কমিউনিটি হাসপাতাল: চিকিৎসাসেবার অনন্য প্রতিষ্ঠান

অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০: ১৩

মগবাজার ওয়্যারলেস বস্তির সন্নিকটে, রেললাইনের ধারে, গলির মুখে তীব্র ভিড় ও জটলা ঠেলে হাসপাতালে প্রবেশ করা ভিজিটরদের মধ্যে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন! তাদের জিজ্ঞাসা, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসার জন্য অন্য কোথাও যাচ্ছি না কেন? কৌতূহলবশত অনেকেই জানতে চান ঢাকার নাম করা সব হাসপাতাল থাকতে আমি কেন কমিউনিটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। অনেকেই হয়তো জানেন না যে এই হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা একজন খ্যাতিমান চিকিৎসক।

বিজ্ঞাপন

প্রতিষ্ঠাতা ডা. কাজী কামরুজ্জামান সত্যিকার অর্থেই একজন মানবদরদি খাঁটি মনের মানুষ ও রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা।

কমিউনিটি হাসপাতালে দেশের অন্য যেকোনো হাসপাতালের তুলনায় চিকিৎসা ব্যয় অনেক সাশ্রয়ী। যেকোনো টেস্টে স্বল্প ব্যয়, ক্যান্টিনে ছাত্রছাত্রী ও স্টাফদের ৪০ টাকা ও রোগীর দর্শনার্থীদের ৭০ টাকায় মানসম্মত খাবার দেওয়া হয়। বিশেষ করে সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসাসেবা পাওয়ায় প্রতিদিন ঢাকাসহ দূর-দূরান্ত থেকে প্রচুর মানুষ এই হাসপাতালে আসে। কমিউনিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঢাকা মহানগরসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় ৩৫টি কমিউনিটি মেডিকেল সেন্টার পরিচালনা করছে।

এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানি ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টিতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

সর্বোপরি স্বাস্থ্যসেবা যে বাণিজ্য নয়, এই নীতিটি অনুসরণ করে কমিউনিটি হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে। প্রফেসর ডা. কাজী কামরুজ্জামান মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে এফআরসিএস চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা ফেলে তিনি ও তার অন্য বন্ধুরা মিলে ইংল্যান্ড থেকে ভারতে গিয়ে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। অন্য তিন বন্ধু ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডা. মাহমুদুর রহমান ও ডা. কাজী কামরুজ্জামান ভারতে গিয়ে স্ব-উদ্যোগে জেনারেল জিয়া ও জেনারেল এমএজি ওসমানী এবং জেনারেল খালেদ মোশাররফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

পরে তাদের সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে প্রাথমিকভাবে ভারতের ত্রিপুরায় মুক্তিযুদ্ধ ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তোলেন। যুদ্ধকালীন পুরো সময় তিন বন্ধু রণাঙ্গনে ফিল্ড হাসপাতাল পরিচালনা করেন। যুদ্ধ বিজয় শেষে তিন বন্ধু মিলে ঢাকার অদূরে প্রথম গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। গরিব দেশে গরিব মানুষের জন্য স্বল্পব্যয়ে স্বাস্থ্যসেবা সহজ ও জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিন বন্ধু জীবন-মরণ পরিশ্রম করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হন। ঘটনাক্রমে এই তিনজনের সঙ্গেই আমার গভীর সম্পর্ক। আমি নিজেও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে চলা একজন মানুষ। আমি সাধারণ মানুষের কাতারে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে কাজ করার সুবাদে ক্ষমতাবান অনেকের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছে। অনেকেই আমার চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছেন।

সুহৃদ অনেকের পরামর্শ দেশের বাইরে গিয়ে কিংবা দেশের ভেতরে থেকেও উন্নতমানের ব্যয়বহুল কোনো হসপিটালে চিকিৎসা নেওয়া যেত। তবে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতি অনুগত থাকা প্রয়োজন। দেশের একটি হাসপাতালে যে চিকিৎসা আমি পেয়েছি, তাতে আমি অভিভূত। কমিউনিটি হাসপাতাল একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান। বহু বছর ধরে দেশের দরিদ্র মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালটি আমাদের দেশের চিকিৎসাসেবার একটি মডেল হতে পারে।

লেখক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত