হেনা শিকদার
দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার পর অবশেষে সারা দেশে সরকারি ফার্মেসি চালুর ঘোষণা নিঃসন্দেহে দেশের স্বাস্থ্য খাতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বহুকাল ধরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো সুলভে মানসম্মত ওষুধের অভাব। বেসরকারি বাজারের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি, ভেজাল ও নকল ওষুধের বিস্তার এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রয়োজনীয় ওষুধের দুষ্প্রাপ্য– এসব বিষয় সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। অবশেষে, সারা দেশে সরকারি ফার্মেসি চালুর যুগান্তকারী ঘোষণা সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছে। এই পদক্ষেপ শুধু একটি সরকারি সিদ্ধান্ত নয়, এটি দেশের কোটি কোটি মানুষের জন্য সুস্থ ও উন্নত জীবনের হাতছানি। চিকিৎসাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার এবং স্বাস্থ্য খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের এক দৃঢ় প্রত্যয়।
আমাদের দেশে বিরাটসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। তাদের জন্য অসুস্থতা একটি চরম আর্থিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বেসরকারি ফার্মেসিগুলোয় ওষুধের চড়া দামের কারণে অনেক সময় তারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন না। এমনকি সামান্য জ্বর বা ব্যথার জন্যও তাদের মাসের আয়ের একটি বড় অংশ ব্যয় করতে হয়। দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা ক্যানসারের ক্ষেত্রে এই খরচ আরো বহুগুণ বেড়ে যায়, যা অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করে ফেলে। সরকারি ফার্মেসি চালুর মাধ্যমে এই অসহায় মানুষগুলোর কাছে সুলভে ওষুধ পৌঁছানো সম্ভব হবে, যা তাদের আর্থিক চাপ কমিয়ে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সহায়ক হবে।
অন্যদিকে, বাজারে ভেজাল ও নকল ওষুধের ছড়াছড়ি একটি ভয়াবহ সমস্যা। অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের নকল সংস্করণ তৈরি করে বিক্রি করছে। এই ভেজাল ওষুধ সেবনের ফলে রোগীরা একদিকে যেমন সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি অন্যদিকে তাদের স্বাস্থ্য আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে এবং এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ছে। সরকারি ফার্মেসিগুলোয় কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শুধু আসল ওষুধ বিক্রি করা হবে। ফলে সাধারণ মানুষ ভেজাল ওষুধের ভয় থেকে মুক্তি পাবে এবং নির্ভয়ে তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে পারবে। এটি জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
দেশের গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার চিত্র আরো করুণ। সেখানে অনেক সময় নিকটবর্তী কোনো ফার্মেসি খুঁজে পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। অসুস্থ হলে গ্রামের মানুষকে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে শহরে যেতে হয় ওষুধ কেনার জন্য। জরুরি অবস্থায় এই ভোগান্তি আরো বাড়ে। সরকারি ফার্মেসিগুলো দেশব্যাপী বিস্তৃত করার পরিকল্পনা এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান দেবে। ইউনিয়ন এবং উপজেলাপর্যায়ে সরকারি ফার্মেসি স্থাপিত হলে গ্রামের মানুষ তাদের হাতের কাছেই প্রয়োজনীয় ওষুধ পাবে এবং চিকিৎসার জন্য তাদের আর দূরে যেতে হবে না। এটি গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব ঘটাবে।
সরকারের এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য শুধু ওষুধ বিক্রি করা নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা। সরকারি ফার্মেসিগুলোয় প্রশিক্ষিত এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট নিয়োগ করা হবে। তারা রোগীদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ সরবরাহ করার পাশাপাশি ওষুধের সঠিক ব্যবহার, ডোজ, সময় এবং সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত পরামর্শ দেবেন। অনেক রোগী ওষুধের সঠিক নিয়ম না জানার কারণে ভুলভাবে ওষুধ সেবন করেন, যার ফলে তারা আশানুরূপ ফল পান না অথবা বিভিন্ন জটিলতার সম্মুখীন হন। সরকারি ফার্মেসিগুলোয় এই বিশেষজ্ঞ পরামর্শ পাওয়ার সুযোগ থাকায় রোগীরা উপকৃত হবেন এবং ওষুধের কার্যকারিতা বাড়বে। একই সঙ্গে, এটি জনসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে।
এই বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের জন্য সরকার একটি সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রথম ধাপে, দেশের বিদ্যমান সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র যেমন হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় সরকারি ফার্মেসি স্থাপন করা হতে পারে। এর ফলে অবকাঠামোগত খরচ অনেকাংশে কমানো যাবে এবং দ্রুত কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে। দ্বিতীয় ধাপে, প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন ফার্মেসি ভবন নির্মাণ করা হতে পারে। ফার্মেসিগুলোর অবস্থান এমনভাবে নির্ধারণ করা হবে, যাতে দেশের সব অঞ্চলের মানুষ সহজে সেখানে পৌঁছাতে পারে।
ওষুধ সরবরাহের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী এবং কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলা অপরিহার্য। সরকারিভাবে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো আধুনিকীকরণ এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি বেসরকারি ভালো মানের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ওষুধ সংগ্রহ করা যেতে পারে। একটি কেন্দ্রীয় ঔষধাগার স্থাপন করে সেখান থেকে সারা দেশে ফার্মেসিগুলোয় নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইনভিত্তিক ওষুধ ব্যবস্থাপনা এবং সরবরাহ ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করলে ওষুধ স্টক এবং বিতরণে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা আসবে।
এই উদ্যোগের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে দক্ষ জনবলের ওপর। সরকারি ফার্মেসিগুলোয় পর্যাপ্তসংখ্যক ফার্মাসিস্ট, টেকনিশিয়ান এবং অন্যান্য সহায়ক কর্মী নিয়োগ করতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। নবনিযুক্ত কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করা জরুরি, যাতে তারা রোগীদের সঠিকভাবে সেবা দিতে পারে। নিয়মিত বিরতিতে তাদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
তবে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের পথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও বিদ্যমান। প্রথমত, এর জন্য বিশাল অঙ্কের আর্থিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। সরকারের স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি অন্যান্য উৎস থেকেও অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ওষুধ ক্রয়, সংরক্ষণ এবং বিতরণে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার ঝুঁকি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারি এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, বেসরকারি ফার্মেসি মালিকদের একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী এই উদ্যোগের বিরোধিতা করতে পারে। তাদের স্বার্থের সংঘাত এড়িয়ে কীভাবে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা যায়, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে। স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ওষুধ ক্রয় এবং বিতরণে স্বচ্ছতা আনার জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ব্যবহার করা যেতে পারে। বেসরকারি ফার্মেসি মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সমন্বিত নীতি প্রণয়ন করা যেতে পারে, যাতে উভয় পক্ষই উপকৃত হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ইন্টারনেট সংযোগ উন্নত করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
এই উদ্যোগ শুধু চিকিৎসা খাতে নতুন সম্ভাবনার উন্মোচনই করবে না, বরং একটি সুস্থ ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। ভবিষ্যতে এই ফার্মেসিগুলোয় টেলিমেডিসিন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা যুক্ত করারও সুযোগ থাকবে, যা স্বাস্থ্যসেবাকে আরো সহজলভ্য করে তুলবে।
পরিশেষে বলা যায়, সারা দেশে সরকারি ফার্মেসি চালুর এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এটি দেশের স্বাস্থ্য খাতে নতুন সম্ভাবনার উন্মোচন করেছে এবং কোটি কোটি মানুষের জীবনে আশা জাগিয়েছে। সরকারি ফার্মেসিগুলো যেন সত্যিই সাধারণ মানুষের ভরসার জায়গা হয়ে ওঠে-সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক : শিক্ষার্থী দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার পর অবশেষে সারা দেশে সরকারি ফার্মেসি চালুর ঘোষণা নিঃসন্দেহে দেশের স্বাস্থ্য খাতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বহুকাল ধরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো সুলভে মানসম্মত ওষুধের অভাব। বেসরকারি বাজারের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি, ভেজাল ও নকল ওষুধের বিস্তার এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রয়োজনীয় ওষুধের দুষ্প্রাপ্য– এসব বিষয় সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। অবশেষে, সারা দেশে সরকারি ফার্মেসি চালুর যুগান্তকারী ঘোষণা সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছে। এই পদক্ষেপ শুধু একটি সরকারি সিদ্ধান্ত নয়, এটি দেশের কোটি কোটি মানুষের জন্য সুস্থ ও উন্নত জীবনের হাতছানি। চিকিৎসাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার এবং স্বাস্থ্য খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের এক দৃঢ় প্রত্যয়।
আমাদের দেশে বিরাটসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। তাদের জন্য অসুস্থতা একটি চরম আর্থিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বেসরকারি ফার্মেসিগুলোয় ওষুধের চড়া দামের কারণে অনেক সময় তারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন না। এমনকি সামান্য জ্বর বা ব্যথার জন্যও তাদের মাসের আয়ের একটি বড় অংশ ব্যয় করতে হয়। দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা ক্যানসারের ক্ষেত্রে এই খরচ আরো বহুগুণ বেড়ে যায়, যা অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করে ফেলে। সরকারি ফার্মেসি চালুর মাধ্যমে এই অসহায় মানুষগুলোর কাছে সুলভে ওষুধ পৌঁছানো সম্ভব হবে, যা তাদের আর্থিক চাপ কমিয়ে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সহায়ক হবে।
অন্যদিকে, বাজারে ভেজাল ও নকল ওষুধের ছড়াছড়ি একটি ভয়াবহ সমস্যা। অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের নকল সংস্করণ তৈরি করে বিক্রি করছে। এই ভেজাল ওষুধ সেবনের ফলে রোগীরা একদিকে যেমন সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি অন্যদিকে তাদের স্বাস্থ্য আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে এবং এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ছে। সরকারি ফার্মেসিগুলোয় কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শুধু আসল ওষুধ বিক্রি করা হবে। ফলে সাধারণ মানুষ ভেজাল ওষুধের ভয় থেকে মুক্তি পাবে এবং নির্ভয়ে তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে পারবে। এটি জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
দেশের গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার চিত্র আরো করুণ। সেখানে অনেক সময় নিকটবর্তী কোনো ফার্মেসি খুঁজে পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। অসুস্থ হলে গ্রামের মানুষকে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে শহরে যেতে হয় ওষুধ কেনার জন্য। জরুরি অবস্থায় এই ভোগান্তি আরো বাড়ে। সরকারি ফার্মেসিগুলো দেশব্যাপী বিস্তৃত করার পরিকল্পনা এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান দেবে। ইউনিয়ন এবং উপজেলাপর্যায়ে সরকারি ফার্মেসি স্থাপিত হলে গ্রামের মানুষ তাদের হাতের কাছেই প্রয়োজনীয় ওষুধ পাবে এবং চিকিৎসার জন্য তাদের আর দূরে যেতে হবে না। এটি গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব ঘটাবে।
সরকারের এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য শুধু ওষুধ বিক্রি করা নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা। সরকারি ফার্মেসিগুলোয় প্রশিক্ষিত এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট নিয়োগ করা হবে। তারা রোগীদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ সরবরাহ করার পাশাপাশি ওষুধের সঠিক ব্যবহার, ডোজ, সময় এবং সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত পরামর্শ দেবেন। অনেক রোগী ওষুধের সঠিক নিয়ম না জানার কারণে ভুলভাবে ওষুধ সেবন করেন, যার ফলে তারা আশানুরূপ ফল পান না অথবা বিভিন্ন জটিলতার সম্মুখীন হন। সরকারি ফার্মেসিগুলোয় এই বিশেষজ্ঞ পরামর্শ পাওয়ার সুযোগ থাকায় রোগীরা উপকৃত হবেন এবং ওষুধের কার্যকারিতা বাড়বে। একই সঙ্গে, এটি জনসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে।
এই বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের জন্য সরকার একটি সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রথম ধাপে, দেশের বিদ্যমান সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র যেমন হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় সরকারি ফার্মেসি স্থাপন করা হতে পারে। এর ফলে অবকাঠামোগত খরচ অনেকাংশে কমানো যাবে এবং দ্রুত কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে। দ্বিতীয় ধাপে, প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন ফার্মেসি ভবন নির্মাণ করা হতে পারে। ফার্মেসিগুলোর অবস্থান এমনভাবে নির্ধারণ করা হবে, যাতে দেশের সব অঞ্চলের মানুষ সহজে সেখানে পৌঁছাতে পারে।
ওষুধ সরবরাহের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী এবং কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলা অপরিহার্য। সরকারিভাবে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো আধুনিকীকরণ এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি বেসরকারি ভালো মানের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ওষুধ সংগ্রহ করা যেতে পারে। একটি কেন্দ্রীয় ঔষধাগার স্থাপন করে সেখান থেকে সারা দেশে ফার্মেসিগুলোয় নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইনভিত্তিক ওষুধ ব্যবস্থাপনা এবং সরবরাহ ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করলে ওষুধ স্টক এবং বিতরণে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা আসবে।
এই উদ্যোগের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে দক্ষ জনবলের ওপর। সরকারি ফার্মেসিগুলোয় পর্যাপ্তসংখ্যক ফার্মাসিস্ট, টেকনিশিয়ান এবং অন্যান্য সহায়ক কর্মী নিয়োগ করতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। নবনিযুক্ত কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করা জরুরি, যাতে তারা রোগীদের সঠিকভাবে সেবা দিতে পারে। নিয়মিত বিরতিতে তাদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
তবে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের পথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও বিদ্যমান। প্রথমত, এর জন্য বিশাল অঙ্কের আর্থিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। সরকারের স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি অন্যান্য উৎস থেকেও অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ওষুধ ক্রয়, সংরক্ষণ এবং বিতরণে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার ঝুঁকি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারি এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, বেসরকারি ফার্মেসি মালিকদের একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী এই উদ্যোগের বিরোধিতা করতে পারে। তাদের স্বার্থের সংঘাত এড়িয়ে কীভাবে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা যায়, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে। স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ওষুধ ক্রয় এবং বিতরণে স্বচ্ছতা আনার জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ব্যবহার করা যেতে পারে। বেসরকারি ফার্মেসি মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সমন্বিত নীতি প্রণয়ন করা যেতে পারে, যাতে উভয় পক্ষই উপকৃত হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ইন্টারনেট সংযোগ উন্নত করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
এই উদ্যোগ শুধু চিকিৎসা খাতে নতুন সম্ভাবনার উন্মোচনই করবে না, বরং একটি সুস্থ ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। ভবিষ্যতে এই ফার্মেসিগুলোয় টেলিমেডিসিন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা যুক্ত করারও সুযোগ থাকবে, যা স্বাস্থ্যসেবাকে আরো সহজলভ্য করে তুলবে।
পরিশেষে বলা যায়, সারা দেশে সরকারি ফার্মেসি চালুর এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এটি দেশের স্বাস্থ্য খাতে নতুন সম্ভাবনার উন্মোচন করেছে এবং কোটি কোটি মানুষের জীবনে আশা জাগিয়েছে। সরকারি ফার্মেসিগুলো যেন সত্যিই সাধারণ মানুষের ভরসার জায়গা হয়ে ওঠে-সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক : শিক্ষার্থী দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
৮ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
৮ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
৮ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১ দিন আগে