আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

বিজয় ও পরাজয়ের সমীক্ষা

আবদুল লতিফ মাসুম
বিজয় ও পরাজয়ের সমীক্ষা

১৯৭১ সালে পাকিস্তানের ‘আধা ঔপনিবেশিক’ শক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের বিজয় ছিল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ অর্জন। এতদ্বঞ্চলের জনগণের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা চিরকালের। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে ঘটেছে নানা রূপান্তর। বাংলাদেশের জাতিত্ব প্রাচীন কিন্তু জাতীয়তা তথা রাষ্ট্রধারণার ইতিহাস আধুনিক। জাতি ও জাতিত্ব সমর্থক নয়। জাতিত্ব ও জাতীয়তার শর্তাবলি উপকরণ মূলত এক হলেও উভয়ের বিকাশে মৌলিক ভিন্নতা রয়েছে। প্রথমটি নৃ-তাত্ত্বিক। দ্বিতীয়টি রাজনৈতিক। জাতিত্ব একটি মানব গোত্রে ঐতিহাসিক, জৈবিক ও সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের নির্ধারক। বাংলাদেশের রাষ্ট্রধারণা রাজনৈতিক উন্মেষের চেতনার প্রমাণ। বাংলাদেশের জনগণ একটি স্বতন্ত্র চেতনার মধ্য দিয়ে নদীর অনেক বাঁক অতিক্রম করে অবশেষে মিলন মোহনায় পৌঁছেছে। প্রাচীনে অঙ্গ-বঙ্গ-কলিঙ্গ ও সমতটের পরিচয় প্রকাশিত হলেও ১২০৪ সালে মুসলিম সেনানায়ক ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজির নেতৃত্বে বঙ্গবিজয় ঘটলে ইতিহাসের এক নব অধ্যায়ের সূচনা হয়। অতঃপর রাজা, রাজ্য ও রাজধানীর আবর্তন-বিবর্তন ঘটে অনেক। একটি দীর্ঘ সময় নামে-ধামে ভিন্ন হলেও এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভিন্নতর চেতনার ঐক্য পরিলক্ষিত হয়। শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহর আমলে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো ‘সুভে বাংলা’র স্বাধীন সত্তার সন্ধান পাওয়া যায়। দীর্ঘ মোগল শাসনামলে শক্তির ঐক্যে পরিলক্ষিত হয়। মোগল শাসন শেষে ‘নামে অধীন কার্যত স্বাধীন’ আধিপত্যের সূচনা ঘটে। আর এসবই ছিল এই অঞ্চলের মানুষের প্রকারান্তরে স্বাধীনতার পথে বিজয়ের একেকটি ধাপ। অবশেষে ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে যে রাজনৈতিক পরাজয় ঘটে, তা জয়ে রূপান্তরে লেগে যায় প্রায় দুশো বছর।

বিজ্ঞাপন

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি ইউরোপীয় রাষ্ট্রকাঠামোর আদলে সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটাতে চায়। ভারতের বৃহত্তর ধর্মীয় গোষ্ঠী ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে হিন্দু জাতীয়তাবাদে পরিণত করার চেষ্টা করে। স্বাভাবিকভাবেই মুসলিম জনগোষ্ঠী ‘দি জাতিতত্ত্বে’র মোড়কে ভারত বিভাগ অনিবার্য করে তোলে। ভারতের পূর্বাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা এবং পশ্চিম অঞ্চলে পৃথক পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রস্তাব উত্থাপিত হয় ১৯৪০ সালে লাহোরে। অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত এই স্বল্পসময়ে বাংলাদেশের মানুষের ইতিহাস ভিন্নভাবে রচিত হয়। শেরেবাংলা ফজলুল হকের রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা এবং অবিভক্ত বাংলার আরেকজন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর দোদুল্যমান অবিভক্ত স্বাধীন বাংলার প্রস্তাবনাকে অকার্যকর করে তোলে। অবশ্য ইতোমধ্যে গরিষ্ঠ হিন্দু নেতৃত্ব প্রত্যাশিত অবিভক্ত বাংলাকে অসম্ভব করে তোলে। ১৯০৫ সালে বঙ্গবিভাজনকে যারা ‘বঙ্গমাতার অঙ্গ ছেদন’ মনে করতেন, তারাই ১৯৪৭ সালে বাংলার ভাগকে অনিবার্য করে তোলে। ইতিহাসের অমোঘ ধারায় অর্জিত হয় ‘পোকায় খাওয়া পূর্ব পাকিস্তান’। বলা বাহুল্য, সর্বভারতীয় মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল বা প্রদেশগুলোর মধ্যে বাংলার জনগণ ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগকে নিরঙ্কুশ বিজয়ী করে পাকিস্তান অর্জনকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে।

তার পরের ইতিহাস শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস। পাকিস্তানকে জয় করে অবশেষে পরাজয়বরণ করে বাংলাদেশের মানুষ। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তখনই পরাজয়ের সূচনা ঘটে পাকিস্তানের। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরাজয় নিশ্চিত হয়। এরপরের ইতিহাস সবারই জানা কথা। ১৯৭১ সালে লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বীর সেনাপতি! আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় অধিনায়ক জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পরাজয়ের সনদে স্বাক্ষর করেন। এই পরাজয়ের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে ঘটে যাওয়া বিরাট ভুলের পরিসমাপ্তি ঘটে। সে সময় হাজার মাইলের দূরত্বে ভারতের সর্বপশ্চিম ও সর্বপূর্বে দুটি ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল নিয়ে একই রাজনৈতিক কাঠামোর অধীনে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা অসমাপ্ত রাষ্ট্র (Incomplete State) এবং দুই রাষ্ট্র (Double State) বলে বর্ণনা করছিলেন। বাঙালি রাজনীতিবিদ ও সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে ‘End of the betrayal and the restoration of Lahore Resolution’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

দীর্ঘ সিকি শতাব্দীর সংগ্রাম এবং বিরল আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হলো, কিন্তু জনগণের কাছে কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলো না। যারা স্বাধীনতার জন্য নেতৃত্ব দিলেন, তারাই অধীনতা নিশ্চিত করলেন। প্রথমত, রাষ্ট্রের স্বাধীনতা। দ্বিতীয়ত, জনগণের স্বাধীনতা। স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রতিবেশীর প্রযত্নের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা তথা মানচিত্রের নিশ্চয়তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। দ্বিতীয়ত, জনগণ যে আশা-আকাঙ্ক্ষায় একটি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখছিলÑতা স্বপ্নই রয়ে গেল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী আমাদের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করতে যেমন ব্যর্থ হলো, ঠিক তেমনি জনগণের শাসন তথা গণতন্ত্রের বদলে গোষ্ঠীতন্ত্র কায়েম করল। তিনি পাকিস্তানের তেইশ বছরে গণতন্ত্রের জন্য নাকি সংগ্রাম করেছেন। সেই সংগ্রাম যখন জয়ী হলো, তখন ‘আমিত্বের’ আবির্ভাব হলো। মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়ে যে সংবিধান রচিত হলো, কয়েক মাসের মধ্যেই তা পরিবর্তিত হলো। বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় মৌলিক অধিকার অস্বীকৃত হলো। সংবাদপত্র দলনের জন্য কালো আইন হলো। তার নিজের ভাষায় লাল ঘোড়া দাবড়ে দিলেন। অবশেষে ‘এক নেতা এক দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ ঘোষিত হলো। বাকশালের নামে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম এবং জনগণের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো আমাদের পরাজয় ঘটে। ১৯৭৫ সালের মধ্য আগস্টের বিয়োগান্ত ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে জনগণের জয় সুনিশ্চিত হয়। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আরেকবার জনগণের জয় সুনিশ্চিত হয়। সিপাহি জনতার বিপ্লবে জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। আরেকবার জনগণের জয়লাভ ঘটে। মানুষ ঈদের আনন্দ ও মিছিলের স্রোত দিয়ে তাদের বিজয়কে উদযাপন করে।

জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পদদলিত করে ১৯৮১ সালে সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল এরশাদের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। এক শ্রেণির দালাল রাজনীতিবিদ এরশাদকে সহায়তা করে। গণতন্ত্রের সোল এজেন্সির দাবিদার আওয়ামী নেতৃত্ব এরশাদের অবৈধ সামরিক শাসনকে স্বাগত জানায়। আরেকবার বাংলাদেশের মানুষের পরাজয় ঘটে। ১৯৯০ সালে জনতার অভ্যুত্থানে আরেকবার জনগণের বিজয় অর্জিত হয়। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই গণতান্ত্রিক বিজয়ে নেতৃত্বদান করেন। তিনি আপসহীন নেত্রীর অভিধায় অভিষিক্ত হন।

বাংলাদেশের মানুষের জয়কে পরাস্ত করার জন্য দেশি-বিদেশি চক্র ষড়যন্ত্র শুরু করে। ২০০৬ সালের দিকে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে দেশে ভয়ানক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। ২৮ অক্টোবর লগি-বইঠার তাণ্ডব ঘটিয়ে সামরিক হস্তক্ষেপ অনিবার্য করে তোলে। দেশ আরো প্রায় দুবছরের জন্য আধাসামরিক শাসনে নিপতিত হয়। এটি ছিল জনগণের পরাজয় আর ষড়যন্ত্রকারীদের বিজয় উল্লাস। অবশেষে দূর ও কাছের সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের ‘প্যাকেজ ডিলে’ তথাকথিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত এই আওয়ামী স্বৈরাচার টিকে থাকে। ছাত্র-জনতার এক অপূর্ব আন্দোলনে অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশের মানুষ ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ লাভ করে।

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং আপামর জনতার তরফ থেকে অভ্যন্তরীণ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তিনটি দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে বলে মনে করা হয়। প্রথমটি রাষ্ট্র সংস্কারের, দ্বিতীয়টি স্বৈরাচারের বিচার এবং তৃতীয়টি নির্বাচন। রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে অনেকগুলো সংস্কার কমিশন গঠিত হয়। সবগুলো কমিশনের প্রধান প্রধান জাতীয় ইস্যুকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠিত হয়। এই কমিশনের ৯ মাসে অসম্ভব পরিশ্রম ও নিষ্ঠার ফলে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ রচিত হয়। এই সনদ সমর্থনের জন্য আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট হতে যাচ্ছে। গণভোট নিয়ে তেমন মতভেদ না থাকলেও জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে মতভেদ রয়েছে। আশা করা যায়, আগামী নির্বাচনে বিজয়ী রাজনৈতিক শক্তি জাতীয় সংস্কার করবে। প্রত্যাশিত সংস্কার হলে জনগণের বিজয় অর্জিত হবে।

আওয়ামী স্বৈরাচার তাদের ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের মাধ্যমে বিচারকের ভাষায়, ‘দেশটাকে জাহান্নামে পরিণত করে’। জাতির প্রতিটি প্রথা ও প্রতিষ্ঠান বিপর্যস্ত হয়। রাজনৈতিক উপায়ে রাজনৈতিক বিষয়ের সমাধান না করে নগ্ন শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে চরম নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতার পরিচয় দেয় শেখ হাসিনা সরকার। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে ৫ আগস্ট তার পরাজয় ও পলায়ন পর্যন্ত নির্মম রক্তপাত ঘটায়। এতে প্রায় দুই হাজার মানুষ শাহাদতবরণ করে। প্রায় চল্লিশ হাজার পঙ্গুত্বের শিকার হয়। নানাভাবে হাজার হাজার মানুষ নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়। এই অন্যায় অত্যাচারের-বিচারের দাবি উচ্চারিত হয়েছে সব মহল থেকে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারে শেখ হাসিনাসহ অন্য অপরাধীদের বিচার চলছে। আইন ও শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অমানবিক এবং অস্বাভাবিক কার্যক্রমেরও বিচার চলছে। একটি মামলায় প্রধান আসামি শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হয়েছে। এতে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিজয় প্রকাশিত হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে একটি স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর। অনেক অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কা অবশেষে নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়েছে। ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বিপদ-আপদের আশঙ্কাও বাড়ছে। একটি সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন যেমন রাজনৈতিক বিজয়ের লক্ষণ, ঠিক তেমনি নির্বাচনটি যদি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য না হয়, তা অতি অবশ্যই পরাজয়ের লক্ষণ। আশার কথা, জাতির সংকটময় মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় ঐক্যের প্রমাণ দিচ্ছে। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির ওপর হামলায় পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করছে। এই প্রতিবাদ যদি প্রতিরোধে পরিণত হয়, তাহলেই জনগণের বিজয় ঘটবে। কিন্তু যখনই বিপদ দূর হয় অথবা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে, রাজনৈতিক দলগুলো অস্বাভাবিক আচরণ করে। ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগবিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তি নিপীড়নের শিকার হয়েছে। তখন তারা ছিল এক ও অভিন্ন। এখন তারা একে অন্যের সঙ্গে শত্রুর মতো আচরণ করছে। আরো বিস্ময়ের ব্যাপার, এখন তারা শত্রুর ভাষা ‘অবিকল নকল’ করে কথা বলছে।

বাংলাদেশের জনগণ প্রাচীন থেকে এ পর্যন্ত যে আন্দোলন-সংগ্রাম ও যুদ্ধ পরিচালনা করে আসছে, এক কথায় তার উদ্দেশ্য জাতীয় মুক্তি। এই জাতীয় মুক্তি শুধু একটি মানচিত্র বা পতাকার জন্য নয়। একটি শোষণমুক্ত সমাজই এর লক্ষ্য। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাও সাধারণ। তারা শান্তিতে ঘুমোতে চায়। তারা দুমুঠো ডালভাত খেয়েই সন্তুষ্ট। বাংলাদেশের মতো দারিদ্র্যক্লেষ্ট মানুষের দেশে দুঃখ-কষ্ট দূর করে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু-সমৃদ্ধ সমাজ নির্মাণই রাজনৈতিক লক্ষ্য হওয়া উচিত। আগামী নির্বাচনে যে দলই ক্ষমতাসীন হোক না কেন, মানুষের সামগ্রিক মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করতে পারলে দেশ বিজয়ের স্বাদ উপভোগ করবে। আর বিতর্ক, বিভেদ ও বিদ্বেষ দ্বারা পরিচালিত হলে তাদের রাজনৈতিক পরাজয় নিশ্চিত হবে।

লেখক: রাজনীতি বিশ্লেষক, সাবেক অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন