টি নিবন্ধন পেয়েছে, তাদের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেবেন?

সিইসি : দেখি না, এ বিষয়ে কি করা যায়, আমরা এখনো বিষয়গুলো খতিয়ে দেখিনি। আমি কিছু তালিকা নিয়েছি। তাছাড়া একটা সেটেল জিনিস, আনসেটেল করা মুশকিল হয়ে যায়, আমাদের লক্ষ্য জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ করা। তারা নিবন্ধন নিলেও কী, আর না নিলেও কী। একটা বড় দলই (আওয়ামী লীগ) তো আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছে, তাদের এতটা অফিস, এখন একটাও নেই। জামায়াত ইসলামীর অফিস তো ১৫ বছর তালাবদ্ধ ছিল। বিএনপির অফিসও মাঝে মাঝে তালা মারা হয়েছে। একটা কেন্দ্রে প্রধান অফিস থাকতে হবে বলে একটা শর্ত দিলাম, জামায়াতে ইসলামীর অফিস তো ১৫ বছর তালা মেরে দিয়েছে। সুতরাং আমাদের সংস্কার কমিশন কি সুপারিশ দেবে তা পরীক্ষা করে আমরা দেখব- পরে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

আমার দেশ : আপনি বললেন, একটা দল আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়েছে। তার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এসেছে- সেই দল আগামী নির্বাচনের সুযোগ পাবে কি না?

সিইসি : এ প্রশ্ন সবাই করে, এই প্রশ্নের জবাবে আমি আগাম কিছু বলতে পারব না। এটা রাজনৈতিকভাবে বিতর্ক হচ্ছে, কেউ বিপক্ষে বলছে। কেউ আকার ইঙ্গিতে পক্ষে বলছে। যেহেতু রাজনৈতিক বিতর্ক আছে সেহেতু আগে সেখানে ফয়সালা হোক। কেউ বলছে কোর্টে মামলা হয়েছে, মামলায় রায় যা আসবে, তা নিয়ে আমরা বাস্তবায়ন করব। সময় বলে দেবে আমরা কি করব।

আমার দেশ : নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। কিন্তু আমরা দেখছি একতরফা নির্বাচন, রাতের নির্বাচন, ডামি নির্বাচন- এ কলঙ্ক নির্বাচন কমিশনের ওপর এসেছে। এ বিতর্ক নিয়ে আপনারা স্বাধীনভাবে কীভাবে কাজ করবেন বা বিতর্কে জড়ানোর কোনো আশঙ্কা করছেন কি না?

সিইসি : আমাদের বিতর্কে জড়ানোর কোনো ইচ্ছা বা আকাঙ্কা নেই। আমরা সর্বোতভাবে চেষ্টা করব, একটা স্বাধীন সত্তা হিসেবে, স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারি। সেই চেষ্টা আমাদের অব্যাহত থাকবে। আমার বিশ্বাস সবার সহযোগিতা নিয়ে এটা পারব। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই, কেউ চাপও দিচ্ছে না।

আমার দেশ : নির্বাচনের আগে প্রতিটি কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?

সিইসি : আমার সংলাপকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ তারাই তো নির্বাচনের মাঠের বড় অংশীজন। আমরা মাঠটাকে লেভেল ফিল্ড করে দেবো। যাতে তারা সুন্দরভাবে খেলতে পারে- সে ব্যবস্থা করে দেব। সংলাপ অবশ্যই করতে হবে- যখন যাদের সঙ্গে সংলাপ করার প্রয়োজন হবে, তাদের সঙ্গে করব। আমরা তো এমন না সবাইকে ডেকে নিয়ে বাজার বসিয়ে দেব। অন্য দলগুলোর কথা বলছেন, সেটা সময়ের প্রয়োজনে যার সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন, তার সঙ্গে কথা বলব।

আমার দেশ : যেসব পর্যবেক্ষণ সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিষয়ে কি পরিকল্পনা আছে? নতুন নিবন্ধন দেবেন কি না?

সিইসি : আমরা ভোটের আগে কিছু পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে নিবন্ধন দেব। সেক্ষেত্রে সংস্কার কমিশনের সুপারিশের অপেক্ষা আমাদের করতে হবে।

আমার দেশ : ভোটের সময় গণমাধ্যমের স্বাধীনকাজে বাধা দেওয়া হয়- গণমাধ্যম ভোটের দিন যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে আপনাদের চিন্তাভাবনা কি?

সিইসি : আমরা সাধারণত গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় ষোলো আনা বিশ্বাসী। গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় ‘দৈনিক আমার দেশ’ বড় ভিকটিম। স্বাধীনতা না থাকলে কি হয়, সেটা তো আপনারা বেশি জানেন। এখন যদি নির্বাচনের সময় একটা কক্ষে একজন ভোট দিচ্ছেন, সেই কক্ষে ১০০ জন, ৫০ জন ধাক্কাধাক্কি করেন, তাহলে তো সমস্যা- সেক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু নীতিমালা থাকবে।

আমার দেশ : আমরা দেখেছি, আগে সিইসি নিয়োগ হতো বিচার বিভাগ থেকে। এখন আমলাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, আপনি কী মনে করেন? এটা কেন হচ্ছে?

সিইসি : আমি তো আর বলতে পারব না, আমি কখনো চিন্তা করিনি, আমি এই চেয়ারে আসব। এখন শুনতে পাচ্ছি, রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের নাম প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা এখানে যারা আছি, কেউ কাউকে আগে থেকে চিনতাম না। সিইসি যে বিচার বিভাগ থেকে আসবে, তার তো বাধ্যবাধকতা নেই। সরকার যে বাছাই কমিটি করে দিয়েছে, সে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সবাই নিয়োগ পেয়েছেন।

আমার দেশ : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

সিইসি : আমার দেশকেও ধন্যবাদ।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত